ভূতের গল্প : ছায়ামূর্তি

ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার নানা ভাইয়ের সাথে। নানা ভাই তখন মাঝ বয়সের ছিলেন। ঘরে নানুজান আর উনাদের ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার। পরবর্তীতে নানুজানের কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেছি আমি এবং আমার অন্য ভাইবোন। নানা ভাই আমাদের গ্রামেরই একটা স্কুলে হেড মাস্টার ছিলেন। ঘটনা অনেক আগের। ১৯৮০ সালের দিকের। তো, তখন গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ এর তেমন প্রচলন ছিল না। বেশিরভাগ মানুষই কুপি বা হারিকেন ব্যাবহার করতো। নানা ভাই স্কুল থেকে মাঝে মাঝে ফিরতে দেরি হয়ে যেত। দেরি হয়ে গেলে উনি সেখানে নামাজ আদায় করে তারপর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা করতেন। উনার কাকা বিদেশ থেকে একটা টর্চ লাইট পাঠিয়েছিলেন। সেই টর্চের আলোই মাঝে মাঝে হতো উনার পথ চলার সম্বল। যেদিনের ঘটনা, সেদিনও নানা ভাই একটু রাত করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় একটা পুরনো বট গাছ পড়ে। দিনের বেলায়ও জায়গাটা কেমন যেনো অন্ধকার অন্ধকার থাকে। একটা জমাত বাধা বাতাস যেনো পাক খায়। তখন গ্রামে লোকজন বলতে বেশি মানুষ ছিল না। দেখা যেত, পুরো গ্রাম মিলে হয়তো ২০০ মানুষ। তাই সবারই সবার সাথে চেনা জানা ছিল। যাই হোক, নানা ভাই সেই বট গাছের কাছাকাছি আসার সময় হটাত দুটো ছায়ামূর্তির মতন দেখতে পান। অন্ধকারে হটাত নাড়া ছাড়া দেখায় তিনি একটু চমকে যান। আস্তে করে আলো ফেলে দেখার চেষ্টা করেন কাউকে দেখা যায় কিনা। আলো ফেলার খানিক আগেও যেখানে আওয়াজটা হয়েছিলো, আলো ফেলতেই দেখলেন জায়গাটা ফাঁকা। তবে যেখানে আওয়াজ হয়েছিলো সেখানে কিছু বটের শাখা নড়ছে। নানা ভাই জিজ্ঞেস করেন ওখানে কেউ আছেন কিনা। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এবার নানা ভাই একটু সাহস নিয়ে বুকে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে এগুতে থাকেন। খানিকটা পথ যাওয়ার পর উনার ভয় আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগে। এরপর আর খানিকটা গেলেই বাড়ি। নানা ভাই দ্রুত পায়ে পথ চালালেন। হটাত পেছনে কারো পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেলো। কে যেনো পা হেঁচড়ে হেঁচড়ে হাঁটছে। নানা ভাই ঘুরে পেছন দিকে টর্চ মারলেন। একটা লোক আসছে দূর থেকে। নানা ভাই হেঁড়ে গলায় ডাক দিলেন, কেডা গো বলে। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। এদিকে নানা ভাইকে চমকে দিয়ে হটাত সেই মূর্তিটা বাতাসের বেগে সামনে আসতে লাগলো। যেনো উড়ে আসছে। এবার নানা ভাই ভয় পেয়ে দৌড় লাগাতে যাবেন। হটাত খেয়াল করলেন, মূর্তিটার চোখ এই অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করছে। অনেকটা পশুর মত। কিন্তু বলা বাহুল্য, সে সময় ভাল্লুক বা ঐ জাতীয় কোনো পশু এমন করে পথে ঘাঁটে উঠে আসতো না। আর সেই মূর্তি টা একজন স্বাভাবিক মানুষের আকৃতি নিয়েই এগুচ্ছিল। নানা ভাই আর সহ্য করতে পারলেন না। ঝেরে দৌড় মারলেন পেছনে ঘুরে। দৌড় মেরে কিছুদূর যেতেই পিঠে কিছুর ছোঁওয়া অনুভব করলেন। দাঁড়ালো কোনো কিছুর আঁচড় মনে হল। নানা ভাই, চিৎকার করে আরো জোরে দৌড় লাগালেন। এবার পেছন থেকে সেই মূর্তিটা(হয়তো, কারন সেটি কি ছিল তা নানা ভাই দেখতে পারেন নি) এসে ধাক্কা দিয়ে উনাকে ফেলে দিল। জ্ঞান হারানোর আগে নানা ভাইয়ের শুধু এতটুকুই মনে ছিল। পরদিন উনাকে পথের পাশের এক ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়। উনার পিঠে রক্তের মাখামাখি। সবাই মিলে ধরাধরি করে বাসায় আনার পর গ্রামের চিকিৎসক উনাক প্রাথমিক চিকিৎসা করেন। উনার পিঠে বড় বড় নখের আঁচড় লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো এতো গভীর ছিল যে অনেকটা কেটে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো। নানা ভাইকে জরুরী ভাবে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করা হয়। উনি প্রায় ১ মাস পর সুস্থ হয়ে উঠেন। এরপরের দিন সেই বট গাছের ডালে একজনের ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। সেই লোকটা কে ছিল তা ঐ গ্রামের মানুষের অজানা। সেই রহস্য অমীমাংসিতই থেকে যায়। এই ঘটনার পড়ে নানা ভাই এর সাথে আরো একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সেটি আজকে আর লিখলাম না। তবে, আমার মনে হয়েছে, দুটো ঘটনা এক করলে হয়তো এর কোনো উপসংহার টানা যায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি অনেক বড়। তাই আজকে আর শেয়ার করলাম না। আপনারা চাইলে পরবর্তীতে লিখে আমি এডমিনের কাছে পাঠিয়ে দিবো। Selim Rayhan

ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার নানা ভাইয়ের সাথে। নানা ভাই তখন মাঝ বয়সের ছিলেন। ঘরে নানুজান আর উনাদের ২ ছেলে মেয়ে নিয়ে সংসার। পরবর্তীতে নানুজানের কাছ থেকেই ঘটনাটি শুনেছি আমি এবং আমার অন্য ভাইবোন। নানা ভাই আমাদের গ্রামেরই একটা স্কুলে হেড মাস্টার ছিলেন। ঘটনা অনেক আগের। ১৯৮০ সালের দিকের। তো, তখন গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুৎ এর তেমন প্রচলন ছিল না। বেশিরভাগ মানুষই কুপি বা হারিকেন ব্যাবহার করতো। নানা ভাই স্কুল থেকে মাঝে মাঝে ফিরতে দেরি হয়ে যেত। দেরি হয়ে গেলে উনি সেখানে নামাজ আদায় করে তারপর বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা করতেন। উনার কাকা বিদেশ…

