বুলেটিন-পরিক্রমা :::: এপ্রিল – ’১২

 

রাত পোহাতে

বেশী দেরী নেই

পাঞ্জেরী!

ক্বারী ফয়েজ আহমেদ

 

 

॥ এক ॥

যারা ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চান, তারা ধর্মও বুঝেন না, রাজনীতিও বুঝেন না। কথাটি আমার নয়, বলেছেন মহাত্মা গান্ধী। গান্ধীজী আজ বেঁচে থাকলে আমাদের দেশের সেসব লোককে ধর্ম ও রাজনীতির পাঠটি একসঙ্গে গলধঃকরণের দীক্ষার জন্য উনার কাছে পাঠিয়ে দেয়া যায় কিনা ভেবে দেখা যেত।

এদেশে আবারো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জিগির তোলা হচ্ছে। কারা তুলছেন? ঘুরে ফিরে সেই চিরচেনা চেহারাই তো! এরাতো সেই মাথামোটা বুদ্ধির অযাচিত ফেরিওয়ালা, যাদের জনভিত্তি শূন্যের কাছাকাছি। যাদের জনসংশ্লিষ্টতার পরিমাপ ধারাপাতের প্রাথমিক জ্ঞান রাখা একটি শিশুর পক্ষেও বের করে ফেলা সম্ভব। মাঝে মধ্যে লম্ফ-ঝম্ফ, সমগোত্রীয় কোন প্রাইভেট মিডিয়া চ্যানেলে বিবৃতি প্রদান এবং নিরস কোন পত্রিকার পাতায় প্রমাণ সাইজের কিছু আক্রমণাত্মক নিবন্ধ প্রসব করার মধ্যেই যাদের কার্যক্রম সীমিত।

কিছুদিন আগে মুহতারম আইনমন্ত্রী হুংকার ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। আইনমন্ত্রী মহোদয় এটা করতে পারেন কি নাÑসেটা পরের প্রসঙ্গ। তার আগে আমি অবাক হই, বিস্মিত হই, আশ্চর্য হয়ে ভাবিÑএদেশের মুসলমানগণ কেমন মুসলমান? গুটিকয়েক হাতেগোনা লোক ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানাচ্ছেন, এর ভিত্তিতে কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আর সেই বিভ্রান্তি ডালপালা মেলতে শুরু করেছে! অথচ ৮৮% মুসলমানের মধ্য হতে একজনও পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম এই দেশে ধর্মহীন নাস্তিক্যবাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যৌক্তিক দাবীটুকু জানাতে পারেননি! দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে!

 

॥ দুই ॥

গণতন্ত্রের সংজ্ঞার নির্যাস হলÑদেশের অধিকাংশ লোক যাকে বা যাদেরকে পছন্দ করবেন, তিনি বা তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। দেশের অধিকাংশ মানুষ যে মতাদর্শের পক্ষে রায় দেবেন, সেটাই প্রযোজ্য হবে। এর উল্টোটি করা অর্থাৎ ভিন্নমত প্রতিষ্ঠার জন্য ভিন্ন সুরে কথা বলা ও কাজ করা হবে আধুনিক গণতন্ত্রের সাথে গাদ্দারীর নামান্তর।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানী ব্যুরোর ঠিকাদারগণ কি দয়া করে বলবেনÑআমাদের দেশের ক’জন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ চান? যদি মেজোরিটি না চান, তাহলে যারা ধর্মভিত্তিক তথা ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে বিদেশী পয়সায় ওকালতি করছেন, তাদের কথা যে গাজাখোরের কাণ্ডজ্ঞানহীন বেফাশ কথার মতই হয়ে গেল! সাহস থাকলে বিষয়টি জনমত যাচাইয়ের জন্য জনগণের কাছে পেশ করুন। দেখুন, দেশের মানুষ কী বলে!

ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী উত্থাপনকারীগণ বলছেন, এটা গণতন্ত্র ও সংবিধানের চাহিদা। সংবিধান বিষয়ে একটু পরে বলি। তার আগে অনুধাবন করা দরকার, এদেশের ৮৮% মানুষ কিন্তু মুসলমান। এদের সবাই হয়তবা ঠিকমত নামায-রোযা করেন না, তবুও তারা মুসলমান। আর মুসলমান মাত্রই বিশ্বাস করতে হয়, নিজের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সকল স্তরে আল্লাহর বিধান পালন করা অপরিহার্য। কেউ যদি এই বিধান পালন না করেন, তাহলে তিনি পাপী গণ্য হবেন। তবুও মুসলমান থাকবেন। কিন্তু যদি তা বিশ্বাসই না করেন, তাহলে আমাকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে, তিনি আর মুসলমান থাকবেন না, ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবেন।

