প্রশ্ন উত্তর ও পরামর্শ

সম্পদ সঞ্চয় ও সংরক্ষণের মাসায়েলঃ
১. জরুরী দায়িত্ব আদায় করার পর সাধারণ অবস্থায় নিজের এবং নিজের সন্তানাদি ও পরিবারের জন্য কিছুটা সঞ্চয় রাখা উত্তম, যাতে পরে নিজেকে ও নিজের সন্তানাদিকে অন্যের কাছে হাত পাততে না হয়। (হায়াতুল মুসলিমীন)
২. সুদ ভিত্তিক ব্যাংকে টাকা রাখা জায়েয নয়। কারণ, এতে সুদ ভিত্তিক কারবারের অন্যায়ে সহযোগিতা করা হয়। তবে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলে বা অনন্যোপায় অবস্থায় সম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে রাখার অনুমতি রয়েছে। (ফাতাওয়া রাহিমিয়া)
৩. ব্যাংকের সুদের টাকা ব্যাংকে ছেড়ে দিয়ে আসা অন্যায়। কেননা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটাকে সঠিক খাতে এবং মাসআলা অনুযায়ী ব্যয় করবে না; বরং নিয়ম হল এ টাকাটা তুলে এনে গরীব মিসকীনদের মধ্যে (ছাওয়াবের নিয়ত ছাড়া) বন্টন করে দিবে। (আহছানুল ফাতাওয়া)
৪. ব্যাংকের সুদের টাকা জনকল্যাণ মূলক কাজে ব্যয় করা যায় না। (যেমন, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, মুসাফিরখানা নির্মাণ ইত্যাদি) বরং গরীব-মিসকীনকে প্রদান করতে হবে।
৫. বর্তমানে প্রচলিত ‘বীমা’ সুদ ও জুয়ার সমষ্টি বিধায় তা করানো জায়েয নয়। তবে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলে ভিন্ন কথা। জীবন বীমা করানো হলে বীমার মূল অর্থ মালিক বা তার ওয়ারছিগণ ভোগ করবে। বাকীটা সুদের অর্থের ন্যায় সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। (ফাতাওয়া রাহিমিয়া-২)৬. সম্পদ সংরক্ষণের স্বার্থে চোর, ডাকাত প্রভৃতির নিকট সম্পদের কথা অস্বীকার করা জায়েয, এতে মিথ্যার গোনাহ হবে না। তবে এরূপ ক্ষেত্রে সরাসরি মিথ্যা না বলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলাই শ্রেয়।
৭. সম্পদ রক্ষার স্বার্থে কেউ নিহত হলে সে শাহাদাতের ছাওয়া লাভ করবে।
মাসআলাঃ কোন আলেম, বুযুর্গ ও পরহেযগার ব্যক্তিকে সম্মান ও আজমত স্বরূপ তাঁর চেহারা, কপাল ও মাথায় চুমু দেয়া জায়েয আর খাহেশাত বা প্রবৃত্তির তাড়নায় এরূপ করা হলে তা জায়েয নয়।
মাসআলা: সাক্ষাৎ বা বিদায়ের সময় যদি কেউ কারও গালে বা মুখে চুমু খায় বা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একে অপরকে যে চুমু দেয় তা সর্বাবস্থায় জায়েয।

     মাসআলা
মাসআলাঃ  অবৈধ বস্তু ক্রয় করা বা কোনভাবে অবৈধ বস্তুর মালিক হয়ে গেলে এমন লোকের নিকট তা বিক্রয় করা যার জন্য তা অবৈধ, এটা জায়েয নয়।
ইস্তেন্জার আদবসমূহ:
* ইস্তেন্জা খানায় প্রবেশের পূর্বে মাথা ঢেকে নেয়া মোস্তাবাহ।
* নামাজের কাপড় ব্যতিত অন্য কোন কাপড়ে ইস্তেন্জা করা উত্তম। অন্যথায় নাপাকী থেকে সতর্ক থাকতে বহবে।
* জুতা/ স্যান্ডেল পরিধান পূর্বক ইস্তেনজা করা।
* ইস্তেন্জা খানায় প্রবেশের সময় দুআ পড়া। খোলা স্থান হলে কাপড় উচুঁ করার সময় দুআ পড়তে হয়।
* বাম পা দিয়ে ইস্তেন্জায় প্রবেশ করা।
* বসার সময় পা দানিতে প্রথমে ডান পা রাখবে এবং নামার সময় প্রথম বাম পা নামাবে।
* প্রয়োজনের অতিরিক্ত সতর না খোলা। (এর সহজ উপায় হলো-বসতে বসতে কাপড় উঠানো। দাঁড়ানো অবস্থাতেই সতর খোলা নিষিদ্ধ)।
* বসে ইস্তেন্জা করা।
* উভয় পায়ের মাঝে বেশ ফাঁক রেখে বসা।
* নজরকে সংযত রাখা অর্থাৎ যৌনাঙ্গের দিকে, মল মূত্রের দিকে, এমনিভাবে আকাশের দিকে নজর না দেয়া এবং এদিক সেদিক বেশী না তাকানো।
* মলমূত্রের উপর থুথু, কফ, সর্দি না ফেলা।
* ডান হাত দিয়ে যৌনাঙ্গ স্পর্শ না করা।
* ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা।
* বাম হাত দিয়ে ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করা মোস্তাহাব।
* পেশাবের পর ঢিকা-কুলুখ নিয়ে হাটা চলা করে, কিম্বা কাশি দিয়ে বা নড়াচড়া করে, কিম্বা অভ্যাস অনুযায়ী যে কোন ভাবে পেশাবের  ফোটা বন্ধ হয়েছে এরূপ নিশ্চিত হতে হবে। মহিলাদের জন্য এটার প্রয়োজন নাই।
কতিপয় বিদআত
* কোন বুযুর্গের মাযারে ধুমধামের সাথে মেলা মিলানো।
* ওরস করা, * কাওয়ালী, * জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী করা। * মৃতের কুলখানী করা (অর্থাৎ চতুর্থ দিনে ঈছালে ছওয়াব করা।) * মৃত্যের চেহলাম বা চল্লিশা করা, * কবরের উপর চাদর দেয়, * কবরের উপর ফুল দেয়া।

