অবশেষে পরিচিত ঢাকায় আমি:
চোখ খুলে দেখি সেই ঢাকা। বাস থেকে নেমে পরলাম মালিবাগে। নেমে প্রথমেই প্রিয়ার মোবাইলে কল দিলাম। কিন্তু ব›ধ। আবার কল করলাম কিন্তু আবার সেই একই উত্তর ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এ মূহুর্তে …..’ দোকানদার ব্যস্ত হয়ে গেছে ‘তাড়াতাড়ি করেন ভাই।’ তাই আর ফোন করলাম না।
তারপর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, ভাবলাম বাসায় একটা ফোন করে পৌছার সংবাদ দেই।
: হ্যাঁলো।
: কে মেহেদী?
: হ্যাঁ। আম্মু, ভাল আছ?
: তুই কোথায়?
: আমি ঢাকায় পৌছে গেছি মালিবাগে।
: তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
: হ্যাঁ আসছি।
: কেমন আসিছ?
: ভাল। আম্মু, দোকান থেকে ফোন করেছি বাসায় এসে কথা বলব।
আবার একবার প্রিয়াকে ফোন দিলাম কিন্তু ব›ধ বুঝতে আর বাকি নাই প্রিয়া ম্যাডাম খুব রাগ আমার উপর। আবার কি শাস্তি দেয় আল্লাহ ভাল জানে। ভাবলাম মৌচাক মার্কেটে সাইবার ক্যাফে যাই যায়ে পরীক্ষার রেজাল্ট দেখেই বাসায় যাই। হঠাৎ পিছ থেকে কি যেন আমার মাথায় একটা বারি দিল, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, কিছুক্ষণের মধ্যে পৃথিবীটা অ›ধকার হয়ে গেল আমার কাছে। কিছু বুঝার আগেই আমার সারা শরীর অবশ হয়ে গেল, শুধুই বাস-ট্রাক আর গাড়ির হর্ন শুনতে পাচ্ছি সাথে কিছু মানুষের হৈ চৈ তারপর, তারপর আমার কি হয়েছে আমার কিছুই মনে নেই।
দুদিন পর আমি চোখ খুলে দেখি, আম্মু বসে আছে আমার সামনে। হাতে তজবি। মুখে বির বির করে জিকির করছে। চোখে পানি। কাঁদছে। এখনও বুঝতে পারছি না। আমি কোথায়? আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
আম্মা: মেহেদী বাবা তোর জ্ঞান ফিরেছে?
চারিদেকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই আমাকে দেখতে এসেছে নানু, নানা, খালা, মামা, ফুফু, চাচা। সবাইকে একসাথে আমি আগে কখনও দেখি নাই তারপরও আমি আরও এক জনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি।
আমি কমফোর্ট হাসপাতালের ৫৩০ নম্বর কেবীনে। হাত প্লাস্টার করা। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও দশ দিন লেগে যাবে। তবে ঐদিন আসলে কি ঘটছে তা কেউ ঠিক মত বলতে পারে নাই তবে বড় কোন দূর্ঘটনা থেকে যে বেচে গেছি তা আর বুঝতে বাকি নাই। সবাই মিষ্টি নিয়ে আসছে, আমাকে দেখতে, অবাক হবার কিছুই নাই। কারণ আমার পরীক্ষার মিষ্টি। শেষ মেষ আমার পরীক্ষার জবংঁষঃ যে এতো টহপড়সসড়হ হবে তা আমি ভাবতেও পারি নাই। অ+ পাইনি আবার ৪.৫ ও পাইনি। পেয়েছি ৪.৯৪। সবাই আফছোছ করছে একটুর জন্য অ+ মিস। বেচারা।
আম্মুর কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে প্রিয়ার জবংঁষঃ জানতে ফোন দিলাম কিন্তু সেই একই উত্তর ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটা….।’
প্রিয়াকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম, প্রিয়ার মোবাইল বন্ধ কেন? প্রিয়া কেমন আছে? ভাল আছে তো? প্রিয়া তুমি কোথায় তুমি? হঠাৎ মাথার পিছনে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম। চিৎকার করতে বাধ্য হলাম, আম্মু….. আম্মু।
চোখ খুলে দেখি আকাশে নতুন সূর্য, নতুন আলো, কিন্তু আমার মাথায় এখনও ব্যথা করছে, আমি বুঝতে পারছি যে আমার মাথায় কঠিন আঘাত পেয়েছি, সব সময়ই একটা ব্যথা অনুভব করছি, মাঝে মধ্যে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয় তখন আর চিৎকার করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকে না। সারাদিন শুয়ে শুয়ে ভাবি, আমি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারব তো? আবার প্রিয়ার দেখা পাব তো? কবে আমি এখান থেকে মুক্তি পাব?
দুপুরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি অবশ্য কয়টা বাজে তা জানি না, সম্ভবত দুইটা, তিনটা বাজে। আম্মু আমার কেবীনের দরজা উকি দিয়ে বলল মেহেদী দেখ তোকে দেখতে কে এসেছে, আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই “ প্রিয়া” আবার কে, আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমার কেবীনে ঢুকতেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ প্রিয়া আসে নাই এসেছে ঢাকাইয়া ফাহাদ, ফালা আর শান্ত আমার এক সময়ের ক্লোজ ফ্রেন্ড। প্রথমেই ফাহাদ বলতে শুরু করল: কিরে তুই হালায় রাস্তাবি পার হইবার পারোছ না।
উত্তরটা আমি দেওয়ার আগেই ফালা দিয়ে দিল,
: আরে ধুৎ ফাউ প্যাচাল। এখন কেমন আছিস তুই?
আরও অনেকক্ষণ কথা বলার পর ফালা, ফাহাদ, শান্ত চলে গেল। যাওয়ার সময় ফালাকে বলে দিয়েছি আমার ঝওগ টা উঠাতে।
(পরদিন বিকালে) ফালা আসছে সাথে আমার হারায় যাওয়া ঝওগ টাও নিয়ে আসছে, অনেক দিন হয়ে গেছে প্রিয়ার সাথে কথা হয় না। তাই ফালার সেটে ঝওগ টা ভরলাম, ভাবলাম প্রিয়াকে কল করি কিন্তু তার আগেই দুইটা এস এম এস এসে হাজির। দুইটা এস এম এস-ই প্রিয়ার নাম্বার থেকে।
(প্রথমটা) উবধৎ গবযবফর, কবসড়হ ধংড়? ধসধশব াঁষব মবষব? গড়নরষব ড়ভভ শড়ৎব ৎবশযবংড় শবহড়? ঞড়নব শর ঃঁসর ? ও ধস ধিরঃরহম.
(দ্বিতীয়টা) গবযবফর ধসধৎ ঝগঝ ধৎ ধহং. ফবড় ঢ়ষু. ঃড়সধৎ শর যড়ুবংব? ঞঁসরশর াঁষব মবষব?
তারপর…….. তার আর পর নেই……..
ফালু চলে গেল। শুয়ে শুয়ে ভাবছি। আর মাত্র একটা দিন আমাকে বন্ধি থাকতে হবে তারপরতো আমি আবার মুক্ত। কালকে ঈঞ ঝপধহ করতে হবে। ফলাফল ভাল হলেই বাসায় চলে যাব।
(পরদিন সকাল বেলা)
সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, সকাল হওয়ার সাথে সাথেই ঈঞ ঝপধহ করতে গেলাম, বিকালেই জবঢ়ড়ৎঃ দিবে।
সকাল ১০টা বেজে গেছে এখনও বাসায় যেতে পারলাম না, বাসায় যাওয়ার জন্য আমার ভিতরটা যেন জ্বলে পুরে যাচ্ছে। শেষ মেষ বিকাল ৫টায় বাসায় এসে পৌছালাম। বাসায় এসেই প্রথমে আমার ঘরে ঢুকলাম। প্রায় একটা মাস পর। আমি আবার আমার হারিয়ে যাওয়া সেই গন্তব্যকে খুজে পেলাম। ভাবতেও অবাক লাগছে, যে ঘরে আমি দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটিয়ে দিতাম সে ঘরটা আজ আমি একমাস পর দেখছি। আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে যে টেবিলে আমার বই খাতায় ভর্তি। ছিল তা এখন ঔষধের পকেটে ভর্তি মনে হচ্ছে যে ফার্মেসি নিয়ে বসেছি। দিনে অন্তত দশটা ঔষধ খাওয়া লাগে। এর মধ্যে রাতেই পাঁচটা রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি সকালে তাড়াতাড়ি উঠবো, উঠেই প্রিয়াদের বাসায় যাব।
হাটতে হাটতে অনেক অচিন পথ পারিয়ে শেষ মেষ আমার গ›তব্য পৌঁছালাম। হোটেলে ভিজা শরীর নিয়ে ঢুকতেই আমাকে দাড়ওয়ান প্রশ্ন করল,
: স্যার সব ঠিক আছে ত?
