মাসায়িল শিখি ::::: মে – ’১২

যাদু-বান ও গনক-জ্যোতিষীর

নিকট গমনের হুকুম

 মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

আমাদের সমাজে অনেককেই যাদু-টোনা, বান, জ্যোতিষী ও গণকদের কাছে হাত দেখানো এবং রাশিচক্রের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ণয় ও ভবিষ্যত জানার চর্চায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। সঠিক ইসলামী জ্ঞানের অভাবে প্রচুর সংখ্যক মুসলমান এসব করে চলেছেন। অথচ এগুলো ঈমানধ্বংসী কাজ।
যাদু-টোনা, বান ইত্যাদি ইসলামী শরীয়তে মারাত্মক কবীরা গুনাহ। এগুলো কুফরী পর্যায়ের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে সতর্কভাবে দূরে থাক। সেগুলো হচ্ছেÑআল্লাহর সঙ্গে র্শিক করা, যাদু-টোনা করা, কোন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা ও নির্দোষ মুসলিম মহিলাকে চারিত্রিক স্খলনের অপবাদ দেয়া।” (সহীহ-মুসলিম)
গনক-জ্যোতিষীর নিকট গমন করলে এবং তাদের কথা বিশ্বাস করলে কিংবা তাদের কাছে ভাগ্য বা ভবিষ্যত সম্পকর্েৃ কোনকিছু জানতে চাইলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে যায় আর সে যা বলে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি কুফরী করলো।” (সুনান-আবু দাউদ)।
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সে ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ভাগ্য পরীক্ষা করে বা তার জন্য ভাগ্য পরীক্ষা করানো হয়, অথবা ভবিষ্যদ্বাণী (গণক)-এর কাজ করে বা তার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করানো হয় অথবা যাদু চর্চা করে বা তার জন্য তা করানো হয়। আর যে কোন গণকের কাছে গেলো এবং সে যা বলে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলো, সে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি কুফরী করলো।” (বায্যার)।
আরেকটি হাদীসে মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম আস্সুলামী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল! জাহেলী যুগে আমরা কিছু কাজ করতাম, যেমনÑ গণকদের কাছে যেতাম (সে বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই)। তিনি বললেন, “গণকদের কাছে যেয়োনা।” (মুসলিম)।
অন্য রিওয়ায়াতে এসেছে, মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! গণকদের কোন কোন কথা সত্য প্রমাণিত হতেও দেখা যায়। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সেটা হলো এমন এক আধটা ঘটনা যা জ্বিন কর্তৃক সংগৃহীত হয়ে তাদের সহযোগী গণকদের কানে পৌঁছেছে। আর এর সাথে তারা আরো শত মিথ্যা যোগ করে নিয়েছে।” (মুসলিম)।
পবিত্র কুরআনে সূরাহ জ্বিন ও আরও একাধিক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, দুনিয়ার বিভিন্ন ঘটনাবলী সংঘটনের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণের মধ্যে কথোপকথন হয়। আর তা চুরি করে শোনার জন্য কিছু জ্বিন ঊর্ধ্বাকাশে ছুটে যায়। ফেরেশতাগণ তা টের পাওয়া মাত্র তাদেরকে অগ্নি শলাকা বর্ষণ করে ধাওয়া করেন। ধাওয়া শুরুর পূর্বে হয়তো তারা দু’-একটি কথা শুনে থাকতে পারে। সে দু’-একটি কথা সত্য হয়ে গেলেও তার সাথে তারা আরও শত মিথ্যা যোগ করে দেয়।
তেমনি আমাদের জীবনে সংঘটিত অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে থাকতে পারে জ্বীনেরা। ধরুন, কারো জীবনে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যা তার আশেপাশে অনেক মানুষই দেখেছে বা জেনেছে। ঠিক তেমনি আশেপাশের অনেক জ্বীনও তা প্রত্যক্ষ করেছে। এখন সে লোক যদি দুর্ভাগ্যবশত কোন গণক বা জ্যোতিষী বা জ্বীন দ্বারা তদবীর করে এমন ব্যক্তির কাছে ভাগ্য গণনা করাতে যায়, তাহলে তার আগেই প্রত্যক্ষকারী জ্বীন ঐ গণক বা জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে এ ব্যক্তির আগমন বার্তা ও তার অতীত জীবনের সেই দুর্ঘটনার খবর পৌঁছে দেবে। কারণ, জ্বিন-শয়তানরা মানুষের ঈমান-আক্বীদা বরবাদ করে দেয়ার জন্য এ জাতীয় কাজে মানুষকে সহযোগিতা করে থাকে।
এরপর যখন দর্শনপ্রার্থী গণক বা তদবীরকারীর নিকট পৌঁছে যায়, তখন জ্বিন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গণক বা জ্যোতিষী সেই ঘটনা সম্পর্কে আগাম বলে দেয় যে, আপনার জীবনে এত বৎসর পূর্বে এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল, ঠিক কিনা? দর্শনপ্রার্থী আশ্চর্যান্বিত হয়ে যায়। ধারণা করে বসে, এ লোকটি নিশ্চয় অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী! তা না হলে আমার অতীত ঘটনা জানলো কি করে? আবার এরা চাতুরী করেও অনেক কমন কিছু বলে দেয়। তাতে কাকতালীয়ভাবে কোন কথা মিলে গেলে, দর্শনার্থী তাতে প্রভাবিত হয়। তখন চিন্তা করেÑঅতীত জানার ক্ষমতা যেহেতু তার আছে, তাহলে নিশ্চয়ই ভবিষ্যত জানারও ক্ষমতা তার আছে। অথচ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল গাইবী ইল্ম ও ভাল-মন্দ সবকিছুর মালিক শুধুই মহান আল্লাহ। এ ক্ষমতা অন্য কারো নেই। কিন্তু গনক-জ্যোতিষ্কের নিকট গমন করার কারণে এ ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শনার্থীর ঈমান হরণের কাজ সম্পন্ন হয়।
আর এর ফাঁকে জ্যোতিষী বলে বসে ভবিষ্যতের ব্যাপারে অনেক মিথ্যা সমাচার। বলে যে, আপনার জীবনে আরও বড় কয়েকটি দুর্ঘটনা নিশ্চিতভাবে অপেক্ষা করছে। দর্শনার্থী তখন এ দুর্ঘটনাগুলো থেকে বাঁচার জন্য তার সাহায্য কামনা করে। কারণ, সে মনে করেÑদুর্ঘটনার আগাম খবর যেহেতু তার জানা আছে, তা দূর করার অলৌকিক ক্ষমতা ও তদবীরও নিশ্চয়ই তার জানা আছে! অথচ এসবের কোন জ্ঞানই আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। অথচ সে তার কথা বিশ্বাস করে ঈমান হারিয়ে বসে। এ কারণেই এ সমস্ত কার্যক্রমকে শিরক ও কুফর হিসেবে আখ্যায়িত করে এত্থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।
তাই ঈমান-আক্বীদা রক্ষা কল্পে এসব কুফরী পথ থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। এর পরিবর্তে বালা-মুসীবত ও রোগ-বালাই থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দু‘আ করতে হবে এবং তাঁর সাহায্য কামনা করতে হবে।

Related posts

Leave a Comment