Read More

ভালবাসার গল্প : পরিচয়

একটা রিক্সা আর ঝুম বৃষ্টির আশায় মধ্য দুপুরের গনগনে রোদ মাথায় করে দাড়িয়ে আছে সোমেন।ঘামে ভেজা শার্টটা পিঠের সাথে আটকে আছে বেয়াড়া ভাবে।বিরক্তি আর রোদের উত্তাপে কপালে বেশ কয়েকটা ভাঁজ। তখনি হুট করে কে যেন ধাক্কা দেয়।লোকটার ঘামের বোটকা গন্ধ নাকে লাগে । পাসেই ছিল নালা।পরতে পরতে কোন মতে নিজেকে সামলে নিল সোমেন।জিবের ডগায় কয়েকটা গালিও এসে গিয়েছিল। পাশ থেকে কে একজন খুব জোড়ে হেসে উঠল। সোমেন লোকটার দিকে তাকাতেই,হাসি থামিয়ে বলল, -সবার মাঝে অনেক ব্যাস্ততা।কাকে কাকে দোষ দেব,বলুন? কিছুটা অপ্রস্তুত সোমেন।পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মোছে।সামনে দাঁড়ানো মাঝারি উচ্চতার লোকটির দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, -মন্দ বলেন নি। আপনি? হেসে হাত বাড়িয়ে দেন ভদ্রলোক। -শাহরিয়ার,আপনি? -সোমেন।কিছু মনে করবেন না, কেমন যেন চেনা মনে হচ্ছে আপনাকে? -প্রশ্নই আসে না।সিলেট আজি এলাম।সাংবাদিক,আপনাদের হাসপাতালে কিছু কাজ ছিল... দুজনের কথার মাঝেই একটি রিক্সা এসে থামে।সোমেন দরদাম করে নেয়।রিক্সায় চড়ে বলে, -দুপুরটা বড্ড বেয়াড়া।নয়তো আপনার সাথে একটা আড্ডা দেওয়া যেতো। জবাবে একটা ছোট হাসি দেয় শাহরিয়ার। -আছি এখানে আর দিন দুয়েক।বলা যায় না হয়তো দেখবেন দেখা হয়ে গেল। -কোন পত্রিকায় আছেন? কিছু একটা বলে শাহরিয়ার।শুনতে পায় না সোমেন ,ততক্ষনে রিকশা বেশ কিছু দূর এগিয়ে গেছে। এ ঘটনার দু দিন পর- ঢাকায় যাচ্ছিল সোমেন।পারাবত এক্সপ্রেক্স।শেষ বিকেলের রোদ ধান ক্ষেতে কিংবা বিলের পানিতে এসে পরছিল।বেশ লাগছিল দেখতে। -আরে সোমেন পরিচিত কণ্ঠ কানে আসতেই ফিরে তাকায় সোমেন।শাহরিয়ারের হাসিমুখ দেখেই ভাল লাগে। -বাহ্‌।দেখা হয়েই গেল।একা ট্রেন জার্নি মোটেও ভাল লাগে না আমার। হেসে বলে সোমেন। দুজনে মিলে চলে জম্পেশ আড্ডা । সমবয়সী বলে জমে যায় আড্ডা খুব অল্পেই। কথায় জানা যায়,দুজনের ছোট বেলা কেটেছে সিলেট।আপনি থেকে তুমিতে নেমে আসে তারা। ট্রেন ঢাকায় পৌঁছবে রাত দশটায়।আটটার মত বাজে। বাইরে বেশ অন্ধকার করে আছে।অন্ধকারের নিস্তব্ধতা চিড়ে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রেন।শেষ হয়ে আসা সিগ্রেট টা তুড়ি মেরে জানালা দিয়ে ফেলতে ফেলতে শাহরিয়ার বলে, -জান সোমেন,খুব ছোট বেলায় অন্তু নামে একটা বেশ ভাল বন্ধু ছিল আমার।চেহারাটা আবছা,নাহ বেশ ভালই মনে আছে তার। একসাথে খেতাম,খেলতাম।কত সুন্দর ছিল সময়টা। চায়ের কাপটা সিটের নিচে ঠেলে দিয়ে,পকেট থেকে সিগ্রেটের প্যাকেট বের করতে করতে সোমেন বলে, -তারপর?এখন কোন খোঁজ নেই?যোগাযোগ আছে? -নাহ।আসলে শেষ বার যেদিন অন্তুর সাথে খেলছিলাম,কি কারনে যেন অন্তু আমার উপর খুব রেগে গিয়েছিল।বেশ জোড়ে একটা ঘুষি মেরে বসেছিল আমার পেটে। -লেগেছিল খুব? -আরে ধুর।পাঁচ বছরের একটা ছেলে কিবা জোড় ছিল হাতে তবে আঘাত পেয়েছিলাম খুব, কাছের মানুষের থেকে পাওয়া আঘত তো।মনে খুব লেগেছিল। -ও। কি বলবে ভেবে পায় না সোমেন। শাহরিয়ার জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল।সেদিকে তাকিয়ে সিগ্রেট ধরাতে ধরাতে সোমেন বলে, -আমার মনে হয় কি জান,এর জন্য নিশ্চয়ই সে কষ্ট পেয়েছিল। -পেতে পারে। শাহরিয়ারআরের দিকে সিগারেট টা বারিয়ে দিয়ে বলে, -তারপর,তারপর কি হয়েছিল? -রেগেমেগে আমি তো আর অন্তুর সাথে দেখাই করি নি।দুদিন পর শুনি তারা সেই বাসা বদলে চলে গেছে।তারপর কত বছর কেটে গেল।নাহ আর ওর দেখা পেলাম না। -আচ্ছা ধর হঠাৎ অন্তুর সাথে দেখা হয়ে গেল।কি করবে? হেসে ওঠে শাহরিয়ার।একমুখ ধোঁয়া ছেরে বলে, -বেশ বলেছ তো।ভাবি নি কখনও।হয়তো পাল্টা ঘুষি চালাব।যেটা তখন করা উচিত ছিল। বাদ দাও ভাই,তার দেখা আর পাব না।দেখলেও এখন চেনার প্রশ্নই আসে না। হঠাৎ নিরব হয়ে যায় ট্রেনের কামরাটা। ট্রেন এগিয়ে যায়, রাত বারতে থাকে।ট্রেন দশটার একটু পরেই প্ল্যাতফরমে ঢোকে।আর সবার সাথে সোমেনরাও নেমে পরে।পেটে খিদে নিএ দুজন দুদিকে চলে যায়।ফোন নাম্বার রেখে দেয়।এক রাতেই দুজনে খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায়। রাতের জার্নির ধকল কাটিয়ে বেশ বেলায় বিছানা ছাড়ে শাহরিয়ার।অভ্যাসবসত মোবাইলটা হাতে নিলে দেখতে পায় কেউ একজন টেক্সট করেছে, "আরিফ, তুই ও নাম বদলে ফেলেছিস!আমার মতই।কত হ্যাংলা ছিলি।কিভাবে বুঝব এটা তুই?আমায় যে চিনিস নি তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছিস?ভাই মাফ করে দিস।তোকে খুজি নি,জানতাম পাব না।কিন্তু ভুলি নি তোকে,জানিস?ভাবছিস হয়তো, কাল কেন পরিচয় দেই নি?তোর ঘুসির ভয়ে। আসলে তুই কাল কথা গুল বলার পর এতটাই লজ্জা লাগছিল,বলে বোঝাতে পারব না।......... অন্তু ( সোমেন)" লিখেছেন - অনিক ঘোষ

একটা রিক্সা আর ঝুম বৃষ্টির আশায় মধ্য দুপুরের গনগনে রোদ মাথায় করে দাড়িয়ে আছে সোমেন।ঘামে ভেজা শার্টটা পিঠের সাথে আটকে আছে বেয়াড়া ভাবে।বিরক্তি আর রোদের উত্তাপে কপালে বেশ কয়েকটা ভাঁজ। তখনি হুট করে কে যেন ধাক্কা দেয়।লোকটার ঘামের বোটকা গন্ধ নাকে লাগে । পাসেই ছিল নালা।পরতে পরতে কোন মতে নিজেকে সামলে নিল সোমেন।জিবের ডগায় কয়েকটা গালিও এসে গিয়েছিল। পাশ থেকে কে একজন খুব জোড়ে হেসে উঠল। সোমেন লোকটার দিকে তাকাতেই,হাসি থামিয়ে বলল, -সবার মাঝে অনেক ব্যাস্ততা।কাকে কাকে দোষ দেব,বলুন? কিছুটা অপ্রস্তুত সোমেন।পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মোছে।সামনে দাঁড়ানো…

Read More

ভূতের গল্প : তোমার পালা আসছে! খুব শীঘ্রই

ভূতের গল্প “তোমার পালা আসছে! খুব শীঘ্রই

এই ঘটনা অথবা ঘটনাগুলো যখন ঘটে তখন আমার বয়স ছিল ৯ বছর। এখন আমি ১৫ বছরের একজন কিশোর। আমরা ঐ সময় বোস্টনে(আমেরিকার একটি শহর) থাকতাম। আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স মাত্র ৩ মাস। উনাকে কেউ একজন মেরে আমাদের ক্লোজেটে(এক প্রকারের আলমারি) আটকে রেখেছিলো। আমি এক বিন্দু মিথ্যে বলছি না। আমি পরবর্তীতে এই কথাগুলো আমার খুবই বিশ্বস্ত মানুষের কাছ থেকে শুনতে পাই। আমার বয়স যখন ৯ বছর তখন আমি মাঝে মাঝে আমার খাটের নিচথেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ শুনতে পেতাম। আমি এই শব্দের ভয়ে মাঝে মাঝে খুব ভীত এবং…

