১৪ জানুয়ারি, ২০০৯ তারিখটা কি মনে আছে সাকিবের?

১৪ জানুয়ারি, ২০০৯ তারিখটা কি মনে আছে সাকিবের? সেই প্রথম বলতে গেলে একাই হারিয়ে দিয়েছিলেন বড় একটি দলকে। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার ক্যারিয়ার-সেরা ইনিংস!’ মনে না থাকার প্রশ্ন ওঠে কেন, ওই ম্যাচটি তো সাকিবের মনে চিরস্থায়ী জায়গা পাওয়ার কথা।
তার পরও প্রশ্নটা উঠছে, কারণ সেটি ছিল সাকিবের কেবলই শুরু। পরের তিন বছরে প্রায় একাই দলকে জেতানো বা বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে নায়ক হওয়াকে অনেকটা নিয়মই বানিয়ে ফেলেছেন। খেলেছেন মনে রাখার মতো আরও অনেক ইনিংস। তিন বছর আগে মিরপুরে শেষ বিকেলের মরে আসা আলোর ওই স্মৃতিগুলো তাই একটু চাপা পড়ে যেতেই পারে। সাকিবের এত এত স্মরণীয় পারফরম্যান্সের ভিড়ে ওই ম্যাচটাকে আলাদা করে মনে থাকতে নাও পারে অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর। তবে আজ ওই ম্যাচের স্মৃতি দোলা দিয়ে যাবেই। দলের সবচেয়ে বড় ভরসা সাকিব অনেক দিন ধরেই, বড় ম্যাচে তো আরও বেশি। কিন্তু প্রত্যাশার চাপ বা চাওয়া আজ একটু বেশিই থাকবে। প্রতিপক্ষের নাম যে শ্রীলঙ্কা, ম্যাচটিও যে ফাইনালে ওঠার লড়াই!
স্মৃতির ডানায় ভর করে ফিরে যাওয়া যাক ২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ জয়টা এসেছিল আজকের মতো প্রেক্ষাপটেই। সমীকরণটা ছিল বরং আরও বেশি কঠিন। প্রথম ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে যাওয়ায় ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রয়োজন ছিল বোনাস পয়েন্টসহ জয়। ঘন কুয়াশার কারণে ৩১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে তিন বল বাকি থাকতেই ১৪৭ রানে শেষ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ। বোনাস পয়েন্ট পেতে বাংলাদেশকে জিততে হতো ২৪.৫ ওভারের মধ্যে। সাকিব যখন উইকেটে গেলেন, বোনাস পয়েন্ট তো বহু দূর, জয়টাকেই মনে হচ্ছিল অসম্ভবের কাছাকাছি। ১১ রানে তামিম-জুনায়েদ-মুশফিককে হারিয়ে তখন কাঁপছে বাংলাদেশ। তবে সাকিব যেন সেদিন লঙ্কাজয়ের পণ করে নেমেছিলেন। মুরালিধরন-মেন্ডিস-কুলাসেকারাদের উড়িয়ে দিয়ে ৬৯ বলে অপরাজিত ৯২। ২৩.৫ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ!
আপাত অসম্ভবকে সম্ভব করার সেই শুরু সাকিবের। ওই ম্যাচের পর ভারতের বিপক্ষে গত ম্যাচ পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ, সর্বোচ্চ সাতবার ম্যাচসেরা সাকিব। জিম্বাবুয়ে-আয়ারল্যান্ড-হল্যান্ডকে বাদ দিয়ে পরিধিটাকে ছোট করলে বড় দলের বিপক্ষে জয় ১১টি, সাকিব ম্যাচসেরা পাঁচটিতেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডমিনিকায় ছিল ৬৫ রান ও ১ উইকেট। নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাইয়ের সিরিজে দুবার ম্যাচসেরা, এক ম্যাচে ৫৮ রান ও ৪ উইকেট, আরেক ম্যাচে ১০৬ রান ও ৩ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত অক্টোবরে ৪ উইকেট, চট্টগ্রামের যে ম্যাচে ‘৫৮’-এর প্রতিশোধ নিয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ৬১ রানে গুটিয়ে দিয়ে। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে গত ম্যাচে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাঁচজনের চল্লিশোর্ধ রান ছিল বাংলাদেশের ইনিংসে। কিন্তু রান-বলের টানাপোড়েন নিমেষেই উড়িয়ে দেওয়া ৩১ বলে ৪৯ রানের ইনিংসে ম্যাচসেরা সাকিব!
সব মিলিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১২ বার ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন সাকিব, এর মধ্যে সাতবারই বড় দলের সঙ্গে ম্যাচে। বাংলাদেশের হয়ে বড় দলের বিপক্ষে তিনবারের বেশি ম্যাচসেরা হওয়ার কৃতিত্ব নেই আর কারও। তিনবার করে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও মাশরাফি বিন মুর্তজা—একসময় বাংলাদেশের বড় জয় মানেই ছিল যে দুজনের অসাধারণ নৈপুণ্যের ফসল। সেই দায়িত্ব এখন বলতে গেলে একাই পালন করে যাচ্ছেন সাকিব।
আর ম্যাচসেরা তো স্রেফ ম্যাচের নায়কের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। স্বীকৃতি না পাওয়া অনেক ম্যাচেও ছিল সাকিবের বড় অবদান। বাংলাদেশের স্মরণীয়তম দুই সিরিজ জয়েই তো ম্যান অব দ্য সিরিজ সাকিব। নিউজিল্যান্ডকে ধবলধোলাইয়ের সিরিজে দুই দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ রান ও সর্বোচ্চ উইকেট ছিল তাঁর। সিরিজ-সেরা হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাইয়ের সিরিজেও। এই দুই সিরিজে দলকে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন তিনি! সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্য, বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়কও সাকিব। নেতৃত্ব দিয়েছেন সাতটি বড় জয়ে, হাবিবুল বাশার পাঁচটিতে। সব মিলিয়ে কমিক বই বা রুপালি পর্দা থেকে ‘সুপারম্যান’ যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবির্ভূত হয়েছেন বাস্তব চরিত্র হয়ে।
তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচ দিয়েই সাকিবের ‘সুপারম্যান’ হয়ে ওঠার শুরু। সমীকরণটা আজ তুলনায় সহজ হলেও কাজটা সহজ নয় মোটেও। সাকিব কি পারবেন আরেকবার ‘সুপারম্যান’ হতে!

Related posts

Leave a Comment