“আমার প্রিয় বিজ্ঞানী প্রফেসর স্টিফেনের সাথে তার আফিসে কথা বলছি আমি “আকাশ“। বাঙালী হওয়ায় ইংজের প্রফেসর আমার নাম সহজে আকাশ বলতে পারেনা । প্রফেসরের বয়স ৭৪ বছর । ভাবতে অবাক লাগে এতবছরেও প্রফেসর বিয়ে করেননি । আজ আবার এ বিষয় নিয়ে প্রফেসকে প্রশ্ন করলাম ।প্রফেসর আমার দিকে ফিরে পাংশু মুখে বললেন “আর বোলনা আকাশ.”। একবার তো খুব অল্পের জন্যে বেঁচে গিয়েছি বিয়ের হাত থেকে ।”
“সত্যি?”
“হ্যা ।প্রফেসর বলল আমার মত বুড়োর জন্য মেয়েটা ছিল এক কথায় স্বর্গের পরী ।সুন্দরী, অল্পবয়সী, মোট কথা সব দিক থেকে সেরা ।’
“সুযোগটা ছাড়লেন কেন প্রফেসর? আমি জিজ্ঞেস করলাম ।”
“উপায় ছিল না, ওর প্রেমিকের জন্যই । মৃদু হেসে বললেন প্রফেসর”
“তার মানে মেয়েটার প্রেমিক ছিলপ্রফেসরকে জিজ্ঞেস করলাম?”
“আর বলোনা সে অনেক লম্বা কাহিনী প্রফেসর বললেন।”
“যাইহোক শুনতে চাই ।”বললাম আমি ।
“আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে প্রফেস বললেন, তাহলে শোন ।”
আমাদের অক্সফোর্ডের প্রফেসর জনসনকে তো চেন ? চেন না ?
আমি বললাম জি ফেসপ্র। প্রফেস আবার শুরু করল- উনি বেশ কিছু দিন ভালবাসা নিয়ে গবেষণা করছিলেন ।কিছু দিন আগে একটি ঔষুধ আবিষ্কার করেন ঐ প্রফেস যা খেলে যেকোন মানুষের ভিতর বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ জন্মাবে ।ঐ প্রফেস এই খবরটা পুরোই গোপন রাখেন।”জিম ও এলি” । তারা ২ জন স্বামী স্ত্রী । জিম হালকা পাতলা ধরণের একটু বেঁটে তবে সুপুরুষ। আর এলি খুবই সুন্দরী ।
একদিন প্রফেসর ক্লাস শেষে “এলির” সাথে কথা বলার সময় ওর আবিষ্কারের কথা বলে । প্রফেসর” আজকাল কার ছেলে মেয়েদের ভিতর প্রেমের পরিণতি খুব বিরল আর সাধারণত খুব গভীরও হয় না ।তবে আমি এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করার সময় দেখতে পাই এটা আসলে এক ধরণের হরমোনের জন্য হচ্ছে । আমি এর জন্য ঔষুধ ও তৈরি করেছি।”
“কি ধরণের ঔষধ?” আগ্রহে সামনে ঝুকে বসে প্রশ্ন করে প্রফেসরকে।
“ধরণটা বলা মুশকিল প্রফেসর বললেন। তবে এটা একবার খেলে প্রথমে হালকা ঘুম আসবে । ঘুম থেকে উঠার পরে সামনে যাকে মানে ফ্যামিলীর বাইরের যে বিপরীত লিঙ্গের সাথে দেখা হবে তার প্রেমেই পড়ে যাবে । এর একমাত্র পরিণতি বিয়ে । বিকল্প নেই ।”বললেন প্রফেসর জন ।
এলির নীল চোখ ২টা বড় বড় হয়ে যায় “তার মানে পিলের মাধ্যমে যে কারও প্রেম সৃষ্টি করতে পারবেন ? ”
“ব্যাপারটা সেরকমই বললেন প্রফেসর।
” তাহলে করছেন না কেন?”
“এর মধ্যে ব্যাপার আছে।”প্রফেসর। যদি ভুল করে কোন বিবাহিতাকে ঐ পিল দেওয়া হয় তাহলে কি ঘটবে ভেবে দেখেছ ?