প্রশ্ন উত্তর ও পরামর্শ

প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি ঘুষ বা সুদের মাধ্যমে উপার্জন করে বলে জানা আছে। সে ব্যক্তি যদি মসজিদ, মাদরাসা বা কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে দান করে তাহলে তা গ্রহণ করা জায়িয হবে কি না?
মাহবুব আহমদ, লালমনিরহাট।
উত্তরঃ যদি এরূপ ব্যক্তির অধিকাংশ মাল হালাল হয় অথবা নির্দিষ্ট হালাল মাল হতে দান করে বলে জানা যায় তাহলে তার দানকৃত টাকা মাদরাসা-মসজিদ ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে পারবে। আর যদি তার অর্ধেক বা অধিকাংশ মাল হারাম হয় অথবা নির্দিষ্টভাবে হারাম অর্থই দান করে বলে জানা যায় তাহলে তার দানকৃত টাকা গ্রহণ করা যাবে না। [প্রমাণঃ আহসানুল ফাতওয়া, ৮/১০৩]

প্রশ্নঃ বিয়ের পর স্বামীর উপর স্ত্রীর কতটি হক ওয়াজিব হয়?
মরিয়ম বিনতে হাফিজ, ঠাকুরগাও।
উত্তরঃ বিয়ের পর স্বামীর উপর কতিপয় হক ওয়াজিব হিসেবে অর্পিত হয়। যেমন- স্ত্রীর খাদ্য, বস্ত্র ও আলাদা বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, প্রতি চার মাসে অন্ততঃপক্ষে একবার তার যৌন চাহিদা পূর্ণ করা, স্ত্রীকে দ্বীন শিক্ষা দেয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো স্বামীর উপর ওয়াজিব। অলংকারাধি দেয়া তার উপর ওয়াজিব নয়, বরং জায়িয। প্রমাণ: হুকুকে মু’আশারাত:১৪

প্রশ্নঃ যদি কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার সাথে ব্যভিচার করার পর তাকে বিবাহ করে, তবে কি আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে যিনার গোনাহ হতে মুক্তি দেবেন?
রফিকুল ইসলাম, গুলশান, ঢাকা।
উত্তরঃ কোন মহিলার সাথে যিনা করার পরে তাকে বিবাহ করার দ্বারা গোনাহ মাফ হবে না। তবে যদি সেই ব্যক্তি নিজের কৃতকর্মের উপর লজ্জিত হয়ে ভবিষ্যতে যিনা না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে আন্তরিকভাবে তাওবা  করেন, তবে মহান আল্লাহ অবশ্যই তার গোনাহ মাফ করবেন। কারণ, আল্লাহ তা’আলার সহীহ তাওবাহর দ্বারা সকল গোনাহ মাফ করে দেন। আর একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ইসলামে বিবাহ পূর্ব প্রেম-প্রীতি হারাম। কারণ এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ হয়ে থাকে। প্রমাণ: সূরা নিসা:১৭, সূরা ফুরক্বান:৭০, মিশকাত:১/২০৩

প্রশ্নঃ মসজিদে রেডিও নিয়ে গিয়ে খবর শ্রবণ করা জায়িয
আছে কিনা? বর্তমানে মোবাইল ফোনে রেডিও আছে তাই মসজিদে মোবাইল দিয়ে খবর শোনা জায়েয হবে কি?
আবু রায়হান, ময়মনসিংহ।
উত্তরঃ পবিত্র মসজিদ হচ্ছে ইবাদতের স্থান। দুনিয়াবী কোন আলোচনা মসজিদে জায়িয নয়। এ কারণে মসজিদের ভিতর বসে রেডিও-র খবর শুনা জায়িয হবে না। তাছাড়া বর্তমানে খবরের আগে ও পরে রেডিওতে গান বাজনা পরিবেশিত হয়। তাই মোবাইল হোক বা সরাসরি রেডিও হোক মসজিদের ভিতরে রেডিও নিয়ে সংবাদ শুনা নাজায়িয ও অপরাধ।  তমনিভাবে দ্বীনি নয়, এমন সব দুনিয়াবী পত্রিকাও মসজিদে নিয়ে পড়া নিষেধ। বিশেষতঃ ছবিওয়ালা পত্রিকা মসজিদে নেয়া খুবই অন্যায়। প্রমাণ: দুররে মুখতার:১/৬৬০, আদাবুল মাসাজিদ ‘‘মুফতী শফী রহ. অনূদিত” পৃ.৩৮