বস্তুত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা মানেই হচ্ছেÑধর্মহীন তথা অধর্মের পশুরাজনীতি কায়েম করা। এক্ষেত্রে আমাদের অনুধাবন করা দরকার যে, এদেশের সকল সম্পদই লুট করে চেটেপুটে খেয়ে ফেলছেন তথাকথিত রাজনীতিকরা। এমনকি মাটির উপরেরগুলো খেয়ে শেষ করে নজর দিচ্ছেন এবার মাটির নীচের দিকে। তেল, কয়লা, গ্যাস প্রভৃতি জাতীয় খনিজ সম্পদের দিকে এবার তাদের লোলুপ দৃষ্টি। এভাবে দেশের সবটুকুই তারা খেয়ে ফেলতে উদ্যত। কেবল নিজের মা-বোনদেরকে বিক্রি করে খেয়ে ফেলাই বাকী। আর এটা বাকী আছে তাদের ভেতরের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে। যদি সত্যিই রাজনীতি থেকে ধর্মকে খারিজ করে দেয়া হয়, তাহলে বাকীটুকুও যে খেয়ে ফেলতে তারা উদ্যত হবেনÑতা বলাই বাহুল্য।

অপরদিকে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার মানেটা কীÑতাও আমাদের বুঝতে হবে। তার দু’টি অর্থ হতে পারেÑ

(এক) ইসলামধর্মে রাজনীতি আছে, কিন্তু তারা সেটাকে বাস্তবায়ন করতে দিবেন না। এক্ষেত্রে মুসলমানগণের ওপর ফরজ হয়ে যায়Ñতাদের মুকাবিলা করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা। এটাই ইসলামের দাবী।

(দুই) তারা উক্ত কথার দ্বারা এ অর্থ বুঝাতে পারেন যে, ইসলামে রাজনীতি নেই। এটা তাদের সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ও ভুল ধারণা। দেখুন, মহান আল্লাহ দ্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেনÑ“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন (ইসলাম)কে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” সুতরাং ইসলাম যখন দ্বীন হিসেবে পরিপূর্ণ, তখন এতে রাজনীতির মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না থাকলে তা পরিপূর্ণ হয় কিভাবে? আর বাস্তবিকই রাজনীতি পরিপূর্ণভাবেই ইসলামে আছে। এ জন্যইতো ইসলামের নবী হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়িম করে এর মাধ্যমে গোটা জাহানে ইসলামের রাজনীতি প্রসারিত করেছেন। আর ইসলামী বিধানের বিরাট অংশ তথা জনকল্যাণে বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা, যাকাত, ওশর, খিরাজ, খুমুস ইত্যাদি উসূল ও বন্টনের ব্যবস্থা, ইসলামী আদালতের মাধ্যমে দুষ্টের দমনে হদ ও কিসাস কায়েম প্রভৃতি বিধানসমূহের বাস্তবায়ন ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া সম্ভব নয়। এত্থেকেই বুঝা যাচ্ছেÑরাজনীতি ইসলামের কত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুতরাং রাজনীতি থেকে ইসলাম বা ইসলাম থেকে রাজনীতি আলাদা করা যাবে কেমন করে?

তবে একথা সত্য, চুরি-চামারী, দুর্নীতি ও লুটপাটের বস্তাপঁচা রাজনীতি ইসলামে নেই। ইসলামের রাজনীতি ন্যায় ও ইনসাফের। ইসলামের রাজনীতি মজলুমকে তার অধিকার পাইয়ে দেয়ার। ইসলামের রাজনীতি বান্দাকে তার মহান স্রষ্টা প্রদত্ত বিধানাবলীর আলোকে পরিচালিত হতে সাহায্য করার। এই রাজনীতি যদি কোন রাষ্ট্রে সত্যিকার অর্থে কায়েম হয়, তাহলে খোদার কসম, সে দেশের নিরাপত্তা, শান্তি ও শৃঙ্খলার জোয়ার কেউ রুখতে পারবে না! কেউ না!!

