ফিরোজ !!

Photo: "মাছা জাহাঙ্গীর "

. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

আষাঢ় মাস, ৭ দিন ধরে প্রতিনিয়ত বৃষ্টি পড়ছে , কখনো অনেক জোরে কখনো ফিরফির করে । জমির খেতে . নিচু পুকুর গুলোতে মাছ হচ্ছে প্রচুর । কেউ কারেন্টের জাল দিয়ে , কেউ বা খলশানি , ভ্যার, দাউন বর্শি দিয়ে মাছ শিকার করছে ।

জাহাঙ্গীর উচ্চতা ৪ ফিটের মত (বেঁটে মানুষ) বয়স ২৮ বছর । তাঁকে গ্রামের মানুষ মাছা জাহাঙ্গীর বলেই জানেন ।

ঘটনা দিন রাতে একটা ছাতা , হারিকেন আর একটা ফাঁলা , মাছ রাখার খলোয় নিয়ে বাহীর হলেন । ৫০টি মত ভ্যার ২০০ হাত কারেন্ট জাল পেতে রেখেছেন জাহাঙ্গীর । "কানিয়া গাড়ি" ! পুকুরে পাড়ে তার এবং তার আশেপাশে সব ভ্যার আর জাল পেতে রেখেছেন । রাত ১১ টা, বর্ষার রাত, বাহীরে কারও থাকার কথা না । রাত ১১টা, তার পড় জাহাঙ্গীরের সঙ্গী হলেন জহুরুল নামের ২৪ বছরের ছেলে । দু'জন গ্রাম সম্পর্কে মামা ভাগ্নে । প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে । যে ভ্যারেই দেখছে শুধু কই মাছ আর কই মাছ । জালেও প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে । রাত ১টার আগেই ২০ থেকে ২৫ কেজি মাছ ধরা হয়ে গেছে ।

জহুরুলঃ মাছ গুলি বাড়িতে রেখে আসি মামা ?

জাহাঙ্গীরঃ তোর মামীকে না ডেকে, পাতিল বাহীরে আছে রেখে আয় । তাড়াতাড়ি আসিস !

জহুরুল চলে এল । ৫ মিনিট পর , জালে বড় মাছ আটকা পড়ার শব্দ শুনে জাহাঙ্গীর , মাছটি নিতে গেল । গিয়ে দেখে জালে মাছ নেই । আবার উঠে এলেন পুকুর পড়ে ।

আর জহুরুল পথ চেয়ে চেয়ে দখছেন ।

জাহাঙ্গীর ধারনা করলেন , মাছটি জাল ছিরে বাহীর হয়ে গেছে, ইস্ তাড়াতাড়ি গেলেই মাছটি পেতাম । আবার ও জোরে জোরে মাছ আটকা পড়ার শব্দ , এটা আর ও বড় মাছ হবে ।

জাহাঙ্গীর কাল বিলম্ব না করে দৌর দিলেন ,জালের কাছে । ফালাটি ফেলে রেখে । গেলেন পুকুড় পড়েই ।

একটি উচু স্হানে হারিকেন আর ছাতা রেখে নামলেন পানিতে ।

একি. . . . যেখানে হাটু পানি ছিল ,বুক বরাবর পানি কেন ?

মনে একটা ধাক্কা খেলেন ।

মাছের শব্দে আর কোন কথা না ভেবে এগিয়ে চলেছেন জাহাঙ্গীর । হঠাত্‍ . . . . পা যেন কারও সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দূরে গেল । পা দিয়ে এদিক ও দিক দেখল । কিছু পাওয়া গেল না , আবার ও এগুচ্ছে মাছের দিকে , আবার ও জোরে ধাক্কা খেয়ে পায়ের সঙ্গে আটকে গেল । সমস্ত শরীরটা ভয়ে, অতঙ্কে একে বারে অবশ হয়ে আসছে । যা হোক তা অনেক বড় ।

কি হতে পারে ?!!!?

ভয়ে ভয়ে পা দিয়ে জাগিয়ে নিয়ে হাত দিয়ে ধরতেই , সে বুঝতে পারল কারো হাত ধরছে ! ভয়ে থর থর কর কাঁপছে জাহাঙ্গীর ।

হাত ছেড়ে দিতে ও পারছেনা । পূরটায় ভাসিয়ে তুলে দেখল. . . . . .

লাশ !!!

