মানুষকে লোভ দেখানোই ছিল ইউনিপেটুইউর মূল কৌশল!

 

তথাকথিত বহুধাপ বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ইউনিপেটুইউর কৌশল ছিল মানুষকে লোভে ফেলানো। এ কৌশলেই ১০ মাসে বিনিয়োগ করা টাকা দ্বিগুণের কথা বলে ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আর আস্থা অর্জনে ব্যবহার করা হয় সরকারি অনুমোদনপত্র, মন্ত্রী, নেতা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসীর হোসেন রিমান্ডে এ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। মুনতাসীর জানান, লোভের কৌশল অবলম্বন করায় অল্প দিনেই স্রোতের মতো টাকা আসতে থাকে। একপর্যায়ে স্রোত হয়ে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন। পিয়ন থেকে কর্মকর্তা যে যেভাবে পেরেছে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গত ৫ মে রাতে মুনতাসীর ও মহাব্যবস্থাপক জামশেদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুটি মামলায় তিন দিন করে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয় মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। গত রোববার দুজনকে আরও চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, মুনতাসীর ধূর্ত ও মেধাবী। তিনি খুব সুচারুভাবে প্রতারণার জাল বিস্তৃত করেছিলেন। তবে অভ্যন্তরীণ লুটপাটে বেসামাল হয়ে পড়েন। শেষমেশ আখের গুছিয়ে চলে যান আত্মগোপনে।
পুলিশের বিশেষ শাখার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ১০ মাসে গ্রাহকদের দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার ইউনিপেটুইউর প্রস্তাব সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। মালয়েশিয়ার স্বর্ণ উত্তোলনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল তারা। তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গ্রাহকদের সংগঠন ইউনিপে মেম্বার্স ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি সরোয়ার মোর্শেদ বলেন, সরকারি অনুমোদন, মন্ত্রীদের অতিথি হওয়া, প্রভাবশালী নেতার ভবন উদ্বোধনসহ বিভিন্ন কিছু দেখে তাঁরা ইউনিপেটুইউর ওপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন। মালয়েশিয়ার ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্রও তাদের দেখানো হয়েছিল।
কর্মী থেকে মালিক: জিজ্ঞাসাবাদে মুনতাসীর জানান, তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ১৯৯৬ সালের দিকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় আসেন। সিটি কলেজ থেকে ডিগ্রি ও জগন্নাথ কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। এ সময় একটি এমএলএম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় নিজেই প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এ জন্য ভারতের এমএলএম নীতিমালাসহ বিভিন্ন কলাকৌশল রপ্ত করতে থাকেন। একপর্যায়ে পূর্বপরিচিত শাহীন, জামশেদকে নিয়ে শুরু করেন ইউনিপের যাত্রা।
মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) গোলাম মোস্তফা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোটি টাকার কাবিন: জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ওসি মাহমুদুল বলেন, গত জানুয়ারি মাসে এক কোটি টাকার কাবিনে বিয়ে করেন মুনতাসীর। ফেব্রুয়ারিতে এক লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীকে শাড়ি কিনে দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনেন। এর বেশির ভাগই স্ত্রী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে।
তবে ইউনিপেটুইউর গ্রাহকদের ভাষ্যমতে, জানুয়ারি মাসে মুনতাসীর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ব্যাংকে তিনি প্রায় ১০০ কোটি টাকা রেখেছেন।
মুনতাসীর ছাড়াও ইউনিপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ তাহের রামপুরা বনশ্রীতে দুটি ফ্ল্যাট ও বিলাসবহুল তিনটি গাড়ি কিনেছেন। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন আরেক কর্মকর্তা মিঠু চৌধুরী। বিনিয়োগ করা টাকা দিয়ে তিনি একটি পত্রিকা, গুলশানে থাই রিক্রিয়েশন সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জায়গাজমি ও বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। বলছিলেন ওসি মাহমুদুল।
টাকা দিয়ে আন্দোলন দমন!: মুনতাসীর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, টাকা ফেরতে গ্রাহকেরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও তা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। কারণ যখনই কোনো আন্দোলন সোচ্চার হতো, তখন নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজনকে ডেকে টাকা ধরিয়ে দিতেন তাঁরা। আর এতেই আন্দোলন চুপসে যেত। ফলে আন্দোলন হলেও তা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এতে কারও টনকও নড়েনি।

 

সুত্রঃ প্রথমআলো

Related posts

Leave a Comment