স্বাস্থ্য পরিচর্যা ::::: মে – ’১২

এইচআইভি-এইড্স :

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

জরুরী

ওলীউর রহমান

 

এইচআইভি-এইড্স বর্তমান বিশ্বে একটি বিরাট সমস্যা। কতিপয় ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের কারণে এইচআইভি মানব দেহে সংক্রমিত হয়। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এর কার্যকর প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেননি। তাই এইচআইভির সংক্রমণ থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকার জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই।

এইচআইভি (HIV) হলো human immuno deficiency virus অর্থাৎ এমন একটি ভাইরাস – যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া এ ভাইরাসটি রক্তের সাদা কোষ (সিডি-৪ বা টি সেল) নষ্ট করে দেয়। যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর হয়ে পড়ে।

এইচআইভি (HIV)-তে আক্রান্ত হওয়ার চুড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে এইড্স (AIDS) রোগে আক্রান্ত হওয়া। AIDS হলো acquired immuno deficiency syndrom। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতির  লক্ষণ সমষ্টিকে AIDS বলে। যখন কোন মানুষ এইড্স রোগে আক্রান্ত হয়, তখন তার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এ সময় সবচেয়ে দুর্বল জীবাণুকেও প্রতিরোধ বা মুকাবিলা করতে পারেনা। তখন ঐ ব্যক্তির শরীরে বিভিন্ন রোগ জীবাণু খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এ সময় ঐ ব্যক্তির শরীর ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এইচআইভি মানুষের শরীরের বাইরে অন্য কোন প্রাণীর শরীরে বাস করতে পারেনা বা কর্মক্ষম থাকেনা। মানুষের শরীরের চারটি তরল পদার্থে অর্থাৎ রক্ত, বীর্য, যৌনিরস ও বুকের দুধে বাস করে। তাই এইচআইভি আছে এমন ব্যক্তির সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হলে বা এমন ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে এইচআইভি সংক্রমিত হতে পারে। সুঁই-সিরিঞ্জ ভাগাভাগি করে নেশা গ্রহণের মাধ্যমে এবং ঐওঠ আক্রান্ত মা থেকে শিশুতে গর্ভাবস্থায়, প্রসবকালে বা বুকের দুধ পানের মাধ্যমে এইচআইভির সংক্রমণ ঘটতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮০ ভাগ এইচআইভি সংক্রমিত হয় যৌন মিলনের মাধ্যমে।

HIV এবং AIDS একই বিষয় নয়। বরং এইচআইভি হলো ভাইরাস আর এইডস হলো syndrome বা এইচআইভি ভাইরাসজনিত সংক্রমণের অনেকগুলো লক্ষণ ও চিহ্নের সমষ্টিগত অবস্থা। কোন মানুষ এইচআইভি  সংক্রমণের পর যখন এইড্সের পর্যায়ে চলে যায়, তখন তার শরীরে বিভিন্ন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পার্ েযেমন –  এক সপ্তাহের অধিক দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, ঘন ঘন জ্বর ও রাতে শরীর ঘামা, হঠাৎ করে শরীরের ওজন প্রায় ১০ ভাগ কমে যাওয়া, দীর্ঘদিন থেকে ক্ষুধামন্দা ভাব থাকা, দীর্ঘদিন যাবত শুকনো কাশি ও নিউমোনিয়া, দানা কুচকী ও বগলের লিম্বগ্লান্ড ফুলে যাওয়া, জিহবা, মুখগহবর ও গলায় সাদা দাগ, শরীরের চামড়া বা চামড়ার নিচে অথবা মুখে, নাকে ও চোখের পাতায় বাদামী, বেগুনী ও গোলাপী ফিকে লাল দাগ দেখা যাওয়া, মানসিক অবসাদ, স্মৃতিশক্তি লোপ, স্নায়ুজনিত অসুস্থতা, সারা শরীরে চুলকানী ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