প্রশ্নঃ (ক) কোন মসজিদ অথবা দ্বীনি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে শরীয়ত সম্মত কমিটি কিরূপ হওয়া উচিত? এবং বর্তমানে প্রচলিত পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালনা পরিষদ গঠন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
(খ) নিয়মিত নামায আদায় ও জামা’আতের পাবন্দ নয়, এমন ব্যক্তি মসজিদ পরিচালনার দায়িত্বে বহাল থাকা বৈধ কি-না?
(গ) ইমাম সাহেবকে মসজিদ কমিটির অধীনস্থ কর্মচারী মনে করা সমীচীন কি- না।
মিনহাজুল আবেদীন, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
উত্তরঃ (ক) মসজিদের অথবা যে কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক দ্বীনদার, আমানতদার, শরীয়তের পাবন্দ, খোদাভীরু ও পরিচালনার যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া জরুরী। ফাসিক, খিয়ানতকারী ও শরীয়তের খেলাফ বানানো জায়িয নয়। এমনিভাবে কমিটির সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য পদ্ধতি অনুসরণ করা তথা শরীয়াতের দৃষ্টিতে যোগ্যততর লোক থাকা সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের উপর ভিত্তি করে পরিচালনা পরিষদ বা অযোগ্য ব্যক্তিকে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক নিযুক্ত করা জায়িয নয়।
বলাবাহুল্য, মানুষের মাঝে দ্বীনি ইসলাম না থাকার দরুন প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অর্থ-সম্পদের দিকে খেয়াল করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসল্লীর রায় অনেক সময় আযোগ্য ব্যক্তির দিকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই সেইরূপ নির্বাচন পন্থা পরিহার করে এলাকার বা আশ-পাশের উলামায়ে কিরাম ও দ্বীনদারগণের পরামর্শ অনুযায়ী কমিটি গঠন করতে হবে।
(খ) যে ব্যক্তি নিয়মিত নামায আদায় করে না, শর’য়ী কারণ ব্যতিত নামায কাজা করে অথবা প্রায়ই জামা’আত তরক করে, সে ফাসিক বলে গণ্য হবে। ফাসিক ব্যক্তিকে মসজিদের পরিচালক নির্বাচন করা জায়িয নয়।
(গ) ইমাম সাহেবকে কর্মচারী মনে করে তার সাথে নিজেদের কর্মচারীর ন্যায় আচরণ করা জায়িয নয়। কারণ, তিনি নবী সা. -এর ওয়ারিস। তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করা ঈমানের অঙ্গ। শর’য়ী কোন কারণ ছাড়া তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করা ঈমানের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। প্রমাণ: হিনদিয়্যা:২/৪০, ফাতওয়া মাহমূদিয়া: ২/৪৫২

প্রশ্নঃ গরু-ছাগল বর্গা দেয়া জায়িয আছে কি?
মোঃ মুহাম্মাদুল্লাহ, ফেনী।
উত্তরঃ হানাফী মাযহাব অনুযায়ী গরু-ছাগল ইত্যাদি বর্গা বা ভাগে দেয়া জায়িয নয়্ তবে আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়মে যদি কেউ বার্গা দেয় এবং তাদের মধ্যে কোন গোলমাল না হয়, তাহলে তা নিয়ে বিবাদের দরকার নেই। কারণ আমাদের মাযহাব অনুযায়ী উক্ত মু’আমালা জায়িয না হলেও ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের রহ. মতে জায়িয আছে। বর্তমানে উক্ত মু’আমালা ব্যপক আকার দারণ করার কারণে হযরত থানবী রহ. হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী ফাতাওয়া দিয়েছেন। তবে হানাফী মাযহাব অনুযায়ী কেউ উক্ত মু’আমালা করতে চাইলে তার নিয়ম এই যে, গরু দাতা অন্যকে বলবে ‘আমার গরুটা তুমি এক বছর লালন-পালন কর। তোমাকে ৫০০ টাকা দিব।’ এর পরে ঐ টাকা না দিয়ে যদি তার পরিবর্তে গরুর বাছুর বা ছাগলের বাচ্চা দিয়ে দেয়, তাহলে তা জায়িয হবে। কিন্তু প্রথমেই উভয়ের সন্তুষ্টির মাধ্যমে এই শর্ত করা যে, এক বছরের বাচ্চা আমার । দ্বিতীয় বছরের বাচ্চা তোমার। এরূপ করা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী জায়িয নয়। প্রমাণ: এমদাদুল ফাতাওয়া: ৩/৩৪৯