ভয়ে জান বাহীর হবার উপক্রম , হালকা আলোয় শুধু বুঝতে পারল , জহুরুলের লাশ এটি । দৌড় দিয়ে রাস্তায় উঠে বাড়ির পথে দৌড় দিলো।

তার পড় জাহাঙ্গীরের মনে পড়তে শুরু করছেঃ

জহুরুলকে গত ৫ দিন ধরে , খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । কত যায়গায় যে খোঁজাখুঁজি চলছে, . . . . . . . এমন কি জাহাঙ্গীর ও খুঁজছে ।

সেই জহুরুল তার সঙ্গে একটু আগে মাছ ধরেছে ।অথচ তার কিছুই মনে পড়েনি ?. . .ভয়ে জাহাঙ্গীর দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো ।

পরেরদিন সকালে , জাহাঙ্গীর কে পাওয়া গেল - কানিয়াগাড়ি পুকুর পাড়ে , পড়ে থাকা অবস্তায় ।

সারাটি রাত বৃষ্টির পানি তার উপর দিয়ে গিয়েছে । গ্যান ফিরছে না ,হাত পা পূরটা ঠান্ডা । সবাই ধারনা করল ,ঠান্ডা লেগে গ্যান হারিয়ে ফেলেছে । হাতে পায়ে তেল মালিশ করা হচ্ছে । গ্যান ফিরে এল অনেক লোক তাকে ঘিরে রেখেছে । প্রথম কথা আমি বেঁচে আছি ?

সবাই তার ভিতু মুখটা পরখ করল । সান্তনা দিবার পর । কি হয়েছিল জাহাঙ্গীর ? পূর ঘটনাটি বর্ণনা দিল জাহাঙ্গীর ।

প্রথম সবাই দেখল , জহুরুলে মাছ রেখে যাওয়া , হ্যাঁ সত্যই পাতিল ভর্তি মাছ । জাহাঙ্গীর কথা মত ঐ স্হানে পাওয়া গেল জহুরুলের লাশ । প্রতিটি গ্রামের মানুষ ১ মাসের মত , বেশী রাতে ভয়ে বাহির হতে পারেনি ।

---------সমাপ্ত-------------

" ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করতে ভুলবেন না । "

২১-০৩-১৯৯৭
ফিরোজকে আমি বিশ্বাস করে ভুল করেছি। ওকে আমি ভুল করে খুব ভাল একজন বন্ধু মনে করেছিলাম। তাই ওকে দিয়েছিলাম আমার ভাইয়ের স্থান। আমার মাকে মা বোন কে বোন ডাকার অধিকার। ছোটবেলা থেকে ওকে আমি নিজের ভাইয়ের মত দেখেছি। কিন্তু আজ আমার কাছে সব পরিষ্কার। ও আমার ভাই নয়- ও আমার বোনার ঈজ্জত হরণ করেছে একা পেয়ে। যে বোন হেসে খেলে কাটাত ওর সময়- সে এখন কবরের ভেতর। আত্মহত্যা ছাড়া হয়ত কোন পথ খুঁজে পায়নি।

কদিন আগে সুমি আমাকে বলেছিল-
“ভাইয়া ফিরোজ ভাই আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকায়- আমার ভাল লাগেনা”
সেদিন আমি ওকে আদর করে বলেছিলাম –
“বোকা তোকে তো ও নিজের বোনের মত দেখে।”
আমি বিশ্বাস করিনি সেই ফিরোজ যাকে আমি নিজের ভাই মনে করেছিলাম সে রাস্তা থেকে সুমিকে তুলে নিয়ে গিয়ে……
না।। আর ভাবতে পারছিনা। ওকে আমি খুন করে ফেলবো..

২৭-০৩-১৯৯৭
মাত্র আমি ফিরোজকে লোহার রড দিয়ে মেরে মাথার পেছন দিকটা থেতলে দিয়েছি। এক বাড়িতেই শেষ বেচারা। ইচ্ছা ছিল ওকে কেটে টুকরা টুকরা করে ভাসিয়ে দেব বুড়িগঙ্গায়- কিন্তু এখন ঘেন্না লাগছে। এইত কদিন আগেও কোরবানির গোস্ত কাটার জন্য আমাকে ও হাত লাগাতে হত। নিজের হাতে কত মাংস কেটেছি। কিন্তু এই পশুটার দিকে তাকাতেই আমার খুব ঘেন্না হচ্ছে।

কি করা যায় একে? বস্তা ভরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেব নদীতে?
নাহ- ভুল হবে। কালকেই লাশ ভেসে ঊঠবে- তখন আমাকে ঠিক বের করে ফেলবে পুলিশ।
কাটাকাটির চিন্তা তো আগেই বাদ দিয়েছি।
মাটি চাপা ও দিতে পারতাম- কিন্তু এখন ঢাকা শহরে খালি যায়গা খুঁজেই পাওয়া যায়না। মাটি চাপা দেব কই? এর মাঝেই লাশের গা থেকে গন্ধ বের হওয়া শুরু হয়েছে। মাকে তিনদিন আগে রেখে এসেছিলাম আমার ফুফুর বাড়িতে। না হলে এখন মা এসব দেখলে ঠিক পাগল হয়ে যেতেন।
কি করি এখন?

