রাজধানীতেই ৭ শীর্ষ প্রতারক !!!

 

টাকা স্থানান্তর হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের একাউন্টে

খোদ ঢাকাতেই রয়েছেন মাল্টি লেভেল মার্কেটিং ইউনিপেটুইউ’র ৭ প্রতারক কর্মকর্তা। ইউনিপেটুইউ-এর গুরু বলে খ্যাত সালাউদ্দিন, পরিচালক সাখাওয়াত সুমন, খন্দকার মুকিত আল মাহমুদ, এমএ তাহের, এমএ জলিল, চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান শাহীন ও ইউনিপেটুইউ-এর এমএলএম ট্রি প্রথম অংশের এজেন্ট লিটু গত কয়েকদিন ঢাকাতে অবস্থান করছেন। তাদের সঙ্গে প্রতারিত কয়েকজন গ্রাহকের দফায় দফায় যোগাযোগ হয়েছে। এসব প্রতারকদের কয়েকজন তাদের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ইউনিপেটুইউ মেম্বর ক্লাবের সদস্যদের হুমকিও দিচ্ছেন। এদিকে প্রতারক এসব কর্মকর্তা ও উপদেষ্টারা তাদের কাছে থাকা পে অর্ডার বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে ভাঙ্গিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করছেন। পে অর্ডার ভাঙ্গানোর জন্য এসব প্রতারক কর্মকর্তারা এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি পে অর্ডার ভাঙ্গানোর জন্য সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রতারিত সদস্যরা জানিয়েছেন, ইউনিপেটুইউ-এর গুরু বলে খ্যাত সালাউদ্দিন বর্তমানে ঢাকাতে রয়েছেন। তিনি দক্ষিণখানের তার ১২ তলা ভবনে বসবাস করেন। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাসার ৬/এ নম্বর ফ্ল্যাটে সালাউদ্দিনের ভিশনারী আইকন লি. নামে একটি এমএলএম কোম্পানি রয়েছে। তিনি ওই কোম্পানিতে দেহরক্ষিদের নিয়ে নিয়মিত অফিসও করছেন। তার সঙ্গে প্রতারিত লোকজন দেখা করলে তিনি হুমকি দেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের বলেন, পুলিশের একজন ডিআইজি তার বন্ধু। তাকে দিয়ে সবাইকে শায়েস্তা করা হবে। প্রতারিতরা জানান, সালাউদ্দিন ইউনিপেটুইউ-এর আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি দেখতেন। ইউনিপেটুইউ বন্ধ হওয়ার আগে ইউনিপেটুইউ এর টাকায় তিনি চীন থেকে চার কন্টেইনার ভর্তি বৈদ্যুতিক চুলা আমদানি করেন। এর মধ্যে এক কন্টেইনার বৈদ্যুতিক চুলা ইউনিপেটুইউ’র কাছে জমা দিলেও তিন  কন্টিনার নিজের কাছে রাখেন। বর্তমানে এই তিন কন্টেইনার চুলা তিনি তার এমএলএম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভিশনারী আইকনের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। তিনি তার কাছে থাকা ইউনিপেটুইউ-এর পে অর্ডার ভাঙ্গানোর জন্য বেশ কয়েকজন এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। তার এজেন্টরা ঢাকার বিভিন্ন বিত্তশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেশ কয়েকটি পে-অর্ডার ভাঙ্গিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন প্রতারিতরা।

এদিকে ইউনিপেটুইউ-এর আরেক ডিরেক্টর এবং ইউনি মাল্টিপারপাসের ট্রেজারার এম এ তাহের বর্তমানে ঢাকার বনশ্রীতে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি কিছুদিন আগে বনশ্রীর ই-ব্লকের ১০ নম্বর রোডে এবং তার আগে সি ব্লকের  ৩ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে ছিলেন। বর্তমানে বাসা বদল করলেও তাকে বনশ্রী এলাকায় নিয়মিত দেখা যায়। তিনি উত্তরা ও বাংলামোটর এলাকায় ব্যবসায়িক কাছে যাতায়াত করেন।

প্রতারিতরা আরো জানিয়েছেন, তিনি পে অর্ডার ভাঙ্গানোর জন্য চট্টগ্রামের যুবক হাসানকে নিয়োগ দিয়েছেন। হাসানের মাধ্যমে তিনি পে অর্ডার কালেকশন করে তা ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে জমা করছেন।

ইউনি ল্যান্ডের ডিরেক্টর সাখাওয়াত সুমন। তিনি ইউনিপেটুইউয়ে ট্রির প্রথম দিককার ৫ নম্বর আইডি হোল্ডার। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের প্রতারিত লোকজন তার আইডির নিচে থাকায় এসব এলাকার প্রতারিতরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। গত শনিবার এক গ্রাহকের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ওই গ্রাহক ইত্তেফাককে জানান, সাখাওয়াত সুমন বর্তমানে ঢাকার উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে থাকেন। টাকা ফেরত চাইলে সাখাওয়াত সুমন তাকে প্রথমে হুমকি দেয়। এরপর বলেন, ‘আপনাদের একটি ভালো রেজাল্ট দেয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি।’ তিনি মামলা তুলে নেয়ার জন্য ওই গ্রাহককে চাপ দেন।

ইউনিপেটুইউর আরেক ডিরেক্টর খন্দকার মুকিত আল মাহমুদ। তার গ্রামের বাড়ি পাবনায়। তিনি বর্তমানে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশে একটি ভবনে থাকেন। তার সঙ্গে প্রতারিত গ্রাহকদের যোগযোগ রয়েছে। মুকিত সরকারের উচ্চ মহলকে ম্যানেজের চেষ্টা করছেন বলে প্রতারিতরা অভিযোগ করছেন।

মেজর (অব) জলিল। তিনি ইউনিপেটুইউ ও ইউনি মাল্টি পারপাসের ডিরেক্টর। ইউনিপেটুইউ এর জমি জমা এবং গাড়ি অর্থাত্ সম্পত্তি’র কাগজপত্র তার কাছে রয়েছে। তিনি ইউনিপেটুইউ এর মামলা হ্যান্ডেলিং করছেন। বর্তমানে তিনি ক্যান্টমেন্ট এর  মাটিকাটা এলাকায় থাকেন।

ইউনিপেটুইউ এর চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান শাহীনও বর্তমানে উত্তরায় একটি বাসায় আত্মগোপন করে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে গত সপ্তাহে তাকে ইউনিপেটুইউয়ের উপদেষ্টা মিঠু চৌধুরীর সঙ্গে কুষ্টিয়াতে দেখা গেছে। প্রতারিতরা বলছেন, তিনি মিঠু চৌধুরীর সহযোগিতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন। তবে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কারো কারো কথা হয়েছে বলে প্রতারিতরা জানান।

লিটু । ইউনিপেটুইউ এর এমএলএম ট্রির প্রথম দিককার এজেন্ট। তার কাছে প্রতারণার তিশ শত কোটি টাকা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। বর্তমানে তিনি ঢাকার মধ্য বাড্ডায় একটি বাসায় থাকেন। তার সঙ্গে গ্রাহকদের যোগাযোগ হচ্ছে। তিনি গ্রাহকদের মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সুত্রঃ ইত্তেফাক

Related posts

Leave a Comment