Read More

ভালবাসার গল্প : মাঝরাতের প্যাসেঞ্জার

রাস্তাটা এবড়োখেবড়ো । রিকশাওয়ালা উল্কার বেগে রিকশা চালানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েছে সম্ভবত । সাজ্জাদ ঝাঁকুনি খেতে খেতে ভাবছিল বাড়ি পৌঁছানোর আগে গায়ের হাড়গোড় আস্ত থাকলে হয় ! রাত বাজে আড়াইটা । এত রাতে রিকশার প্রতিটা ঝাঁকুনি যে পরিমান বিকট শব্দ তৈরি করছে তা আর কিছুক্ষন চলতে থাকলে গাঁয়ের লোকজন ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসবে লাঠি সোটা নিয়ে । এক পাশে ছোট একটা খাল অন্য পাশে ধানী জমি । মাঝে শিমলতা ,সুপারি,নারকেল গাছ আর বুনো ঝোপঝাড়ে ছাওয়া কাঁচা পাকা রাস্তা । ঝিঁঝিঁ ডাকছে ক্লান্তিহীন । রিকশার টিমটিমে হ্যারিকেনের আলো আর সাজ্জাদের হাতে ধরা টর্চটার আলো নিশুতি রাতের আঁধার কাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে । রিকশাওয়ালা জোয়ান মরদ । গায়ে জোর আছে বেশ । খুব দ্রুত তালে প্যাডেলে পা চালাচ্ছে । একটু কেমন যেন । সরকার বাড়ির দক্ষিনে নাকুন্দপাড়া কমসে কম দশবার বলার পর তারপর রিকশাওয়ালা চুপচাপ মাথা হেলিয়ে রিকশায় ওঠার ইঙ্গিত করেছে । সরকারবাড়ির সামনে আসতেই একটা দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো সাজ্জাদ । কত দিন পর এই দৃশ্যটা দেখছে সে ! ছোটবেলায় একদিন বাবার হাত ধরে গভীর রাতে হাট থেকে ফেরার সময় ঠিক এই দৃশ্যটা দেখে সে থমকে দাড়িয়ে গিয়েছিল । । বিশাল দীঘির একূল ওকূল চোখে পড়েনা । শ্বেত পাথরে বাঁধানো ঘাট । মাঝদীঘিতে একরাশ শাপলা ফুটে আছে । শাপলাবন ঘিরে হাজার হাজার জোনাকের নাচের আসর । দীঘির অন্ধকার জলে ফোটা ফোটা জোনাক আলোর ছায়া । নিশুতি রাতের হিম বাতাসে তিরতির করে কাঁপছে দীঘির কালো জল । মনে হচ্ছে আকাশের সব নক্ষত্র জলের মায়ায় দীঘিতে নেমেছে । তন্ময় হয়ে তাকিয়েছিল সাজ্জাদ । ব্যাগটায় হাত বুলিয়ে তৃপ্তিতে চোখ মুদল ও । আজ চাঁদ উঠলে পরশু ঈদ । ছেলেটার জন্য সোনালি সুতোয় বোনা পাজামা পাঞ্জাবি আর আয়েশার জন্য শাড়ি আলতা চুড়ি । শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়স্বজনের জন্যেও অনেক কিছু কিনেছে । সারাদিনের ক্লান্তিতে গা ভেঙ্গে আসতে চাইছে ওর । । ঢাকা থেকে দিনাজপুর সহজ জার্নি নয় । একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরি করে সাজ্জাদ । । দিনরাত গাধার খাটনি । বেতনও অত বেশি নয় । সাতপাঁচ ভাবছিল । গোরস্থান ঘেষে যাওয়ার সময় বাবা মায়ের কবরের বেড়াটা চোখে পড়ল ওর । একটু বিমর্ষ হয়ে গেলো সাজ্জাদ । গতবছর মা একটা শাড়ি চেয়েছিল । সাদা শাড়ি । সাজ্জাদ সবার জন্য কেনাকাটা করেছিল সেবার । ওর শালা সম্বুন্ধী শ্বশুর শাশুড়ি সবার জন্য । শুধু মায়ের শাড়িটা কিনতে বেমালুম ভুলে গিয়েছিল ।সেই ঈদের দুদিন পরেই মা মারা গিয়েছিলেন । কাফনের সাদা কাপড়ে জড়ানো মায়ের পা ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল সাজ্জাদ । একটু ঝিম ধরেছিল । রিকশার তীব্র ঝাকুনিতে সচকিত হলো সে। হঠাত্ খেয়াল হলো ওর একটু যেন বেশিই নীরব হয়ে গেছে আশপাশ । গা ছমছম করা নিস্তব্ধতা নেমেছে রাস্তা জুড়ে ! ঝিঁঝির ডাক থেমে গেছে । একটু গা শিরশির করে উঠল বিনা কারনে আর টর্চটা শক্ত হাতে আকড়ে ধরল সাজ্জাদ । কি ভেবে পিছন ফিরল ও । রিকশার হুডের ফাঁক দিয়ে ফেলে আসা রাস্তাটার দিকে তাকাল ও । চমকে উঠে চোখ বড় বড় হয়ে গেল সাজ্জাদের ! অন্ধকার রাস্তাটা ধরে পুরো শরীরে সাদা কাপড়ে জড়ানো একটা মানুষ প্রবল বেগে দৌড়ে আসছে ।সাদা কাপড় হাওয়ায় উড়ছে । অপার্থিব সেই দৃশ্য দেখে সাজ্জাদের গলা শুকিয়ে গেল । প্রচন্ড ভয় পেয়ে সামনে ফিরল ও । কাঁপা কাঁপা স্বরে একটু চেঁচিয়ে উঠল , ও ভাই একটু তাড়া তাড়ি চালান ! রিকশাওয়ালা নির্বিকার ।যেন শুনতেই পায়নি । পিছন রাস্তা থেকে কে যেন মায়াবী কন্ঠে ধীর স্বরে চিত্কার করে ডেকে উঠলো , 'খোকা ও খোকা আমার জন্য কিছু আনিসনি ? একটা সাদা শাড়ি ? গতবছরও আনলিনা .. সাজ্জাদ থরথর করে কেঁপে উঠলো ! এই কন্ঠ সে চেনে ! জন্ম থেকে শুনে এসেছে ! এ তার মায়ের কন্ঠ ! রিকশা প্যাডেলের ক্যাঁচকোঁচ শব্দ হচ্ছে অবিরাম ! "ও ভাই একটু শুনেন কে যেন আসতেছে একটু তাড়াতাড়ি চালান" ,সাজ্জাদ কম্পিত স্বরে রিকশাওয়ালাকে ডাক দেয় । রিকশাওয়ালা পিছন ফেরেনা । রিকশা ঝাঁকুনি খেতে খেতে চলেছে আগের মতই ! একটা নিশাচর পাখি ডানা ঝাপটে উড়ে গেল । বুনো লেবুর গন্ধ ভেসে আসছে । আচমকা পিঠের উপর ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ ! সাজ্জাদ শিঁরদাড়া সোজা করে স্থির হয়ে গেল ! কানের কাছ বেয়ে ঘামের ফোটা টপ টপ ঝরতে শুরু করেছে । ভয়ে আতংকে বোধশুদ্ধি লোপ পেয়ে গেল ওর । হিমশীতল স্পর্শটা ওঠানামা করছে ওর পিঠের উপর ,যেন কেউ আদর করে হাত বোলাচ্ছে ওর পিঠে । "ও খোকা মানিক আমার" , ওর মায়ের কাতর কন্ঠটা ফিসফিস করে বলছে , " আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা ,আমার জাদুর কপালে টিপ দিয়ে যা !খোকা আমার ,লক্ষী আমার , বাছা আমার এখনো খাসনি ? আমার সাথে চল মাছের মুড়ো রেঁধে খাওয়াব তোকে । কবরে শিয়াল বাসা বেঁধেছেরে আমি ঘুমাতে পারিনা বাছা । শাড়ি এনেছিস খোকা ? একটু দেখি ? ও খোকা .. তোর বাবার ও খুব কষ্ট হয় তোকে না দেখে । আয় খোকা একটা চুমু দিই তোর কপালে .. পিছ ফির .. খোকা .. ও খোকা .. আতংকে দিশেহারা সাজ্জাদ শক্ত করে টর্চটা আকড়ে থরথর কাঁপতে থাকে । ফিরবেনা ফিরবেনা করেও পিছ ফেরে ও। যেন কেউ জোর করে ওকে পিছন ফিরালো ! রিকশার হুডের ফাঁকে ঘোমটা ঢাকা একটা মাথা আবছা অন্ধকারে মুখ বাড়িয়ে রেখেছে । জ্ঞানহারাবার প্রাকমুহুর্তে কপালে একটা শীতল ঠোঁটের স্পর্শ টের পেল সাজ্জাদ ! নাকুন্দপাড়ার বাজারে একটা দোকান তখনো আধখোলা ছিল । দোকানি দোকান গুছিয়ে মাত্র ঘুমানোর পায়তারা করছিল । রিকশাওয়ালা করিম বিরক্ত হয়ে অজ্ঞান পেসেঞ্জারটাকে দোকানে নিয়ে এসেছে । সে কানে কম শুনে । পেসেঞ্জারটা খামাখা একটু আগে জোরেসোরে চিক্কুর পেড়ে রিকশা থেকে ফাল মেরে বেহুঁশ হয়ে গেছে । টর্চলাইট ভেঙ্গে হাতে কাঁচের টুকরো গেঁথে রক্তারক্তি কান্ড ! করিম বিরক্ত হয়ে গালি দেয় গোটা দশেক । মহামুসিবত ! - বিকেল চড়ুই

