বিজ্ঞানের আজব আবিষ্কার

বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগ গবেষণার বিষয়বস্তু এবং ফলাফল বেশ গুরুগম্ভীর হয়। কিন্তু মাঝে মধ্যে অনেক আবিষ্কার এতই অদ্ভুত হয় যে, অবাক হয়ে যান স্বয়ং বিজ্ঞানীরাই।

আজব
জীবন বাঁচাতে তেলাপোকা : যে তেলাপোকা অনেকের ভয়ের কারণ হয়, সেই তেলাপোকাই বাঁচাতে পারে মূল্যবান জীবন। জীবন্ত তেলাপোকা ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন রিমোট কন্ট্রোলড সাইবর্গ ককরোচ। এই সাইবর্গ তেলাপোকার কাজ হবে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকায় আহত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা।
ব্রিজ টু নোহোয়ার : ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতিটা কেবল তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দিয়েই খুঁজে পাওয়া যায়। পৃথিবী থেকে ২৭০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে দুটি গ্যালাক্সির মাঝে উপস্থিতি দানবীয় এক ডার্ক ম্যাটার ব্রিজের। বেশকয়েক বছর আগে হাওয়াইয়ের সুবারু টেলিস্কোপ ডার্ক ম্যাটারের ব্রিজটির উপস্থিতি ধরা পড়লেও তখন ব্যাপারটি আমলে নেননি কেউ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন পুরোদমে গবেষণা করে রহস্যময় ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। যেখানে ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি থাকে, সেখানে একাধিক গ্যালাক্সি জট বেঁধে থাকে।
মৃতদেহ চিহ্নিত করবে ম্যাগোট : মানুষের মৃতদেহ খেয়ে শেষ করে ফেলা ম্যাগোট বা শূককিটের দেহ থেকেই জানা যাবে মৃতদেহের পরিচয়। মেক্সিকোর পুলিশ বিভাগের আবিষ্কৃত একটি মৃতদেহ আগুনে এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে, কোনোভাবেই মৃতদেহের পরিচয় নির্ধারণ করা সম্ভব ছিল না। ওই মৃতদেহটিতে কয়েকটি শূককিট স্থাপন করেন বিজ্ঞানীরা। পরে ওই শূককিটগুলো থেকে পাওয়া মৃতদেহের ডিএনএ থেকে ওই ব্যক্তির পরিচয় নির্ধারণ করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা।
বেবি ক্রাইম ফাইটার : লন্ডনের অপরাধপ্রবণ এলাকা গ্রেভস্যান্ডের দোকানে লুট ঠেকাতে দোকানের সামনে ছোট্ট শিশুদের ছবি ঝোলাচ্ছেন স্থানীয় দোকানদাররা। তাদের আশা বাচ্চাদের ছবি দেখেই চুরি-ডাকাতি ছেড়ে ঘরে ফিরে যাবে অপরাধীরা। ওই স্থানীয় দোকানদারদের এই পদক্ষেপ যে ভিত্তিহীন, তা কিন্তু নয়। এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, শিশুদের মিষ্টি মুখটি মানুষের মস্তিষ্কের আদুরে অংশটিকে চালু করে দেয়।
নতুন মানব প্রজাতি : নিন্ডারথাল আর হবিটরা ছাড়াও আধুনিক মানুষের পাশাপাশি পৃথিবীতে অস্তিত্ব ছিল আরো একটি মানব প্রজাতির। বিজ্ঞানীরা রেড ডিয়ার কেভ পিপল নামের মানুষের নতুন একটি প্রজাতির কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে। পৃথিবীতে অদ্ভুত আকৃতির এই মানুষদের অস্তিত্ব ছিল ১১ হাজার বছর আগে, বরফ যুগের শেষ দিকে।
ফিরে আসবে ফসিল ফরেস্ট : বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির অপ্রত্যাশিত ফলাফল বলা চলে এটিকে। আর্কটিক অঞ্চলের পুরু বরফের নিচে ফসিলে পরিণত হয়ে চাপা পড়ে আছে প্রাচীন বন। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আর্কটিক বরফ গলে তার জায়গায় ফিরে আসতে পারে ২৫ লাখ বছরের ওই পুরনো বন।
নীল-সবুজ মধু : হঠাৎ করে নীল আর সবুজ রঙের মধু তৈরি করা শুরু করে ফরাসি মধুচাষিদের বেশ ভড়কে দিয়েছিল মৌমাছিরা। এই রঙিন মধু তৈরির কারণটি ছিল আরো অদ্ভুত, মৌমাছিদের চকোলেট আসক্তি! ফুলের নির্যাস সংগ্রহ করা বাদ দিয়ে চকোলেট ফ্যাক্টরি আর বায়োগ্যাস প্লান্টের বর্জ্য থেকে চিনি সংগ্রহ করা শুরু করেছিল মৌমাছিরা। যার ফলাফল, রঙিন মধু।
মায়ের মস্তিষ্কে শিশুর কোষ : বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবাক করে দেয় মায়ের মস্তিষ্কে গর্ভের শিশুর কোষের উপস্থিতি। এমনকি গর্ভের শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কয়েক দশকেরও বেশি সময় মায়ের মস্তিষ্কে থেকে যায় ওই কোষগুলো। এমনকি ৯৪ বছর বয়সী এক মৃত নারীর মস্তিষ্কে তার সন্তানের কোষের উপস্থিতি খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। ওই কোষগুলো দীর্ঘদিন ধরে মায়ের মস্তিষ্কে থেকে কী করে সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত না হলেও, কোষগুলো গর্ভপরবর্তী অবস্থায় মায়ের শরীরের টিস্যুগুলোকে মেরামত করে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ডিএনএর মাধ্যমে কেঁচোর বংশবৃদ্ধি : বংশগতির ধারক ও বাহক ডিএনএ স্থানান্তরের মাধ্যমে প্রজনন ছাড়াই বংশবৃদ্ধি করে বিডিলয়েড রোটিফার ওয়ার্ম নামের একজাতের বিশেষ কেঁচো। প্রাণিজগতে এমন উদাহরণ একেবারেই হাতে গোনা। যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে একদিকে বাড়ে জিন বৈচিত্র্য, তেমনি প্রতিরোধ হয় ক্ষতিকারক জিন বিবর্তন। কিন্তু কোনো রকমের যৌনক্রিয়া ছাড়াই আট কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে আছে বিডিলয়েড রোটিফার ওয়ার্ম নামের এক জাতের বিশেষ কেঁচো। এ জাতের কেঁচোগুলোর মধ্যে পুরুষ কোনো কেঁচো নেই, বরং সবই স্ত্রী লিঙ্গের। খাবার হিসেবে এদের পছন্দ বিভিন্ন ফাংগাস আর ব্যাকটেরিয়া। ফাংগাস আর ব্যাকটেরিয়া ডিএনএ নিয়ে নিজের জেনেটিক কোডে মিশিয়ে নেয় রোটিফার ওয়ার্ম। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ওই ডিএনএর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণেই টিকে রয়েছে রোটিফার ওয়ার্ম।

Related posts

Leave a Comment