নির্বাচিত কথিকা ::::: এপ্রিল – ’১২

নারী নির্যাতন আইন :

অপব্যবহার রোধ

করতে হবে

মোঃ ইলিয়াস খান

 

নারীরা হলো মায়ের জাতি। মা জাতিকে সম্মান দেখানো প্রতিটি বিবেকবান মানুষের কর্তব্য। অপরদিকে নারী ও পুরুষ উভয়ই একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। তাই তাদের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ জীবনযাপন একান্তভাবেকাম্য।

সাধারণত প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তিগণ কখনো নারীদেরকে নির্যাতন করেন না। ঈমানদার পুরুষ ও নারী একত্রে মিলেমিশে বসবাস করেন। সামান্য ঝগড়াঝাটি হলেও মারাত্মক কোন ঘটনা ঘটে না। যদি দাম্পত্য জীবনে জটিল কোন কলহ দেখা দেয়, তবে সালিসের মাধ্যমে আপসরফা অথবা তালাকের বিধান আছে। কিন্তু কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করার অধিকার নেই। যারা নির্যাতন করে, তারা অমানুষ।

বর্তমানে দ্বীনদারীর অভাবে বিভিন্ন কারণে-অকারণে স্বামী ও স্ত্রীর একের অন্যের উপর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, যা মোটেই কাম্য নয়। দাম্পত্য জীবনকে কলহমুক্ত করার জন্য হযরত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিবাহ করার পূর্বে যাবতীয় বিষয় দেখে পছন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে পরবর্তীতে কোন ব্যাপার তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি না করে। আবার বিবাহের ব্যাপারে কার দায়িত্ব বা পাওনা কী – তা নির্দিষ্টকরে বলে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু ইসলামী বিধানকে অমান্য করে আজকাল বেশীর ভাগ বিবাহই হচ্ছে লোভের বশবর্তী হয়ে। ফলে নানা অযাচিত দাবী-দাওয়া দাম্পত্য সম্পর্কে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ নিয়ে মারামারি-কাটাকাটি হচ্ছে। যৌতুকের দাবী না মেটানোর ফলে স্ত্রীকে নির্যাতন করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। এমনকি নির্যাতন করে গৃহবধূকে মেরে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। তাই নারীকে এ জাতীয় নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার `নারী নির্যাতন আইন’ করেছে।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে সেই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। ভিন্ন কোনো কারণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অথবা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নারীর দ্বারা নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে পুরুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে। এই আইনে মামলা রুজু হওয়ার সাথে সাথে কোনো বাছ-বিচার ছাড়াই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়। আর এ ধারার মামলার বিবাদীকে জামিন না দিয়ে ৩ মাস পর্যন্ত হাজতে রাখতে পারবে বলে বলা হয়েছে। এ সুযোগে এ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। এই আইনটি প্রতিপক্ষকে হয়রানী/শায়েস্তা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।

কয়েকটি পত্রিকায় নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহারের ওপর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আমি নারী নির্যাতন আদালত থেকে বিষয়টি জানতে গেলে কোর্টের লোকেরা ও ভুক্তভোগীরা জানায় যে, ৯৫% মামলাই মিথ্যা। শুধু প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নারীদেরকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।

বিষয়টিকে ভালোভাবে বোঝার জন্য নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো –

ঘটনা – ১ : আমার এক পরিচিত লোক তার প্রতিপক্ষকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে তার আপন বড় ভাইয়ের মেয়েকে দিয়ে একটি মিথ্যা নারী নির্যাতন/ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছেন। বিবাদীদেরকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করানো হয়েছে।

পরে অবশ্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং মামলাটি মিটমাট করা হয়। কিন্তু হেনস্তা ও হয়রানীতো আগেই করা হয়ে গেছে।

  ঘটনা – ২ : একদিন আমি আদালতে গিয়ে দেখি, এক নারী অন্যের প্ররোচনায় স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেছেন। উক্ত মামলায় তার স্বামীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। স্ত্রী কোর্টে হাজিরা দেয়ার পর স্বামীকে জামিন না দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এ অবস্থায় মহিলা ক্রন্দন করতে করতে চলে যাচ্ছেন।

জিজ্ঞাসা করা হলে জবাবে মহিলা বলেন যে, আমি না বুঝে অন্যের প্ররোচনায় সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেছি। কিন্তু এর জেরে আমার স্বামী হাজতে থাকায় এখন আমি ছেলে-সন্তান নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছি।

    ঘটনা – ৩ : আমার এলাকায় প্রতিপক্ষকে হয়রানী করার জন্য কিছু দুষ্ট লোক কুপরামর্শ দিয়ে এক মেয়েকে দিয়ে একটি মিথ্যা নারী নির্যাতন/ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। যাদেরকে আসামী করেছে, তাদের মধ্যে কেউ একেবারেই কোনোদিন সেই মেয়েকে দেখেননি; আবার কারো গত ২০ বছরের মধ্যে ওই মেয়ের সাথে দেখা হয়নি; আবার কেউ কেউ এমন যে, বেগানা নারীদের সাথে দেখা পর্যন্ত করেন না। অথচ তারা আসামী! এত বড় জঘন্য মিথ্যা মামলা করতে বিবেকে একটুও বাধলো না।

পরে  আদালত থেকে মামলাটি যাচাই করার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সেখানে মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এ মামলায় কিছুই হবে না, কিন্তু কিছু আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানীতো হয়েছে।

মহিলারা মিথ্যা মামলা করার মতো এত সাহস কোথায় পাচ্ছে? দেখছি যে, বর্তমানে মহিলাদের একটি বিরাট অংশ উচ্ছৃংখল জীবনযাপন করছে। তারা স্বামী ও বড়দেরকে কোনো প্রকার মান্য না করে ইচ্ছামত চলছে। অথচ একদিন এ মহিলারা খুবই রক্ষণশীল ছিল, উচ্ছৃংখল ছিল না। স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ীদের অনুগত ছিল। কিন্তু বর্তমানে তারা বিপথগামী হওয়ার কারণ হলো বেপর্দেগী, চাকুরীর বাহাদুরী এবং শয়তানরূপী মানুষদের কুপরামর্শ। শয়তানরা চায় না – মুসলমান নারীরা পর্দায় থাকুক। তেমনি কিছু এনজিও সেবার নামে নারীদেরকে নানাভাবে উস্কানী দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল করে তাদের দাম্পত্য জীবনের বারটা বাজাচ্ছে।

প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যারা নারীকে ব্যবহার করে, সরকারের উচিত – এদেরকে ধরে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া। আর এ সকল কুচক্রীরা যাতে নারীজাতিকে কুপথে পরিচালিত করতে না পারে, সেজন্য প্রচলিত নারী নির্যাতন আইনে সংশোধনী আনতে হবে। অন্যথায় এই আইন সমাজে হয়রানী বাড়াবে এবং মানুষ জুলুমের শিকার হতে থাকবে।

Related posts

Leave a Comment