সম্পাদকীয় ::::: # এপ্রিল – ’১২ ………………………………………………………………… ২০০ সংখ্যা পূর্তি : সময়ের প্রেক্ষিতে ইসলাম নিয়ে লেখালেখি

মাসিক আদর্শ নারীর ২০০ সংখ্যা পূর্তি :

সময়ের প্রেক্ষিতে ইসলাম নিয়ে লেখালেখি

 

মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী

 

মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে মাসিক আদর্শ নারী ২০০তম সংখ্যায় উপনীত হয়েছে – আল-হামদু লিল্লাহ। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মাসিক আদর্শ নারীর ২০০ সংখ্যা পূর্তির এ সাফল্যময় মানযিলে পৌঁছতে লেখক-লেখিকা, পাঠক-পাঠিকা, এজেন্ট-গ্রাহক,  প্রকাশনা ও প্রচারণাসহায়ক সবার অপরিসীম অবদান রয়েছে। তাই তাদের সকলের প্রতি অকুণ্ঠ হৃদয়ে কৃতজ্ঞতা জানাই।

ইসলামের প্রচার-প্রসারে মাসিক আদর্শ নারীর ভূমিকা সকলের নখদর্পণে। পাঠিক-পাঠিকাগণের দ্বীনী চাহিদা পূরণের জন্য যথাসাধ্য নিরলস প্রচেষ্টা আমাদের ছিলো। সামনে আরো দীপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে চাই আমরা। এ জন্য মহান আল্লাহর তাওফীক কামনা করছি। মহান আল্লাহ এর দ্বীনী হিদায়াতকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বেগবান করে সর্বব্যাপিত ও সুবিস্তৃত করুন (আমীন)।

এ স্মরণীয় মুহূর্তে আমাদের কর্তব্যের স্মরণে ইসলাম নিয়ে লেখালেখির বিষয়ে কিছু কথা পেশ করার তাকীদ বোধ করছি। এ কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই যুগের চাহিদানুযায়ী আমাদের দ্বীন প্রচারের যিম্মাদারী আদায়ের পথ সুগম হবে আশা করি।

মানুষের হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে নবী-রাসূলগণকে (সা.) পাঠিয়েছেন। কিন্তু নবুওয়াতের উক্ত ধারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে পরিসমাপ্ত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বশেষ নবী, তাঁর পর আর কোনো নবী আসবেন না। তাই তাঁর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের হিদায়াতের যিম্মাদারী আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের উপরই ন্যস্ত করেছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনÑ“তোমরা উত্তম উম্মত, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখবে। আর তোমরা ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি।” (সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

উম্মতে মুহাম্মদীর দাওয়াতের যিম্মাদারী বিভিন্নভাবে আদায় হচ্ছে। মাদরাসার তা‘লীমের মাধ্যমে, দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে, উলামায়ে কিরামের ওয়াজ-নসীহতের মাধ্যমে, মাশায়িখে ইজামের ইসলাহ-তাযকিয়ার মাধ্যমে, ইসলামী সিয়াসত ও আন্দোলনের মাধ্যমে, কলম বা লেখনির মাধ্যমে প্রভৃতি বিভিন্নভাবে দ্বীনের রাহবারগণ দ্বীনী দাওয়াতের মহান খিদমত আনজাম দিয়ে যাচ্ছি।

মৌখিক হিদায়াতের চেয়ে লেখনীর হিদায়াত কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং লেখনীর হিদায়াতের ক্রিয়াশক্তি অনেক ক্ষেত্রে অধিক প্রবল ও প্রভাবময় হয়ে থাকে। তা সংগোপনে মানুষের মাঝে চেতনাবোধের উন্মেষ ঘটায়। বলতে কী, আমাদের জানা মতে, এমন অনেক পরিবার আছেÑযেখানে কর্তাব্যক্তি বিভিন্নভাবে বুঝিয়েও পরিবারের লোকজনকে হিদায়াতের উপর আনতে পারেননি, কিন্তু তাদের হাতে ইসলামী বই-পত্রিকা তুলে দেয়ার পর তা পাঠ করে তারা অনায়াসেই হিদায়াতের পথে চলে এসেছেন। লেখা ও পাঠ করার এ গুরুত্বের কারণেই পবিত্র কুরআনে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : “পাঠ করুন; আপনার প্রতিপালক মহাদয়াবান, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের মাধ্যমে। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে এমন বিষয়Ñযা তারা জানতো না।” (সূরাহ আলাক, আয়াত : ৩-৫)

বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেনÑ“দ্বীনী ইল্ম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।” এ হাদীসের আমলী বাস্তবায়নে সন্তানদেরকে বাল্যকাল থেকেই প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইলম শিক্ষা দিয়ে দ্বীনদার-আমলদাররূপে গড়ে তোলা পিতা-মাতা ও অভিভাবকগণের দায়িত্ব। তেমনিভাবে তাদের নিজেদেরও দ্বীনী জ্ঞান অর্জনে তৎপর হওয়া কর্তব্য। এ ছাড়াও ইসলামের নির্দেশ হচ্ছে : কন্যাদেরকে তাদের মা ও বাবা এবং স্ত্রীগণকে তাদের স্বামী প্রয়োজনীয় দ্বীনী ইল্ম শিক্ষা দিবেন।

কিন্তু তদানীন্তন বৃটিশ শাসনামলে এদেশে ইসলামবিবর্জিত শিক্ষা কারুকলাম চালু করার বিষফলে বর্তমানে অধিক সংখ্যক জনগোষ্ঠী ইসলামী জ্ঞান থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। এ কারণে যেই মা-বাবা ও অভিভাবক সন্তানদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিবেন বা যেই পিতা-মাতা কন্যাদেরকে এবং যেই স্বামী তার স্ত্রীগণকে দ্বীনী জ্ঞান দান করবেন, তারা নিজেরাই সে ব্যাপারে জাহিল ও অজ্ঞ হয়ে রয়েছেন। সুতরাং তারা অপরকে কিভাবে শিক্ষাদান করবেন? ফলে অবস্থা এমন করুণ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ছোট-বড় কারো দ্বীন শিক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা ঘরে বিদ্যমান নেই।

এমতাবস্থায় সকল মুসলমানের দ্বীন শিক্ষার ফরজ কর্তব্য পালনের উপযোগী সুযোগ সৃষ্টি করা বা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দ্বীনের ধারক-বাহক উলামায়ে কিরামের গুরুত্বপূর্ণ ফরীজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জন্য উলামায়ে কিরাম ছেলেদের মাদরাসা, মহিলা মাদরাসা, বয়স্ক মাদরাসা, তা‘লীমী মাহফিল, তাফসীর মাহফিল, দাওয়াতী কার্যক্রম প্রভৃতির ব্যবস্থাপনা আনজাম দিয়ে সেই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছেন।

আলহামদুলিল্লাহ, এর বদৌলতে বহুসংখ্যক ছেলে-মেয়ে ও বিভিন্ন বয়সের লোকগণ দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষিতের তুলনায় এ দ্বীনশিক্ষিতগণকে মুষ্টিমেয়ই বলা যায়। অপরদিকে দেশের সাধারণ শিক্ষায় প্রয়োজনীয় ইসলামী শিক্ষার সন্নিবেশ না থাকায় দেশের অধিকাংশ জেনারেল শিক্ষিত লোক দ্বীনী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন।

এ দ্বীনী শিক্ষাবঞ্চিত বিরাট জনগোষ্ঠীর জরুরী আহকামে দ্বীন শিক্ষা এবং দ্বীনের সহীহ জ্ঞান ও হিদায়াত লাভের কী ব্যবস্থা হবে? এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থার ফিকির করা অবশ্যই সময়ের দাবী। অন্যথায় সেই বিপুল জনগোষ্ঠীর দ্বীনের হিদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। এর কিছু কিছু নমুনা পরিলক্ষিত হচ্ছেও।

সুতরাং এ পর্যায়ে দ্বীনের ধারক-বাহকগণের যিম্মাদারী অনেক বেড়ে যায়। সমগ্র উম্মতের হিদায়াতের চিন্তা ও ফিকির করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের অগ্রসর হওয়া কর্তব্য হয়ে যায়।

এক্ষেত্রে দেশব্যাপী নূরানী, নাদিয়া, বৈজ্ঞানিক, আঞ্জুমান প্রভৃতি ট্রেনিং সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত শিশু-কিশোর ও বয়স্কদেরকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সহজে স্বল্প সময়ে পবিত্র কুরআন ও জরুরী আহকামে দ্বীন শিক্ষাদানের কার্যক্রম বিশেষ ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করছে। সেই সাথে মসজিদভিত্তিক মকতব শিক্ষা, কুরআনী তা‘লীম, তাফসীর, দ্বীনী বয়ান প্রভৃতি মজলিস বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু দ্বীন শিক্ষার এ সকল বিকল্প ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন ও চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

আশার বিষয় হলোÑএমতপরিস্থিতিতে ইসলামের ওপর লেখা বই-পুস্তক সাধারণ শিক্ষিত সমাজে দ্বীনী জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। বহুসংখ্যক লোক এ ইসলামী বই-পুস্তক পড়ে তাদের দ্বীনী জ্ঞানের দৈন্য দূর করছেন।

