বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করে ঘরে বসেই টাকা আয় করার সুযোগ আছে। অনেকেই একে কাজে লাগিয়ে দিন রাত শ্রম দিয়ে অনলাইন আউটসোর্স কোম্পানীগুলোতে নিজেদের একটা অবস্থান করে নিয়েছেন। যার মাধ্যমে প্রত্যেক মাসেই থাকছে ভাল একটি পরিমাণ অর্থ উপর্জনের সুযোগ।
অপরদিকে কিছু অসাধু ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ উপর্জনের জন্য অনলাইন ফ্রিল্যান্স সাইটগুলোতে একাউন্ট তৈরী করে কোন রকমে একটি কাজের বন্দোবস্ত করে বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে ভাল ব্যবহার করে তাদের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়ীক তথ্যাবলী চুরি করে ক্লায়েন্টদের সাথে প্রতারণা করে দেশীয় ফ্রিল্যান্সারদের সুনাম নষ্ট করছে।এনিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন লেখা হলেও নেয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা। ফলে দিনের পর দিন এসব অসাধু ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশি বায়ারদের সাথে প্রতারণা করে দেদারসে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
আজকের প্রতিবেদনেও একরম একজন প্রতারক ফ্রিল্যান্সার এর ব্যাপারে লেখা হয়েছে। যিনি অনলাইনে ফ্রিল্যান্স কোম্পানীর (ওডেস্ক, ইল্যান্স) সাহায্য নিয়ে বিদেশি এক ক্লায়েন্টের এর অফিসিয়াল কার্যক্রম সম্পাদন করার দায়িত্ব নেন। ফলে তিনি ঐ কোম্পানীর মাধ্যমে বুঝে পান ঐ কোম্পানীর ইমেইল এড্রেস এর লগিন করার পাসওয়ার্ড। প্রাথমিক সময়ে যদিও তিনি ঐ কোম্পানীর হয়ে কাজ করছিলেন কিন্তু কিছুদিন পরে তিনি ঐ কোম্পানীকে জানিয়ে দেন যে ব্যক্তিগত কারণে তিনি আর ঐ কোম্পানীর হয়ে কাজ করতে পারবেন না।
ফলে তিনি ঐ কোম্পানী হতে ফ্রিল্যান্স চাকুরীটি ছেড়ে দেন এবং সেই কোম্পানী তার কাজের মজুরি প্রদান করে দেন।
তার কিছুদিন পরই বাংলাদেশি সেই ফ্রিল্যান্সার তার কাছে মজুদ থাকা ইমেইল এড্রেস হতে Entropay.com এবং Payoneer.com এর তথ্যাবলী ও অন্যান্য নথীপত্র চুরি করে এবং পরবর্তিতে Entropay.com এবং Payoneer.com এর লগিন করার পাসওয়ার্ড রিসেট করে সেই কোম্পানীর অর্থ তার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্টে Skrill.com এবং Neteller.com এর মাধ্যমে ট্রান্সফার করে আনেন, যা অনলাইনে টাকা চুরির একটা প্রক্রিয়া।
ফ্রিল্যান্সিং এর নামে অবৈধভাবে অন্যের অর্থ আত্মসাৎকারী এই ব্যক্তির নাম গোলাম রাব্বি এবং সে ঢাকার মীরপুরের –পল্লবী ২য় ফেস এলাকায় বসবাস করে।
প্রিয়াম জয়াপাথমা, তিনি বিদেশি একজন ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্ট যিনি বিভিন্ন কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দিয়ে থাকেন। ঘটনাক্রমে তিনি গোলাম রাব্বিকে গত বছরের জুন মাসে তার কিছু কাজ করে দেওয়ার জন্য নিয়োগ দেন। তিনি ডিসেম্বর ২০১৪ এর দিকে ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে কাজ করতেপারবেন না বলে প্রিয়াম হতে পূর্বের কাজের অর্থ আদায় করে নেন।
এর কিছুদিন পরই গোলাম রাব্বি তার কাছে থাকা ঐ কোম্পানীর ইমেইল এড্রেস হতে প্রতারণা করে অনলাইন ব্যাংক Entropay.com এর ডেবিট কার্ড এর তথ্যাদি নিয়ে উক্ত অর্থ neteller.com এ ট্রান্সফার করে নিয়ে আসেন। বিষয়টি প্রিয়াম এর কাছে অবগত হলে তিনি গোলাম রাব্বির সাথে যোগাযোগ করেন।
