সতর্ক হুঁশিয়ারী ::::: এপ্রিল – ’১২

পর্দা ফরজ বিধান :

পরিত্যাগ করা

যাবে না

আলেমা সাবেরা মাহবূবা

 

হাইকোর্ট এক সুয়োমোটো আদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে মেয়েদের বোরকা পরতে বাধ্য করাকে নিষিদ্ধ করেছেন। এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, দেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিসে মহিলা ও মেয়েদের বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না। একই সঙ্গে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেঅংশ নিতে মেয়েদেরকে বাধা না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এরপর হাইকোর্টের উক্ত নির্দেশের প্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ মর্মে একটি পরিপত্র জারী করেছে যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা বা ধর্মীয় পোষাক পরতে বাধ্য করা যাবে না এবং ছাত্রীদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণেও বাধা দেয়া যাবে না। পরিপত্রে আরো বলা হয়, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাইকোর্ট ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উক্ত ফরমানে মেয়েদের পোষাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার কথাকে চিন্তা করে তাদের মৌলিক অধিকারের বিবেচনায় বিষয়টি দেখা হয়েছে। কিন্তু এখানে এর চেয়েও সীমাহীন বড় বরং যার সাথে কোন কিছুরই তুলনা হয় না – এমন বিষয় চলে আসে, তা হচ্ছে – এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় মূল্যবোধ বা ইসলামের হুকুম। ইসলামের কোন বিধানের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ কোন আইন কোন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে চলতে পারে না বা তা করা কিছুতেই সঙ্গত নয়। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইসলাম পরিপন্থী কোন আইন করা হবে না বলে ইতোপূর্বে ঘোষণা করেছেন।

ইসলামের বিধানে নামায-রোযার মতই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হুকুম হচ্ছে মেয়েদের জন্য পর্দা পালন করা। মেয়েদেরকে পর্দা মেনে চলতে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ (সা.) মেয়েদের পর্দা পালনের জন্য জোরালু আদেশ করেছেন। তাই পর্দা পালন করা মুসলিম মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক ফরজ বিধান।

ফরজ হুকুমে কোন ছাড় হয় না। তাই নামায-রোযায় যেমন কোন অবহেলার সুযোগ নেই, তেমনি পর্দা পালনে শৈথ্যিল্যের কোন অবকাশ নেই।

তবে দুঃখজনক যে, শয়তানের ওয়াসওয়াসায় অনেকেই ঠিকমত নামায-রোযা আদায় করেন না। যদ্দরুণ তারা জাহান্নামের কঠিন শাস্তির আওতায় পড়ে গিয়েছেন। তেমনি শয়তানের প্ররোচণায় পড়ে অলংঘনীয় ফরজ বিধান পর্দাকে অনেক মেয়ে লংঘন করে চলেন। যার কারণে তারা জাহান্নামের কঠোর শাস্তির ভাগী হচ্ছেন। এমতাবস্থায় বেনামাযীগণকে নামাযের দিকে ডাকা এবং মেয়েদেরকে পর্দার প্রতি আহবান করা মুসলমানদের দাওয়াতী ফরীজা। বিশেষ করে নিজ আওতাধীন লোকদের শরীয়তের এ বিধানসমূহ প্রতিপালনে পাবন্দ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজে আইন কর্তব্য।

ইসলামী শরীয়তের সেই নির্দেশের কারণেই মা-বাবা সন্তানদেরকে নামায-রোযার তাকীদ করেন এবং মেয়েদেরকে পর্দায় অভ্যস্ত করতে সচেষ্ট হন এবং সেই ভিত্তিতেই ছেলে-মেয়েদের যিম্মাদারী গ্রহণকারী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভিভাবকের প্রতিনিধিত্ব করে ছাত্র-ছাত্রীদের আমল-আখলাক, নামায-রোযা, পর্দা ইত্যাদি পালনে তদারকী করে। বিশেষ করে ইসলামী ভাবধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দেশের সকল মাদরাসা একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দ্বীন পালনে তরবিয়্যাত প্রদান করে থাকে। আর বিশেষতঃ মহিলা মাদরাসাগুলোতে ছাত্রীদেরকে বাইরে চলাফেরার ক্ষেত্রে হিজাব-বোরকা ব্যবহার তথা পূর্ণ শরয়ী পর্দা পালনের নির্দেশ প্রদান করা হয়। মহিলাদের ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র মহিলা মাদরাসাগুলোর জন্য এটা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ – তা বলার অবকাশ রাখে না।

এমতাবস্থায় হাইকোর্ট ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বোরকা বাধ্যতামূলক না করার নির্দেশ বাস্তবায়ন করে মহিলা মাদরাসাগুলো থেকে পর্দা ব্যবস্থা উঠিয়ে দিলে, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে – তা কি একটুও ভাবা হয়েছে? পর্দা ও নামায-রোযাতো একই পর্যায়ের শরয়ী বিধান। এমনি করে যদি মাদরাসাগুলো থেকে নামায-রোযা উঠিয়ে দেয়ার ফরমান জারী করা হয়, তাহলে এদেশের সন্তানরা দ্বীন প্রতিপালন শিখবে কোথা থেকে? আর তখনতো বে-আমল আলেমই তৈরী হবে, যারা শরীয়তের পাবন্দ হবে না। তাতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সার্থকতা থাকে কোথায়?