“কিন্তু ঐ জিনিস আমাদের কোন প্রয়োজন পড়বেনা, সে কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি ।”প্রফেসর।
“আমিও পারি” বললো এলি ।
“ঠিক বললে না,” প্রফেসর বললেন জোর দিয়ে ।
“তাহলে কালই প্রমাণ হয়ে যাক, প্রফেসর ” চ্যালেঞ্জ জানাল এলিকে-‘কাল কলেজে সিনিয়র ডান্স হলে । তাতে কম করেও ৫০ জোড়া ছেলে মেয়ে থাকবে । বেশির ভাগই অবিবাহিত । তাদের ওপর আপনার পিল কেমন কাজ করে দেখা যাক ।’
‘কি? পাগল হলে নাকি ?’
কিন্তু এলি চেপে ধরলো প্রফেসরকে ।’ কেন প্রফেসর এতো চমৎকার আইডিয়া না করবেন না প্লীজ ।’
আরো কিছুক্ষণ বিতর্কের পর মত দিলেন প্রফেসর।
‘আমরাও খাব সে পানীয় ‘ প্রফেসর।
‘কিন্তু আমাদের ঐ জিনিসের প্রয়োজন নেই ‘ আপত্তী জানালো এলি ।
‘তা জানি । তবুও…’
‘তাহলে কি দরকার? তুমি নিশ্চয়ই মনে করো না আমাদের ভালবাসায় কোন খাদ আছে ?’
‘না ।কিন্তু….’
এভাবে প্রফেসর আর এলির ভিতর ঝগড়া হয় আর এলি চলে যায় ওখান থেকে রাগ করে । সেদিকে জন আর জিম বোকার মত তাকিয়ে থাকে ।
পরদিন সিনিয়র ডান্স বছরে একবার হয় । ডান্স হলে প্রফেসর এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে এলির অপেক্ষায়। এলির দেখা নেই। অনেক্ষণ পর প্রফেসর মনের দুঃখে কক্ষে যায় । প্রফেসর বলে “মিডনাইট টোস্টের সাথে পিল মিশিয়ে দিয়েছি দেখা যাক কি হয় ।প্রফেসর জিজ্ঞেস করছেন তার কর্মিকে প্রফেসর স্টিফেনকে দেখেছন ?”
একটু আগেতো দেখলাম কিচেন পরিদর্শন করছেন ।
প্রফেসর এলির জন্য কান্নাকাটি করছে ,এসময় প্রফেসর স্টিফেন উপস্থিত হন । প্রফেসরের অবস্থা দেখে তিনি তার কাছে সব জানতে চায় । জিম বলে তার দোষেই এলি তার সাথে আসেনি ।প্রফেসর অবস্থা দেখে স্টিফেন এলিকে খুঁজতে ডান্স হলের দিকে যান । এদিকে প্রফেসর যখন রুমে ঠিক তখনই এলি ডান্স হলে প্রবেশ করে ।এবং সবার সাথে টোস্ট খায় । প্রফেসর স্টিফেন হলে প্রবেশ করে বজ্রাহতের মত দাঁড়িয়ে পড়লেন । চোখে নগ্ন আতঙ্ক ফুটল ,মেঝেতে ৫০ জোড়া ছেলেমেয়ে মৃতের মত পড়ে থাকতে দেখে । পুলিশে ফোন করবেন ভাবছেন এমন সময় তার সামনে নড়ে উঠলো ‘লাশ গুলো’ একেএকে।কেবল ১জনই তখনও শুয়ে আছে সে এলি । তাড়াতাড়ি প্রফেসর স্টিফেন এলির পাশে বসে তাকে ডাকলো ‘তোমার কি হয়েছে এলি.. তুমি ঠিক আছোতো ।’
ধীরেধীরে চোখ খুললো এলি ।”মি. স্টিফেন ! তুমি এত সুন্দর তা আগে কখনো দেখিনিতো !”
“আমি?” থতমত খেয়ে গেল প্রফেসরস্টিফেন ।এলির চোখের তারায় এমন বিশেষ এক ঝিলিক দেখলো,যা গত ৫০ বছরেও কোন মেয়ের চোখে দেখেনি।
“মি.স্টিফেন,তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো ?”