প্রাথমিকভাবে গোলাম রাব্বি প্রতারণার কথা অস্বীকার করে এবং প্রয়োজনে তার কম্পিউটারে একসেস নিয়ে Neteller.com এর ট্রানজাকশন চেক করতে বলেন। তারা তার কম্পিউটারে একসেস নিয়ে Entropay এর কার্ড নাম্বার দেখতে পায় এবং নিশ্চিত হন যে তাদের Entropay ডেবিট কার্ড এর তথ্যাদি দিয়ে ডলার ট্রানজাকশন করা হয়েছে। তার প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়লে প্রিয়াম ট্রানজাকশনের স্ক্রীনশট নিয়ে রাখে দেন।
তার কৃতকর্মের প্রতি ঐ বিদেশি ফ্রিল্যান্সার এর ক্ষোভ থাকলেও যখন ক্ষমা চায় তখন তিনি বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারকে ক্ষমা করে দেন।
কিন্তু গোলাম রাব্বি তার এই সুযোগটাকে আবারও অসাধুভাবে ব্যবহার করেন।
মার্চ ২০১৫: প্রিয়াম দাবি করেন যে তার Payoneer.com মাস্টারকার্ড থেকে তথ্য চুরির মাধ্যমে গোলাম অর্থ চুরি করে Skrill একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গোলাম রাব্বি প্রথমে স্বিকার করেন যে তার কাছে প্রিয়ামের কার্ড ইনফর্মেশান আছে কিন্তু শুধুমাত্র কার্ড নাম্বার এবং সি.ভি.সি নাম্বার দিয়ে টাকা চুরি করা যায় না। প্রিয়াম এর কাছে শক্ত প্রমাণ না থাকার কারণে গোলাম রাব্বিকে প্রতারক প্রমান করতে পারেনি। কিন্তু প্রিয়াম তার Payoneer.com এর একাউন্ট তথ্য কারও সাথে শেয়ার করেনি, সুতরাং গোলামই একমাত্র সন্দেহভাজন ব্যাক্তি যে ডলার চুরি করতে পারে।
প্রিয়াম জয়াপাথমা’র সাথে আলাপ করলে জানা যায়, গোলাম রাব্বি সম্পর্কে তার কাছে যোগাযোগ ঠিকানা আছে যা তিনি পরবর্তীতে প্রতিবেদককে শেয়ার করেন। গোলাম রাব্বি, পিতাঃ মোহাম্মদ হীরণ খান, বাড়ি #১৩ (৭ম তলা), ব্লক #ই, মেইন রোড, ইস্টার্ন হাউজিং, পল্লবী ২, মিরপুর-১২১৬, বাংলাদেশ। সরকারী গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটে লেখা পড়া করেন বলেও জানা যায়। মেবাইলঃ ০১৬৭৩-৪০৯০৩৪, ০১৭১৫-৬৫৩০৬৯। ইমেইলঃ kmgolamrabbi@gmail.com ফ্রিল্যান্স একাউন্ট, https://www.elance.com/s/kmgolamrabbi
ঘটনাটি এখানেই শেষ হলে পারতো। কিন্তু প্রিয়াম গোলাম রাব্বিকে অর্থ ফেরত না দিলে বাংলাদেশি পুলিশকে এ ব্যাপারে অভিযোগ করবেন বলে জানায়। জবাবে গোলাম রাব্বি জানায় যে তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।
গোলাম রাব্বির সাথে প্রিয়াম এর আলাপকৃত চ্যাটিং বা ম্যাসেজ কনভার্সেশন ও ভয়েস কল রেকর্ড এর কপি উক্ত প্রতিবেদন এর সাথে সম্পৃক্ত করা আছে।
গোলাম রাব্বি জানায়, সে অল্প কিছুদিন পরই দেশের বাহিরে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছেন। বাংলাদেশে তার কেউ কিছু করতে পারবে না। এমনকি বিদেশে গেলেও তার কেউ কিছু করতে পারবে না। সে জানায়, স্বল্প কিছুদিনের মধ্যে সে ইটালী চলে যাচ্ছে। সেখানে তার এক আংকেল বসবাস করেন।
এব্যাপারে প্রিয়াম উক্ত প্রতিবেদকের মাধ্যমে বাংলাদেশি পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগীতায় গোলাম রাব্বির ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
অপার সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং জগতে স্বল্প কয়েকজন অবৈধ ফ্রিল্যান্সার এর কারণে গোটা ফ্রিল্যান্সারদের মাথা প্রতিনিয়ত নীচু হচ্ছে। হারাচ্ছে কাজের সম্ভাবনা, হারাচ্ছে উপার্জনের সম্ভাবনা। আর্থিক দিক থেকে আমরাই হচ্ছি বঞ্চিত। অনলাইনে কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি এবং এব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হলে হয়তো বা এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো।
784