২০০৮ সালের বিভিন্ন জরিপ থেকে দেখা যায় যে, ইতিপূর্বে এইডসে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে তিন কোটির বেশী মানুষ মারা গেছে এবং সারাবিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ এইড্সে আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিন সারাবিশ্বে ৬,৮০০ জন মানুষ নতুন করে এইচআইভি দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে এবং ৫,৭০০ জন মানুষ এইড্সে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।

বিশ্বের সর্বাধিক এইচআইভি সংক্রমিত দেশ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এখানে এইড্স আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭ লক্ষ। আমাদের দেশে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭,৫০০ জন। তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এইচআইভি মহামারী পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধ কোটি।

সীমান্ত দিয়ে বিভিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করছে এইচআইভি আমাদের দেশে। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ এইচআইভি আক্রমণের মারাতœক ঝুঁকিতে রয়েছে। এ জন্য এখন থেকেই আমাদেরকে সজাগ হতে হবে এবং সর্তক হতে হবে।

আজ থেকে ৩১ বছর পূর্বে অর্থাৎ আশির দশকের প্রথমদিকে (১৯৮১ ইং) আমেরিকার লসএঞ্জেলসে এইচআইভি সনাক্ত করে তার নামকরণ করা হয়। অতঃপর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে এইচআইভির পরিচিতি এবং সেই সাথে আতংক।

এইড্স শুধু একটি রোগ নয়, বরং বলা যায়, মৃত্যুর অপর নাম এইড্স। এ কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে এইচআইভি-এইড্স সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভে সক্ষম হয়। এ পর্যন্ত কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এতো বেশী মানুষ মারা গেছে বলে জানা যায়নি।

অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও অবাধ যৌনাচারের ভয়াবহ পরিণতি হলো এইচআইভি-এইডস। এ কারণে ১৯৮১ সালে এইচআইভি ধরা পড়ার পরে বিশ্বের অনেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী  ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার পরামর্শ দেন।

ইসলামে অবাধ যৌনাচার তথা বিবাহ বহির্ভূত যৌন আচরণকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এর জন্য মৃত্যুদন্ড শাস্তি ধার্য করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈলের ১৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে – “হে মুমিনগণ! তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, এটা অশ্লীলতা ও মন্দ পথ।”

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সেই মন্দ পরিণতি আজ আধুনিকতার নামে নগ্ন ও উলঙ্গ সংস্কৃতির লালনকারীদের জন্য এইচআইভি-এইড্সের রূপে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হাজির হয়েছে। এ কারণে এইচআইভি এইডসের বিস্তার রোধে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলে অবাধ যৌনাচার, অশ্লীলতা ও নগ্নতা রোধে এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন চারিত্রিক সংশোধন ও সার্বিক সতর্কতা।

 

Related posts

3 Thoughts to “স্বাস্থ্য পরিচর্যা ::::: মে – ’১২

  1. kausar ahmed

    valo tobe mindbogglingly na . ja kina Thanovi (RH) ba Rasid Ahmed Ganguhi (RH) er moto chittakorsok lekhuni .

  2. মারুফ আহমেদ

    সত্যি এখন পর্যন্ত এদেশের মানুষের সচেতনতার জন্য রোগটি মহামারী আকার ধারণ করতে না পারলেও আকাশ সংস্কৃতির দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তরুণদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে যার ইহকালীন ও পরকালীন ফলাফল যে অনেক খারাপ হবে সন্দেহ নেই।আল্লাহ আমাদের সহায় হোন যেন আমরা ঈমাণী হালতে থাকতে পারি।

  3. মারুফ আহমেদ

    সত্যি এখন পর্যন্ত এদেশের মানুষের সচেতনতার জন্য রোগটি মহামারী আকার ধারণ করতে না পারলেও আকাশ সংস্কৃতির দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তরুণদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে যার ইহকালীন ও পরকালীন ফলাফল যে অনেক খারাপ হবে সন্দেহ নেই।আল্লাহ আমাদের সহায় হোন যেন আমরা ঈমাণী হালতে থাকতে পারি

Leave a Comment