***প্রতিশোধ***

Photo: কথামতো এটি আজকের দ্বিতীয় ঘটনা । আপনারা অনেক লাইক করেছেন দেখে দুটো গল্পই দিলাম । অ্যাডমিনরা খুশি হলে বেশি বেশি গল্প দেয়, মনে রাখবেন ।

ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার নানা ভাইয়ের সাথে। নানা ভাই তখন মাঝ বয়সের ছিলেন। ঘরে নানুজান আর উনাদের ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার। পরবর্তীতে নানুজানের কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেছি আমি এবং আমার অন্য ভাইবোন।

নানা ভাই আমাদের গ্রামেরই একটা স্কুলে হেড মাস্টার ছিলেন। ঘটনা অনেক আগের। ১৯৮০ সালের দিকের। তো, তখন গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ এর তেমন প্রচলন ছিল না। বেশিরভাগ মানুষই কুপি বা হারিকেন ব্যাবহার করতো। নানা ভাই স্কুল থেকে মাঝে মাঝে ফিরতে দেরি হয়ে যেত। দেরি হয়ে গেলে উনি সেখানে নামাজ আদায় করে তারপর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা করতেন। উনার কাকা বিদেশ থেকে একটা টর্চ লাইট পাঠিয়েছিলেন। সেই টর্চের আলোই মাঝে মাঝে হতো উনার পথ চলার সম্বল।

যেদিনের ঘটনা, সেদিনও নানা ভাই একটু রাত করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় একটা পুরনো বট গাছ পড়ে। দিনের বেলায়ও জায়গাটা কেমন যেনো অন্ধকার অন্ধকার থাকে। একটা জমাত বাধা বাতাস যেনো পাক খায়। তখন গ্রামে লোকজন বলতে বেশি মানুষ ছিল না। দেখা যেত, পুরো গ্রাম মিলে হয়তো ২০০ মানুষ। তাই সবারই সবার সাথে চেনা জানা ছিল। যাই হোক, নানা ভাই সেই বট গাছের কাছাকাছি আসার সময় হটাত দুটো ছায়ামূর্তির মতন দেখতে পান। অন্ধকারে হটাত নাড়া ছাড়া দেখায় তিনি একটু চমকে যান। আস্তে করে আলো ফেলে দেখার চেষ্টা করেন কাউকে দেখা যায় কিনা। আলো ফেলার খানিক আগেও যেখানে আওয়াজটা হয়েছিলো, আলো ফেলতেই দেখলেন জায়গাটা ফাঁকা। তবে যেখানে আওয়াজ হয়েছিলো সেখানে কিছু বটের শাখা নড়ছে। নানা ভাই জিজ্ঞেস করেন ওখানে কেউ আছেন কিনা। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এবার নানা ভাই একটু সাহস নিয়ে বুকে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে এগুতে থাকেন। খানিকটা পথ যাওয়ার পর উনার ভয় আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগে। এরপর আর খানিকটা গেলেই বাড়ি। নানা ভাই দ্রুত পায়ে পথ চালালেন। হটাত পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো। কে যেনো পা হেঁচড়ে হেঁচড়ে হাঁটছে। নানা ভাই ঘুরে পেছন দিকে টর্চ মারলেন। একটা লোক আসছে দূর থেকে। নানা ভাই হেঁড়ে গলায় ডাক দিলেন, কেডা গো বলে। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। এদিকে নানা ভাইকে চমকে দিয়ে হটাত সেই মূর্তিটা বাতাসের বেগে সামনে আসতে লাগলো। যেনো উড়ে আসছে। এবার নানা ভাই ভয় পেয়ে দৌড় লাগাতে যাবেন। হটাত খেয়াল করলেন, মূর্তিটার চোখ এই অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে। অনেকটা পশুর মত। কিন্তু বলা বাহুল্য, সে সময় ভাল্লুক বা ঐ জাতীয় কোনো পশু এমন করে পথে ঘাঁটে উঠে আসতো না। আর সেই মূর্তি টা একজন স্বাভাবিক মানুষের আকৃতি নিয়েই এগুচ্ছিল। নানা ভাই আর সহ্য করতে পারলেন না। ঝেরে দৌড় মারলেন পেছনে ঘুরে। দৌড় মেরে কিছুদূর যেতেই পিঠে কিছুর ছোঁওয়া অনুভব করলেন। দাঁড়ালো কোনো কিছুর আঁচড় মনে হল। নানা ভাই, চিৎকার করে আরো জোরে দৌড় লাগালেন। এবার পেছন থেকে সেই মূর্তিটা(হয়তো, কারন সেটি কি ছিল তা নানা ভাই দেখতে পারেন নি) এসে ধাক্কা দিয়ে উনাকে ফেলে দিল। জ্ঞান হারানোর আগে নানা ভাইয়ের শুধু এতটুকুই মনে ছিল।

