আল-কুরআন হিদায়াতের উৎস : কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক

হিদায়াতের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস পবিত্র কুরআন। যাঁর প্রতিটি হরফের অন্তরালে রয়েছে মহান রাব্বুল আ’লামীন আল্লাহ্ তা’আলার মা’রিফাত (পরিচয়)। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে বড় মু’যিজা এইÑ কুরআন। পবিত্র কুরআনই হলো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ‘ওহী’।
কালামে ইলাহীর শব্দবিন্যাস, বাক্যগঠন আজ পর্যন্ত মানুষকে অবাক করছে, চিরকাল করতে থাকবে। হৃদয়-বিদীর্ণকারী, অশ্রুসিক্তকারী, চিন্তা-চেতনার সুগভীর উৎস, অফুরন্ত জ্ঞানের পথপ্রদর্শক, মহাসত্যের ‘খোলাসা’ (সারাংশ) মহান কুদরতি গুণে গুনান্বিত আল্লাহ্ তা’আলার কালাম।
সেই কুরআন আছে মুসলমানের কাছে। মুসলমানদের ঘরে ঘরে। আর কি লাগে বলুন! মুসলমানদের তারপরও এই অবস্থা কেন তাহলে? হ্যাঁ, কুরআন তাক-এ আছে, কুরআন আছে অনেক হাফেয্দের অন্তরে, কুরআন আমাদের ঘরে ঘরেÑ কিন্তু সারা দুনিয়ায় আজ কয়জন মুসলমান এমন রয়েছে, যাঁদের জীবন আর কর্ম কুরআনের অনুসারী? কয়জন মুসলমান কুরআনকে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিশ্বাসের সাথে সাথে তাঁর অনুসরণে জীবন গঠনে ব্রতী? সংখ্যাটা সত্যিই খুব কম। শুধুমাত্র তিলাওয়াতের কথাই ধরুনÑ আল্লাহ্ তা’আলার কালাম যখন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মুসলমান মাত্রেরই কি অবস্থা হবার কথা? এই কালাম তো এমন আকর্ষণ রাখে যে, বেদ্বীন-কাফির পর্যন্ত তাতে প্রভাবিত হয়। বুঝতে পারে এটা মানুষ রচিত কোন গ্রন্থ নাÑ হতেই পারে না! কিন্তু, আজ মুসলমানদের হলো কি? ব্যাপক হারে মুসলমান কুরআন পড়া ছেড়ে দিয়েছে! পবিত্র কুরআন-এর অনুসরণ-তো আরো দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে! কালামে পাক-এর প্রতি সত্যিকার ভক্তি ও মুহাব্বত আমাদের অন্তর থেকে যেন একরকম বিদায় নিতে চলেছে। আল্লাহ্ তা’আলার সাথে সম্পর্কহীন হওয়াই অন্যতম কারণ তার।
আমি পবিত্র কুরআন পাঠ করছি না; আমার সন্তানকেও পবিত্র কুরআন পড়াচ্ছি না। আমার প্রতি আল্লাহ্ তা’আলার ঘোষণা, হুকুম আর বিধি বিধান সম্পর্কে আমি বে-খবর রয়ে যাচ্ছি। যাঁরা কুরআনকে বিশ্বাসই করে না, তারাতো আল্লাহ্ পাককেই অস্বীকার করে। তাদের মতো আমিও কি আল্লাহ্ তা’আলার কথা,  ঘোষণা ও বিধানকে এড়িয়ে যেতে পারি? অবিকৃত, সুস্পষ্ট ও সুসংরক্ষিত এই কুরআনের উপর আমি মুসলমান হয়ে কি কোন প্রকারের প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করতে পারি? যদি তা-ই হয় (নাউযুবিল্লাহ্!), আমার কি ঈমান আর বাকি আছে? না বুঝে, না  জেনে, না যাচাই-বাচাই করে কথা বলা বা নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তা-ভবনাকে মুখ দিয়ে প্রকাশ করা কি ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনে না? আজ কেন এমন দেখা যাচ্ছে? মুসলমানের সন্তান হয়ে কেন কালামে পাকের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো স্পর্ধা হচ্ছে? আর কিছু নয়Ñপবিত্র কুরআন-এর ধারক ও বাহকদের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পর্কহীন থাকার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে। আর যদি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও, পবিত্র কুরআনের ধারক ও বাহকদের প্রতিই আমাদের