প্রশ্নঃ মেয়েদের মাথার চুল কাটা সম্পর্কে শরীয়তের কি বিধান রয়েছে? বর্তমানে প্রচলিত বিউটি  পার্লারে মেয়েদের যে চুল কাটা হয়, তা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধ?
ফারহানা ইয়াছমিন, ময়মনসিংহ।
উত্তরঃ ফ্যাশন করার জন্য বালেগা মেয়েদের মাথার চুল কাটা জায়িয নয়। আদ্দুররুল মুখতার কিতাবে এ ধরনের মহিলাদেরকে পাপী ও অভিশপ্ত বলা হয়েছে। নারীর মাথার চুল কাটার মধ্যে দু’টি পাপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: (১) নারীর জন্য নরের সাদৃশ্য অবলম্বন করা গুনাহ। (২) কাফির ও বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা গুনাহ।
বর্তমানে প্রচলিত বিউটি পার্লারগুলো বিজাতীয়দের রীতি প্রভাবিত ও নানা রকম গুনাহের কেন্দ্র। কাজেই কোন মুসলিম নারীর জন্য বিউটি পার্লারে যাওয়া এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চুল ছোট করা জায়িয নয়। এমনকি যদি তার স্বামী অনুমতিও দেয়। ফাতাওয়া আলমগীরী: ৫/৩৫৮, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া:১১/৩৭৪, ইমদাদুল ফাতাওয়া:৪/২২৮-২২৯, মিশকাত শরীফ:২/৩৮০-২৮১, বেহেশতী গাওহার:১১/১১৫, ফাতাওয়া শামী:৬/৪০৭, ফাতাওয়া রাহীমিয়া: ২/২৪১, দুররুল মুখতার:৬/৪০৭

প্রশ্নঃ আমি নব বিবাহিত। আমার স্ত্রী আমাকে কনডম ব্যবহার করতে বলে। অথচ এটা ইসলামী শরীয়তে জায়িয নেই। এখন কিভাবে আমি আমার স্ত্রীকে এই অনৈসলামিক পথ থেকে বিরত রাখতে পারি। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জানিয়ে দিলে উপকৃত হব।                   রবিউল হাসান, চিটাগাং।

উত্তরঃ স্ত্রী যদি মুসলমান পরহেযগার বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে শারীরিক কোন অসুবিধার কারণে এ সব পদ্ধতি গ্রহণ করতে চায়, তাহলে নাজায়িয ও অনৈসলামিক কাজ হবে না। বরং সাময়িকভাবে তা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে যদি অভাব-অনটনের ভয়ে বলে থাকে, তাহলে আকীদাগত খারাবীর কাণে তা হারাম ও নাজায়িয হবে। এমতাবস্থায় আপনি আপনার স্ত্রীকে মুহাব্বতের সাথে সঠিক আকীদার ব্যাপারে বুঝাতে থাকেন। ইনশাআল্লাহ, সঠিক বুঝ এসে যাবে। প্রমাণ: সূরা আন’আম:১৫১

প্রশ্নঃ মেয়েলোকের নাক-কান ছিদ্রকরা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়িয হবে কি? কখন থেকে এর প্রচলন শুরু হয়? বর্তমানে কিছু সংখ্যক যুবককেও কান- ছিদ্র করে দুল পরতে দেখা যায়। শরীয়াতের দৃষ্টিতে এর হুকুম কি?                          শাফিয়া বেগম, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
উত্তরঃ অলংকার পরিধানের উদ্দেশ্যে মহিলাদের নাক-কান ছিদ্র করা জায়িয। তবে নাক ছিদ্র করার ব্যাপারে ফকীহগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে বলে নাক ছিদ্র না করাই উত্তম।
কান ছিদ্র করার প্রচলন হযরত ইবরাহীম আ. -এর যুগ থেকেই শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বিবি হাজেরাকে যখন আল্লাহর পক্ষ হতে হযরত ইসমাঈল আ. -এর নূর তার থেকে প্রকাশ পাওয়ার সুসংবাদ প্রদান করা হল, তখন বিবি সারা কসম করে বললেন, নিশ্চয় আমি হাজেরার কান ছিদ্র করে দিব। এরপর বিবি সারা হযরত ইবরাহীম আ. -এর নির্দেশে কসম পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে হাজেরার কন ছিদ্র করে দেন। আল বিদায়া ওয়াননিহায়া: ১/১৪৫
অনুরূপভাবে রাসূলে আকরাম সা. -এর যুগেও মহিলা সাহাবীগণের মাঝে কান ছিদ্র করার প্রচলন ছিল। বুখারী শরীফের একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, ‘একদা নবীয়ে আকরাম সা. ঈদের নামাযের পর মহিলা সাহাবীগণের মজলিসে কিছু নসীহত করেন এবং দান-খায়রাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন।’ তখন তারা কানের অলংকার ও গলার হার খুলে দেয়া শুরু করেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশে অলংকার ব্যবহার করার জন্য নাক-কান ছিদ্র করা জায়িয। তবে পুরুষের জন্য নাক-কান ছিদ্র করে অলংকার পরিধান করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কেননা, তিরমিযী শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলে আকরাম সা. পুরুষকে মহিলা সাদৃশ্য অবলম্বন করা ও মহিলাকে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করার ব্যাপারে লা’নত করেছেন। তাই পুরুষদের জন্য এগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা অপরিহার্য।
উল্লেখ্য যে, অলংকার পরিহিত অবস্থায় মহিলাদের গোসলের সময় নাক-কানের এবং অযুতে নাক্ফুলের ছিদ্রপথে পানি পৌঁছানোর ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রমাণ: বুখারী শরীফ:২/৮৭৪, তিরমিযী: ২/১০৬, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া:৬/৩৬২, বেহেশতি জেওর: ১/৪৭