পরদিন উনাকে পথের পাশের এক ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। উনার পিঠে রক্তের মাখামাখি। সবাই মিলে ধরাধরি করে বাসায় আনার পর গ্রামের চিকিৎসক উনাক প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। উনার পিঠে বড় বড় নখের আঁচড় লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো এতো গভীর ছিল যে অনেকটা কেটে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো। নানা ভাইকে জরুরী ভাবে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করা হয়। উনি প্রায় ১ মাস পর সুস্থ হয়ে উঠেন।

এরপরের দিন সেই বট গাছের ডালে একজনের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। সেই লোকটা কে ছিল তা ঐ গ্রামের মানুষের অজানা। সেই রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়।

এই ঘটনার পড়ে নানা ভাই এর সাথে আরো একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সেটি আজকে আর লিখলাম না। তবে, আমার মনে হয়েছে, দুটো ঘটনা এক করলে হয়তো এর কোনো উপসংহার টানা যায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি অনেক বড়। তাই আজকে আর শেয়ার করলাম না। আপনারা চাইলে পরবর্তীতে লিখে আমি এডমিনের কাছে পাঠিয়ে দিবো।

যিনি পাঠিয়েছেনঃ Selim Rayhan

বাংলা রি রাইটিং করেছেনঃ অ্যাডমিন

রেগুলার লাইক দিলে রেগুলার গল্প দিবো । কারণ আপনাদের লাইক আমাদের পেজটিকে চালাতে উৎসাহ দেয় । গুডনাইট সবাইকে ।

