ছন্দ পল্লবে
মা
আমার আম্মু
হালিমাতুস সাদিয়া মিযান
আম্মু তুমি কী জিনিস এই ভুবনের তরে,
তোমার সেবা করবো আমি সারা জীবন ভরে।
আম্মু তুমি উজু কর করে মিসওয়াক,
ওয়াক্তমতো নাময পড়ো থাক তুমি পাক।
আম্মু তুমি দুঃখে-কষ্টে সদা ধৈর্য ধরো,
আম্মু তুমি বিপদের সময় আল্লাহকে স্মরো।
আম্মু তুমি গরীবদেরকে কর অনেক দান,
আল্লাহ তা‘আলা দোজাহানে তোমায় দিবেন মান।
———————————————————————————————
জান্নাতেরই ফুল
এস এম শহীদুল আলম
চাঁদের মতো হাসি হেসে কোলে টেনে নেন,
মিষ্টি-মধুর কথা বলে গালে চুমু দেন।
নদীর মতো মায়ের হৃদয় নিরবধি বয়,
মাকে ছাড়া হবো আমি তিলে তিলে ক্ষয়।
চাই না সোনা চাই না রূপা চাই যে লক্ষ্মী মা,
তাঁরই জন্য ধন্য আমার সবুজ সোনার গাঁ।
তিন ভুবনে মায়ের সাথে হয় না কোনো তুল,
মাগো তুমি আমার কাছে জান্নাতেরই ফুল।
———————————————————————————————
মায়ের বকা
মালেক মাহমুদ
তিরিশ বছর আগের কথা পড়ছে হঠাৎ মনে,
মায়ের বকা খেয়ে পালাই হিজলপুরের বনে।
মায়ের কী বদনামি,
গুমরো মুখো আমি।
মায়ের মানা শুনতে জানা কোমল হাসি হেসে,
বলছে কথা আমার সনে স্বপ্ন তারা এসে।
কী কারণে হও অসুখি,
কী কারণে গুমরো মুখি?
আদরমাখা মুখখানা ক্যান করছো এতো কালো,
তোমার মতো খোকন ছেলে শরৎ ভোরের আলো।
মায়ের বকা মায়া কি যে
বুঝতে পারি ছায়া ভিজে
আড়াল থেকে ডাকছিল মা আয় রে খোকা ঘরে,
মায়ের বকা মধুর ছিল মধুর কণ্ঠস্বরে।
———————————————————————————————
মায়ের ভালোবাসা
তাহছিনা আক্তার সোনিয়া
মা যে আমার চোখের মণি
মা যে আমার সোনার খনি,
মায়ের মতো নেইতো কেউ আপন এ ধরায়
মায়ের কোলে মাথা রাখলে সকল দুঃখ জুড়ায়।
মায়ের বুকে আছে শত মিষ্টি ভালোবাসা
তাকে ঘিরে আছে আমার জীবনের সব আশা,
মা যে কত সহ্য করেন দুঃখ-যাতনা
মায়ের সাথে হয় না যে কারো তুলনা।
———————————————————————————————
ফুল ফুটাবো
জানে আলম
আম্মু তুমি দরূদ পড়ে একটু করো দু‘আ,
আমার জীবন পায় যেন গো পুণ্য সুখের ছোঁয়া।
এই নিশিতে জেগে আছি নেই যে চোখে ঘুম,
দূর আকাশে তারার আলো চাঁদের তাবাসসুম।
তোমার জন্য কিছুই করা হয়নি আমার আজও,
কাজের মতো তাইতো মনে হয় না কোনো কাজও।
দু‘আ করি আম্মু তুমি বাঁচো অনেক দিন,
পায়ের তলায় ফুল ফুটাবো আমি পথের তৃণ।
———————————————————————————————
আমার মা
ফয়েজ আহম্মেদ
(দুবাই প্রবাসী)
গাছকে বলেছি আমার মাকে ছায়া দিও,
হিমেল হাওয়া তুমি মাকে ছুঁয়ে যেও।
ঝর্ণা তুমি আনন্দ দেবে আমার মাকে,
সবসময় যেন মা হাসি-আনন্দে থাকে।
চাঁদ তুমি অবিরত ছড়িও জোছনা,
পথ দেখতে যেন মায়ের বিন্দু কষ্ট হয় না।
———————————————————————————————
কোথায় পাবো মাকে
মানসুর মুজাম্মিল
মাকে নিয়ে অনেক কথা
বুকের ভেতর
মুখের ভেতর।
মাকে নিয়ে হরেক ছবি আঁকি
মায়ের কথা যায় থেকে যায় বাকি।
কই হারালো
কই দাঁড়ালো মা যে
মা ছাড়া যে সময় লাগে বাজে।
কোথায় পাবো আমার মায়ের দেখা,
বুকের ভেতর মায়ের স্মৃতি লেখা।
———————————————————————————————
মায়ের আঁচল
ইনায়াতুল্লাহ তাসনীম
তোমায় দেখতে ইচ্ছে জাগে
মনে খুবই তাড়া,
কোথায় গেলে পাবো মাগো
তোমার ডাকের সাড়া।
তুমি যেনো মন সাগরে
সোনার রঙিন ভেলা,
তুমি আমার হৃদয় মাঝে
আছো সারা বেলা।
ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখি
ঘন আঁধারের ধোঁকা,
তুমি ডেকে বলছো আমায়
আয়রে সোনার খোকা।
———————————————————————————————
কোথায় পাবো দেখা?