প্রশ্নঃ মায়ের সার্বক্ষণিক সাহচর্যে থাকা এক পঙ্গু সন্তানের অহরহ প্ররোচনায় মা তার অন্য সন্তানের প্রতি অন্যায় করেছেন। এমনকি ঐ সন্তানদের গোপনে অনেক হক থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি পাড়া প্রতিবেশীদের পরামর্শকেও আমলে নেন নাই। কিন্তু উক্ত মাতা আজীবন ধারণা পোষণ করেছেন যে, তিনি ইনসাফের কাজ করেছেন। এমতাবস্থায় আল্লাহর দরবারে শুধু প্ররোচনাকারী সন্তানটিই দায়ী হবে না কি মাতাও দায়ী হবেন?                       নাম জানাতে অনিচ্ছুক।
উত্তর ঃ শরীয়াত সমর্থিত কারণ থাকলে সম্পদ বন্টনের সময় পিতা-মাতা সন্তানদের মধ্যে বেশ-কম করতে পারে। প্রশ্নে উল্লেখিত সুরতে যেহেতু সন্তান পঙ্গু বা উপার্জনে অক্ষম, তাই পিতা বা মাতার জন্য ঐ পঙ্গু বা মাযূর সন্তানকে অন্যদের অংশের চেয়ে বেশি সম্পত্তি দেয়া জায়িজ হবে। এতে চাই অন্যান্য সন্তানদের সম্মতি থাক বা না থাক। কিন্তু যদি শর’য়ী কোন কারণ না থাকে, পঙ্গু বা মাযূর না থাকে, তাহলে সন্তানদের মধ্যে সম্পদ বন্টন করতে গিয়ে কম-বেশি করা পিতা-মাতার জন্য জায়িয হবে না; বরং ছেলে-মেয়েদের যথাযথ অংশ দিতে হবে। এসম্পর্কে একটি হাদীসের সারমর্ম হল – কিছু লোক সারা জীবন আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের মধ্যে মাশগুল থাকে, কিন্তু মৃত্যুর সময় ওয়ারিশদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে অর্থাৎ কাউকে কম কাউকে বেশি দেয়; এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। অন্য এক হাদীসে আছে – যে ব্যক্তি স্বীয় ওয়ারিসদেরকে মাহরূম করবে, মহান আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাত থেকে বঞ্চিত করবেন। প্রমাণঃ ফাতাওয়া রাহীমিয়:২/৬৯৬, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ৩/৪৭০, মুফিদুল ওয়ারিসিন: ১২, দুররে মুখতার:৫/৬৯৬

প্রশ্নঃ আমি একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ১০০০ টাকা ধার দিয়েছি। কিন্তু সে প্রকৃতপক্ষে এই ধারের বিষয়টি ভুলে গেছে। ফলে সে ধার শোধ করছে না। অন্য দিকে আমিও চক্ষু লজ্জায় টাকাটা চাইতে পারছি না। এই অবস্থায় উভয়ের মৃত্যু হলে আল্লাহর দরবারে বিষয়টির ফয়সালা কি ভাবে হবে?
উত্তরঃ যতদ্রুত সম্ভব ঋণ পরিশোধ করে দেয়া প্রয়োজন, কেননা ঋণ পরিশোধ না করে মৃত্যুবরণ করলে তার রূহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না। প্রমাণ: বেহেশীত যেওর, আদাবুল মুআশারাত, ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া:২০৫ ও ২০৭ পৃষ্ঠা
বিংঃদ্রঃ এক্ষেত্রে চক্ষু লজ্জা করা উচিত নয়,বরং তাকে জানাতে হবে ঋণের বিষয়টি। কোন কারণে তাকে না জানাতে পারলে, তার ওয়ারিশদেরকে অবগত করাতে হবে। ঋণ দাতাও যদি মৃত্যু বরণ করে। তবে ঋণগ্রহিতা যদি ঋণ দাতার ওয়ারিশগণকে পরিশোধ করে দেন তাহলেও চলবে। প্রমাণ: আহকামে যিন্দেগী: ৪১০
প্রশ্নঃ কবর খনন ও লাশ দাফন করার ইসলামী সমাধান কি? জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।                                                       শাহরিয়ার, ঠাকুরগাঁও।
উত্তরঃ *কবর মাইয়্যেত-এর সমপরিমাণ লম্বা হবে।
* যতটুকু লম্বা তার অর্ধেক পরিমাণ চওড়া হবে।
* মাইয়্যেত -এর দেহ যত লম্বা, কবর ততপরিমাণ গভীর হওয়া সবচেয়ে উত্তম, অন্ততঃ তার অর্ধেক গভীর করলেও চলবে। এরূপ কবরকে সিন্দুক কবর বলে।
*আর এরূপ খনন করার পর কবরের নীচে কেবলার দিকে আর একটি ছোট কুঠরির ন্যায় খনন করে তার মধ্যে মুরদারকে রাখা হলে তাকে বলে বুগলী কবর বা লাহ্দ। সিন্দুকের চেয়ে এরূপ কবর খনন উত্তম। প্রমাণ: ফাতওয়া দারুল উলূম ৫ম খন্ড।
*কবরের উপরিভাগ অন্ততঃ এক ফুট গভীরতা সহকারে একটু অধিক প্রশস্ত করে খনন করতে হবে। এ স্থানে বাঁশ, কাঠ বা পিপার দিয়ে তার উপর মাটি দিতে হবে। আহকামে মাইয়্যেত।

