****রাজসাক্ষী ***

Photo: এটা গতবছরের ঘটনা। রোজার ঈদের দিন সারাদিন বৃষ্টি ছিল বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার জন্য বের হলাম আসার কথা ছিল সবার কিন্তু বৃষ্টির কারণে মাত্র ৩জনের মত আসছিল। কি করব সবাই সিধান্ত নিলাম যে পরদিন কোথাও ঘুরতে বের হব। কোথায় যাওয়া যায় ভেবে সবাই মিলে খুলনা যাওয়ার সিধান্ত নিলাম। তারপর বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেবার পর বাসায় চলে আসলাম।

 বাসায় এসে খেয়ে আমার রূমে চলে এলাম। আমার রূম হল ছাদের উপর সিড়ি ঘরের উপর একটা রূম সাথে বাথরূম আর বারান্দা। রূমের আশেপাশে কিছুই নেই। যেহেতু ছাদের উপর তাই রূমে আসলে আশেপাশের সব কিছুই দেখা যায়। তো রূমে ঢুকে টিভি অন করলাম ঈদের অনুষ্ঠান দেখছিলাম। তো একটা এস এম এস আসল যে রেডিও তে ভূত এফ এম হচ্ছে। এটা আমার শুনতে অনেক ভালোলাগে। তো টিভি বন্ধ করে রেডিও অন করলাম। আমার একটা সিমপ্ফনি মোবাইল সেট আছে। তো সেটার চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় বারবার বিকট আওয়াজ করছিল। বিরক্ত লাগছিল তাই সাউন্ড বন্ধ করে দিয়ে পাশের টেবিলে মোবইলটা চার্জে দিলাম। টেবিলটা বিছানা থেকে বেশ খানিকটা দূরে। চার্জে দিয়ে এসে আমি আবার রেডিও শুনতে থাকলাম। তো ১২ টার পর ভূত এফএম শেষ হল। আমি ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়ি কারণ পরদিন সকাল ৭.৩০ মিনিট এ খুলনা যাবার ট্রেন।

 সকাল ৬.৩০ মিনিট এ বন্ধুর ফোনে ঘুম ভাঙল। ওর সাথে কথা শেষ করে ঘুম থেকে উঠলাম। বসার পরই বিরাট একটা ধাক্কা খেলাম। কারণ আমি যে ফোন দিয়ে কথা বললাম সেটা গতকাল রাতে আমি সাউন্ড বন্ধ করে পাশের টেবিলে চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। আর আমার ঘুম ভাঙছে সেই ফোনের রিং শুনে। আর ফোনটা ছিল আমার বালিশের পাশে। ভাবলাম হয়ত রাতে কোন ফোন আসছিল তাই হয়ত উঠে নিয়ে আসছি। কিন্তু যখন কল রেকর্ডস চেক করলাম তখন আরো অবাক হলাম এই দেখে যে কোন রেকর্ডসই রাতের নাই। সব গতকাল দিনের, তারমানে রাতে কোন কল বা মিসকল কোনটাই আসে নাই। আর রাতে আমি যদি কখনও উঠি তাহলে আমার মনে থাকে কিন্তু আমি কিছুতেই মনে করতে পারলাম না যে রাতে আমি উঠেছি। আমার মনে হয় না রাতে উঠেছিলাম, উঠলে অবশ্যই মনে পরত।

 তারপর আরেকটা বিরাট ধাক্কা খেলাম যখন আমি টেবিলের দিকে তাকালাম। যেটা আমি কখনও করি না সেটা দেখলাম। আমি সাধারনত মোবাইলের চার্জার কখনও কারেন্ট বোর্ড থেকে খুলি না। লাগানোই থাকে চার্জ দেবার দরকার হলে লাগিয়ে দেই না হলে ঐভাবেই থাকে।

 আমি দেখলাম চার্জারটা বোর্ড থেকে খোলা শুধু খোলাইনা সুন্দর করে গোল করে গোছানো যেটা আমি জীবনে কখনও করি না।

 আমার রূমে বাহির থেকে কেউ ঢোকার কোন সুযোগ নাই। রূম আমি ভেতর থেকে লাগিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম।

 তো এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা আমি এখনও পাই নাই।

লিখেছেন তারছিড়া

অনেক কষ্ট করে ঘটনা জোগাড় করি আপনাদের জন্য । আপনারা লাইক শেয়ার না করলে ঘটনা দেয়ার আগ্রহ মরে যায় । তাই পেজটিকে জীবিত রাখতে নিয়মিত লাইক এবং শেয়ার করুন ।

অতনুর পুরো নাম শিহাব শাহিন অতনু, ওর নানার রাখা নাম। ওদের বাড়ি উত্তর বঙ্গে, বর্ডারের কাছে। জায়গাটা ভয়াবহ রকমের দুর্গম। ইলেক্ট্রিসিটি তো দূরের কথা, একটা খাম্বাও নেই। যাতায়াতের মাধ্যম পায়ে হাঁটা পথ। প্রায় ১০মাইল হাঁটলে পাকা রাস্তা পাওয়া যায়। অতনুর এই অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম হলেও ওর আধুনিক নামই বলে দেয় ওদের পরিবার গ্রামের আর ১০টা পরিবার থেকে আলাদা। ছোটবেলা বাবা মারা যাওয়ার পর নানা বাড়িতেই ……বেড়ে ওঠে। ওর নানারা ওপারের লোক, যুদ্ধের পর এপারে চলে আসে। পরিবারের নামটাই যা ছিল, এছাড়া একেবারে নিঃস্ব হয়ে এপারে আসতে হয়। ও আবছা ভাবে জানে যে নানারা নাকি শুদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে ধর্মান্তরিত হয়েছেন।

