সম্পাদকীয় ::::: জুন – ’১২

মুসলিম রাষ্ট্রে কোনো

ইসলামবিরোধী আইন

করার অবকাশ নেই

 

 

 

এক.

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কিছুদিন পূর্বে এক সেমিনারে বলেছেন, “উত্তরাধিকার সম্পদে মেয়ের অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৬১ সালের মুসলিম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই সংশোধনী ছেলেসন্তানের অবর্তমানে মেয়েসন্তানের পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করবে।”

আইনটি কার্যকর হলে, ছেলেহীন ব্যক্তির সম্পদে তার জ্ঞাতি ভাইদের কোন অধিকার থাকবে না। এভাবে কুরআনবিরোধী আইন করে একজনের স্বার্থ দেখে অন্য প্রাপ্যদের হক নষ্ট করার প্রয়াস চালানো হচ্ছে।

পবিত্র কুরআনে মৃতব্যক্তির সম্পদে  তার ওয়ারিসদের কে কত অংশ পাবে, তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন মুতাবিক ছেলেসন্তানের অবর্তমানে পিতার সম্পত্তিতে মেয়েসন্তানের সাথে অন্যান্য ওয়ারিছদেরও অংশ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই মেয়েসন্তানের সম্পূর্ণ সম্পত্তিতে অধিকার অর্জনের কোনো সুযোগ নেই।

উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ওয়ারিছদের অংশীদারিত্ব বিষয়ে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা এত স্পষ্ট ও বিস্তারিত যে, বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। এই নির্দেশনা মহান আল্লাহর আদেশ, যা অবশ্য পালনীয়। আল্লাহর এ বিধান পবির্তনের ইখতিয়ার কারো নেই।

 

দুই.

বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় আন্তঃধর্ম বিয়ে সম্পাদনের জন্য সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ কাজী নিয়োগ দেয়া হয়। অতঃপর এর বিরুদ্ধে সারা দেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে সেই নিয়োগ প্রত্যাহার করা হয়।

জানা গেছে, এই আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইয়াহুদী কিংবা অন্য যেকোনো ধর্মের যে কেউ কাউকে বিয়ে করতে পারবে। এজন্য পাত্র-পাত্রী কাউকেই ধর্মান্তরিত হতে হবে না। ধর্ম পরিবর্তন ছাড়াই তারা দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করতে পারবে।  আর এ ধরনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া সন্তানের কোনো ধর্মীয় পরিচয় থাকবে না। বড় হয়ে তারা যেকোনো ধর্ম বেছে নিতে পারবে অথবা ধর্ম বিশ্বাস ছাড়াই জীবনযাপন করতে পারবে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো দেখে যে কেউ সহজেই বুঝতে পারে, এটি ইসলামবিরোধী আইন। ইসলামধর্মের বিধান অনুযায়ী, কোনো মুসলিম ব্যক্তি কোনো অমুসলিমকে বিয়ে করতে পারে না। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন – “তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী থেকে উত্তম, যদিও তাদেরকে তোমাদের কাছে ভালো লাগে এবং তোমরা (নারীরা) কোনো মুশরিকদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত না সে ঈমান আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও একজন মুশরিকের তুলনায় অনেক ভালো, যদিও তোমরা তাকে দেখে মোহিত হও। তারা দোযখের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ নিজের হুকুমের মাধ্যমে আহ্বান করেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে।” (সূরাহ বাক্বারা, আয়াত নং ২২১)

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে – কোন বেঈমান মুশরিকের সাথে ঈমানদার মুসলিমের বিয়ে হতে পারে না। বর্তমানের হিন্দু, খ্রিস্টান ও ইয়াহুদীরা – যারা তাওহীদে বিশ্বাসী নয় – তারা মুশরিকদেরই অন্তর্ভূক্ত। আর যারা নাস্তিক তারা তো মুশরিকদের চেয়েও জঘন্য। সুতরাং কোন অমুসলিমের সাথেই মুসলমানদের বিবাহ হতে পারে না। তা কোনক্রমেই শুদ্ধ হবে না। এমনকি তা বিবাহ বলেই গণ্য হবে না। তদুপরি কেউ এরূপ বিবাহ করলে, তারা বিবাহহীনই গণ্য হবে এবং তাদের মেলামেশা হারাম ও যিনা হবে। আর এর মাধ্যমে সন্তান হলে, তারা হারামজাদা বা জারজ পরিগণিত হবে। অধিকন্তু এ হারাম বিবাহ বা হারাম দাম্পত্যকে যদি কেউ হালাল মনে করে, তাহলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে সে কাফিরে পরিণত হবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এ আইনের পরিণতি বড়ই ভয়াবহ।

মুসলমানদের বিবাহ নামায-রোযার মতই মহান আল্লাহর প্রদত্ত একটি বিধান। তাই কেউ ইচ্ছেমতো এই বিধানকে পরিবর্তন করতে পারে না। ইসলাম মানুষের সকল কিছুকে ধর্মীয় বিধানে আবদ্ধ করেছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা কেমন হবে, ইসলাম তা সম্পূর্ণরূপে বাতলে দিয়েছে। কোনো মুসলমান এই বিধানের বাইরে যেতে পারে না।

ব্যক্তি স্বাধীনতার নাম দিয়ে বল্গাহীনভাবে কিছু করার স্বাধীনতা ইসলামে নেই। মুসলমানগণ মহান আল্লাহর হুকুমের অধীন। আল্লাহর হুকুমের বাইরে মুসলমানগণ কোনো আইন বা নিয়ম করতে বা মেনে চলতে পারেন না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন – “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ের বিধান প্রদান করলে, কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণের ক্ষমতা নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করবে, সে চরম পথভ্রষ্টতায় নিপতিত হবে।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং : ৩৬)

Related posts

One Thought to “সম্পাদকীয় ::::: জুন – ’১২

  1. M M NOUR HOSSAIN

    sundor bislason mulok lekha.jaza kaallah.

Leave a Comment