প্রশ্নঃ কবরে যে আযাব হবে তা নিশ্চিত। কিন্তু কথা হল যাদের মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়া হয় বা পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয় বা গাড়ীর নিচে পড়ে থেতলে নিশ্চিন্ন হয়ে যায় বা ভূমি কম্পের দরুন নিয়মিত কবর দেয়া যায়না। তাদের কবরের শান্তি বা শাস্তি কিভাবে হবে? জানালে খুশি হব।                                                     চৈতি, ঢাকা।
উত্তরঃ কবরের আযাবের আলোচনার পূর্বে কবরের সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. বলেন- কবর দ্বারা আলমে বরযখ তথা মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত সময়টাকে বুঝানো হয়। কারণ অনেক মানুষ পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মারা যায়। তাদেরকেও তো পুরুস্কার বা শাস্তি দেয়া হয়। সুতরাং কবর দ্বারা গর্ত উদ্দেশ্য নয়। দ্বিতীয়ত কবরের শাস্তি সরাসরি তাঁর রুহের উপর এবং পরোক্ষভাবে তার শরীরের উপর হয়ে থাকে। শরীর যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন এবং শরীরের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে অণু-পরমাণু হয়ে গেলেও তার প্রত্যেক অংশে আযাব দেয়া আল্লাহর জন্য কোন কঠিন ব্যপার নয়।  প্রমাণ: মিশকাত:১/২৪,২৫,২৬, বুখারী শরীফ,১/১৮৩, মুসলিম শরীফ:১/৩০২, তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন ও তাফসীরে মাযহারী।