ওর পরিবারে ৩টা আজব ঘটনা ঘটেছে। ওর বড় মামা, মেজ খালু আর মেজ নানা তিনজনই খুন হন। বর্ডার এলাকায় এসব স্বাভাবিক ঘটনা, তাই কোন থানা পুলিশ হয়নি। লাশ পাওয়ার পর ২-৪ দিন চোখের পানি ফেলে আবার কাজে মন দিয়েছে সবাই। এইসব ঘটনা যখন ঘটে তখন ওর বয়স ১১, আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। তারপর ও বড় হয়ে এখন ঢাকায় থাকে। তিন দিন হল গ্রামে এসেছে শেষ যেটুকু ভিটামাটি ছিল তা বেঁচে দিতে।

শনিবার রাত। গ্রামে এখন এক ছোট মামা ছাড়া আর কেউ থাকে না। বিশ রুমের একটা টিনশেড দোতলা বাড়ি পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। ও উপরের ঘরটা নিলো। রাতে বেশ চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমানো যাবে। গ্রামে কতদিন রাত কাটানো হয়না।

রাত তিনটায় একটু টয়লেট পেলো ওর। এখানের একটা সমস্যা হচ্ছে টয়লেট করতে নিচে নামতে হয়। কি আর করা, নেমে টয়লেট সারলো। কলপাড়ে এসে হাত ধুতে যাবে, দেখল দুজন লোক বসে আছে নিচতলার বারান্দায়। কিছু নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে ওদের মধ্যে বোঝা গেল। খেয়াল করলো টর্চ আনতে ভুলে গেছে ও। কিন্তু এত রাতে এখানে বসে ঝগড়া করছে কারা? ভালমত তাকালো, দেখলো একটা লোক উঠে দাঁড়িয়েছে। তীব্র রেগে গেছে সে, আচমকা একটা ছুরি বের করে আমুল বসিয়ে দিল সে অপর লোকটার বুকে। পিচ করে একটা শব্দ হল। আঁতকে উঠল ও, খুন!! দ্রুত লুকানোর জায়গা খুঁজল ও, পেলোনা। ওদিকে লোকটা এদিকেই এগিয়ে আসছে। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ও। কিন্তু লোকটা ওর চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল, ওর দিকে তাকালও না। লোকটা একটু দূরে ডোবার ধারে গেলে চাঁদের আলো পড়লো লাশটার মুখে। চাঁদের আলোয় চিনতে কোন সমস্যা হলনা। বড় মামা!! লাশটা আর কারো না, বড় মামার!!
সারা গা ঝিমঝিম করে উঠল ওর। দ্রুত ছুটল বাম পাশের ঝোপের দিকে, ওখানে বড় মামার কবর আছে। গিয়ে যা দেখল তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।
কবরটা খোঁড়া, চারিদিকে মাটি ছড়িয়ে আছে, একটা রক্ত মাখা ইট পড়ে আছে পাশে!!
গ্রামের লোকদের ডাকে জ্ঞান ফেরে অতনুর। কবরের পাশে পড়ে আছে ও। চারিদিকে অনেক লোকজন, এক এক জনের এক এক জিজ্ঞাসা। তার মাঝেই কবরের দিকে তাকাল ও, সব সুস্থ, স্বাভাবিক, শান্ত। কবরের মাটি দেখে সহজেই বোঝা যায় গত ১৭ বছরে কেউ তা খোঁড়েনি। তবে কি দুঃস্বপ্ন দেখছিল ও? তাই হবে হয়ত। ধীরে ধীরে লোকের কাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল ও, তখুনি চোখ আটকাল একটা ইটের দিকে। গোল, একপাশে রক্ত মাখা। বুকটা ছাঁৎ করে উঠল ওর! ঠিক তখুনি, একটু গড়িয়ে পাশের ডোবাটায় পড়ে গেলো সেটা।

এই ঘটনার ২ ঘণ্টা পরেই বাসে করে ঢাকায় চলে আসে ও। কাউকে কিছু জানায় না। সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন বলে ভেবে নেয়।
দুই দিন পর। বাসায় কেউ নেই। একা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল ও, এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো। মোম জ্বালাতে রান্নাঘরে যায় ও, আইপিএস টাও আবার নষ্ট।
ফিরে এসে দেখে ড্রয়িংরুম ভর্তি ৬-৭ জন লোক। সবার মুখে লাল কাপড় বাঁধা। একটা লোককে বেঁধে রেখেছে তারা। মোমের আলোয় চিনতে কষ্ট হয়না, ওটা মেজ খালু!!!
হটাৎ লোকগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে খালুর উপর। মুহূর্তে টুকরো টুকরো করে ফেলে ছুরি দিয়ে। শুধু ধড় আর মাথাটা রেখে বাকি হাত,পা আলাদা হয়ে যায়। এক ফোঁটা রক্ত ছিটে এসে লাগে ওর শার্টে। ওখানেই জ্ঞান হারায় ও।
জ্ঞান ফেরে পরদিন হসপিটালে। ঘরে ফেরার পর দেখে সব ঠিক আছে, তবে তার শার্টে রক্তের দাগ লাগলো কিভাবে, স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারলনা।

চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন একটা মানুষিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও। তীব্র কঠিন ওষুধ খেয়ে স্রেফ বেঁচে আছে। দুটি মৃত্যু ঘটনার রাজসাক্ষী হয়ে, তৃতীয় ঘটনাটি ঘটার অপেক্ষায়।

Related posts