আজও নাসিমার দিনটা শুরু হল থাপ্পড় খেয়ে। থাপ্পড় উর্মিই মারল। সকালবেলায় উর্মির ঘরে চা নিয়ে ঢুকেছিল নাসিমা। চায়ে নাকি চিনি কম হয়েছিল তাই । নাসিমাকে উর্মি প্রায় দিনই উঠতে-বসতে চড়-থাপ্পড় মারে। নাসিমা কী আর করবে। চুপচাপ সহ্য করে যায়। ঢাকা শহরে ভাত যে অত সস্তা না, তা নাসিমা জানে। ওর মতো যারা এই শহরে বেঁচে আছে, তারা কিল গুঁতো খেয়েই বেঁচে আছে।
নাসিমার ওপর বিরক্ত উর্মি। নাসিমা ভারি অলস। তার ওপর কথা শোনে না। কোনও কাজেরও না। চা-টাও ঠিকমতো বানাতে পারে না। তবে নাসিমার ওপর উর্মির বিরক্ত হওয়ার অন্য একটি কারণ রয়েছে। নাসিমা আর উর্মি দুজন প্রায় সমবয়েসি। তাছাড়া দুজনের চেহারায় ভারি মিলও আছে। ওদের দেখলে যমজ বোন বলে মনে হয়। উর্মীর রংটা ওর বাবার মতন। শ্যামলা। নাসিমার সঙ্গে উর্মির চোখ -নাক -ঠোঁট, এমন কী ঠোঁটের নিচের তিল পর্যন্ত মিল। দাঁড়ানো কিংবা তাকানোর ভঙ্গিতে মিল আছে । এতে উর্মী অস্বস্তি বোধ করে । ও বোঝে যে এ নিয়ে লোকে আড়ালে কথা বলে। অথচ এমন হওয়ার কথা নয়। ব্যাপারটা কাকতালীয় ছাড়া আর কি! মাস তিনেক হল এ বাড়িতে কাজে ঢুকেছে নাসিমা। শেরপুরের মেয়ে। ঝর্নার মা দিয়ে গেছে। র্ঝনার মা এই এরিয়ায় কাজের লোক সাপলাই দেয়।
উর্মী ওর মাকে বলে, মা, নাসিমাকে বিদায় করে দাও। ভারি পাজি মেয়ে। কথাটথা শোনে না।
মা বলে, দেখি।
দেখিটেখি না। ওকে বিদায় করে দিতেই হবে। উর্মি খানিকটা চেঁচিয়েই বলে।
উর্মির মা মোর্শেদা মেয়ের কথা সিরিয়াসলিই নেন। তার কারণ আছে। মোর্শেদার বড় ছেলে আরমান কানাডায় সেটেল করেছে। যোগাযোগ খুব একটা রাখেও না । ছেলের অবর্তমানে উর্মিই এখন সব …

একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে উর্মি । আনজুম নামে একটা ছেলের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ট সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। আনজুম দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম। বলিষ্ট গড়ন। ঘাড় অবধি চুল। ৩২ লাখ টাকার মিৎসুমিসি ইএক্স ল্যান্সার চালায়। আনজুমরা বেশ রিচ। ওদের তৈরি পোশাক ও আবাসন শিল্পের পারিবারিক ব্যবসা। উর্মীর বাবারও তৈরি পোশাক ও আবাসন শিল্পের ব্যবসা। তাই আনজুমের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে দ্বিধা করেনি উর্মির।

একদিন বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরল উর্মি। বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড়। তারা গেটের ওপাশে উকিঁ দিচ্ছে। উর্মি অবাক। কি ব্যাপার? উর্মি মোবাইল অফ করে রেখেছিল। আজ সারাদিনই উর্মি আনজুমের সঙ্গে ওদেরই একটা নতুন প্রজেক্টের ফাঁকা ফ্ল্যাটে কাটিয়েছে। এরকম মাঝে-মাঝেই যায় ওরা। তখন মোবাইল বন্ধ রাখে উর্মি।
গেটের কাছে ইদ্রিস দাঁড়িয়ে । ইদ্রিস এ বাড়ির দারোয়ান। উর্মি জিগ্যেস করে, কি ব্যাপার ?
ইদ্রিস বলল, নাছিমায় সুইসাইড করছে আফা।
উর্মির বুকটা ধক করে ওঠে। কি … কি ভাবে?
ইদ্রিস গলায় ওড়না প্যাঁচায়।
ওহ্ । কখন?
কইবার পারি না। তিনটার সময় হইব।
চোখেমুখে অন্ধকার দেখে উর্মি। সেই সঙ্গে অজানা আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে।
গতকাল রাতেও নাসিমাকে বিদায় করার জন্য মাকে চাপ দিয়েছিল উর্মি।

নাসিমার আত্মহত্যার ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি উর্মির বাবা এ কে নাজমূল করিমের। একে তিনি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী তার ওপর পলিটিক্যাল কানেকশন ভালো। পুলিশ রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হল । ধর্ষনের আলামত পাওয়া যায়নি বলে পানি বেশি ঘোলা হয়নি।