রাস্তাটা এবড়োখেবড়ো । রিকশাওয়ালা উল্কার বেগে রিকশা চালানোর প্রতিজ্ঞা নিয়েছে সম্ভবত । সাজ্জাদ ঝাঁকুনি খেতে খেতে ভাবছিল বাড়ি পৌঁছানোর আগে গায়ের হাড়গোড় আস্ত থাকলে হয় ! রাত বাজে আড়াইটা । এত রাতে রিকশার প্রতিটা ঝাঁকুনি যে পরিমান বিকট শব্দ তৈরি করছে তা আর কিছুক্ষন চলতে থাকলে গাঁয়ের লোকজন ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসবে লাঠি সোটা নিয়ে । এক পাশে ছোট একটা খাল অন্য পাশে ধানী জমি । মাঝে শিমলতা ,সুপারি,নারকেল গাছ আর বুনো ঝোপঝাড়ে ছাওয়া কাঁচা পাকা রাস্তা । ঝিঁঝিঁ ডাকছে ক্লান্তিহীন । রিকশার টিমটিমে হ্যারিকেনের আলো আর সাজ্জাদের হাতে ধরা…

Read More

ভূতের গল্প : মাংশ পিণ্ড

আমার মেঝো কাকা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ জেদি আর একরোখা ছিলেন। দাদুর নির্দেশ অমান্য করে রাত বিরাতে গ্রামের বন্ধুবান্ধবের সাথে চলে যেতেন দূরে যাত্রা দেখতে অথবা মাছ শিকারে। প্রথমেই বলে নেই, গ্রামে গঞ্জে রাতে মাছ ধরার অন্যতম কারন হল, তখন মাছ ধরা পড়ে বেশি। তাই মানুষ বেশিরভাগ সময়ই রাত হলে মাছ ধরতে যায়। এমনি ভাবে একদিন আমার কাকা তার কয়েক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে প্রায় ২ মাইল দূরের একটা ঝিলে। ঐ ঝিলে প্রচুর শাপলা ফুটতো। আর ঝিলটি নাকি গভিরতায় অনেক বেশি ছিল। তাই সাধারণত মানুষ খুব একটা যেত না সেখানে মাছ মারার জন্য। ঐ ঝিল নিয়ে অনেক খারাপ কথা ছড়িয়ে আছে গ্রাম জুড়ে। প্রায় প্রতি বছরই ৩-৪ জন মানুষ ঐ ঝিলে ডুবে মারা যায়। তাদের মাঝে অনেকেই ভালো সাঁতারু ছিলেন। তো, এসব কথা জানত বলে দাদা দাদু মানা করলো যাওয়ার জন্য। কিন্তু কাকা জেদ ধরলেন যে তার যেতেই হবে। ভয়ে সরে গেছেন ভেবে পড়ে তার বন্ধুরা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে এটা কাকা মেনে নিতে পারছিলেন না। যাই হোক, উনারা খুব আয়োজন করে ৪ বন্ধু মিলে গেলেন মাছ ধরতে। কাকা এবং উনার বন্ধু কাশেম লুঙ্গী কাছা দিয়ে প্রায় কোমর পানিতে নেমে গেছেন। উদ্দেশ্য ছিল একটু গভীরে গিয়ে জাল মারা। একটু বলে নেই, সেদিন আমাবস্যা ছিল। তেমন আলো ছিল না চারপাশে। তাই উনারা একটা হ্যাজাক বাতি নিয়ে গিয়েছিলেন। যাই হোক, উনারা জাল মেরে ঠিকঠাক ভাবেই উঠে এলেন। উপরে যেই দুজন ছিলেন তারা অপেক্ষায় ছিলেন। আস্তে আস্তে জাল গুটাতে লাগলেন। কাকারাও এর মাঝে ঝিল থেকে উঠে পড়েছেন। ৪জন মিলেই ঝিলের পারে দাঁড়িয়ে জাল গুটাচ্ছিলেন। হটাত কিসের যেনও আওয়াজ হল পেছন থেকে। কে যেনও ধমক দিল মনে হয়। হ্যাজাকের আলো ছিল, সেই আলোতে পেছনে ঘুরে দেখলেন উনারা। কাউকে দেখলেন না। ভাবলেন হয়তো মনে ভুল। আবারো জাল টানতে লাগলেন। হটাত কি যেনও হল, উনাদের হাত থেকে জালের দড়ি খুব দ্রুত সরে যেতে লাগলো। মনে হতে লাগলো কে যেনও খুব শক্তি দিয়ে উনাদের হাত থেকে সেই জালটা ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। চারজন শক্ত সামর্থ্য জওয়ান, এদের হাত থেকে জাল টেনে নিয়ে যাওয়ার মত কোনও মাছ সেই ঝিলে ছিল না। কাকারা প্রান প্রন চেষ্টা করতে লাগলেন জালটা থামানোর জন্য। তাল সামলাতে না পেরে কাকার এক বন্ধু পা পিছলে পড়ে গেলেন। পড়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে হরহর করে গভীর পানির দিকে তলিয়ে যেতে লাগলেন। মনে হতে লাগলো, কেউ যেনও তার পা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কাকারা বিস্ফোরিত চোখে তা দেখতে লাগলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কাকার সেই বন্ধু বার বার পানির নিচে ডুবে যান আর যখনই মাথা উপরে উঠে তখনই চিৎকার করে সাহায্য করতে বলেন। কাকার বন্ধুরা হই হই করে পিছনের দিকে চলে যেতে লাগলেন। তারা ঝিল থেকে উপরে উঠে মাটির রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। কিন্তু কাকার মনে হয় বুদ্ধি জ্ঞান লোপ পেয়েছিল। উনি বিমুরের মত সামনে, আর গভীর পানির দিকে যেতে লাগলেন। পেছন থেকে কাকার বন্ধুরা চিৎকার করছিলো, যাসনে, যাসনে করে। কিন্তু কাকা উনাদের কথা না শুনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। হটাত কাকা আবিষ্কার করলেন উনার পায়ের নিচ থেকে মাটিগুলো যেনও ধপ করে সরে গেলো। দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু ক্ষণিকের মধ্যে পানিতে ডুবে গেলেন কাকা। হটাত অনুভব করলেন কে যেনও পানির নিচে টানছে তাকে। খুব শক্তি তার প্রতিপক্ষের। একে তো পানির নিচে, তার উপর টান সামলাতে পারলেন না কাকা। ডুবতে লাগলেন। নাক দিয়ে পানি ঢুকতে লাগলো। ফুসফুসের জমা করা বাতাস গুলো বুদ বুদের মত করে বেরিয়ে গেলো চিৎকারের সাথে। যেহেতু পানির নিচে তাই কোনও আওয়াজ হল না। আস্তে আস্তে দমে যেতে লাগলেন কাকা। শেষবারের চেষ্টার মত সরব শক্তি দিয়ে লাথি মারলেন নিচের দিকে। অনুভব করলেন কিছু একটার গায়ে ঠেকল পা টা। অনেকটা মানুষের শরীরের মত লাগলো। কাকার মনে হল হয়তো পানির নিচে কেউ আছে যে তাকে নিচ থেকে টানছে। নিজেকে বাঁচানোর একটা তাগিদ ফিরে এলো। যদি পানির নিচের মানুষটার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায় তাহলে হয়তো বেচে যাবেন। নিজের সব শক্তি এক করে একটু ঝুঁকলেন কাকা। নিজের পায়ের কাছে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করতে লাগলেন। এলোপাথাড়ি কয়েকটা আঘাতের পর একটা গিয়ে লাগলো কারো মাংশ পেশিতে। কাকার এক পা থেকে বাঁধন ছুটে গেলো। এবার কাকা দিগুন উদ্যমে আবারো হাত চালালেন, কয়েকটা মারার পো মনে হতে লাগলো হয়তো এ যাত্রা বাঁচবেন না, ঠিক তখনই আর একটা ঘুষি গিয়ে লাগলো সেই মাংশ পিণ্ডে। দ্বিতীয় পাটাও মুক্ত হলে এবার। টর্নেডোর গতিতে উপরে উঠতে লাগলেন কাকা। উনার হাতটা শরীরের পাশে ছিল। হটাত হাতে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলেন কাকা। মনে হল কে যেনও ধারালো কিছু বসিয়ে দিলো উনার হাতে। কোনমতে উপরে উঠলেন কাকা। উপরে উনার বুন্ধুরা বন্ধুর বিপদ দেখে ঝুঁকি নিয়েই ঝিলে নেমে পড়েছিলেন। কাকাকে দেখেই উনাকে টেনে নিয়ে চললেন রাস্তার দিকে। জ্ঞান হারালেন কাকা। পরদিন সকালে কাকার জ্ঞান ফিরে আসে। এরপর একটানা ২৬ দিন উনি জ্বরে ভুগেন। এরপর আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকেন। ওহ, কাকার সেই বন্ধুটিকে পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। ঝিলটি আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও কোথাও পায়নি গ্রামের লোকেরা। আমার কাকার হাতের সেই তীব্র ব্যাথাটি কিসের ছিল জানা যায়নি। তবে মানুষ কামর দিলে যেমন হয় তেমন একটা দাগ পরে যায় কাকার হাতে। সেই হাত তিনি আর ব্যাবহার করতে পারেননি পরে। এমনকি এখন পর্যন্ত উনি হাতটা নাড়তে পারেন না। পাঠিয়েছেনঃ মশিউর রাহমান মিশুক