২৮-০৩-১৯৯৭
টানা দুই দিন হতে চলল আমি কিছু খাইনি। লাশটাকে রেখেছি বাথরুমে ।
একটু আগে দুইবার বমি হয়েছে আমার। ফুফুর বাড়ি থেকে মা ফোন করেছিল। এখানে আসতে চায়। কিন্তু এখন এখানে আসলে আরেক কান্ড বাধবে। তাই এখন আসতে না করে দিয়েছি।
এখন অনেক রাত। এত রাতে শুধু একটা বাড়িতেই আলো জ্বলে। সেটা হল এলাকার নেতা সংসদ সদস্যের বাড়িতে। উনি সারা রাত জেগে দিনে ঘুমান। ভোটের সময় দেখা হয়। তারপর উনি হাপিস হয়ে সারা বছর ঘুমান। এভাবেই চলছে। আমি কি উনার কাছে যাব? গিয়ে বলব যে আমি একটা খুন করেছি?
পুলিশকে ফোন করেছিলাম। বিশ্বাস করেনি আমার কথা। তাই এখন আমাদের নেতাই শেষ সম্বল। আমি উনার কাছে গে্লাম……

১৫-০৪-১৯৯৭
আজ আমার দ্বিতীয় মিশন। কি মিশন জানেন? খুন করার মিশন। বিরোধী দল হরতাল দিয়েছে। তাই এখন একটা ইস্যু দরকার যাতে সরকারী দল ও বলতে পারে যে তাদের ও একজন মারা গেছে। আমাকে সেদিন রাতে নেতা চুপচাপ উনার বাসায় থাকতে বললেন। তারপর দিন থানা থেকে ওসি সাহেব আসলে উনি সব চেপে যান। বাসা থেকে লাশ উদ্ধার হয়। কিন্তু রেডিও টিভি পর্যন্ত খবর পৌছায়না।

দিন কয়েক এর জন্য আমাকে আরেক টা এলাকায় পাঠানো হয়। সেখানে আমি বেশ ভাল ছিলাম। চিকিৎসা করানো হল আমার। সুস্থ হলে আমাকে আমার প্রথম মিশনে পাঠাল নেতা। আমাকে এক জন পাতি নেতাকে খুন করতে হবে। খুনের পর লাশ ও গুম করতে হবে।

সেবার আমি ফাইভ স্টার নিয়ে গিয়েছিলাম খুন করতে। হাত অনেক কেঁপেছিল। মারার পর লাশ টা গুম করতে ও অনেক ঝামেলা হয়েছিল। তাই এবার আমাকে আমার পুরোনো অস্ত্র দেয়া হল। সেই লোহার রড। যেটা দিয়ে আমার প্রথম শিকার ছিল ফিরোজ। আমাকে শুধু মাথার পেছন থেকে বাড়ি মেড়ে মেরে ফেলতে হবে সেই পাতি নেতা কে।
নাহ-থুঃ ফিরোজ নামটা মনে আসতেই মুখে থু থু চলে আসল। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে খুব আসতে আসতে। সামনে বসে থাকবে খুনি।

অনেক ক্ষন ধরে বসে আছি।কিন্তু কেউ আসছেনা। কি হল- আমাকে একটা খুন করতে বলা হল- সামনে বসে থাকবে খুনি। লম্বা পাচফুট চার- কালো চেহারা। চুল কোঁকড়া। এমন একজন। ও নেতা আবার সবুজ শার্ট ও পড়ে আসবে। এইত আমাকে যা বলা হয়েছে। কিন্তু সে রকম তো কেউ আসছে না। যেখানে বসে আছি- পুরো এলাকা শুনশান। কখন যে আসবে সেই শিকার- আমি শিকারী তাকে খুন করবো কে জা্নে…

ওই ত দেখা যাচ্ছে শিকার আমার- সোনা তুমি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছ। ওই ত- বাইকে করে এসেছে। পাতি নেতা বলে কথা। ঐযে হাতে লাল স্কার্ফ- লাল স্যান্ডো গেঞ্জি- উচ্চতা মাপা যাচ্ছেনা। তবে মাথার চুল কোঁকড়া। আমাকে পেছন থেকে যেতে হবে। পেছন থেকে মাথার বামে এলাকায় জোড়সে একটা মারলেই বেচারা শেষ।

কিন্তু একি? ও যাচ্ছে কোথায়? আমাকে না বলা হল ও অনেক ক্ষন থাকবে। আমাকে তাহলে কি ব্লাফ দিল ওরা? এখন আমি কি করবো? আমি কি ফিরে যাব? চিন্তা করতে করতে ঘুরতে গিয়েই দেখি আমার পেছনে সেই পাতি নেতা।
দূর থেকে আমি তাঁর চোখ দেখিনি। এখন দেখতে পাচ্ছি। টকটকে লাল। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার হাতে লোহার রড টা ধরা। কিন্তু আমি মারার চিন্তা করার আগেই দেখতে পেলাম…

ফিরোজ !!!
একটা সাদাটে ঝলক- তারপর সব ফাঁকা…..

দুই দিন পর একটা লাশ নিয়ে মিছিল করছে দুই টা দল। পুলিশের সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় জখম হয়েছে শতাধিক। দুই দলের সব নেতা সেই লাশকে নিজেদের দলের লোকের লাশ বলে দাবি করছে। কিন্তু সেই লাশের আসল পরিচয় কেউ জানেনা…

Related posts