সেই সাথে আরো আশান্বিত করার মতো পদক্ষেপ হচ্ছে ইসলামী পত্রিকাসমূহের প্রকাশনা। যা অধুনা ব্যাপকভাবে জনসাধারণের মাঝে ইসলামের শিক্ষা বিস্তার ও দ্বীনী চেতনা ও জাগরণ সৃষ্টিতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে।

বই-পুস্তক সবসময় একইরূপে বিদ্যমান থাকে, কিন্তু পত্রিকা প্রতিদিন/প্রতিসপ্তাহে/প্রতিমাসে নিত্যনতুনরূপে আগমন করে। তাই ‘প্রত্যেক নতুন বিশেষ স্বাদময়’ প্রবাদের ধারায় নতুন প্রজন্ম অনেকটাই পত্রিকার দিকে বেশী আকর্ষণ বোধ করছেন। পত্রিকার প্রতি তাদের এ ঝোঁককে কাজে লাগিয়ে এর মাধ্যমেই তাদের মাঝে ইসলামী জ্ঞান বিস্তারের জন্য দ্বীনের ধারক-বাহকগণ বিভিন্ন ধরনের ইসলামী পত্রিকা প্রকাশে এগিয়ে এসেছেন। এ সকল ইসলামী পত্রিকার নিত্য নতুন সংখ্যা সর্বস্তরের পাঠক-পাঠিকা মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে এবং মানুষ এ  সকল পত্রিকা পড়ে দ্বীনকে জানছেন, দ্বীনের বুঝ হাসিল করছেন এবং সর্বোপরি দ্বীনের ওপর চলার হিদায়াত লাভ করছেন। এদিক দিয়ে ইসলামী পত্রিকাগুলোর অবদান অপরিসীম।

বলাবাহুল্য, বর্তমান যুগচাহিদার প্রেক্ষিতে ইসলামী বই-পুস্তক ও ইসলামী পত্রিকাসমূহের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। সুতরাং দ্বীনী ইল্মের ধারক-বাহকগণের এ পথে আরো ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। ইসলাম নিয়ে লেখালেখির ময়দানে তাদের পর্যাপ্ত ভূমিকা পালন করা কর্তব্য।

অথচ দুঃখের বিষয় যে, আমাদের মধ্যে যারা সহীহ দ্বীনী প্রজ্ঞা ও অসাধারণ দ্বীনী জ্ঞানের অধিকারী, লেখনীর জগতে তাদের পদচারণা আশানুরূপ নয়। আমাদের দেশের বিভিন্ন মাদরাসার মুফতী, মুহাদ্দিস, উস্তাযুত তাফসীর, উস্তাযুল ফিক্হ প্রমুখগণ দ্বীনী জ্ঞানের সাগর। তারা পাঠ্য কিতাব মুতালা‘আয় শরাহ-শুরুহাত ঘাঁটাঘাঁটিতে পর্যাপ্ত মূল্যবান সময় ব্যয় করেন। তাদের প্রখর মেধার দীর্ঘকালীন ও ব্যাপক মুতালা‘আ-সমৃদ্ধ দ্বীনী জ্ঞান ও শিক্ষা অত্যন্ত তত্ত্বপূর্ণ, প্রমাণসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকে। অথচ তাদের এ বিরাট পরিশ্রমের ফসল মুষ্টিমেয় কিছু তালিবে ইল্ম ভোগ করে থাকেন মাত্র। এমতাবস্থায় যদি এর পাশাপাশি তাঁরা তাঁদের সেই দ্বীনী গভীর জ্ঞানকে সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে বই-পুস্তক কিংবা অন্তত কোনো পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করতেন, তাহলে নিঃসন্দেহে দেশ ও জাতি সহীহ দ্বীনী জ্ঞানের বিরাট ভা-ার লাভ করতে পারতো। অবশ্য এ পথে যে তাদের কেউ এগিয়ে আসছেন নাÑতা বলছি না, তবে যারা আসছেন, তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। আবার অনেকের বাংলা-ভাষাজ্ঞানও কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়।

আর এ সুযোগে ইসলাম নিয়ে লেখালেখিতে নেমেছেন ‘নীমে মোল্লা খতরায়ে ঈমান’-এর চেয়েও ভয়ংকর আত্মকেন্দ্রিক শ্রেণী। তারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন বটে, কিন্তু ইসলামের পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করেননি, অথচ ইসলাম নিয়ে লিখতে নেমেছেন। যার কারণে পদে পদে পদস্খলনের শিকার হয়ে তারা মূলধারা থেকে বিচ্যুতি বরণ করে নিজেদের পোষিত চিন্তাধারার প্রেক্ষণে লিখে যাচ্ছেন। এভাবে তারা ইসলামের নামে নিজেদের মনগড়া উক্তি ও ভ্রান্ত মত মানুষকে গেলাতে প্রয়াস পাচ্ছেন। ফলে তাদের বই পড়ে সাধারণ মানুষ গোমরাহ হয়ে যাচ্ছেন।

