বন্ধু দিবস ও তারপর : কিছু পাতা অধ্যয় ২

বন্ধু দিবস ও তারপর:

আজ ঋৎরবহফংযরঢ় ফধু. তাই কলেজের প্রায় সবাই ফ্রেন্ডশীপ ব্যান্ড পরেছে কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, আমাকে তৈয়্যব একটা ব্যান্ড পরিয়ে দিলো, আরও একটা দিলো কাউকে দেওয়ার জন্য। আমি ভাবছি কাকে রেখে কাকে দেই, থাক পকেটেই থাক। আমি বসে থাকলাম সবাই খুব মজা করছে, বিশেষ করে মেয়েরা তো পারলে চার হাত পায়েই ব্যান্ড পরে। মনে পরে গেল একটা বছর আগের কথা, আমি, ফালা, শান্ত এবং আদনান সামি সবাই মিলে ফ্যান্টাসি কিংডমে কি মজাই না করছিলাম। তবে বাসায় ফিরতে রাত ৯টা, সেদিন তো ক্লাস, কোচিং সবই ফাকি দিয়েছিলাম তাই মারও খেতে হয়েছিল,ঐদিনটা কোনদিন ভুলতে পারব না। মাত্র একটা বছর পর কেউ নেই। সেই আনন্দ,বই হারিয়ে গেছে। আমরা ভাবতাম আমরা সবাই এক কলেজেই ভর্তি হবো কিন্তু ভাগ্যই আমাদের কে দূরে ঠেলে দিয়েছে আজ।

ক্লাস শেষে প্রতিদিনের মত রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি, এরি মধ্যে আমাদের ক্লাসেরই দুটি মেয়ে এদিকেই আসছে, আমার পাশে এসেই দাড়ালো বলল, তুমি মেনাফা তাই না, একটু একটু হাসছে দুজনেই।

আমি বললাম: হ্যাঁ তোমাদের নাম কি?
১ম: আমার নাম ইয়াসমীন আর ওর নাম হচ্ছে প্রিয়া, তোমার বাসা কোথায়?
: কলাবাগান, তোমাদের?
: আমাদের বাসা রায়ের বাজার। আমার আর ওর বাসা পাশাপাশিই।
প্রিয়া: “হ্যাঁপি ফ্রেন্ডশীপ ডে বলে একটা ব্যান্ড দিলো, ব্যান্ডটা লাল তাতে লিখা আছে ‘ইবংঃ ভৎরবহফ’ আমার পকেটে একটা ব্যান্ড আছে আমি ভাবছি কাকে দিবো। ভাবলাম প্রিয়াকেই দেই।
আমি: থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ বলে ব্যান্ড ওর হাতে দিলাম।
ইয়াসমিন: এভাবে দিলেতো হবে না পরিয়ে দিতে হবে। প্রিয়া হাত বাড়িয়ে দিলো, বাধ্য হয়ে ব্যান্ডটা ওর হাতে পরিয়েই দিলাম, আমার হাত থেকে আরেকটা ব্যান্ড খুলে ইয়াসমিনকে দিলাম। তারপর কিছুক্ষণ আরও কথা বলে চলে গেলো। কিন্তু, এদিকে আমার অবস্থা ঘামে পুরা শরীর চাপ চুপ করছে, মনে হয় তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড হয়ে গেছিল। আর একটু হলেই আগুন লেগে যেত।

প্রতিদিনের মত বাসায় ফিরে এলাম,
এরপর থেকে প্রতিদিন প্রিয়ার সাথে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে এবং পরে কথা বলতাম। যদিও আমাদের প্রথমে কথা হয় ইয়াসমিনের মাধ্যমে, কিন্তু এখন প্রতিদিন ইয়াসমিনের সাথে কথা না হলেও, প্রিয়ার সাথে একবার না একবার কথা হবেই, ও আগে বের হলে অমার জন্য অপেক্ষা করে আর আমি আগে বের হলে ওর জন্য অপেক্ষা করি। এখন আমি আগের কথা মনে করার সময়ই পাইনা। এভাবে তিন চার মাস চলে গেলো।

