মুসলিম বালককে দেখে খ্রিস্টান প্রশিক্ষকের ইসলাম গ্রহণ

আবু আফিফা :
ফিলিপাইনের জাতীয় সাঁতার দলের প্রশিক্ষক, ম্যালিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রি নেয়া ক্যাপ্টেন আব্দুল করিম এরসিনাস তার ইসলাম গ্রহনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন এভাবে:
আল্লাহর অসংখ্য প্রশংসা, (এরসিনাস) খ্রিস্টান পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে তিনি আমাকে ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার সৌভাগ্যে ভূষিত করেছেন। আমার জন্ম ও শিক্ষা রাজধানী ম্যানিলার এক খ্রিস্টান পরিবেশে। এখানে  কোনো মুসলিম নেই। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলগুলোতেই মুসলিমদের অবস্থান সীমাবদ্ধ। বাল্যকালে আমার পরিবার চাইত, গির্জায় আমি যেন বেশি বেশি সময় দিই। আমি যখন যৌবনে পা রাখলাম, গির্জায় যেতে কোনো আগ্রহ বোধ করছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিজ ধর্ম খ্রিস্টবাদ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে লাগলাম। এ সম্পর্কে বিস্তর পড়াশোনা শুরু করলাম। দেখলাম, ধর্মমতের ব্যাপক বিভক্তি থাকলেও আল্লাহর একত্ববাদে ঈমান না আনার বেলায় এরা একাট্টা। শিক্ষাজীবন শেষে সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে আমি সৌদি আরব গেলাম। এই প্রথম আমার মুসলিমদের সংস্পর্শে আসা। মিডিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুসলমানদের একটি উগ্রতম গোষ্টী হিসেবে তুলে ধরে। আল্লাহর অসংখ্য শুকরিয়া, আজ আমি যাদের একজনে পরিণত হয়েছি। সেই মুসলিম ভাইদের কারও প্রতি কখনও অস্ত্র তাক করিনি।
আমি সৌদি আরবে যাওয়ার পরেই কেবল মুসলমান সম্পর্কে জানতে পারি। আমি যাদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দিতাম, তাদের মধ্যে ছিল একটি ছেলে। ওর বয়স অনুর্ধ্ব তেরো। খুদে এই মুসলিমের চলাফেরা ও কাজ-কর্মে দেখতাম এক কঠোর নিয়মানুবর্তিতা। ও ছিল শান্ত স্বভাবের। জীবন যাপন সুশৃঙ্খল। আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতির অন্যথা করেনি সে কখনও। যথাসময়ে নামাজ
আদায়ে তার ভক্তি ও নিষ্ঠা ছিল চোখে দেখার মতো। অবসরের সিংহভাগ সময়ই কাটাত তার নিবিষ্ট মনে কোরাআন তেলাওয়াতে।
মুসলিম সেই বালকটির ছিল তীক্ষè মেধা, সেই সঙ্গে ছিল তার বিস্ময়কর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। আমি তার কর্মকান্ডের প্রতি লক্ষ্য করেছি, তার সঙ্গ আমাকে আনন্দ দিচ্ছে- এতটুকু বুঝতে পেরেই সে আমার সামনে একগাদা ইংরেজিতে অনূদিত ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্বের বই উপাস্থাপন করল। ইংরেজী অনুবাদসহ কোরআন শরীফের একটি কপিও দিল। যত পড়লাম আমার সামনে একে একে অজানা জগত উদ্ভাসিত হতে লাগল। আমি বা আমার মতো অন্য কেউ এ জগতের সন্ধান পাননি। এসব পড়ে আমি অত্যন্ত প্রভাবিত হলাম, বিশেষ করে যখন কোরআন শরীফের তরজমা পড়লাম। এই কিতাবে যে একক স্রষ্টার কথা বলা হয়েছে, তা আমার চিন্তার সঙ্গে মিলে গেল। এ চিন্তায় আমি খুব তৃপ্তি ও স্বস্থি বোধ করলাম। এরপর আমি প্রবলভাবে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হলাম। এমনকি আমি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার আগেই নিজের নতুন নামও (আব্দুল করিম) ঠিক করে ফেললাম। আসলে ইসলামের সঙ্গে আমার এই পরিচয়ের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের পর এই বালকটির প্রতিই আমি কৃতজ্ঞ। এই পরিচয়ের পরই শুরু হয় হেদায়েতের পথে আমার অভিযাত্রা।