আস্থা না থাকে, তাহলে  তো সেটা চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। এই আস্থা আসলে শয়তান আর আমাদের নফস্ (মন)-ই ডাকাতি করেছে। নতুবা দুনিয়ার  কোন্ বিষয়ে বা কার প্রতি আবার এত বেশী আস্থাশীল হয়ে আমরা বিভিন্ন মানুষের কাছে ধর্ণা দেই? বলুন, ডাক্তার, উকিল, ব্যবসায়ীÑ যাকেই দরকার, তার একজনের কাছে প্রয়োজনের তাগিদেই নিজেকে সমর্পণ করি। এত বিশ্বস্ততা আর যাচাই বাছাইকে কখনোই প্রশ্রয় দেই না। অথচ, যখনই দ্বীনকে জানার ব্যাপারে সমর্পণের কথা আসে, তখন নানান টালবাহানা করি। বলি, বিশ্বস্ততার অভাব! বিভিন্ন অজুহাত তো দেয়াই হয়, অনেকের ভাষ্য হলো, দ্বীন আমিই ভাল বুঝি। এই ধারণা আর  ধোঁকার ভিত্তিতেই দ্বীন কোনদিন আর শেখা হয় না। এইসব  ধোঁকাবাজি আজ চলতে পারে, মানুষের কাছে অহমিকা করে সাময়িক বাঁচা যায়, কবরে গেলে বাঁচা যাবে না। আল্লাহ্ তা’আলার কাছে এই সব ওজর-আপত্তি কিছুই গৃহিত হবে না।
সব জ্ঞানের সামনে মাথা নত করলাম, আর কালামে পাক-এর জ্ঞান শিখতে হবে না? আপনা-আপনিই এসে ধরা দেবে? কষ্ট- ক্লেশ করবো দুনিয়ার জ্ঞানার্জনের জন্য আর আন্দাজে কথা বলবো কালামে ইলাহী তথা কুরআন মাজীদ নিয়ে? এরকম মারাত্মক গাফলতি থেকে আমাদের প্রত্যেকের আজই তওবা করা উচিত; আকড়ে ধরতে হবে কালাম পাককে, তাঁর শিক্ষা ও দীক্ষাকে।
দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয় শেখার জন্য প্রচুর অর্থ-কড়ি, সময় ব্যয় করা হয়ে থাকে। এমনকি নাজায়েয গান-বাদ্য শোনার জন্য,  শেখার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করা হয়ে থাকে! দিল-দেমাগ যখন বিকৃত রুচিকে সুন্দর আর মুখরোচক হারামে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন পবিত্র আল্লাহ্ তা’আলার কালাম আর ভাল লাগে না! সেই রুচি নষ্ট হয়ে যায়। কত ভয়াবহ বিষয়! কত বড় বঞ্চনা! মানুষের রচিত পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু স্রষ্টার কথা পড়ার-বুঝার জন্য কোন সাধারণ পর্যায়ের প্রচেষ্টাও করা হয় না!
এখন চিন্তা করুন, প্রতিদিন কত কিছু বলি, কত কিছু শুনি আর কতই না কিছু পড়ি আমরা। কিন্তু প্রতিদিন কয়বার আমরা পবিত্র কুরআনের কথা বলি? কয়বার পবিত্র কুরআন শুনি আর কয়বারই বা পবিত্র কুরআন পড়ি? কখনো কি সামান্য সময়ের জন্যও ভেবে দেখেছিÑ আচ্ছা, আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে তাঁর এই কালাম দ্বারা কি জানিয়েছেন? এই কুরআনের মূল উদ্দেশ্য আসলে কি? কুরআনের অর্থ জানার ব্যাপারে কখনো কি একটুও উৎসাহী হয়েছি?
পবিত্র কুরআন এর জীবন আমাদের গড়তে হবে। আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জীবনটাই পূর্ণাঙ্গ কুরআন এর বাস্তবায়ন। উলামায়ে কেরাম হলেন সেই কুরআন ও হাদীসের ধারক ও বাহক। উনাদের সংস্পর্শে দ্বীনকে শিখতে ও বুঝতে হবে। দ্বীনকে চৌদ্দশত বছরের অধিক সময় আল্লাহ্ তা’আলাই মুত্তাক্বী-পরহেযগার উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে হিফাযত করেছেন। এটাই আল্লাহ্ তা’আলার প্রদত্ত নিয়ম।
আজ দ্বীন শিখার জন্য, কুরআন ও সুন্নাহ বুঝার জন্য মন-মস্তিষ্ককে বিসর্জন দিতে যে দ্বিধাবোধ করা হয়, তা খুবই দুঃখজনক ও দ্বীনদার হওয়ার পথে মারাত্মক অন্তরায়।
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে সঠিক নিয়্যতে সঠিকভাবে তাঁর পথে অগ্রসর হওয়ার তৌফিক দিন! আমীন।