এদিকে আমার গধঃয বুঝতে সমস্যা হচ্ছে তাই প্রথমে ভেবেছিলাম কোচিং এ ভর্তি হবো কিন্তু আব্বু বলে কোন এক ভাল স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়। বেশী ভাল হবে। আমি তো কোন মতেই রাজি না। আজকে শুক্রবার ক্লাস নেই তাই মনটাও ভাল নেই মানে পড়া নেই। তাই কম্পিউটার এ গান শুনছি, তাহসানের গান, ‘দুরে তুমি দাড়িয়ে………..’, হঠাৎ আব্বুর আগমন, যা স্যারের বাসায় যা এখানে ঠিকানা দেওয়া আছে। নে।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। আবার স্যার, ভাবলাম আবার সেই গাইড? ওহ্ অসহ্য। রেডি হয়ে নিলাম, ভাড়াটা নিয়ে বের হলাম এবার কাগজটা খুললাম ঠিকানাটা দেখার জন্য ঠিকানাটা দেখেত খুশিতে এক লাফ, ইয়াহ

!http://3.bp.blogspot.com/_VA3jAk91_FM/TN0l9rXNfRI/AAAAAAAAAC8/4JHly61ReXE/s1600/madonna_pop_art.jpg

বেলায়েত স্যার, রায়ের বাজার, ঢাকা-১২০৭
মুক্তি সিনেমা হলের অপর পার্শ্বে
ফোন নম্বর ০১৯১১৭৭২৩৯৮, ৮/৫ বাসা নম্বর।

এতো খুশি কেন আমি? কারণ এতো প্রিয়াদের বাসার পাশেই। রিকশা নিয়ে রায়ের বাজারে ঠিকানা মত পৌছলাম, বাসার কলিং বেলে টিপ দিলাম একজন মধ্য বয়সি লোক দরজা খুলে জিজ্ঞেস করল : কে তুমি?
: জ্বি। আমি মেহেদী, আব্বু আমাকে….. ( এটুকু বলতেই)। ও মেহেদী ভিতরে এসো, কেমন আছ?
: ভাল
: আমিই বেলায়েত স্যার, আমি একাই থাকি এখানে।
আমি বুঝতে পারলাম যে স্যার একটু মেজাজী হলেও খুব ভাল মানুষ।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আবার বলতে শুরু করলেন তোমার কলেজ শুরু হয় কয়টায়?
: ১২ টা থেকে
: তাহলে তুমি ১০টার দিকে চলে আসবে এখান থেকেই পড়া শেষ করে কলেজে চলে যাবে চৎড়নষবস হবে নাত?
: না স্যার ঠিক আছে, সমস্যা নাই, আমি কালকে ১০টায় চলে আসবো।
: ঠিক আছে।
আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমি বাসার পথ ধরলাম, একটা রিকশাও পেয়ে গেলাম, খেয়াল করে দেখলাম সেই রিকশাওয়ালা কলেজে যাওয়ার সময় প্রথম দিন যে রিকশায় গিয়েছিলাম, আমিই প্রথমে জিজ্ঞাসা করলাম: কি ভাই তোমার নাম কি?
: আমারে কইতাছেন ভাই?
: কেন তুমি ছাড়া আর কেউ আছে নাকি এখানে?
: না ভাই অনেক সময় দেহা যায়, মোবাইলে কতা কইতাছে আর আমি এখান দিয়া উত্তর দিতাছি। একবার তো ভাই এক বেডায় নিউ মার্কেট থেকে উঠছে পরে হেতে কয় “কেমন আছ” মুই কইলাম “ভালা”, হেরপরে হেতে কয় “আজ বাসায় এসো”, মুই কইলাম “মোর জ্বালা! আমি আন্যের বাসা চিনিনি”? পরে হেতে আর কতা কয় না একটু পরে….. হেতে কয় তোমার মাথায় ডিষ্টার্ব আছে। তুমি একা একা কথা বলতে ছো কেন”? মুই তো চেইত্তা গিয়া রিকশা থামায় দেহি হেতে মোবাইলে কতা কয়। হেরপর একটা চরম শরম পাইছি
: ও আচ্ছা তাই বলো, তোমার নামটা কি?
: আমার নাম রহিম, রায়ের বাজার বেরি বান্দেই থাহি।
: তোমার পরিবার কোথায় থাকে?
: বাপরে তো দেহিই নাই, আর মায়ে দেশের বাড়িতে থাহে, মুই বুজবার পারি যে মায়ের খুব কষ্ট হয়, কিন্তু কিতা করতাম, মোর পেডি চলে না।…..
: লেখাপড়া করছ কিছু?
: পড়াশুনা করোনার বড় স্বাদ আছিলো কিন্তু সাদ্য ছিলোনা। তাই স্বাদটা শেষ মেষ আর পাইলাম না। ৩য় ক্লাস ফাইভ পাশ কইচ্ছি।
: ও তাই, সত্যি সবাই কপালের লেখা।
: আন্নের নাম কি ভাই?
: আমার নাম মেহেদী….. মেহেদী মেনাফা।
এমনভাবেই বললাম যেন আমি এ প্রশ্নের অপেক্ষাই করছিলাম। এবার রহিম বলল ভাই নামটা খুব কষ্টের, ভাই মুনাফা অর্থ কি জানেননি, মুনাফা অর্থ হচ্ছে লাভ।
: জ্বি ভাই।
এভাবে নামের বিশ্লেষণ করতে করতেই বাসায় চলে আসলাম। রহিমকে বলে দিলাম, কালকে ও যেন ১১:৩০ এর দিকে পারলে মুক্তি সিনেমা হলের সামনে থাকে। রহিম তো জবানই দিয়ে দিয়েছে যে বেঁচে থাকলে ও আমার জন্য অপেক্ষা করবেই করবে।