নাসিমার ব্যাপারটা ভুলে যেতে উর্মির সময় লাগেনি। তবে মনের ভিতরে একটা খচখচানি ছিল। ঝর্নার মার সঙ্গে কথা বলেছিল উর্মি। নাসিমা মা-বাবাকে হারিয়েছিল ছোটবেলায়। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের কাছে লাত্থিগুঁতা খেয়ে মানুষ। গ্রামে কেউ নেই। চাকরি ছাড়তে হবে শুনে ভীষন ভেঙে পড়েছিল নাসিমা। ঝর্নার মা রাতারাতি অন্য কোথাও কাজ ঠিক করে দিতে পারেনি। আরও কটা দিন থাকার জন্য উর্মির পায়ে ধরেছিল নাসিমা । উর্মি লাথি মেরেছিল …
…কিন্তু নাসিমার জন্য শোক করার সময় নেই। জীবনের আনন্দিত মুহূর্তগুলি কাটছে উর্মির । আনজুম নতুন একটা স্পোটস কার কিনেছে। সেই প্রচন্ড গতির গাড়িতে বসে থাকলে আত্মগ্লানি টের পাওয়া যায় না ।

মাস ছয়েক পরের ঘটনা।

… দিনটা ছিল মেঘলা। আনজুম-এর সঙ্গে ওদেরই প্রোজেক্টের একটা অর্ধ-সমাপ্ত বহুতলে এসেছে উর্মি। আনজুম আজকাল ক্লাসও কম করে। রিয়েল এসটেট ব্যবসায় সময় দিচ্ছে বেশি। আবাসন শিল্পে নাকি মন্দা চলছে । আনজুমের বাবা ঋন-টিন নিয়ে বেশ টেনশনে আছেন। আনজুম ওর বাবাকে হেল্প করছে।
বেশ বড়ো সরো ফ্ল্যাট। বত্রিশ ’শ স্কোয়ার ফিট। ফাঁকা ফ্ল্যাট। পুরো কাজ তখনও শেষ হয়নি। জানালার কাঁচ লাগানো হয়নি। মেঝেতে টাইলস বসানোর পর ঘঁষাঘঁসি চলছে বোঝা যায়।
উর্মি চুমু খেতে যাবে-আনজুম মুখ সরিয়ে নেয়।
কি হল? উর্মি অবাক।
একটা সিগারেট ধরিয়ে গম্ভীর কন্ঠে আনজুম জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা কে?
ছেলেটা কে মানে? উর্মি অবাক। সতেরো তলার ওপর হুহু বাতাসে ওর চুল উড়ছিল।
যার সঙ্গে গতকাল বিকেলে প্রিন্স প্লাজায় ঘুরছিলে? আনজুম এর কন্ঠস্বর কী রকম শীতল শোনায়।
উর্মি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, কি আশ্চর্য! গতকাল বিকেলে আমি আমার কাজিন, মানে মুনমুনদের বাড়িতে ছিলাম। ওর বার্থডে ছিল। তোমাকে আগেই বলেছি।
মিথ্যাকথা! বলে উর্মির গালে থাপ্পড় মারে আনজুম।
থাপ্পড় টলে ওঠে উর্মীর।শ্যামলা মুখে আঙুলের লাল ছোপ পড়ে। মাথার ভিতরে বিদ্যুতের রেখা বয়ে গেল যেন। তারপরও নিজেকে সামলে উর্মি বলল, বিশ্বাস না হয় তো মুনমুনকে ফোন …কথা শেষ হল না। দ্বিতীয় চড়টা উর্মির গালে ওপর ফাটল।
উর্মি আতঙ্কে নীল হয়ে যায়। আমাকে মারার জন্য আনজুম আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে? এখন যদি খোলা জানালা দিয়ে আমাকে নীচে ফেলে দেয়। কিন্তু কেন? আমি তো কাল বিকেলে মুনমুনদের বাড়িতে ছিলাম। আনজুম তাহলে প্রিন্স প্লাজায় কাকে দেখল? ওর শরীরে শীলত স্রোত বয়ে যায়।