প্রশ্নঃ আমার একটি সন্তান আছে। আমরা আর কোন সন্তান নিতে চাই না। তাই আমরা এখন জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাই। জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি বৈধ না অবৈধ? কুরআন হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।               মোছাঃ মাহমুদা আক্তার, পাকুটিয়া, ঘাটাইল, টাংগাইল।
উত্তর ঃ জন্মনিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যথা-
(ক) স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা: এমন পদ্ধতি গ্রহণ করা যা স্থায়ীভাবে পুরুষ বা নারীর প্রজনন ক্ষমতা তথা সন্তান দেয়া ও নেয়ার শক্তি চিরতরে নষ্ট করে দেয়। সাধারণত এর জন্য নিম্নবর্ণিত পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
১. (ভ্যাসেক্টমি) [অন্ডকোষের নিঃসরণ নালীর ছেদন] এতে শুক্রকীটবাহী নালী আংশিক বা সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হয়।
২. (টিউভেল লাইগেশণ) অর্থাৎ মহিলার শুক্র নালী কেটে ফেলা অথবা কাটা ব্যতীত এমনভাবে বেঁধে দেয়া, যাতে বীর্যের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়।
৩. (হিস্টারেক্টমি) [জরায়ুচ্ছেদ] অর্থাৎ মহিলাদের জরায়ু কেটে ফেলে দেয়া যাতে সন্তান গর্ভজাত বন্ধ হয়ে যায়।
৪. কোন ওষুধ সেবন অথবা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন পন্থায় প্রজনন ক্ষমতা চিরতরে বন্ধ করে দেয়া।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর সবকটিই শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। প্রমাণ: বুখারী কিতাবুন নিকাহ, বাবু মা য়ুকরাহু মিনাত্তাবাত্তুল ওয়াল খুস্সাঈ: ২/৭৫৯ হা.৫০৭৫, উমদাতুল ক্বারী, কিতাবুন নিকাহ: ২০/৯৫ হা.৫০৭৩ এর ব্যখ্যা।
খ. অস্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা: এর জন্য সাধারণত নিম্ন বর্ণিত ৮টি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যথা- ১. সহবাস নিয়ন্ত্রণ (বিশেষ কিছু দিন সহবাস থেকে বিরত থাকা) অর্থাৎ ঋতুর শুরু থেকে পবিত্র কালের মধ্যবর্তী সময় (যা সাধারণত চৌদ্দতম দিন হয়) এবং তার পূর্বাপর কয়েক দিন সহবাস থেকে বিরত থাকা। আর তা হল, ঋতুর শুরু থেকে ৯ম দিন হতে ১৯তম দিন পর্যন্ত। কারণ এ সময় সাধারণত বা””া জন্ম নিয়ে থাকে। [গর্ভ সঞ্চার হয়]। এর মধ্যে ১৩, ১৪,ও ১৫তম দিনগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (এ সময়ে বাচ্চা জন্ম গ্রহণের সম্ভাবনা বেশি থাকে)। যেমন, কোন মহিলার ঋতু শরু হয় মাসের ১ম তারিখ, তার জন্য মাসের ৯ তারিখ হতে ১৯ তারিখ পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকা। উল্লিখিত দিনগুলোর পরে মহিলাদের ডিম্বাণূর বাচ্চা জন্ম দানের যোগ্যতা নিঃশেষ হয়ে যায়। কারণ, এসময় তাদের ডিম্বাণূ দুর্বল হয়ে পড়ে। এ পন্থা অবলম্বন নিঃসন্দেহে জায়েয। কেননা প্রত্যেক স্বামীর এ অধিকার রয়েছে যে, সে যখন ইচ্ছা স্ত্রী সহবাস করবে আর যখন ইচ্ছা বিরত থাকবে। অতএব, সে যদি কিছু দিনের জন্য তার অধিকার অর্থাৎ স্ত্রী মিলন থেকে বিরত থাকে এতে স্ত্রীর অধিকার লংঘন না হলে তার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
২. আযল করা (যৌন মিলনে বীর্য প্রত্যাহার করা): আযল সম্পর্কে হাদীসের কিতাব সমূহে বিভিন্ন ধরণের বর্ননা পাওয়া যায়। আযল সম্পর্কীয় এ হাদীসগুলোকে সামনে রাখলে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে বিনা কারণে আযল করা নাজায়েয না হলেও তা মাকরূহ ও গর্হিত কাজ। প্রমাণ: বুখারী বাবুল আযল:২/৭৮৪ হা.৫২১, মুসলিম:১/৪৬৪ হা.৩৫৩১,৩৫৩৪, ১/৬৬ হা.৩৫৫০,
৩. কনডম ব্যবহার
৪. ঔবষষু, ঈৎবধস, ঋড়ধসব্যবহার করা (এগুলো শুক্রানুকে অক্ষম করে দেয়ার কাজ করে)
৫. ঢুস্ ব্যবহার অর্থাৎ পানির পিচকারী দিয়ে জরায়ু ধুয়ে ফেলা।
৬. জরায়ুর মুখ বন্ধ করে দেয়া।
উপরোল্লেখিত ৩-৬ পর্যন্ত পদ্ধতিগুলো আযলের মত। সুতরাং বিনা প্রয়োজনে এ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা মাকরূহ তানযিহী।
৭. পিল খাওয়া।
৮. ইঞ্জেকশন নেয়া।
উল্লেখিত ৭ ও ৮ এ দু’টি পদ্ধতি অনেক সময় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়, যাকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বলা হয়।  আর যে সমস্ত কাজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তার ব্যবহার শরীআতের দৃষ্টিতে মাকরূহে তানযীহী। প্রমাণ: আলমগীরী, খ. ৫, পৃ. ৩৪০
যে সব অবস্থায় অস্থায়ী পদ্ধতি বৈধঃ
১. মহিলা এত দূর্বল যে, বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা নেই।
২. গর্ভধারণের কারণে দুধ শুকিয়ে গেলে পূর্বের বাচ্চার স্বাস্থ্য হানির আশংকা দেখা দেয়া ও দুধের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে অক্ষম হওয়া।
৩. ফেতনা-ফাসাদের যমানার কারণে বাচ্চা অসৎ চরিত্র হওয়ার আশংকা থাকা।
৪. মহিলার নিজের বাসস্থান থেকে দূরবর্তী এমন কোন এলাকায় থাকা, যেখানে স্থায়ীভাবে অবস্থান করার ইচ্ছা নেই এবং সেখান থেকে গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে কয়েক মাসের প্রয়োজন।
৫. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল হওয়ার কারণে পৃথক হওয়ার ইচ্ছা থাকা।
৬. মুসলমান বিজ্ঞ ডাক্তারদের মতানুযায়ী বাচ্চা নিলে মায়ের জীবননাশের আশংকা থাকা।
৭. মা বংশগত কোন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়া, যা বাচ্চার মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সমূহ আশংকা থাকে।যে সব কারণে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বৈধ নয়ঃ
১.পুরুষ ও মহিলা নিজেদের সৌন্দর্যকে দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা।
২. কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার ভয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা। যাতে পরবর্তীতে এদের বিয়ে-শাদির ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৩. গর্ভধারণ কষ্ট, প্রসব বেদনা, নিফাস (সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরবর্তী স্রাব), দুধ পান করানো এবং এর সেবা-যতœ ইত্যাদির কষ্ট থেকে বেঁেচ থাকার জন্য।
৪. গর্ভধারণ থেকে নিয়ে বাচ্চা বড় হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে এর সেবা-যতেœর পেছনে কল্পনাতীত শ্রম দেয়ার কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য খিট খিটে মেজাজ থেকে বাঁচার জন্য।
৫. অধিক সন্তান নেয়াকে লজ্জার বিষয় মনে করা।
৬. অধিক সন্তান হলে আর্থিক অভাব-অনটন দেখা দিবে, এ ভয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা।
উল্লেখিত কারণসমূহ সামনে রেখে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নাজায়েয। বিশেষ করে ষষ্ঠ কারণটি যেহেতু বিশুদ্ধ আকীদা ও বিশ্বাসের সাথে প্রকাশ্য সাংঘর্ষিক।