 

॥ তিন ॥

আমাদের দেশের কতিপয় চিহ্নিত লেখক-বুদ্ধিজীবীগণ কথায় কথায় সংবিধানের দোহাই দিয়ে মতলবী কথা প্রচার করেন। তারা ভেবে দেখেন না, আমাদের মহান সংবিধান কারো মায়ের ব্যক্তিগত কাবিননামা নয় যে, ওটা সেই মায়ের আলমারীতেই কেবল তোলা থাকে সযতেœ। সংবিধান কেবল তাদের পকেটেই থাকে না যে, তারা যখন যা সংবিধানের মোড়কে ভরে উপস্থাপন করবেন, জাতিকে সেটাই মেনে নিতে হবে অন্ধের মত।

এদেশের বামধারার বুদ্ধিজীবীরা ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী জানিয়ে বলা শুরু করেছেন, এটা সংবিধানের মৌলিক চাহিদার পরিপন্থী। আলোচনার সুবিধার্থে আমাদের জাতীয় সংবিধানের মূলনীতি এবং ধর্মসংক্রান্ত ধারাগুলো এই ফাঁকে তুলে ধরতে চাই।

* গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বশেষ সংশোধিত সংবিধানের ৮ নং ধারার ১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেÑ“সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতি সমূহ হইতে উদ্বুত এইভাবে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।”

* ৮ নং ধারার ১-এর ‘ক’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেÑ“সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি।”

* ৮ নং ধারার ২ অনুচ্ছেদে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছেÑ“এই ভাগে বর্ণিত শর্তসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার মূলধন হইবে, আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন; এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হইবে। তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না।”

* ৪১ নং ধারার ১-এর ‘ক’ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেÑ“প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।”

মোটামুটি আলোচিত বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ধারাগুলো উল্লেখ করা হল। এ থেকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, সংবিধানের ৮-এর ১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের অনিবার্য চাহিদানুযায়ী ইসলামের রীতি-নীতি ও অনুশাসন মেনে চলতে হবে। হোক সেটা ব্যক্তি জীবনে, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে। ৮-এর ১-এর ‘ক’ ধারার আলোকে একে ভিত্তি করেই পরিচালিত হতে হবে রাষ্ট্রীয় জীবন। সংবিধানের চাহিদা কিন্তু এটাই। ৮-এর ২-এর আলোকে বলা যায়, রাষ্ট্র ও নাগরিকদের সকল কাজের নির্দেশক হচ্ছে আল্লাহর ওপর আস্থা তথা ইসলাম ধর্মীয় অনুশাসন (মুসলমানের ক্ষেত্রে)।

সংবিধানের ৪১-এর ১-এর ‘ক’ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের নিজ নিজ ধর্ম পালন ও প্রচারের অধিকার রয়েছে। সে অনুযায়ী মুসলমানগণ তাদের ধর্ম প্রচারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর ইসলামধর্মের মূল কথাই হল, সমাজের সকল স্তরে আল্লাহর বিধান কায়েমের প্রচার চালানো। এখানে রাজনীতি কোন আলাদা স্তর নয়।

তদুপরি বলতে হয়, এদেশের রাজনীতির যে অবস্থা, তাতে করে যদি এই রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিতাড়িত করে দেয়া হয়, তাহলে রাজনীতির নীতির দাফন সম্পন্ন হয়ে যাবে চিরতরে। তখন বাকী থাকবে শুধু রাজ। আর এমনিতেই আমাদের দেশের রাজনীতিকরা যেভাবে রাজ করছেন এবং অনেকেই যে হারে লুটতরাজ ও সন্ত্রাসের তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছেন, তাতে করে এদেশের সাধারণ মানুষদের বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছাটুকুও মরে যেতে বসেছে। যা কিছু মানবিকতা ও বিবেক তলানীতে অবশিষ্ট আছে, ওটা ওই ধর্মীয় অনুভূতির বীজ ভেতরে রয়েছে বলেই। যদি এই বীজটুকুও উপড়ে ফেলা হয়, তাহলে সোনার বাংলা শ্মশান হতে দেরী লাগবে না মোটেও।

কেউ যদি বলেন, ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করতে সংবিধান বাধা প্রদান করছে বলেইতো ৫ম সংশোধনী বাতিল করে ধর্মীয় রাজনীতির ঘাড়ে কোপ বসানো হচ্ছে। আমি বলি, আসলে আমাদের অতিউৎসাহী আইনমন্ত্রী কী বলেন, আর কী বুঝাতে চান, সেটা তিনি নিজেই বুঝেন কি না জানিনা। এক মহান বাণীতে তিনিই আবার বলেছেন, সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিসমিল্লাহ বাদ দেয়া হচ্ছে না। আবার এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হয়েছে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে। এ পর্যন্ত অষ্টম সংশোধনী বাতিলের ব্যাপারে কোন কথা শোনা যায়নি। তদুপরি সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম বহাল রাখার পক্ষ অবলম্বন করেছেন খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই। আমরা ভেবে পাই না, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিসমিল্লাহ এবং রাষ্ট্রীয় ধর্ম ইসলাম রেখে এই সংবিধানকে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বানানোর খাহেশটি আইনমন্ত্রী মহোদয় পূর্ণ করবেন কিভাবে? আর বলতে গেলে যেদেশে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেদেশে ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করার চেষ্টা তো পরিষ্কার সংবিধান বিরোধী প্রয়াস হবে!

