সাময়িক নিবন্ধ ::::: এপ্রিল – ’১২

এপ্রিল ফুল : এক

নির্মম ট্রাজেডি

শাহিদ হাতিমী

 

এপ্রিল ফুল কী? কী কারণে উদ্ভাবিত হয়েছে এপ্রিল ফুল? কারা কিভাবে এর প্রচলন করেছে? এ প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর অজানা থাকার কারণেই আজ অনেক মুসলমান উৎসবের আবহে দিবসটি সোৎসাহে পালন করে। কোন মুসলমান যদি জানতে পারে যে, এপ্রিল ফুল মানে  –  লক্ষ লক্ষ মুসলমানদেরকে জমিনের সর্বোত্তম স্থান মসজিদে আটক করে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা, এপ্রিল ফুল মনে – মুসলিম নারী-পুরুষের ‘বাচাঁও’ ‘বাচাঁও’ আহাজারি, এপ্রিল ফুল মানে – ধোঁকা ও প্রতারণা করে বেধর্মী খৃষ্টানরা গুলী করে সাগরে ডুবিয়ে মেরেছিলো নিরীহ-নিরস্ত্র মুসলমানদেরকে, তাহলে সামান্যতম ঈমানদার কোন মুসলমানও কখনো এপ্রিল ফুল পালন করতে পারেন না।

তা ছাড়া ধোঁকা দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ ও হারাম । তা উৎসবরূপে পালন করা আরো জঘন্য পাপ কাজ। কখনো কোন মুসলমান তা করতে পারে না। সুতরাং মুসলমানদের জন্য কোনভাবেই এপ্রিল ফুল পালনের অবকাশ নেই।

এবার মূল কথায় আসি। এপ্রিল হচ্ছে ইংরেজী সনের ৪র্থ মাস। আর ফুল অর্থ বোকা। সুতরাং এপ্রিল ফুলের অর্থ দাঁড়ায় – এপ্রিলের বোকা। এর সাথে কুচক্রী ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের চক্রান্তের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

এর উদ্ভাবক মুসলমানদের সাথে প্রতারণাকারী খৃষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড আর তার রাণী ঈসাবেলা। এ ছাড়াও এ ব্যাপারে আরো একাধিক ঘটনার কথা ইতিহাসে জানা যায়। তন্মধ্যে ইতিহাসের পাতা থেকে তিনটি কাহিনী এখানে উল্লেখ করছি।

হযরত ঈসা (আ.) যখন ইঞ্জিল কিতাব নিয়ে এসে দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইলেন, তখন ইয়াহুদী পাদ্রীরা ক্ষেপে উঠলেন। কারণ, তারা ভাবলেন, এতে তাদের পাদ্রীত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তারা রোম সম্রাটকে উস্কানি দিলেন যে, আপনারা যদি ঈসাকে প্রতিরোধ না করেন, তাহলে তিনি আপনাদের রাজত্ব দখল করে নিবেন। তাদের কথা শুনে রোম সম্রাট তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করলেন। তখন ঈসা (আ.) যখন মামলার হাজিরা দিতে যান, তখন বিচারপতিরা বলেন – আপনার বিচার এখানে নয়; অমুক আদালতে। সেখানে গেলে বলেন – এখানে নয়, অন্য আদালতে। তাদের উদ্দেশ্য হলো – ঈসা (আ.)কে অপমান করা এবং বোকা বানানো। সেই দিনটি ছিলো এপ্রিলের প্রথম তারিখ। এই ঘটনার পর থেকে কুচক্রী ইয়াহুদীরা প্রতি বছর ১লা এপ্রিলে সেই ঘটনাকে স্মরণ করে একে অপরেকে বোকা বানিয়ে এপ্রিল ফুল পালন করে।

দ্বিতীয় সূত্র হলো, ইউরোপে ঋতুর পরিবর্তন শুরু হতো ২১শে মার্চ থেকে এবং এপ্রিল মাসে প্রকৃতির পূর্ণ পরিবর্তন আসতো। তখন লোকেরা মনে করতো – প্রকৃতি তাদের সাথে তামাশা করছে। তাই তারা প্রতি বছর ১লা এপ্রিল মাঠে-ময়দানে একে অপরকে বোকা বানিয়ে তামাশা উৎসব পালন করতো।

