‘ইউনিপেটু’র প্রতারণা-লগ্নি টাকা পরিশোধে কিডনি বিক্রি করতে চান মৌলভীবাজারের স্বপ্না আচার্য্য’

এম শাহজাহান আহমদ, মৌলভীবাজার : ‘ভাই এখানে রক্ত বেচা যায়নি? আমি রক্ত বেছতাম’। ‘ভাই এখানে কিডনি বেচা যায়নি? আমি কিডনি বেছতাম’। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের সহকারী ইন্সপেক্টরের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন করিমপুর গ্রামের স্বপ্না আচার্য। স্বামীর হাড়ভাঙ্গা শ্রম আর প্রাইভেট পড়িয়ে যে টাকা জমিয়েছিলেন ‘ইউনিপেটু’র কর্মকর্তার লোভনীয় অফারের ফাঁদে পা দিয়ে সব কিছু হারিয়েছেন তিনি। স্বামী সুভাষ আচার্যের জমানো ৫০ হাজার টাকা আর লগ্নি এনে আরও ২৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ‘ইউনিপেটু’র স্থানীয় কর্মী আশরাফ হোসেনের হাতে। কিন্তু প্রথম কিস্তি পাওয়ার সময়ই বুঝতে পারেন তিনি ভুল জায়গায় টাকা বিনিয়োগ করেছেন। পালিয়েছেন ইউনিপেটুর সেই কর্মকর্তা। তার বাসার দরজায় গিয়ে তালা দেখে বুঝতে পারেন সে পালিয়েছে। কিন্তু স্বামীকে না জানিয়ে দেয়া টাকা কোথায় পাবেন; হন্য হয়ে খুঁজছিলেন তিনি। নিরুপায় হয়ে আসেন রাজনগর উপেজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিডনি বিক্রি করতে। রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে স্বপ্না আচার্যের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ইউনিপেটুর স্থানীয় এজেন্ট আশরাফ হোসেনের সঙ্গে মুন্সীবাজারের তার পরিচয় হয়েছিল। এ সময় সে ইউনিপেটুর লাভের দিকগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিল। তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে স্বামী সুভাষ আচার্যকে না জানিয়ে ২০১০ সালের ডিসেম্বর ও ২০১১ জানুয়ারি মাসে স্বামীর জমানো ৫০ হাজার টাকা ও ২৫ হাজার টাকা লগ্নি এনে দিয়েছিলেন আশরাফ হোসেনের কাছে। ৫০ হাজার টাকার একটি রিসিটও দিয়েছিল আশরাফ।

২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ প্রথম কিস্তির ১৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল। ২২ তারিখ পেরিয়ে গেলেও যখন সে টাকা নিয়ে আসেনি তখন আশরাফের খোঁজে তার বাসায় যান। কিন্তু মুন্সীবাজারে তার বাসার দরজায় তালা দেখে মনে করেন সে হয়তো বাইরে গেছে। পরের দিন আবারও গিয়ে তালা দেখে মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন সে এখানে নেই। চলে গেছে। তখনই তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এখনও খোঁজ পাননি আশরাফের। স্বপ্না আচার্য আরও বলেন, ‘নিজের কিডনি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে হলেও স্বামীর হাতে টাকা তুলে দিতে চাই। আমি আমার স্বামী, সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলেছি।’ রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সের সহকারী ইন্সপেক্টর খছরু আহমদ চৌধুরী জানান, স্বপ্না আচার্য প্রথমে রক্ত বিক্রির কথা জিজ্ঞেস করেছিল তখন বলেছিলাম এখানে রক্ত বিক্রির সুযোগ নেই। পরে যখন কিডনি বিক্রির কথা বলে তখন সন্দেহবশত জিজ্ঞাসা করলে স্বপ্না আচার্য ‘ইউনিপেটু’র প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস করে। আমিরপুর গ্রামের ওলীদ আহমদ বলেন, সিলেটের এক এজেন্টের মাধ্যমে তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। প্রথম ১০ হাজার টাকা পাওয়ার পর আর কোন টাকা পাননি। এরপর থেকেই ইউনিপের স্থানীয় অফিস বন্ধ।

Related posts

Leave a Comment