আমার মেঝো কাকা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ জেদি আর একরোখা ছিলেন। দাদুর নির্দেশ অমান্য করে রাত বিরাতে গ্রামের বন্ধুবান্ধবের সাথে চলে যেতেন দূরে যাত্রা দেখতে অথবা মাছ শিকারে। প্রথমেই বলে নেই, গ্রামে গঞ্জে রাতে মাছ ধরার অন্যতম কারন হল, তখন মাছ ধরা পড়ে বেশি। তাই মানুষ বেশিরভাগ সময়ই রাত হলে মাছ ধরতে যায়। এমনি ভাবে একদিন আমার কাকা তার কয়েক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে প্রায় ২ মাইল দূরের একটা ঝিলে। ঐ ঝিলে প্রচুর শাপলা ফুটতো। আর ঝিলটি নাকি গভিরতায় অনেক বেশি ছিল। তাই সাধারণত মানুষ খুব একটা যেত না সেখানে…

Read More

ভালবাসার গল্প : এক রুপালি জ্যোৎস্নায়

ভালবাসার গল্প পেইন

১। দ্যাখ ,এইসব্ আমাকে মানায় না । তুই করবি কর । তোর ব্যপার আলাদা । একা মানুষ , টাকার অভাব নাই । আমার পুরা ফ্যমিলি টানতে হয় । আমার দরকার ছিল তোর জায়গায় থাকা … কিছু একটা এক্সট্রা শুরু করতে হবে ; যা কিছু হোক । আসল কথা হচ্ছে টাকা টা ইম্পর্টেন্ট ! এছাড়া লাইফ টাই অচল !! বেকার ! অন্তু টলতে টলতে পাশের ঘরে চলে গেল । রাশেদ উঠে দাঁড়াল । অন্তুর সাথে কথা বলা এখন বেকার ! পাগলের মত কিসব বলে চলেছে ! এক ধাক্কায় জানালাটা খুলে দিলো…

Read More

ভালবাসার গল্প : একজন অতি সাধারণ আমি…

ওভারব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আছি আমি। সন্ধার সূর্যটা বহু আগেই বাড়ি ফিরে গেছে,রাস্তার সোডিয়াম হলুদ বাতিগুলোও জ্বলে উঠেছে আলোকময় নগরীকে আরেকটু আলোকিত করে দিতে। এই সময় বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে মানুষের,ফিরে যাওয়ার নিরব প্রতিযোগীতা যেন শুরু হয়ে যায়। ভীড় বাড়ে বাসে,এই যাত্রাবাড়ি,গুলিস্তান,মিরপুর,শ্যামলী,ডাক হাঁকায় কন্ট্রাক্টাররা। আর যাত্রিদের ফিরে যাবার আকুলতা দেখতে থাকি আমি। মানুষের জীবনটা বড় বিচিত্র। দিন শেষে রাতে পরিবারের পিছুটান এড়াতে পারেনা মানুষ। অবাক লাগে মাঝে মাঝে এরকম পিছুটান। আমার পাশেও ভীড় বাড়ে,অস্থায়ী বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেছে আপন নীরে। শুধু আমিই ব্যস্ততার পাশ কাটিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হাতের জ্বলন্ত বেনসন এন্ড হেজেসটাও আপন মহিমায় উজ্বল হয়ে উঠছে। আমাদের পৃথিবীটাও হয়ত কোন জ্বলন্ত সিগারেট,প্রতি মুহুর্তেই ছোট হয়ে আসছে। আমার মত মধ্যবিত্ত বেকারের হাতে এজিনিস বেমানান। তবুও আজকের দিনে একটু বিলাসিতা হতেই পারে। টিউশনির বেতনটা এ মাসে দুদিন আগেই পেলাম। ছাত্রের বাসা পরিবর্তন হচ্ছে,সেই সাথে শিক্ষকও। দিনটা যে সত্যিকার অর্থে আমার জন্যেই। কাল হয়ত আবার এক গাদা চাকুরির আবেদনপত্র,নয়ত টিউশনি খোঁজার মত জরুরী কাজ পরবে। তাই আজকে একটু অবসর কাটানই যায়। পকেটে অনেকগুলো টাকাও আছে। পৃথিবিতে হয়ত টাকার সুখটাই বড় সুখ। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে দুবছর হল বের হয়ে এখনও বেকার ই আছি।হয়ত আরো থাকব। থাকিনা আজকে কিছুটা চিন্তামুক্ত। তন্ময় হয়ে চেয়ে থাকি আমি রাস্তার ব্যস্ততার দিকে। ফুটপাতের দোকান গুলোতেও ভীড় বাড়ে। লাল নীল চুড়ি,ফিতা,শখের আংটি। কত কিছুতে ছেয়ে আছে দোকান । আপনমনেই হেসে উঠি আমি। সুখ বুঝি খুব একটা দামী না। কত কম দামেই না সুখ পাওয়া যায় দোকানগুলোতে। চুড়ির সাথে মেশানো দুফোঁটা ভালবাসার সামনে জগতের অপ্রাপ্তি বড় মেকী লাগে। ভাবছি মায়ার জন্যে কিনে নেব নাকি এক ডজন।মায়া আমার একমাত্র ছোট বোন। কাচের চুড়ি খুব পছন্দ মেয়েটার্। কিন্তু রাখতে পারেনা ভেঙ্গে ফেলে। দূর থেকেই একজোড়া কানের দুল চোখে লাগছে,প্রিয়তার জন্যে নেয়া যেতে পারে। এই পাঁচ বছরেও মেয়েটার জন্যে কিছু করতে পারিনি আমি। আসলে পকেটে টাকা থাকলে সব সুখ কিনে নিত ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করাটা কি খুব বেশি বেমানান? আলোগুলোর প্রাবল্য কমতে থাকে,কমে মানুষের ভীড়। আমার পাশেও নিদ্রার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে,ওভারব্রীজের বাসিন্দাদের নিম্নবিত্তের সংসারে ঘুম নামের অন্ধকার নেমে পড়তে শুরু করেছে। ওরা কি স্বপ্ন দেখে? আসলে জীবনটা আপেক্ষিক,ওদের স্বপ্ন গুলো বড় সরল। আইনস্টাইন সাহেব কাছে থাকলে জীবনের আপেক্ষিকতার জটিল সুত্রটা শিখে নিতাম। আমিও বেশিক্ষন পিছুটান থেকে বেরুতে পারিনা,হয়ত অবসাদ,হয়ত ভালবাসা,অথবা অসহায়ত্ব। পা বারাতেই হয় আপন গৃহের দিকে। ফিরে হয়ত দেখব মায়ের আমাকে নিয়ে চিন্তা,মায়ার একগাদা প্রশ্ন,অথবা কাঠিন্যের মোড়কে থাকা বাবার মমত্ব নিয়ে অপেক্ষা। এরকম ভালবাসাকে উপেক্ষা করার সাহস হয়না আমার,ঠোটের কোণে এক চিলতে সুখ হাসি নিয়ে এগিয়ে যাই। হারিয়ে যাই সেই ব্যস্ত মানুষদের সাথে নিরব প্রতিযোগিতায়। এভাবেই হয়ত অজানা এক মোহে আটকে পড়ি আমরা,চাইলেও বেরুতে পারিনা।হয়ত বেরুতে চাইই না।