মাহমুদা উখতি জাহাঙ্গীর আলম
মা শব্দটি বড়ই মধুর বলতে লাগে ভালো,
কিন্তু আমার মা জননী কোথায় গেল বলো?
হৃদয় আমার শূন্য খাঁচা করে হাহাকার,
মা ডাকটি ডাকার ইচ্ছা জাগে শতবার।
বলবে কি মা আমায় ফেলে কোথায় তুমি গেলে,
তোমার মতো স্বজন কি মা এই দুনিয়ায় মেলে?
এই দুনিয়ায় তোমায় ছাড়া আমি বড় একা,
বলো মাগো কোথায় গেলে পাব তোমার দেখা?
———————————————————————————————
মায়ের দু‘আ
কে.এম. শরীফ আল হুসাইনী
নিঝুম রাতে সবাই ঘুমে
মা আছেন জেগে,
নামায পড়ে করেন দু‘আ
প্রভুর কাছে মেগে।
ওগো প্রভু! ছেলে আমার
মায়ের আঁচল ছেড়ে,
কুরআন-সুন্নাহ শেখার জন্য
সে আজ বহু দূরে।
দ্বীনী ইলম শেখার মতো
সাধ্য যে তার নাই,
রহম কর দয়া কর
তুমিই মোদের ঠাঁই।
ছেলের জন্য মায়ের দু‘আ
কবুল করে নাও,
ইলম শেখার জন্য তার
জেহেন খুলে দাও।
———————————————————————————————
মা
আব্দুল্লাহ আল জামিল
মা
তুমি চান্দ্র মাসের পূর্ণ চাঁদ
তোমার আলোয় আমি পথ চলতে শিখি,
তুমি কুমুদির কলহাস্য তারকা
তোমার দীপ্তিময় ¯িœগ্ধ আভায় আমার জীবন আঁকি।
তুমি স্বপ্নপুরীর মাথায় মুকুট, নিঝুম
তোমার মমতায় আমার সুষুপ্তি,
তুমি অবিমল ঘুম ভাঙানি প্রভাতি কুসুম
তোমার শীতল ছায়ায় আমার পরম প্রাপ্তি।
তুমি বসন্তের কাঁচা রোদ মাখা সদ্য ফোটা ফুল
সুবহের তাজা শিশিরে প্রাণের সৌরভ
তুমি গোধূলির অপরিমেয় সুখ মহল
তারি কায়ায় মায়ায় জ্বলে অবিরত গৌরব।
———————————————————————————————
মায়ের হাসি
এইচ এস সরোয়ারদী
আমের মুকুল থোকা থোকা
মিষ্টি লাগে খুব,
মিষ্টি লাগে ফাগুন মাসে
কৃষ্ণচূড়ার রূপ।
মিষ্টি লাগে সবুজ বনে
কোকিল পাখির গান,
মিষ্টি লাগে ঢেউ খেলানো
আমার মাঠের ধান।
মিষ্টি লাগে বটের ছায়া
বটের পাতার বাঁশি,
সবচে বেশী মিষ্টি লাগে
আমার মায়ের হাসি।
———————————————————————————————
মাগো
এম. রবিউল ইসলাম
মাগো যদি চলে যাও
আমাদের মাঝ থেকে,
তোমায় মাগো খুঁজে নেব
জান্নাতের বাগ থেকে।
ভোর বেলাতে নামায শেষে
যখন যাবো ঘুমুতে,
মাথার তাজ ভেবে তোমায়
ভরিয়ে দেব চুমুতে।
তাজ হয়ে আমার মাথায়
মাগো তুমি থাকবে যে,
চুপি চুপি মধুর সুরে
মাগো বলে ডাকবে যে।
———————————————————————————————
অব্যক্ত ব্যথা
জেসমিন আক্তার
মনের ব্যথা মনে থেকে যায় বুঝাব আর কারে,
