রমজান মাসের ফজিলত;

১. রমজান মাসের ফজিলত; যেমন এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। আর এ কাজগুলো রমজানের প্রতিরাতেই সংঘটিত হয় এবং শেষ রমজান পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা বিদ্যমান থাকে।

২. এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, জান্নাত-জাহান্নাম আল্লাহর সৃষ্ট দু’টি বস্তু যার দরজাগুলো প্রকৃত অর্থেই খোলা কিংবা বন্ধ করা হয়।
[ শরহে ইবনে বাত্তাল : ৪/২০, আল-মুফহিম : ৩/১৩৬]

৩. ফজিলতপূর্ণ সময় এবং তাতে যেসব আমল করা হয়, তার সব কিছুই আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। যার ভিত্তিতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয়।

৪. রমজানের সুসংবাদ প্রদান এবং রমজানকে স্বাগত জানানো বৈধ। কারণ, রাসূল সা. নিজ সাহাবাদের সুসংবাদ প্রদান এবং নেক আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য রমজানের এ বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করতেন। তদ্রুপভাবে প্রত্যেক কল্যাণকর আমলের ব্যাপারে এরূপ করা বৈধ।

৫. অবাধ্য দুরাচার শয়তানদের রমজান মাসে আবদ্ধ করা হয়। যার ফলে তার প্রভাব কমে যায় এবং বনি আদম বেশি করে নেককাজ করার সুযোগ পায়।

৬. রমজান মাসে আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানি প্রত্যক্ষ করা যায়। তিনি বান্দার রোজা হেফাজত করেন এবং শয়তানদের বন্দি করে রাখেন, যাতে সে এ পবিত্র মাসে বান্দার এবাদত নষ্ট না করতে পারে।
[জখিরাতুল উকবা : ২০/২৫৫]

৭. এ হাদিস দ্বারা শয়তানের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে। তারা শরীর বিশিষ্ট্য যা শেকলে বাঁধা যায়। তাদের মধ্যে কতক রয়েছে অবাধ্য, যাদেরকে রমজান মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।
[জখিরাতুল উকবা : ২০/২৫৫]

৮. যে ব্যক্তি রমজানের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করবে এবং এতে আল্লাহর হুকুম যথাযথ পালন করবে, সে রমজানের এসব ফজিলত লাভে ধন্য হবে। কাফের, যারা এ মাসে রোজা রাখে না এবং এ মাসের কোন মর্যাদা স্বীকার করে না, তাদের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করা হয় না, তাদের জন্য জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় না। তাদের শয়তানসমূহ বন্দি করা হয় না এবং তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ারও উপযুক্ত নয়।[ ফতোয়া শাইখুল ইসলাম : ৫/১৩১-৪৭৪] এর ভিত্তিতে বলা যায়, রমজান কিংবা অন্য মাসে যদি তাদের কেউ মারা যায় তবে সে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হবে।

৯. মুসলমান হয়ে যে ব্যক্তি কাফেরদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখল, যেমন রমজানের অবমূল্যায়ন করল, রমজানে পানাহার করল, রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এমন কাজ করল অথবা এমন কাজ করল যার দ্বারা রোজার সওয়াব কমে যায়, যেমন গিবত, চোগলখুরীতে লিপ্ত হল, মিথ্যা সাক্ষ্য দিল বা তার মজলিসে উপস্থিত হল, তার ব্যাপারেও আশঙ্কা করা যায় যে সে রমজানের ফজিলত থেকে মাহরুম হবে, তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করা হবে না, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করা হবে না এবং তার জন্য শয়তানদেরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হবে না।

১০. সুরায়ে সাদের ৫০ নাম্বার আয়াতে জান্নাতের প্রশংসায় বলা হয়েছে, ‘জান্নাত চিরস্থায়ী বাসস্থান, তাদের জন্য তার দরজাগুলো উম্মুক্ত’। এর দ্বারা জান্নাতের দরজাগুলো সর্বদা উম্মুক্ত তা বুঝায় না, দ্বিতীয়ত এ সংবাদ হচ্ছে কিয়ামতের দিন সম্পর্কে, তাই এ হাদিসের সাথে তার কোন বিরোধ নেই। তদ্রুপ সুরায়ে জুমারের ৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অবশেষে যখন তারা জাহান্নামের কাছে আসবে, তখন জাহান্নামের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করে দেয়া হবে’। তার সঙ্গেও এ হাদিসের বিরোধ নেই, কারণ হতে পারে, তার আগে আরো দরোজা আছে, যা খোলে দেয়ার কথা এ হাদিসে বলা হয়েছে।

১১. লাইলাতুল কদরের ফজিলত প্রমাণিত হয়। যে রাত এমন হাজার মাস থেকে উত্তম যার মধ্যে লাইলাতুল কদর নেই। যে ব্যক্তি এ রাতের বরকত থেকে মাহরুম হল, সে অনেক কল্যাণ থেকে মাহরুম হল।

১২. রমজানের প্রত্যেক রাতেই আল্লাহ তাআলার কতক মুক্ত বান্দা থাকে। তারাই মুক্তি পাওয়ার বেশি হকদার, যারা রোজা রাখে ও তা হেফাজত করে, যারা রমজানে কেয়াম করে ও তার মধ্যে ইহসান রক্ষা করে, আল্লাহর মহব্বত ও তার সওয়াবের আশায় এবং তার শাস্তির ভয়ে বেশি বেশি নেক আমল করে।

১৩. জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত এসব বান্দাদের জন্য আল্লাহর নিকট একটি করে কবুল দোয়ার ওয়াদা রয়েছে। তারা দু’টি কল্যাণপ্রাপ্ত হল : কবুল দোয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি।

১৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুসলমান হিসেবে প্রত্যেকের কর্তব্য রোজা ভঙ্গকারী বা রোজার সওয়াব নষ্টকারী বস্তু থেকে দূরে অবস্থান করা এবং আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে চোখ, কান ও জবানকে হেফাজত করা।

১৫. রোজাদার ব্যক্তির উচিত বেশি বেশি দোয়া করা। কারণ, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

Photo

Related posts

Leave a Comment