ওভারব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আছি আমি। সন্ধার সূর্যটা বহু আগেই বাড়ি ফিরে গেছে,রাস্তার সোডিয়াম হলুদ বাতিগুলোও জ্বলে উঠেছে আলোকময় নগরীকে আরেকটু আলোকিত করে দিতে। এই সময় বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে মানুষের,ফিরে যাওয়ার নিরব প্রতিযোগীতা যেন শুরু হয়ে যায়। ভীড় বাড়ে বাসে,এই যাত্রাবাড়ি,গুলিস্তান,মিরপুর,শ্যামলী,ডাক হাঁকায় কন্ট্রাক্টাররা। আর যাত্রিদের ফিরে যাবার আকুলতা দেখতে থাকি আমি। মানুষের জীবনটা বড় বিচিত্র। দিন শেষে রাতে পরিবারের পিছুটান এড়াতে পারেনা মানুষ। অবাক লাগে মাঝে মাঝে এরকম পিছুটান। আমার পাশেও ভীড় বাড়ে,অস্থায়ী বাসিন্দারা ফিরতে শুরু করেছে আপন নীরে। শুধু আমিই ব্যস্ততার পাশ কাটিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হাতের জ্বলন্ত বেনসন এন্ড…

Read More

ভূতের গল্প : ভয়ানক একটি পিশাচ ঘটনা

ঘটনাটা বরিশালের ,বাউফল থানার মুলাদি গ্রামের! ঘটনাটা ৪০বছর আগের! আমার এক নিকট আত্বীয়ের ঘটনা ও তারকাছ থেকে শোনা! তার ভাষায়! আমার বয়স তখন ২২বছর ! আমার বাবার খুবই ডায়রিয়া হয়েছিল!গ্রামের এক কবিরাজকে দেখিয়েছি এবং সে বলে না'যত তারাতারি সম্ভভ শহরে নিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাতে!কারন তখনকার দিনে গ্রামের দিকে কোন ডাক্তার ছিল না! আর শহর ২৫কিঃ মিঃ দূরে! শহরে যেতে হবে নৌকায়করে! যোগাযোগে একমাএ উপায় ছিল নদীপথ! ভাল রাস্তা তখন ছিল না! বাবাকে নিয়ে যখন রওনা করি তখন বেলা ১২ বাজে! প্রথমে আকাবাকা ছোট খাল পেরিয়ে বড় নদী ও তার ঐ পাড়ে শহর! শহরে পৌছাতে আরো ঘন্টা আডাঁই লেগেছে! বিকাল ৫টার দিকে বাবা মারা যায়! বাবার লাশটা নিয়ে আমি আবারবাড়ির দিকে রওনা দেই!বড় নদীটা যখন পার করে খালের দিকে নৌকাঢূকাই তখন দেখতে পাই নৌকা আর চলছে না'কাঁদায় আটকে গিয়েছে! তখন ভাটা চলছে! জোয়ার আসবে রাত ১২টার দিকে!তখন সময়টা আনুমানিক সন্ধা সাডে ৬টা হবে! শীতেরকাল থাকায় ঐ সময়ে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল চারপাশ! আকাশের জোত্নার আলো ছিল খুব! জনমানব শূন্ন একটি স্থানে এসে নৌকাটা আর চলছে না! খালটার বামপাশে একটু দূরে একটি পরিতেক্ত শ্বশান আর ডানপাশে গভীর জঙ্গল!জঙ্গলের বটগাছ গুলে দানবের মত দাড়িয়ে আছে! বটগাছের ডালে কিছু বাদুরঝুলে আছে!এতটাই নির্জন জায়গায় যে কোন শব্দ হলেই বুকের ভিতরে কেমন যেন করে ওঠে!ভয়ে বাবার লাশটা স্পর্শ করে বাবার পাশে বসে থাকি!শুধু অপেহ্মা ছাড়া আর কোন উপায় নেই! একটা চাদর দিয়ে বাবার লাসটা ঢেকেদিয়েছি!রাত যত বাডতে থাকে ভয় ততটাইতীর্বরোহতে থাকে! মনে হয় জঙ্গল থেকে কিছু একটা বেডিয় এসে আমাকে ধরবে ! হটাত্ নৌকাটা কেমন যেন একটু দুলে উঠলে মনে হল আমার মৃতবাবা নাডে উঠছে! বাবার ঠান্ডা শরির থেকে হাতটা সরিয়ে নেই! দোয়া যতটুকুপাড়ি সবই পড়তে চেষ্টা করছি কিন্ত ভয়ে কিছুই মনে নেই! ইচ্ছা করছিল চিত্কার করি বাচাঁও বাচাঁও বলে!কিন্তু আমি জানি আমার এই চিত্কার কারো কানে পৌছাবেনা! না পারছি এখান থেকে যেতে,না পারছি থাকতে! নিজের মৃতবাবাকেও ভয় করছে! আনুমানিক রাত ১১টার দিকে একটা ছায়া দেখতে পেলাম বট গাছের অড়াল থেকে বেডিয়ে আমাদের নৌকার কাছে আসলো ও আমাকে জিঙ্গাসা করলো'তুমি কিঐ দিকে যাবা ?লোকটি একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে আছে ও তার মুখটা চাদরে ডাকা ছিল! লোকটি ইশারায় যে দিকে দেখালো ঐ দিকেই আমরা যাচ্ছি! লোকটিকে বললাম জোয়ার আসলে যাব! লোকটি নৌকায় উঠলো ও বাবার কাছে বসলো কিন্তু বাবার সম্পর্কে কিছুই জিঙ্গাসা করলো না! একদৃষ্টিতে বাবার লাশটার দিকে চেয়ে ছিল! লোকটার মুখটা আমি তখনো দেখতেপাই নি! এই গহীনজঙ্গলে এতরাতে তার আগমনের কারনটা পর্যন্তে জানতে ইচ্ছা করে আগমনে শস্তি পেয়েছি! রাত ১২টার দিকে জোয়ার আসলে আমি নৌকাটা চালাতেশুরু করি! নৌকাযত সামনের দিকে যাচ্ছে ততই একটা গন্ধ নাকে লাগছে! ধিরে ধিরে গন্ধের তীবরোতা বাড়তে থাকে!কিছু কচুরিপনা , কলাগাছ ও মরা একটাগরুর ফুলে থাকা দেহ একসাথে জটলা করে এমনভাবে নৌকা সাথে আটকে আছে যে আমি অনেক চেষ্টা করে ও নৌকাটাকে কিছুতেই সামনের দিকে নিতে পারছিনা! বাদধো হয়ে আমি নৌকা থেকে পানিত রশি ধরে টানতে থাকলাম !প্রায় ৫ মিনিট টানার পর আমি নৌকার কাছে আসি ! তখন যা দেখলাম বুকের ভিতর কেমন যেন করে উঠলো!দেখি লোকটাবাবার বুকেরকাছে বসে বারার বুকের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে কলজাটা বেরকরে নিয় তখন আমি কোন উপায় না দেখে বৈঠাটা হাতেনিয়ে লোকট মাথায় আঘাতকরি একাধিক বার! লোকটা আমার দিকে যখন ঘুড়ে তখন ঠিক গলার মাঝখানে বৈঠাটা ঢুকিয়ে দেই ! এতে লোকটা পানিতে পড়ে যায়! আমি পানিতে খুব জোরে জোরে বৈঠাদিয়ে আঘাত করি ও চিত্কার করি সাহষ থাকলে সামনে আয়!চাঁদের আলোতে লোকটার রক্তমাখা লোমশ হাতটা দেখেছিলাম !বড়বড় নখ ও কোঠরে ঢোকানো চোখের নীল আভা মনে পড়লে বুকটা শুকিয়ে যায়! দাতগুলো লালচে খুব ছোট ছোট তীখ্ন আর ধারালো! আমার চিত্কার শুনে টর্চলাইট নিয়ে কয়েকজন লোক ছুটে আসে তাদের সব কিছু খুলে বলি ! সব কিছু শুনে তারা বাবার লাশটা দেখে'তখন ও বাবার বুকের ছোপ ছোপ রক্তগুলো শুকায়নি! ঐ রাতটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর রাত!যেরাতের কথা আমি কখনো ভুলতে পারবো না! ঐটা ছিল একটা পিশাচ !