————————————-
নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক দা’ওয়াতুল হক

আল-কুরআন হিদায়াতের উ

কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক

 

হিদায়াতের সর্বশ্রেষ্ঠ উ পবিত্র কুরআনযাঁর প্রতিটি হরফের অন্তরালে রয়েছে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ্ তাআলার মারিফাত (পরিচয়)রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে বড় মুযিজা এইÑ কুরআনপবিত্র কুরআনই হলো সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ওহী

কালামে ইলাহীর শব্দবিন্যাস, বাক্যগঠন আজ পর্যন্ত মানুষকে অবাক করছে, চিরকাল করতে থাকবেহৃদয়-বিদীর্ণকারী, অশ্রুসিক্তকারী, চিন্তা-চেতনার সুগভীর উ, অফুরন্ত জ্ঞানের পথপ্রদর্শক, মহাসত্যের খোলাসা’ (সারাংশ) মহান কুদরতি গুণে গুনান্বিত আল্লাহ্ তাআলার কালাম

সেই কুরআন আছে মুসলমানের কাছেমুসলমানদের ঘরে ঘরেআর কি লাগে বলুন! মুসলমানদের তারপরও এই অবস্থা কেন তাহলে? হ্যাঁ, কুরআন তাক-এ আছে, কুরআন আছে অনেক হাফেয্দের অন্তরে, কুরআন আমাদের ঘরে ঘরেÑ কিন্তু সারা দুনিয়ায় আজ কয়জন মুসলমান এমন রয়েছে, যাঁদের জীবন আর কর্ম কুরআনের অনুসারী? কয়জন মুসলমান কুরআনকে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে বিশ্বাসের সাথে সাথে তাঁর অনুসরণে জীবন গঠনে ব্রতী? সংখ্যাটা সত্যিই খুব কমশুধুমাত্র তিলাওয়াতের কথাই ধরুনÑ আল্লাহ্ তাআলার কালাম যখন তিলাওয়াত করা হয়, তখন মুসলমান মাত্রেরই কি অবস্থা হবার কথা? এই কালাম তো এমন আকর্ষণ রাখে যে, বেদ্বীন-কাফির পর্যন্ত তাতে প্রভাবিত হয়বুঝতে পারে এটা মানুষ রচিত কোন গ্রন্থ নাÑ হতেই পারে না! কিন্তু, আজ মুসলমানদের হলো কি? ব্যাপক হারে মুসলমান কুরআন পড়া ছেড়ে দিয়েছে! পবিত্র কুরআন-এর অনুসরণ-তো আরো দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে! কালামে পাক-এর প্রতি সত্যিকার ভক্তি ও মুহাব্বত আমাদের অন্তর থেকে যেন একরকম বিদায় নিতে চলেছেআল্লাহ্ তাআলার সাথে সম্পর্কহীন হওয়াই অন্যতম কারণ তার

আমি পবিত্র কুরআন পাঠ করছি না; আমার সন্তানকেও পবিত্র কুরআন পড়াচ্ছি নাআমার প্রতি আল্লাহ্ তাআলার ঘোষণা, হুকুম আর বিধি বিধান সম্পর্কে আমি বে-খবর রয়ে যাচ্ছিযাঁরা কুরআনকে বিশ্বাসই করে না, তারাতো আল্লাহ্ পাককেই অস্বীকার করেতাদের মতো আমিও কি আল্লাহ্ তাআলার কথা,  ঘোষণা ও বিধানকে এড়িয়ে যেতে পারি? অবিকৃত, সুস্পষ্ট ও সুসংরক্ষিত এই কুরআনের উপর আমি মুসলমান হয়ে কি কোন প্রকারের প্রশ্ন বা আপত্তি উত্থাপন করতে পারি? যদি তা-ই হয় (নাউযুবিল্লাহ্!), আমার কি ঈমান আর বাকি আছে? না বুঝে, না  জেনে, না যাচাই-বাচাই করে কথা বলা বা নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তা-ভবনাকে মুখ দিয়ে প্রকাশ করা কি ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনে না? আজ কেন এমন দেখা যাচ্ছে? মুসলমানের সন্তান হয়ে কেন কালামে পাকের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো স্পর্ধা হচ্ছে? আর কিছু নয়Ñপবিত্র কুরআন-এর ধারক ও বাহকদের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পর্কহীন থাকার কারণেই এমনটি হয়ে থাকেআর যদি মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও, পবিত্র কুরআনের ধারক ও বাহকদের প্রতিই আমাদের আস্থা না থাকে, তাহলে  তো সেটা চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়এই আস্থা আসলে শয়তান আর আমাদের নফস্ (মন)-ই ডাকাতি করেছেনতুবা দুনিয়ার  কোন্ বিষয়ে বা কার প্রতি আবার এত বেশী আস্থাশীল হয়ে আমরা বিভিন্ন মানুষের কাছে ধর্ণা দেই? বলুন, ডাক্তার, উকিল, ব্যবসায়ীÑ যাকেই দরকার, তার একজনের কাছে প্রয়োজনের তাগিদেই নিজেকে সমর্পণ করিএত বিশ্বস্ততা আর যাচাই বাছাইকে কখনোই প্রশ্রয় দেই নাঅথচ, যখনই দ্বীনকে জানার ব্যাপারে সমর্পণের কথা আসে, তখন নানান টা

Related posts

Leave a Comment