উর্মি দৌড় দেয়। ফ্ল্যাটের দরজা লাগানো হয়নি । সেই ফাঁকা জায়গায় উর্মির চুলের মুঠি ধরে ফেলে আনজুম। উর্মি থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভাগ্য ভালো … আনজুম তখনই টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। উর্মি করিডোরে বেরিয়ে আসে। করিডোরে শ্রমিকরা কাজ করছিল। কাঠের কাজ। গ্রিলের কাজ।
কিছুটা রক্তাক্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে উর্মি।
অনেকটা সময় বাথরুমে কাটায়। রক্ত পরিস্কার করে। বাথটাবে শুয়ে থাকে। কাঁদে। শরীরে কোষে কোষে আনজুমের প্রতি ঘৃনা টের পায় । আর ভয় পায়। কে ছিল প্রিন্স প্লাজায়? আমার মতো দেখতে। কেন? ওর শরীর শিরশির করে।
রাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে উর্মি । দেখে ফাঁকা একটা ঘর। কাঠের মেঝে। ঠিক মাঝখানে সোফা। কে যেন মুখ ঘুরিয়ে বসে রয়েছে। উর্মি জানে কে … ঘরে একটাই দরজা। উর্মি জানে দরজা খুললে কাকে দেখতে পাবে …
ইউনিভার্সিটি আর যায় না উর্মি। সারাদিন ঘরে থাকে। বাড়িতেও ভালো লাগে না। মনে হয় কেউ ওকে দেখছে। বাথরুমে গেলে শরীর শিরশির করে। একরাতে। রাতে ঘুম আসছিল না। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছিল। আলো জ্বেলে দেখে রাত দুটো বাজে। চা বানাতে কিচেনে গেল । কিচেনে আলো জ্বলছিল। নাসিমাকে চা বানাতে দেখে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে। …তারপর থেকেই আতঙ্ক গ্রাস করেছে ওকে। এ বাড়ি থেকে আমাকে পালাতে হবে। উর্মি মনে মনে বলে।
রাতে ঘুম হয়নি।
সকালে মা বলে, তোর সঙ্গে কথা ছিল।
বল।
মা বলল, জানিসই তো, তোর বাবার শরীর ভালো না। তোর বাবার তোর জন্য একটা ছেলে পছন্দ করেছে।
উর্মি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মুক্তি এত সহজে মিলবে কে জানত। উর্মি বলে, তুমি বাবাকে বলো, বিয়েতে আমি রাজি মা।
পাত্রের নাম মাহাতাব আহমেদ পল্লব। বুয়েট থেকে পাস করা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার । বড় একটি রিয়েল এসটেট ফার্মে চাকরি করে। অফিস গুলশান। থাকে উত্তরা।
… বিয়ে হয়ে গেল।
বিয়ের পর ধানমন্ডিতে আলাদা ফ্ল্যাট নিল মাহাতাব । পড়াশোনা আর কনটিনিউ করল না উর্মি । বিয়ের পর শরীরজুড়ে কেমন এক আলস্য ভর করল। মাহাতাব সারাদিন অফিসে থাকে। রান্নাবান্না আর শপিং করে কখন উর্মির সময় কেটে যায় । টেলিফোনে মার সঙ্গে কথা হয়। মাঝে-মাঝে উর্মির দেওর – ননদরা সব আসে। ওদের সঙ্গে কথা বলেও সময় কাটে।
উর্মির শাশুড়ি একটা কাজের মেয়ে পাঠিয়েছিলেন। কালো করে শুকনো মতন ষোল-সতেরো বছর বয়েস। মেয়েটির নাম ‘নাসিমা’ শুনে চমকে উঠেছিল উর্মি। বলল, না মা থাক। আমার এখন কাজের লোকের দরকার নেই। পরে যখন লাগবে তখন আপনাকে বলব।