‘না,না !’ বলল বৃদ্ধ । বুঝে উঠতে পারছেনা প্রফেসর ।’তুমি বললে তোমার কাছেই থাকবো ।’
‘আমি তোমাকে চাই ।’ বলল এলি ।
পিছু হটতে শুধু করলেন হতভম্ব বৃদ্ধ ।এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন কেউ শুনে ফেললো কিনা দেখতে । ওদিকে এলিও উঠে পড়েছে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে তাঁর দিকে । এক সময় দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল । আর পিছানোর উপায় নেই ।Please মিসেস এলি ।’অসহায়ের মত বললো সে ।
” আমি তোমার কাছে শুধুই মিসেস এলি? স্টিফেন বিয়ে করো আমাকে ! বিয়ে করো !”
রুদ্ধশ্বাসে ব্যালকনিতে এসে পৌঁছলেন স্টিফেন সাথে এলি । স্টিফেন ও এলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলেন প্রফেসর জিম !
এলিকে দেখে প্রফেসর প্রফেসর জিম তার দিকে এগিয়ে যায় । ‘এলি..’
ঝট করে পিছিয়ে যায় এলি । তার বাড়ানো হাত সরিয়ে দিয়ে স্টিফেনের বাহু আকড়ে ধরে ।’জিম তুমিতো চেয়েছিলে আমি পিল খাই । খেয়েছি । এখন আমি শুধুই স্টিফিনের ।’
হা হয়ে যায় জিম । ‘বিশ্বাসঘাতক !’ চেঁচিয়ে ওঠে সে ।
তবে সে একটা জনিস উপলব্ধি করল আর তা হল- ওর কিছু করার নেই এক্ষেত্রে ।ব্যাপারটা স্রেফ……………..কারও কিছু করার নেই ।’
কিছুক্ষণ আগুন চোখে এলিকে দেখল তারপয় ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল প্রফেসর জিম ।স্টিফেনও চলে যেতে চাইলেন কিন্তু এলি ধরে রাখলো !
‘তারপর কি ঘটল?’ রুদ্ধশ্বাসে প্রশ্ন করলাম আমি ।
“আর কি?” বললেন আমার প্রিয় প্রফেসর স্টিফেন ।’বিয়ে করতে হলো ওকে ।’
“কি! ঐটুকু মেয়েকে বিয়ে করেছেন ?!?”
“দেখো আকাশ না করে উপায় ছিলনা ।”
“ও। তা এলি এখন কোথায় ?”
প্রফেসর জিম সংসার দেখছে ।” এক চুমুকে বাকি চাটুকু শেষ করলেন । আমি তাকিয়ে আছি বুঝতে পেরে একটু পরে বললেন ‘ব্যাপারটা জিম বলেছে, তার পিল খেয়ে যে যতই অকর্ষণ বোধ করুক ,বিয়ের পরপরই তা কেটে যায় ।এলির বেলাও তাই ঘটেছে।
‘তাই বলেন ‘স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম আমি । চোখ তুলে অবাক হয়ে গেলাম অল্পবয়সী এক সুন্দরীকে দেখে ।কাঁচের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে সে কেবল অফিসে ঢুকছে । আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে প্রফেসরও ঘুরে তাকালেন এবং আড়ষ্ট হয়ে গেলেন ।’সর্বনাশ! এখানেও এসেছে !’
‘কে ও?’ আমি প্রশ্ন করলাম ‘এলি নাকি ?’
‘না,না’ উঠে পড়লেন উনি ।’এ অন্য মেয়ে ।সম্পূর্ণ অন্য ১ কাহিনী এটা । পরে তোমাকে জানাবো কেমন ?’ প্রায় দৌড়ে রূম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি । কিন্তু মেয়েটা ছাড়ল না , সে-ও ছুটল তার পিছন পিছন ।
আর আমি কালপুরুষ হা কর বসে বসে দেখছি আর ভাবছি । আর কত চমক আছে আমার প্রিয় প্রফেসর স্টিফেনের ঝুলিতে আল্লাহই জানেন ।