 

॥ চার ॥

এদেশে নাস্তিক্যবাদে প্রতিপালিত গোটাকতেক লোক যদি ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ করার ঔদ্ধত্বপূর্ণ দাবী জানাতে পারেন, তাহলে ৮৮% মুসলমান জনগণের আলেম সমাজ, দ্বীনদার শ্রেণী ও সাধারণ জনগণ কেউ না দাঁড়ালেও আমি একাই দাবী জানাবোÑসংবিধান সংশোধন করে ধর্মহীন রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। নিষিদ্ধ করা হোক মুসলমানদের এই দেশে নাস্তিক্যবাদের রাজনীতি। প্রয়োজনে ব্যাপারটি জনমত যাচাইয়ের জন্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হোক। ব্যবস্থা করা হোক গণভোটের। দেখা হোকÑজাতি কী চায়? তারা কি ধর্মবিবর্জিত নোংরা রাজনীতি চায়, নাকি নাস্তিক্যবাদের রাজনীতির কবরের উপর দাঁড়িয়ে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিকে লালন করার মধ্য দিয়ে সুস্থধারার রাজনীতির লালন চায়?

সর্বশেষে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আমি যে কথাটি বলতে চাই, তা হলÑআমাদের সকলের প্রিয় এই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চমৎকার একটি উর্বর ভূমি। পৃথিবীর অন্য কোথাও সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতির এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমরা এদেশে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকলে ভাই ভাই হয়ে বাস করি। আমাদের এ দেশের মাটি যেমন দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরিনের মত নাস্তিকদের জায়গা দেয়নি, ঠিক তেমনি এ মাটি শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইদেরও ক্ষমা করেনি। এটাই পারফেক্ট পজিশন। যে যার মত করেই থাকুক, কিন্তু কেউ কাউকে শারীরিকভাবে বা অনুভূতিতে আঘাত করতে পারবে না। যে চায় ধর্মীয় রাজনীতি করতে সে করুক, যে চায় নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাস করে রাজনীতি করতে সে তা-ই করুক। এই ধারাই চলে আসছে এদেশে। সুতরাং এক্ষেত্রে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্ন-ই আসতে পারে না।

 

॥ পাঁচ ॥

সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর টার্গেটে আছে বাংলাদেশ। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাই-এর মত জঙ্গীবাদীদের দমনের নামে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী উড়ে এসে ঘাটি গাড়তে পারতো আমাদের এদেশে। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ নিজেরাই সেই জঙ্গীদের দমন করায় সাম্রাজ্যবাদীদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। এবার বাংলাদেশে আওয়াজ তোলা হচ্ছে, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে, এই কাজটি তাদের ইশারায়ই হচ্ছে। তারা জানেÑআমাদের সরকার ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিলে, এদেশের কয়েক কোটি মানুষ একই সঙ্গে গর্জে উঠবে। আর সেই আন্দোলনকে সন্ত্রাসী বা জঙ্গীবাদী আখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে তারা তাদের মকসুদ পুরা করতে পারবে। আমাদের মাননীয় শাসকগণ যদি সামাজ্যবাদীদের এই গভীর চক্রান্ত বুঝতে না পারেন, তাহলে বাংলাদেশের কপালে দুঃখ আছে।

আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতে চাইÑবর্তমান সরকার এমন যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন, যা এদেশের কোটি কোটি মানুষের নির্দোষ অনুভূতিতে আঘাত হানবে। এই সরকার নির্বাচনের আগে বেশকিছু সুন্দর স্বপ্ন দেখিয়েছেন আমাদের। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। আলেম-উলামাগণের সাথে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ওয়াদাবদ্ধ, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন পদক্ষেপ নেবেন না তার সরকার। আমরা চাই, সরকার তার ওয়াদা মনে রাখুন।

আমরা চাই, সবার ঘুম ভাঙ্গুক, স্বপ্নের জগত থেকে সকলে বেরিয়ে আসুক। কারণ, রাত পোহাতে যে বেশী বাকী নেই।

Related posts

Leave a Comment