এ দু’ঘটনা ছাড়াও এক্ষেত্রে আরো একটি বহুল প্রচলিত ঘটনা রয়েছে। তা হলো – ৭২২ খৃষ্টাব্দে মুসলিম সেনা নায়ক মুসা বিন নূসাইর-এর পক্ষে সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ স্পেন বিজয় করেন। স্পেন বিজয়ের পর সেখানে ইসলামী শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে গোটা ইউরোপ আলোড়িত হয়েছিলো। মুসলমানদের যশ-খ্যাতি দেখে খৃষ্টানচক্র ইসলাম ও মুসলিমদেরকে উৎখাতে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

সুদীর্ঘ ৮০০ বছর ধরে মুসলমানদের গৌরবময় শাসন স্পেনে বহমান থাকে। কিন্তু কালের আবর্তনে মুসলিম শাসকগণ বিধর্মীদের মুকাবিলায় অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা ছেড়ে আরাম-আয়েশে মত্ত হলেন। এ সুযোগে কিছু বিশ্বাসঘাতককে হাত করে খৃষ্টানরা স্পেনে মুসলিম খিলাফতের উপর হামলা চালালো। খৃষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড মুসলমানদের নির্মূল করে স্পেনে খৃষ্টিয় বলয় গড়ার লক্ষ্যে ১৪৬৯ সনে পর্তুগীজ রানী ইসাবেলাকে বিয়ে করলেন এবং উভয়ে যৌথভাবে মুসলিম নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। মুসলমানরা এহেন পরিস্থিতিতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকলে খৃষ্টান রাজা মুসলমানদেরকে সমূলে ধ্বংস করার হীনমানসে প্রতারণার ফাঁদ পাতলেন। এবং রাজা ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করলেন, যে মুসলমান মসজিদে ও জাহাজে আশ্রয় গ্রহণ করবে, তারা নিরাপত্তা লাভ করবে। তখন হাজার হাজার শান্তিপ্রিয় সরলপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদগুলোতে ও জাহাজসমূহে আশ্রয় নিলেন। নরপশু খৃষ্টানরা তখন মসজিদসমূহ তালাবদ্ধ করে এবং জাহাজসমূহ পানিতে ভাসিয়ে দিলেন এবং মসজিদ ও জাহাজে আগুন লাগিয়ে দিলেন। সেখানে অবরুদ্ধ লক্ষ লক্ষ মুসলমান পুড়ে মারা গেলেন। নিষ্পাপ মুসলমানদের আহাজারীতে সেদিন স্পেনের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। এই দৃশ্য অবলোকন করে ঘাতক রাজা ফার্ডিন্যান্ড রানী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন : হায়রে মুসলমান, তোমরা এপ্রিল ফুল (এপ্রিলেরবোকা)! সেই দিনটি ছিলো ১৪৯২ সালের ১লা এপ্রিল। সেই থেকে প্রতিবছর ১লা এপ্রিল খৃষ্টানরা মুসলমানদের উপহাস করে এপ্রিল ফুল পালন করে।

সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা, এই হলো এপ্রিল ফুলের ইতিহাস। কিন্তু  ভাবতে মাথা ঘুরে যায়, মুসলমানদের সন্তানরা কী করে এপ্রিল ফুল পালন করে! কালের আবর্তনে পশ্চিমাদের নব্য কালচারে আমরা কোথায় চলেছি?

প্রতিবছর ১লা এপ্রিল খৃষ্টানরা এপ্রিল ফুল পালন করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর ট্রাজেডিকে স্মরণ করে। তাই এদিন মুসলমানদের স্পেনের সেই করুণ চক্রান্তের শিকার মুসলমানদের কথা স্মরণ করে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ হতে হবে এবং ইসলাম ও মুসলমানদেরকে তাদের অশুভ থাবা থেকে হিফাজতের প্রত্যয় গ্রহণ করতে হবে।

Related posts

Leave a Comment