বিয়ের তিন মাস পর উর্মির বাবা মারা গেলেন।
স্ট্রোক …
তার ঠিক ছ’মাস পর উর্মির মা ।
উর্মিদের কলাবাগানের বাড়িটা শূন্য আর ফাঁকা হয়ে গেল।

বিষন্ন শোকগ্রস্থ উর্মিকে আগলে রাখল মাহাতাব ।
পৃথিবীতে উর্মির যে আর কেউ রইল না, তা বুঝতে দিল না। মালয়েশিয়া নিয়ে গেল। সপ্তাহ খানেক পেনাং ছিল। তেলুক বাহাং বিচে অনেক রাত অবধি জেগে থেকে মাবাবা মৃত্যুর শোক ভোলার চেষ্টা করেছে উর্মি। রিডাং আইল্যান্ডে ঘুরে বেড়াল। পমপম আর মাবুল আইল্যান্ডেও গেল।
বিয়ের পরপরই উর্মি বুঝেছিল- মাহাতাব দারুণ কোমল মনের একটা ছেলে । দারুন সফিসটিকেডে। রবীন্দ্রসংগীত শোনে। বই পড়ে। ভালো ভালো মুভি দেখে। আর ক্রিকেট পাগল। রান্নাবান্নার ব্যাপারেও মাহাতাবের প্রবল উৎসাহ আছে। রান্নার সময় সাহায্য করে উর্মিকে ।

এক সন্ধ্যায় মাহাতাব ঘরে ফিরে এল। মুখ ভীষণ গম্ভীর।
উর্মির বুক ছ্যাঁত করে ওঠে। কিছু হয়েছে? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে উর্মি।
মাহাতাব গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, ছেলেটা কে?
মুহূর্তেই জমে যায় উর্মি । সেই সঙ্গে প্রবল এক আতঙ্ক গ্রাস করতে থাকে। কোনওমতে বলে, ছেলেটা কে মানে?
আজ দুপুরে যার সঙ্গে বসুন্ধরায় ঘুরছিলে?
ফ্ল্যাটে যেন বজ্রপাত হল!
উর্মি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, কি বলছ তুমি? আশ্চর্য! আমি তো আজ সারাদিনই ঘরে ছিলাম। তোমার জন্য পিকিং ডাক রান্না করছিলাম। ওই দ্যাখো ওভেনে এখনও আছে। বারোটা দিকে তোমার সঙ্গে একবার কথা হল। কেন তোমার মনে নেই?
আমি সাড়ে তিনটের দিকে ফোন করেছিলাম। তখন ফোন ধরনি কেন? মাহাতাবের কন্ঠস্বর কেমন শীতল শোনালো।
ফোন করেছিলে? কখন? মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছিল। হুমায়ুন আহমেদের একটা বই পড়ছিলাম …
মাহাতাব আরও কাছে এগিয়ে আসে। ওর চোখমুখ কেমন কঠোর দেখায় । চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, বিয়ের আগে তোমার সঙ্গে কারও সম্পর্ক ছিল উর্মি?
উর্মি কি উত্তর দেবে? ওর সারা মুখে নোনতা ঘাম পড়েছে । মুখটা তিতা লাগছে। জিভ ভারী। নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে।
মাহাতাব বলে, বিয়ের আগে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে বিয়ের পরও কনটিনিউ করা …ছিঃ … আমি তোমাকে বিশ্বাস করতাম …

উর্মির সারা শরীর কেঁপে ওঠে। উর্মি জানে মাহাতাব আনজুম-এর মতো রাফ না। ওর গায়ে হাত তুলবে না। তবে মাহাতাব আর একসঙ্গে থাকবে না। মুহূর্তেই অনেক কিছু পরিস্কার হয়ে ওঠে।

হয়তো … হয়তো উর্মিকে কলাবাগানের শূন্য আর ফাঁকা বাড়িতে ফিরে যেতে হবে …
যে বাড়িতে ওর জন্য অপেক্ষা করে আছে নাসিমা …

Related posts