ঘটনাটা বরিশালের ,বাউফল থানার মুলাদি গ্রামের! ঘটনাটা ৪০বছর আগের! আমার এক নিকট আত্বীয়ের ঘটনা ও তারকাছ থেকে শোনা! তার ভাষায়! আমার বয়স তখন ২২বছর ! আমার বাবার খুবই ডায়রিয়া হয়েছিল!গ্রামের এক কবিরাজকে দেখিয়েছি এবং সে বলে না’যত তারাতারি সম্ভভ শহরে নিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাতে!কারন তখনকার দিনে গ্রামের দিকে কোন ডাক্তার ছিল না! আর শহর ২৫কিঃ মিঃ দূরে! শহরে যেতে হবে নৌকায়করে! যোগাযোগে একমাএ উপায় ছিল নদীপথ! ভাল রাস্তা তখন ছিল না! বাবাকে নিয়ে যখন রওনা করি তখন বেলা ১২ বাজে! প্রথমে আকাবাকা ছোট খাল পেরিয়ে বড় নদী ও তার ঐ…

Read More

ভালবাসার গল্প : পেইন

শুভ্রার প্রচণ্ড মাথা ধরেছে । রুদ্রকে কতবার বুঝিয়েছে যে তাকে সে পছন্দ করেনা ।তবুও নাছোড়বান্দার মতো ওর পিছে লেগেই আছে ।এতো পেইন যে দিতে পারে ছেলেটা ।শুভ্রা যেখানেই যায় ওর পিছনে ছায়ার মতো লেগে থাকে ।মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে শুভ্রার ।প্রেম ভালোবাসার প্রতি ওর কখনই আগ্রহ জন্মায়নি । ওর কাছে এসব ফালতু জিনিস । যাদের কোনো কাজ নেই তারাই এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে পড়ে থাকে ।এগুলো এক ধরণের বয়সের দোষ ।ছেলেরা শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলে মেয়েদের মন জয় করে । আর বোকা মেয়েরা ওদের বিশ্বাস করে পড়ে পস্তায় ।ছেলেদের বেহায়াপনা শুভ্রার কাছে মোটেও ভালো লাগে না ।সেই ছোট বেলা থেকে সে দেখে আসছে ।ইশ ! চিন্তা করলেও গা ঘিনঘিন করে ।কত যে কুরুচি পূর্ণ মানুষ আছে পৃথিবীতে । মাঝে মাঝে শুভ্রা স্বপ্নে দেখে একটা লোমশ নখর যুক্ত হাত ওর দিকে এগিয়ে আসছে ।এই কুৎসিত স্বপ্নটা যখনই দেখে তখনই ঘুম থেকে লাফ দিয়ে জেগে ওঠে ।তারপর সারারাত ঘুমাতে পারেনা । প্রেম ভালোবাসা পছন্দ না করলেও ফেইসবুকে প্রেমের গল্প পড়তে ভালই লাগে শুভ্রার ।এসব গল্প পড়ে আর মনে মনে হাসে শুভ্রা । ইশ ! মানুষ কত বোকা ! মানুষ এসব গল্প পড়ে অনুপ্রানিত হয়ে প্রেম করে আর প্রেমের বাস্তব কুৎসিত রূপটা যখনই চোখের সামনে ধরা পড়ে তখন বলে জীবনে আর কখনো প্রেম করবেনা ।তাও এদের শিক্ষা হয়না । কিছুদিন পর আবার নতুন করে প্রেম শুরু করে । কি আছে এসব ফালতু প্রেম ভালোবাসায় ? রুদ্র ছেলেটার সাথে পরিচয় হয় ফেইসবুক এর মাধ্যমে ।ছেলেটা শুভ্রার ভার্সিটির । তাই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সসেপ্ট করতে কোনো সংকোচ বোধ করেনি শুভ্রা ।ছেলেটা খুব প্রাণচঞ্চল ছিল ।শুভ্রা ছিল গম্ভীর । এতো কথা যে বলতে পারতো ছেলেটা । শুভ্রা ওর কোনো প্রশ্নের রিপ্লাই দেয়ার আগেই আরও এক গাদা প্রশ্ন করে দিত ।আর কি আবোল তাবোল প্রশ্ন । -জীবনে কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছ কিনা ? -জোনাকি পোকা হাতের মুঠোতে নিয়েছ কিনা ? - ফড়িং এর লেজে সুতো বেধে ঘুড়ির মতো উড়িয়েছ কিনা? - শিশির ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হেঁটেছ কিনা ? -বড়শী দিয়ে মাছ ধরেছ কিনা ? -শীতকালে গাছ থেকে খেজুর রস চুরি করে খেয়েছ কিনা ? -নৌকাতে বসে কখনো নদীর পানিতে পা চুবিয়ে রেখেছ কিনা? আরও হাজার টা প্রশ্ন ।তাছাড়া ছেলেটি অনেক উদ্ভট চিন্তা করতে পছন্দ করে । আর এক এক দিন এক এক উদ্ভট সমস্যা নিয়ে আড্ডা হতো ।সব কিছু ভালই ছিল ।হঠাৎ একদিন শুভ্রার ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে যায় ।তাই এক মাস ফেইসবুক এ আসতে পারেনি শুভ্রা ।কিন্তু যেদিন শুভ্রা ফেইসবুক এ ঢোকে সেদিন মাথা খারাপ হয়ে গেলো ওর ।রুদ্র হাজারটার উপর ম্যাসেজ দিয়ে রাখছে । প্রথম দিকের ম্যাসেজ গুলো ছিল -এই শুভ্রা ! তুমি কোথায় ? -এই শুভ্রা ! ফেইসবুকে আসোনা কেন ? -এই শুভ্রা ! তুমি কি মানুষ ? এভাবে একজন মানুষকে কষ্ট দাও কেন ? -শুভ্রা ! শুভ্রা ! শুভ্রা ! শুভ্রা ! শুভ্রা! ১০০ বার শুভ্রা ! হাজার বার শুভ্রা ! শুভ্রা ! শুভ্রা ! প্রথম দিকের ম্যাসেজ গুলো সহ্য করা গেলেও পরের দিকের ম্যাসেজ গুলো পড়ে মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় শুভ্রার । -এই শুভ্রা ! এই মেয়ে ! এই তুমি কি পাইছো ? তুমি কি জানো তোমার সাথে শেষ কথা বলার পর আমি আর ঘুমাতে পারছিনা ।আমি এখন স্বপ্নে ও তোমাকে দেখি ।তুমি কই ?কই ? কই ? কই ? কই ? কই ? -এই শুভ্রা ! আমার মনে হয় আমি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালবেসে ফেলেছি । আই লাভ ইউ শুভ্রা ! -আই লাভ ইউ !আই লাভ ইউ !আই লাভ ইউ !আই লাভ ইউ !আই লাভ ইউ !................আই লাভ ইউ! -তুমি যদি আজ না আসো তবে আমি আর কোনদিন তোমাকে ম্যাসেজ দিবনা । -এই শুভ্রা ! তুমি কি আমার উপর রাগ করছ ? আমি কি তোমাকে ম্যাসেজ না দিয়ে পারি বলো ? শুভ্রা রুদ্র এর সব গুলো ম্যাসেজগুলো পড়ে মাথা ঠিক রাখতে পারলনা ।তাই রুদ্রকে ব্লক করে দিলো ।কিন্তু রুদ্র নতুন নতুন আই ডি খুলে শুভ্রাকে ম্যাসেজ করতেই থাকে । শুভ্রার লাইফ অতিষ্ঠ হয়ে যায় । সে বুঝতে পারেনা কি করবে । নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় ।ভার্সিটিতে গেলেও নিস্তার নেই রুদ্র এর হাত থেকে । সামনে পিছনে ডানে বামে রুদ্র আর রুদ্র ।এমনকি শুভ্রার বাসার সামনে নিয়মিত হাযিরা দেয়া শুরু করলো সে ।শুভ্রার বড় ভাইয়া ব্যাপারটা জেনে গেলো আর শুভ্রাকে উলটো ঝাড়লো ।শুভ্রা সেদিন রাতে অনেক কাঁদল ।মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করে সে কেন নারী হয়ে জন্মালো ?সে কোনো দোষ না করা সত্ত্বেও এক পুরুষ এর দোষ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় আরেক পুরুষ ।হে মহান পুরুষ জাতি ! সালাম তোমাদের ! একদিন শুভ্রার বড় ভাই এলাকার কিছু মাস্তান দিয়ে রুদ্রকে শাসায় ।কিন্তু রুদ্র তাও ওদের বাসার সামনে আসা বন্ধ না করায় একদিন অনেক মারধোর করে রুদ্রকে । এরপর আর শুভ্রার বাসার সামনে আসে না সে । ভার্সিটিতে দেখা হলেও এড়িয়ে চলে । ছেলেটাকে কি অনেক মেরেছিলো ওরা ? শুভ্রার একটা মায়া চলে আসে রুদ্র এর প্রতি ।আবার নিজেকে নিজে বুঝায় ! হায়রে নারী জাতি ! বুকের মধ্যে এতো মায়া পুষে রাখিস বলেই তো পুরুষরা তোদের ধোঁকা দেয় । পুরুষদের হৃদয়ে কোনো ভালোবাসা নেই ।সব ওদের ভাওতাবাজি ।কিন্তু আজ রুদ্র যা করেছে তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে । শুভ্রা সকাল বেলা ক্লাস করে ভার্সিটির বাস ধরার জন্য লাইব্রেরি এর সামনে দিয়ে আসছিলো ছন্দাকে নিয়ে । হঠাৎ কোথা থেকে জানি ঝড়ের বেগে এসে শুভ্রার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো রুদ্র । ছেলেটি মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে এক নাগাড়ে- -শুভ্রা ! আমাকে মেরে ফেললেও আমি তোমাকে ভালোবাসবো ।আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস তোমাকে ভালোবাসে ।আমার প্রতিটি স্পন্দন তোমাকে ভালোবাসে ।আমার প্রতিটি রক্ত কনিকা তোমাকে ভালোবাসে। আমার প্রতিটি শিরা উপশিরা তোমাকে ভালোবাসে ।আমার প্রতিটি নিউরন ও কেবল তোমাকেই ভালোবাসে । তাই ওদের কথা বিবেচনা করলে আমিও তোমাকে ভালোবাসি । শুভ্রা কি করবে বুঝতে পারছিলো না ! তবে সে দ্রুতই নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো ।সে শুধু একটা কথাই বলে রুদ্রর পাশ দিয়ে হাঁটা দিলো - -তুমি একটা পেইন ! রুদ্র ফ্যালফ্যাল করে শুভ্রার চলে যাওয়া দেখছিল । কিন্তু বাসায় আসার পর সারাদিন ঐ পেইন টার কথা ভাবছে কেন শুভ্রা !পেইনটা মাথার মধ্যে স্থায়ী আসন গেঁড়ে ফেলেছে । শুভ্রা যেকোনো কাজ করতে গেলেই শুধু মাত্র পেইনটার কথা মনে পড়ে। তার মানে শুভ্রা কি রুদ্রের প্রেমে পড়ে গেলো ? ইশ ! পুরাই পেইন !

