নির্বাচিত কথিকা ::::: মে – ’১২

পরকিয়া একটি

ধ্বংসাত্মক কুকর্ম

রাহেলা আশরাফ খান

‘ঘরের বউ কালা, পরের বউ ভালা’ বাক্যটি প্রবাদ হিসেবে প্রচলিত।  শুধু বউ কেন, জামাইয়ের ক্ষেত্রেও আজ এর বাস্তবতা দেখা যায়। এ ধরনের কুরুচির পুরুষ ও নারীরা তাদের বৈধ জীবনসাথীকে অবজ্ঞা করে অন্যদের দিকে ঝুঁকে যায়। তারা আসলে শয়তানের চক্রে গোলকধাঁধায় পড়ে ভ্রান্তপথে পা বাড়ায়। আর এতে তাদের সাজানো সুখের সংসার তছনছ হয়ে যায়। আসলে এটা যে নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত সীমানা, তা প্রথমে ঘূর্ণাক্ষরেও চিন্তা করে না বিপথগামীরা। এরপর যখন মোহ কেটে যায় এবং এর কুপরিণতি সামনে আসে, তখন তারা দিশাহারা হয়ে উঠে। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, দেশে বিয়ে বিচ্ছেদের সিংহভাগ ঘটনাই ঘটছে পরকীয়ার মতো মহাব্যাধির ভয়াবহতার কারণে। আমাদের দেশে এর সংখ্যা বেড়েই চলছে গাণিতিক হারে যতই দিন যাচ্ছে ততই।

এক দশক আগেও গ্রাম অঞ্চলে কিংবা নি¤œবিত্তের মধ্যে এক্ষেত্রে পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও রাজধানীর উচ্চ ও উচ্চবিত্ত  শ্রেণীর ক্ষেত্রে এ চিত্র ছিল ভিন্ন। কিন‘ ইদানীং আমরা যেটি লক্ষ্য করছি, স্বামীরা প্রবাসে অবস্থানের কারণে গ্রাম-মফস্বল তথা থানা-উপজেলা পর্যায়েও এর ব্যাপকতা অনেকটা বেড়েছে। তাদের স্বামীরা যখন দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকছেন, তখন বধূরা অন্য পুরুষমুখী হচ্ছেন। আর এতে তাদের সংসার জীবনে বড় ধরনের অশান্তি ও বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। তেমনিভাবে পুরুষরা পরিণতি না ভেবে পরনারীতে জড়িয়ে গিয়ে নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছে এবং এর জেরে নিজেদের সোনার সংসারকে ধ্বংস করছে।

যদিও রাজধানীতে বিয়ে বিচ্ছেদের ৭৫ শতাংশ আবেদনই জমা পড়ে নারীর পক্ষে, কিন্তু গ্রামাঞ্চল-মফস্বলে সালিশীর নামে যা হয়, তাও আবার অনৈতিকতা-বৈষম্যতায় ভরপুর। সমাজ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, নিজের সম্পর্কে নারীর অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ ও পুরুষের নৈতিক অবক্ষয় প্রধানত এ দু’টি কারণেই বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও অর্থনৈতিক সঙ্গতির মধ্যে পার্থক্য তৈরি হয়ে তা পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করলেও তা বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়। এক্ষেত্রে নারীর অধিক বিলাসপ্রিয়তা ও আভিজাত্যকে ফুটিয়ে তুলতে বেপরোয়া হওয়াকেও কম দায়ী বলা যায় না।

আরো একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, পশ্চিমা সংস্কৃতি তথা বিজাতীয় ধ্যান-ধারণার অনুকরণের কারণে আমাদের সমাজে নারী-পুরুষরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির নেগেটিভ দিক আমাদের সমাজকে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে। ইউরোপের অনেক  দেশে রয়েছে ‘ফ্রি সেক্স’ সংস্কৃতিÑযা মানুষের নৈতিকতার অধঃপতন ঘটায়। এর বিরূপ প্রভাব আমাদের সমাজে হানা দিয়ে নৈতিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি করছে।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্রতি বছর সালিশী পরিষদে হাজার হাজার বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ে। যা পরবর্তীতে বিবাহ বিচ্ছেদে গড়ায়। সমঝোতার মাধ্যমে আপস মীমাংসা হওয়ার সংখ্যা হাতে  গোণাই বলা যায়। বৈধভাবে কাগজ-কলমে বিচ্ছেদ ঘটানোর জন্য মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত  শ্রেণীর লোকজনই  বেশী যান আদালতে। এর বেশীর ভাগ অভিযোগে দেখা যায়, স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে পরকীয়া, বেপেরোয়া চলাফেরা, মতের অমিল ও মানসিক নির্যাতনসহ অনেক বিষয় অভিযোগে ওঠে আসে।

অপরদিকে আমাদের দেশের স্বনামধন্য লেখক, আমলাসহ উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষরা এমন কিছু  ঘটনা ঘটানÑযা সাধারণ মানুষের এ পথে টানতে উৎসাহ যুগিয়ে চলছে। তাদের এ সকল পরকীয়া বিষবাষ্প হয়ে ছড়াচ্ছে আজ সমাজের প্রায় সর্বক্ষেত্রেই।

ইদানীং পরকীয়ার জড়িয়ে স্বামী, সন্তান ও সাজানো সংসার ফেলে পরপুরুষের হাত ধরে নারীর লাপাত্তা হওয়া, পরকীয়ার জেরে স্বামী/স্ত্রীর হত্যাকা-, সন্তান হত্যা ইত্যকার ভয়াবহ লোমহর্ষক ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনি করে পরকীয়ার ঘটনা পরিবার ও সমাজে যে বিভীষিকার সৃষ্টি করছেÑতা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলামের দৃষ্টিতে বেগানা নারী-পুরুষের প্রেম-ভালবাসা এমনিতেই নাজায়িয ও হারাম। তদুপরি বিবাহিত নারী-পুরুষের পরপুরুষ/পরনারীর প্রতি আসক্তি আরো মারাত্মক কবীরা গুনাহ। এ ধরনের গুনাহর শাস্তি পরকালে খুবই কঠোর হবে। আর দুনিয়ার নিজামেও ইসলামী রাষ্ট্রের মাধ্যমে বিবাহিতদের যিনার শাস্তিস্বরূপ ইসলাম সঙ্গেসার (প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা)-এর দ-বিধি প্রদান করেছে।

আমাদের দেশ মুসলমান দেশ হিসেবে এদেশে পরকীয়া, পরনারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও বেলেল্লাপনা চলতে পারে না। আমরা মনে করি, আজ এবং এখনই এ বিষয়টিকে নিয়ে সমাজসচেতন মানুষ সর্বোপরি সরকারকে ভেবে দেখতে হবে মাদক, দুস্কৃতি ও সন্ত্রাসের মতই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে দেশের সর্বত্র এবং পাশাপাশি এর প্রতি ঘৃণা ও নিন্দা জ্ঞাপনের মাধ্যমে সমাজে এর বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে হবে। সেই সাথে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এর কুফল তুলে ধরে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ইসলামের অনুশাসন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে জনসাধারণের মাঝে। তাহলেই এ অনৈতিক অপকর্মকে সহজে রুখতে পারা যাবে।

Related posts

One Thought to “নির্বাচিত কথিকা ::::: মে – ’১২

  1. আব্দুল কাহহার ইবনে খলীল

     অনেক পরে হলেও যে আপনারা ওয়েব সাইট খুলেছেন এ জন্য শুকরিয়া 

Leave a Comment