অশ্রু ঝরে নয়ন থেকে প্রাণের মাকে হেরে।
পাব না কি তার সন্ধান এ জীবনে আর,
এ যাবত পেয়েছি আমি আদর সোহাগ যার।
মায়ের বেদনা বুঝাতে পারে না কোনো ভাষা,
সারা জীবন রাখব তারে এ ছিল মোর আশা।
অল্প সময়ে হারাব তাকে বেঁচে থাকতে বুঝিনি,
যথাযথ তার হক আদায় করতে পারিনি।
———————————————————————————————
মায়ের জন্য
মুহাঃ আব্দুল আজিজ
মাদরাসাতে আমার মন বসে না
নয়ন জুড়ে ভাসে মায়ের হাসি মুখ,
মাকে একটুখানি দেখার জন্য
অশ্রুতে ভেজে আমার বুক।
মা আমার চির শান্তি
মা বিহীন দুনিয়া আঁধার কালো,
মাকে দেখলে আমার
মন হয়ে যায় ভালো।
মায়ের কাছে যখন আমি
উড়ে উড়ে আসি,
মা নেয় আমায় বুকে
দেখি মায়ের মিষ্টি মধুর হাসি।
———————————————————————————————
প্রিয় মা
সাবিকুন্নাহার ঊর্মি
কষ্ট করে মানুষ করেছে আমায়
আমার প্রিয় মা,
হয়তো অর্থ সম্পদ কিছুই
তাকে দিতে পরাব না।
আমি চাই লেখাপড়া শিখে
দেব তাকে উপহার,
খোদার কাছে এই মিনতি
করি আমি বারবার।
যদি আমি তাকে দিতে পারি
পরীক্ষার ভালো ফল,
পানি করা রক্ত মায়ের
খুশীতে করবে টলোমল।
———————————————————————————————
———————————————————————————————
———————————————————————————————
>>>>>>> কাব্যকাহিনী <<<<<<<
অন্যায়পুরের আদালত
মুনীরুল ইসলাম
বোকার দেশে ‘অন্যায়পুর’ এক শহর ছিল ভাই,
সোনার দাম নয় টাকা সের, মাটির দামও তাই।
এই শহরে ছিল না যে ভালো-মন্দের বিচার,
এক পাল্লাতে করতো ওজন ছাত্র এবং টিচার।
থাকতো সেথায় শতেক মুরীদ – মস্ত বড় পীর
ঘটলো একদিন আজব ব্যাপার বলছি তা শিগ্গির।
এসব দেখে পীর সাহেবের মনটা গেল তেড়ে,
চলে যাওয়ার ইচ্ছে করলেন অন্যায়পুর ছেড়ে।
আচানক এই বার্তা শুনে হালকা গড়ন মুরীদ
অন্যায়পুর ছাড়বে না সে – শোনো বন্ধু সুহৃদ।
মুরীদ বললো – আমি হুজুর! হালকা গড়ন লোক,
দুঃখ-তাপে জীবন কাটে পাই না কাজে সুখ।
এই শহরে ঘি খেয়ে হবো অনেক মোটা,
আমায় দেখে ভয় পাবে পাঁচটা মানুষ গোটা।
পীর বললেন – এই শহরে ক্যামনে করবে বাস,
ভালো-মন্দের বিচার-আচার নেই যে বারো মাস?
পীরের কথা শুনলো না সে এই শহরেই র’লো,
নয় টাকা সের ঘি খেয়ে ইয়া মোটা হলো।
পীর-মুরীদের কাব্যকথা আপাতত রাখি,
অন্যায়পুরের আজব কথা একটুখানি আঁকি।
…………………..