আমি খুব গরুত্ব দিয়ে প্রতিদিন দেখতে লাগলাম আমার সহকর্মীদের সময়মতো নামাজ পড়া। আমার কর্মক্ষেত্রেই ছিল মসজিদ। আমি পর্যবেক্ষণ করতাম তাদের নামাজ। কী বিস্ময়কর, তন্ময়তায় তারা নামাজে নিমগ্ন হতো। সবাই একসঙ্গে রুকু করছে, সিজদা করছে। একই ইমামের পেছনে সবাই কত শৃঙ্খল ও গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ আদায় করছে।
আমার কর্মস্থলের বন্ধুরাও অনুদারতা দেখাননি। তারা আমাকে জেদ্দায় রাখা এই বালকের মতোই সহযোগিতা করেছেন। যথাযথ যতœ-আত্তি করেছেন। তারা যখন আমার ইসলাম সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসা, ইসলাম নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা এবং নামাজের ব্যাপারে আমার অত্যন্ত কৌতুহল লক্ষ্য করলেন, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু কিতাব পড়তে দিলেন। তাদের দেয়া গ্রন্থগুলোর মধ্যে ছিল আহমদ দিদাতের পাদ্রিদের সঙ্গে সংলাপের বই। সিজওয়ার্টের সঙ্গে আহমদ দিদাতের বিতর্ক অনুষ্ঠানের বই আমার মনে গভীর প্রভাব সৃষ্টি করল। বর্ণনা আর যুক্তি কোনোটির অভাব নেই তাতে। এসব বর্ণনা ও যুক্তিগুলো পড়ে আমি খুব উৎসাহ বোধ করি। অপরদিকে সিজওয়ার্টাকে মনে হতে থাকে পরাজিত ও বিষণœ। তার প্রতিক্রিয়াগুলো যেন আর্তমানুষের প্রতিক্রিয়া। তার অবস্থান যে ভ্রান্তির পক্ষে, মুসলমানদের আগে তা খ্রিস্টানও বুঝতে পারছিল। একপর্যায়ে আমি আহমদ দিদাতের কাছে চিঠি লিখলাম। এতে আমি তার যুক্তির শাণিত অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অসাধারণ ক্ষমতার প্রশংসা করলাম। তার কাছে এ ধরনের অসত্য থেকে সত্য উন্মোচনকারী বার্তা ও সংলাপের বেশি বেশি বই চাইলাম।
এরপর আমি খ্রিস্টান থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। এ উদ্দেশ্যে আমার সহকর্মীদের কাছে এজন্য আমার করণীয় কী, জানতে চাইলাম। আর সেদিনই আমি ইসলাম গ্রহণ করলাম। আমি ঈমান আনলাম আল্লাহর ওপর, তাঁর রাসূলের ওপর এবং শেষ দিবসের ওপর। বিশ্বাস স্থাপন করলাম জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কেও। সে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি।
আমি নিজের অপরিমেয় সৌভাগ্য অনুভব করলাম। আজ অনুগত মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করি। আমি সালাত আদায়ে মসজিদে যাই। সেখানে সিজদাবনত হয়ে এক অপার্থিব তৃপ্তি ও সুখ অনুভব করি। জীবন যাপনেও তেমনই অফুরন্ত প্রশান্তির আস্বাদ পাই। আমার অতীত জীবন ছিল বিশৃঙ্খল আর উদ্দেশ্যহীন হট্টগোলপূর্ণ। আল্লাহ আমাকে সে অবস্থার বদলে আজ আলো, শৃঙ্খলা, সচ্চরিত্র ও মূল্যবোধের জীবন দান করেছেন। সন্দেহ নেই, ইসলাম অনেক মহান ধর্ম। ইসলামে দিক্ষিত হতে পেরে আমার জীবন ধন্য হয়েছে।
সমাপ্ত

Related posts

Leave a Comment