রাতে অনেক বার ঘুম ভেঙ্গে গেলো; কেমন যেন ঘুমটা পাতলা হয়ে গেছে। পরদিন সকাল ১০টার দিকে স্যারের বাসায় চলে গেলাম ঐখান থেকেই কলেজে চলে যাবো তাই একবারে ২ বেলা,সকাল-দুপুরের খাবার হজম করতে বাধ্য হলাম। পড়া শেষ করে মুক্তির সামনে দাড়ালাম একটু পরেই রহিম রিকশা নিয়ে হাজির।
: কি ভাই কিরাম আছেন?
: এইতো ভালই।

কথা বলতে বলতে কলেজে চলে আসলাম। প্রতিদিনের মত কলেজের সামনেই প্রিয়া দাড়িয়ে আছে। ইয়াসমিনও সাথে আছে। নামতেই প্রিয়া জিজ্ঞাসা করল।
: কি ব্যাপার এতো দেরি কেন?
: এইতো স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। তুমি কখন এসেছো?
: আধা ঘন্টা তো হবেই।
: ওহ হো সরি।
এতাক্ষণ ইয়াসমিন চুপ ছিলো এবার বলল,
: আমাকে কি দেখা যাচ্ছে না? চশমা লাগবে? ক্লাশ শুরু হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি চল।
আমি বললাম: সরি ইয়াসমিন।
তারপর ওরা দুজনে আগে চলে গেলো, পাঁচ মিনিট পর আমি গেলাম।

প্রতিদিন আমাদের এভাবে অনেক কথা হয় ক্লাসের শুরু তে একবার আবার ক্লাসের শেষে প্লাস হাফ টাইমে তো আছেই ইড়হঁং সরহঁঃব, এভাবেই চলতে থাকলো আমার কলেজ জীবন, দেখতে দেখতে পার হয়ে গেলো আরও তিনটা মাস।

 

 

.: কিছু পাতা । মেহেদী মেনাফা :.

একটি ভালবাসার গল্প

edited

“কিছু পাতা”উপন্যাসটি আমার জীবনের কিছু সত্য এবং কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে লেখা। এটাই আমার জীবনের প্রথম লেখা উপন্যাস, তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

(if you can’t read cause of Bangla text, you can try image format at this link http://www.black-iz.com/vinnokobor/kisupata.html) (Also you can download this book from this link @ http://www.black-iz.com/kp/kisupata.doc)

Muhammad Mehedi Menafa at facebook : www.facebook.com/muhammadmehedimenafa

Related posts