সিঁদ কেটে দু’জন চোর করতে গেল চুরি,
দেয়াল ধ্বসে এক চোরের বেরিয়ে গেল ভুঁড়ি।
দ্বিতীয় চোর দালানীকে মামলা-কেইসে জড়ায়
‘চোর বন্ধু প্রাণ হারালো দেয়াল ধ্বসে পড়ায়’।
হুকুম মতো বাড়ীর মালিক আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
বাড়ীর মালিক আরজ করলো – হয় যে অনুভব,
টাকার বদলে যা করেছে ইঞ্জিনিয়ার সব।
কাজী বললেন – ঠিক বলেছো; তাহলে তুমি খালাস,
ইঞ্জিনিয়ার বেটা কোথায় তাকেই করো তালাশ।
হুকুমমতো ইঞ্জিনিয়ার আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
ইঞ্জিনিয়ার আরজ করলো – আমার কী দোষ তাতে,
দালানের কাজ যা হয়েছে মিস্ত্রীদের হাতে।
কাজী বললেন – ঠিক বলেছো; তুমি এবার খালাস,
মিস্ত্রীরা কোথায় আছে ওদের করো তালাশ।
হুকুম মতো মিস্ত্রীরা আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
মিস্ত্রীদের আরজ – শুধু ইট গেঁথেছি এবার,
মাল-মশলার দায়ে ছিল জোগালী ও লেবার।
কাজী বললেন – ঠিক বলেছো, তোমরা সবাই খালাস,
কোথায় আছে জোগালীরা ওদের করো তালাশ।
হুকুম মতো জোগালীরাও আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
জোগালীরা করলো আরজ – কর্মতো ঠিক জানি,
ঘোড়া ছুটে নষ্ট হলো মাল-মশলাখানি।
কাজী বললেন – দ্বন্দ্বহীনে পাচ্ছো সবাই খালাস,
ঘোড়া চালক কোথায় আছে তাকেই করো তালাশ।
হুকুম মতো ঘোড়া চালক আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
সে বললো – রাজকুমারী গহনা পরে গলে,
অলংকারের ঝনঝনিতে ঘোড়া ছুটে চলে।
কাজী বললেন – ঠিক বলেছো, তুমিও যে খালাস,
রাজকুমারী কোথায় আছে তাকেই করো তালাশ।
হুকুম মতো রাজ রাজকুমারী আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
রাজকুমারী আরজ করলো – দোষ কী হুজুর ওতে,
অর্থ দিয়ে ক্রয় করেছি জুয়েলারী হতে।
কাজী বললেন – ঠিক বলেছো; মাগো তুমি খালাস,
দোকান মালিক কোথায় আছে তাকেই করো তালাশ।
হুকুম মতো দোকানী তাই আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
দোকান মালিক আরজ করলো – অপরাধটা কার,
স্বর্ণকার বানালো কেন এমন অলংকার?
কাজী বললেন – ঠিক বলেছো; তুমিও পেলে খালাস,
স্বর্ণকার কোথায় আছে তাকেই করো তালাশ।
হুকুম মতো স্বর্ণকার সেই আদালতে হাজির,
ফাঁসির মালা পরিয়ে দিতে হুকুম হলো কাজীর।
স্বর্ণকার মঞ্চে বরণ করবে ফাঁসির মালা,
হায়রে মালা পায় না শোভা চিকন তারই গলা।
কাজী সাহেব বিমূঢ় হয়ে দিলেন রাজার কানে,
রাজা বললেন – সমস্যা কী বলো আমার পানে।
জবাব দিলেন – চিকন গলার পেলাম স্বর্ণকার,
তার গলাতে ফাঁসির মালা হয় যে পারাপার।
হুকুম হলো – যেথায় তোমরা পাবে মোটা গলা,
হিঁচড়ে এনে মঞ্চে তাকে পরাও ফাঁসির মালা।
রাজার কথায় পেল তারা ওই সে মুরীদকেই,
নয় টাকা সের ঘি খেয়ে মোটা হলো যেই।
পীর সাহেব শিখিয়ে দিলেন মঞ্চে নেয়ার কালে,
ফাঁসির মালা পরতে তুমি যাবে হেসে গালে।
ভয় পেয়ো না যা করার করবো আমি তাই,
একটা বিহিত করবেনই তো আল্লাহ মালিক হাই।
মঞ্চে নিতে যখন তার পাঞ্জা দিল কেশে,
পরতে মালা কথা মতো মঞ্চে গেল হেসে।
বললো – আরে ফাঁসি দিতে করছো কেন দেরি,
ফাঁসির মালা পরতে আমার লাগছে খুশি ভারি।
পীর হেসে বললেন – তাকে ফাঁসি দিও নাকো,
তার বদলে ফাঁসির মালা আমার গলায় রাখো।
অবাক হয়ে বললেন রাজা – অমনি কেন হাসো,
ভয়ানক এই ফাঁসির মালা পরতে ভালোবাসো?
পীর সাহেব দিলেন জবাব – নেই যে দুঃখের লেশ,
আজকের দিনে জীবন দিলে শান্তি পাবো বেশ।
বোকা রাজা না বুঝেই সুখের সুযোগ নিল
শেষ অবধি চোরের কেইসে রাজার ফাঁসি দিল।