জিজ্ঞাসা-১ঃ আপু, প্রেম করে বিবাহ করা কি  গোনাহ?                   সোহাগ, মতি কোয়ালিটি, পাগার, গাজীপুর।
পরামর্শঃ আমি যদি কাউকে ভালবাসি আল্লাহর জন্য ভালবাসব আর কাউকে যদি ঘৃণা করি তাহলে আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করব। বিয়ের আগে প্রেম নয়। দেখে শুনে ধার্মিক নামাজী ও ভদ্র পরিবারের মেয়ে বিয়ে করবে। বেগানা মহিলা ও বেগানা পুরুষ এক সাথে দেখা-সাক্ষাত করা নাজায়েয ও হারাম, কবিরা গুনাহ। প্রেম মানুষকে অন্ধ করে দেয়।
জিজ্ঞাসা-২ঃ আপু, আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করি, কিন্তু মা-বাবা তাতে রাজি নয়। আমি কি করতে পারি?                        লুকমান, গাজীপুর।
পরামর্শঃ মা-বাবা সন্তানের মঙ্গল চায়। তুমি যদি মা-বাবার আদেশ পালন করতে পার সেটাই উত্তম। আর যদি ঐ মেয়েকে তোমার বিয়ে করতেই হয় তাহলে মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না। বউয়ের কারণে মা-বাবার সংগ ত্যাগ করো না এবং কষ্ট দিও না। চিন্তা করে দেখ, মা-বাবার অসন্তুষ্টিতে তোমার ভবিষ্যত কেমন হবে?

জিজ্ঞাসা-৩ঃ নিজের স্ত্রী বেনামাজী। নামাজের কথা বললেও নামাজ পড়ে না। কিভাবে নিজের স্ত্রীকে নামাজী বানাতে পারি তার সু-পরামর্শ চাই।
মোঃ জূয়েল, মিরপুর ঢাকা।
পরামর্শঃ  তুমি নিজে নামায পড়তে থাক এবং স্ত্রীকে বুঝাতে থাক। মুসলমান এবং কাফেরের মাঝে এক মাত্র নামাযই পার্থক্যকারী। কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাযেরই হিসাব নেয়া হবে। নামায না পড়লে তাকে ১৫প্রকার শাস্তি দেয়া হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। পাঁচটি দুনিয়াতে। যথা- (১) জিন্দিগীর বরকত কেড়ে নেয়া হয় (২) তার মুখমন্ডল হতে নেককারদের জ্যোতি মুছে ফেলা হয়। (৩) যে আমলই সে করুক না কেন আল্লাহ পাক তার কোন প্রতিদান দেন না। (৪) তার কোন দোয়া কবুল হয়না। (৫) নেক বান্দাদের দোয়া থেকে কোন উপকার পায় না।
মৃত্যুর সময় তিনপ্রকার শাস্তি:(১) সে বে-ইজ্জতির সহিত মৃত্যু বরণ করবে। (২) ক্ষুদার্থ অবস্থায় সে মারা যাবে। (৩) পিপাসিত অবস্থায় সে মৃত্যু মুখে পতিত হবে। সমুদ্রের সমপরিমান পানি পান করানো হলেও তার তৃষ্ণা মিঠেনা।
কবরে তিন প্রকার শাস্তি (১) তার জন্য কবর এত সংকীর্ণ হয় যে, বুকের হাড়গুলো একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে। (২) তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হবে। (৩) তার কবরে একটি সাপ দেয়া হবে যে এক নামাযের ওয়াক্ত হতে অন্য নামাযের ওয়াক্ত পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে।মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের সময় তিনটি শাস্তি: (১) হিসাব গ্রহণে কঠোরতা করা হবে। (২) আল্লাহর অসুন্তুষ্টিতে পতিত হবে। (৩৩) জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।  (ফাযায়েলে আমাল)

জিজ্ঞাসা-৪ঃ কিছু কিছু বিয়ে বাড়িতে দেখা যায় যে, মেহমানদের উন্নত খাবার দেয়া হয়। কিন্তু তাদের ড্রাইভারদের প্যাকেটিং করে নিম্নমানের খাবার দেয়া হয়। এটা ইসলাম ধর্মমতে কতটুকু ঠিক?                                             বাবুল, গুলশান।
পরামর্শঃ ড্রাইভাররাও মেহমান। অতএব তাদের সাথে বৈষম্যের ব্যবহার করা মোটেই ঠিক নয়। এক হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন- তোমরা যা খাবে তোমাদের অধিনস্তদেরও তাই খাওয়াবে। তোমরা যা পড়বে তাদেরকেও তাই পরাবে।

জিজ্ঞাসা-৫ঃ লোভ করলে কি কি ক্ষতি হয়?
পরামর্শঃ পৃথিবীতে বহু ক্ষমতাশীল রাজা বাদশা সম্পদ ও ক্ষমতার লোভ ত্যাগ করতে না পেরে যুগে যুগে ভয়ানক অপমানিত অপদস্ত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
জিজ্ঞাসা-৬ঃ আরাম আয়েশে কি ক্ষতি হয়?                               অপু, ঢাকা।
পরামর্শঃ আরাম আয়েশে মানুষ ধ্বংস হয়ে যায় এবং রাজত্য চলে যায়। ভোগ বিলাসে মত্ত যারা তারা আল্লাহর অপ্রিয় বান্দা। তাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলা ক্রোধান্বিত থাকেন।

Related posts

Leave a Comment