শুভ্রার প্রচণ্ড মাথা ধরেছে । রুদ্রকে কতবার বুঝিয়েছে যে তাকে সে পছন্দ করেনা ।তবুও নাছোড়বান্দার মতো ওর পিছে লেগেই আছে ।এতো পেইন যে দিতে পারে ছেলেটা ।শুভ্রা যেখানেই যায় ওর পিছনে ছায়ার মতো লেগে থাকে ।মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে শুভ্রার ।প্রেম ভালোবাসার প্রতি ওর কখনই আগ্রহ জন্মায়নি । ওর কাছে এসব ফালতু জিনিস । যাদের কোনো কাজ নেই তারাই এসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে পড়ে থাকে ।এগুলো এক ধরণের বয়সের দোষ ।ছেলেরা শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলে মেয়েদের মন জয় করে । আর বোকা মেয়েরা ওদের বিশ্বাস করে পড়ে…

Read More

ভূতের গল্প : ভুত এফএম এর গল্প

একটি হন্টেড ভালবাসার ঘটনা এখন যে ঘটনাটি শেয়ার করবো এটি আমার পাশের গ্রামের একটি ছেলের ঘটনা ।আমি তার নাম উল্লেখ করবোনা ।পাশাপাশি গ্রাম হওয়াতে তার সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল ।একদিন আমি আমার এক বন্ধু মিলে তাদের এলাকায় বিকেল বেলা বেড়াতে যাই ।সেখানে সেই বন্ধুটি এবং সেই এলাকার কয়েকজন ছেলে মিলে একটি ঈদগাহে আড্ডা দিচ্ছলাম । আড্ডা দিতে দিতে সন্ধা হয়ে যায়।এমন সময় হঠাত বিদ্যুত বন্ধ হয়ে যায় ।চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায় ।আমরা আমাদের মত গল্পগুজব চালিয়ে যায় ।এর মধ্য আমার সথে যে ছেলেটি গেছিল সে একটি ফানি ভুতের গল্প শুরু করে ।কয়েক লাইন গল্প বলতে না বলতে যার ঘটনা বলছি সে ছেলেটি মাথানিচু করে চুপচাপ হয়ে গেল ।তার সাথে যারা ছিল তারা ঘটনাটা বুঝতে পারল এবং বলল রনি চুপ করো ।তারপর যে ছেলেটির কথা বলছি সে হঠাত অস্বাভাবিক আচরন শুরু করল । চোখগুলো লাল আগুনের মত হয়ে গেল। কন্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে গেল।আমরা এ ব্যপারে কিছুই জানতাম না ।(পরে তার এলাকার বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে ঐ ছেলের সামনে ভুত-জ্বীন এগুলো উচ্চারন করার সাথে সথে হাজির হয়ে যায়) সে বলল আমি বাড়ি যাবো তখন সে পোজেস অবস্থায় আছে ।আমরা তাকে নাম ধরে ডেকে বললাম তোমার কি হয়েছে । সে অন্যরকম কন্ঠসর করে আমাদের বলল আমার নাম ধরে কথা বলবি না ।আমরা তো ভয় পেয়ে গেলাম ।আমরা আস্তে করে বললাম তো কি বলর ।সে উত্তর দিল আমাকে ভাবী বলবি । আমরা বললাম ভাবী আজ আমাদের সাথে গল্প করেন । সে প্রথমে রাজি হয় না । অনেক রিকুয়েস্ট করার পর সে রাজি হয়।তারপর আমরা বেশকিছু প্রশ্ন করি সে তার উত্তর দেয় ।এর মধ্যে সে একটি দারুন ঘটনা জানায় ।ঘটনাটি ছেলেটি কিভাবে পোজেস হয় ।ভাবী বলে এই ছেলেটি প্রতিদিন নদীর ধারে প্রতিদিন যেত ।সেখানে একটা দুই তলা বাড়ি ছিল ।সেই বাড়িতে একটি মেয়ে ছিল সেই মেয়েটিকে পছন্দ করেফেলে ।ছেলেটি সারাদিন যখনই সময় পেত মেয়েটিকে দেখার জন্য সেখানে ছুটে যেত ।এমনও হতো ছেলেটি গভীর রাত্রি অথবা খুব ভোরে সেখানে দারিয়ে থাকতো ।ঐ বিল্ডিংটির পাশে একটি গাছ ছিল সেখানে আমি থাকতাম ।কিন্তু মেয়েটি কিছুই জানতো না । একদিন মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। এই বিয়েতে ছেলেটি প্রচন্ড কষ্ট পায় এবং সে কাউকে কিছু শেয়ার না করে বাসায় চলে আসে ।রাতে প্রচন্ড কান্নাকাটি করে ঘুমিয়ে পড়ে ।এই দেখে ছেলেটিকে আমার ভাল লেগে যায় এবং ঐ রাত্রিতে যখন সে প্রকৃত ডাকে বাইরে যায় তখন দেখে দরবেশের মত একটি অনেক লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা লোক দেখে সে ভয় পেয়ে আবার ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে ।সেই রাত্রিতেই আমি তার উপর ভর করি এবং তার সাথে থাকি ।পরে জানতে পারি যে ছেলেটিকে অনেক চিকিত্‍সা করেও ঠিক করা যায় নি ।

একটি হন্টেড ভালবাসার ঘটনা এখন যে ঘটনাটি শেয়ার করবো এটি আমার পাশের গ্রামের একটি ছেলের ঘটনা ।আমি তার নাম উল্লেখ করবোনা ।পাশাপাশি গ্রাম হওয়াতে তার সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিল ।একদিন আমি আমার এক বন্ধু মিলে তাদের এলাকায় বিকেল বেলা বেড়াতে যাই ।সেখানে সেই বন্ধুটি এবং সেই এলাকার কয়েকজন ছেলে মিলে একটি ঈদগাহে আড্ডা দিচ্ছলাম । আড্ডা দিতে দিতে সন্ধা হয়ে যায়।এমন সময় হঠাত বিদ্যুত বন্ধ হয়ে যায় ।চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায় ।আমরা আমাদের মত গল্পগুজব চালিয়ে যায় ।এর মধ্য আমার সথে যে ছেলেটি গেছিল সে একটি ফানি ভুতের গল্প শুরু…

Read More