ভাবতে শিউরে উঠতে হয় যে, আজ যে সকল মহিলা মাদরাসার মেয়েরা বাধ্যকতামূলকভাবে বোরকা পরে পর্দা সহকারে যাতায়াত করে লেখাপড়া করছে, আর তাতে তারা লম্পটদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে নিজেদের ইজ্জত-আব্রু হিফাজত করার প্রয়াস পাচ্ছে। যার প্রকাশ্য সুফল এই যে, আজ পর্যন্ত কোন পর্দানেশীন মহিলা মাদরাসায় ইভটিজিং নামের লাম্পট্যপনার হিংস্র ছোবলের কথা শোনা যায়নি। যদি এসব মাদরাসার পর্দা ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়া হয়, তাহলে বখাটে নেকড়েদের কবলে পড়ে মাদরাসার ছাত্রীদের সর্বনাশের দ্বারই কেবল উন্মুক্ত হবে। এর দায় বহন করবে কে?

প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা রক্ষার জন্য নিয়ম-বিধি প্রবর্তন স্বতঃসিদ্ধ রেওয়াজ। সেই ভিত্তিতে শুধু মাদরাসা কেন, যদি কোন সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও শিক্ষাঙ্গনে শালীনতা আনয়নে মেয়েদের জন্য পর্দাসমৃদ্ধ শালীন পোষাকের নিয়ম প্রবর্তন করে, তাকে কোন যুক্তিতেই প্রত্যাখ্যান করা যায় না।

এ সত্যটিই প্রতিফলিত হয়েছে শিক্ষাঙ্গনে বোরকা ব্যাধ্যতামূলক না করার সরকারী নির্দেশের পরও চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের হিজাব পরার বাধ্যতামূলক নিয়ম বহাল রাখার প্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের জবাবে প্রদত্ত উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক মাহবূব উল্লাহর ভাষ্যে। তিনি বলেন, “বোরকা নয়, আমরা কিছু ড্রেস কোড দিয়েছি। শালীনতার স্বার্থে ছাত্রীদের এ ড্রেস কোড অনুসরণ করতে বলা হয়।”

বলা বাহুল্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ড্রেস কোডকে তাদের নিজস্ব ব্যাপারই গণ্য করা হয়। এতে কোন কিছু বাধ্যতামূলক করা হলে কেউ আপত্তি তোলেন না। যেমন, ক্যাডেট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তেমনি দেশের প্রায় সকল স্কুলের নির্ধারিত ড্রেস কোড বা ইউনিফর্ম রয়েছে। সেই ড্রেস পরে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে যেতে হয়। এ নিয়ে কেউ উচ্চবাক্য করেন না। এমনকি রাজধানীর নামকরা ভারতেশ্বরী হোমস স্কুলে মেয়েদের হাঁটুশর্ট স্কাট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে – যা ইসলামপরিপন্থী ও অর্ধনগ্নতার শামিল। কিন্তু ড্রেস কোড বলে কেউ কিছু বলছেন বা তা তা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। তাহলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্দাবান্ধব শালীন পোষাক ড্রেস কোড নির্ধারণ করলে কেন আপত্তি তোলা হবে এবং তাকে নিষিদ্ধ করা হবে?

আজ পৃথিবীর বিভিন্ন অমুসলিম রাষ্ট্রে মুসলিম মেয়েরা হিজাবের জন্য নিঃগৃহিত হয়ে পর্দা পালনের ধর্মীয় মৌলিক অধিকার আদায়ে সোচ্চার হচ্ছেন। ফ্রান্স, জার্মানী, বেলজিয়ামসহ পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বিভিন্ন বিধর্মী দেশে মুসলিম মেয়েদের স্কার্ফ পরে স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছেন বিধায় সেসব মুসলিম মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরে যাওয়ার অধিকার পেতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিশ্বপরিস্থিতিতে ৯০ ভাগ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের এদেশে মুসলিম মেয়েদের হিজাবের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা প্রদর্শনই কাম্য ছিল এবং মাঝে-মধ্যে এদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিবিশেষ কর্তৃক হিজাবকে কটাক্ষ করার বা হিজাব পরিহিতা মেয়েকে লাঞ্ছিত করার যে সংবাদ বের হয় – তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাকে নিষিদ্ধ করা-ই যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু তা না করে উল্টো বোরকা বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে নির্দেশ জারী আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যই বলতে হয়।

মাননীয় হাইকোর্ট ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রেখেই আমরা ইসলামপরিপন্থী ও অযৌক্তিক উক্ত নির্দেশের প্রতিবাদ করছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে এদেশের মুসলিম মেয়েদের পর্দা পালনে সহযোগিতা করার আবেদন জানাচ্ছি। সেই সাথে ইভটিজিং ও বখাটেপনার মূলোৎপাটনে এবং মেয়েদের ইজ্জত-সম্ভ্রমের হিফাজতকল্পে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য শালীনতাপূর্ণ পর্দাসম্মত পোষাক বাধ্যতামূলক করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। আর পর্দানেশীন কোন মেয়ে যাতে কোন প্রতিষ্ঠানে কটুক্তি ও নিগৃহের শিকার না হয় – সে জন্য মাননীয় হাইকোর্ট ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিধানিক নির্দেশ কামনা করছি।

Related posts

One Thought to “সতর্ক হুঁশিয়ারী ::::: এপ্রিল – ’১২

  1. Miki

    Well put, sir, well put. I’ll cetarnliy make note of that.

Leave a Comment