এমতাবস্থায় ইসলামের ধারক-বাহক হক্কানী উলামা-মাশায়িখের শৈথিল্য প্রদর্শনের বা পিছিয়ে থাকার অবকাশ নেই। দ্বীনী ইল্মের মাহারাতের সাথে সাথে তাদের বাংলা ভাষায় পা-িত্যের ভিত্তিতে সুন্দর ও প্রাঞ্জলভাবে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা, ঈমান-আকীদা, আ‘মাল-আহকাম প্রভৃতি জনসাধারণের নিকট তুলে ধরতে প্রয়াস চালাতে হবে। সর্বসাধারণের মাঝে দ্বীনী শিক্ষা বিস্তারে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকার দ্বারাই দেশের সর্বত্র সহীহ দ্বীনী জ্ঞানের আলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং যাবতীয় গোমরাহী দুরিভূত হতে পারে।

বর্তমানে ইসলামের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী আক্রমণ চলছে। ঈমান-আকীদা, আমল-আখলাক, রাসূল (সা.), কুরআন, ইসলামী নীতি-বিধান প্রভৃতির ওপর বিভিন্নভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্টনিক্স মিডিয়া, নেট মিডিয়া, ইন্টার গ্লোবাল লিংক প্রভৃতিকে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় নগ্নভাবে কাজে লাগাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। মহান আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার কথা চিন্তা করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কর্তব্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। সকল শরীয়তসম্মত আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতিকে আত্মস্থ করে সর্বত্র ইসলামকে বিজয়ী করার যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলাম নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি ও ইসলামী পত্রিকাসমূহের সুবিস্তৃত বলিষ্ঠ ভূমিকা বিশেষ অবদান রাখবে বলে আশা করি।

বর্তমানে পত্রিকার জগতে অনৈসলামিক পত্রিকার যে ছড়াছড়ি, সেই তুলনায় দেশের পত্রিকার স্টলসমূহে ইসলামী পত্রিকার উপস্থিতি নজরকাড়ার মতো নয়। এ অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। দেশের পত্রিকার স্টলসমূহ যখন ইসলামী পত্রিকার দ্বারা ভরপুর হয়ে যাবে, তখনই মিডিয়ায় ইসলামের জাগরণ হয়েছে বলে আমরা দাবী করতে পারবো। এক্ষেত্রে অত্যুক্তি নয় যে, যেহেতু ইসলামের সহীহ প্রচার-প্রসারই ইসলামী পত্রিকাসমূহের মূল উদ্দেশ্য, তাই ইসলামের খিদমতে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সহায়তার ন্যায় ইসলামী পত্রিকার প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশেও সম্যক অবদান রেখে ইসলাম প্রচারের এ যুগোপযোগী ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রয়াস পাবেন।

পরিশেষে আমরা যারা ইসলামী পত্রিকায় লেখালেখি করি, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, সময়ের প্রেক্ষিতে মানুষের মাঝে ইসলামকে জানার ব্যাপারে সচেতনতা বেড়েছে। তাই যা খুশী লিখে দিলেই পাঠক-পাঠিকাগণ গ্রহণ করবেনÑএমন ভাবনা অবান্তর। এ জন্য ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা প্রমাণভিত্তিক, তত্ত্বপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া আবশ্যক। প্রাণবন্তু তথ্যনির্ভর প্রামাণ্য আলোচনা-ই পাঠক-পাঠিকাগণের নিকট হৃদয়গ্রাহী হয়। সুতরাং এ ব্যাপারে লেখক-লেখিকাগণের নন্দিত প্রয়াসে ইসলামী পত্রিকাসমূহ অধিক আকর্ষণীয় ও হৃদাকাক্সক্ষার পরিফলক হয়ে পাঠক-পাঠিকাগণের মন জয় করতে পারে।

সেই সাথে প্রতিথযশা লেখক-লেখিকাগণের ঐকান্তিক সহযোগিতা, পাঠক-পাঠিকাগণের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা ও দ্বীনের  সেবকগণের এতদ্প্রচারণা ইসলামী পত্রিকাসমূহের সুষ্ঠু প্রকাশনায় যথেষ্ঠ সহায়তা করতে পারে। এভাবে আমাদের সকলের যথার্থ ভূমিকার দ্বারা ইসলাম নিয়ে লেখালেখির অঙ্গন সময়ের প্রেক্ষিতে বিজয়ী হতে পারে।

Related posts

Leave a Comment