: হ্যাঁ সব ঠিক আছে।
: রাতে বাইরে যাইয়েননা ছিনতাই হতে পারে।
আমি কোন উত্তর না দিয়েই আমার রুমের দিকে যেতে থাকলাম আর ভাবলাম আমার আর কিইবা আছে যে ছিনতাই হবে।
ঘুম নেই চোখে তাই হোটেলের ছাদে গিয়ে বসে আছি একা একা আর ভাবছি। আমি কি সব সময় চিন্তে ভুল করি, আমি কি নিজে ব্যর্থ নাকি সফল? নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে। ভাবলাম বেচারী প্রিয়া আমার কথা ভেবে ভেবে হয়তো অনেক কাঁদছে।
আকাশের ঐ চাঁদ তুমিই বল আমার প্রিয়া কেমন আছে? ওকি আমার কথা ভাবছে? নাকি ওর চোখের জ্বল এখন ঝড়ছে? একা একা কখন যেন মনের অজান্তে চাঁদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। চাঁদের সাথে কথা বলতে বলতে রাত দুইটা বেজে গেছে। ছাদ তেকে নেমে পরলাম। রুমে শুয়ে শুয়ে বাবছি কালকেই ঢাকায় ফিরে যাব।
ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না, রুমটা অ›ধকার, মনে হচ্ছে মাত্র সকাল হল, তারপরও কষ্ট করে উঠলাম ভাবলাম দশটার আগে বাস স্ট্যাডে পৌঁছাতে হবে, না হলে খবর আছে। মুখটা ধুয়ে রুমে এসে ঘড়িতে দেখি নয়টা বাজতে আর মাত্র দশ মিনিট, নাস্তা খাওয়ার আর সময় নেই দৌড়।
শেষ মেষ বাস স্ট্যান্ড পৌঁছালাম কিন্তু এখন দশটা তিরিশ বাজে। বাস আরও আধা ঘন্টা আগেই গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে চলে গেছে।
এমন একটা হোটেলে উঠতে হল শেষ পর্যন্ত যে বলে বুঝাতে পারব না। এখানে রুমের সাথে আলাদা বাথরুম তো নাই তারপর আবার চব্বিশ ঘন্টা পানিও থাকে না। কি যে কষ্ট হচ্ছে আমার এখন আর কক্সবাজার ভাল লাগছে না। বাসায় ফিরেও যেতে পারছি না। প্রিয়ার সাথে তো দূরের কথা আম্মুর সাথেও কথা বলতে পারছি না।
ভাবলাম আজ রাতটা কোন মতে থেকে কালকে সকালেই ঢাকায় ফিরে যাব। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলাম। যাতে সকালে উঠতে পারি।
কিন্তু ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখি দুইটা বাজে। তবে দুপুর দুইটা না রাত দুইটা, প্রচন্ড ঝড় হচ্ছে বাইরে, জানালার কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে কারেন্ট ও চলে গেছে। অন্ধকার ঘুট-ঘুটে অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমার নিজের হাতটাই আমি দেখতে পাচ্ছি না, মনের মধ্যে খুব ভয় লাগছে। কেন যেন মনে হচ্ছে আমি বাদে আরেক জন এ ঘরে আছে কিন্তু কথা বলছে না। চুপচাপ আমাকে দেখছে। আমার বারবার ইচ্ছা করছে বলতে, কে তুমি? তুমি কি আমাকে দেখতে পাচ্ছো? তুমি এখানে কি করে এলে?
ভোর সাতটা বাজে বাইরে এখনও ঝড় চলছে, বাতাসের ধাক্কায় জানালাটা নড়ছে, আমি এখনও প্রশ্নটা করতে পারি নাই কারণ আমি ভাল করেই জানি যে ঘরে কেউ নাই তারপরও যদি কেউ আমার প্রশ্নের উত্তর দেয় ভয়ে আমি বিছানা থেকেও নামি নাই, শরীর থেকে টপ টপ করে ঘাম পরছে যদিও বাতাসে পর্দা উড়ছে।
দুপুর দুইটা চাঁদ চলে গেছে পরিস্কার আকাশে সূর্যের নতুন আলো নেই কোন অন্ধকার, নেই কোন ভয়। এমন ঝড় আমি আগে কখনও দেখি নাই। এখনও টিপ টিপ বৃষ্টি পরছে। বাইরে যাওয়া সম্ভব না ভাবলাম বিকালেই একবারে বাহির হয়ে যাব। যেভাবেই হোক আজকের মধ্যে আমাকে ঢাকা যেতে হবে। আমার আর ভাল লাগছে না, আম্মু, আব্বু সবাই হয়ত খুব চিন্তা করছে আর প্রিয়াত কাঁদতে কাঁদতে মনে হয় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
বিকালে বাহির হলাম ঠিকই কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ঐ অন্ধকার রুমে আবার ফিরে আসতে হল কারন রাস্তা ঘাটে পানি জমে গেছে ব্যাগ নিয়ে এত দুর যাওয়া কোন মতেই সম্ভব নয়। ভাবলাম ফোন করি কিন্তু নেটওয়ার্ক এর জন্য ফোন করাও স¤ভব হল না।
খুব খারাপ লাগছে কিন্তু কিছুই করার নেই কারন হাতে এমন টাকাও নাই যে অন্য কোন ভাল হোটেলে উঠব। তাই বাধ্য হলাম অ›ধকারের মধ্যে থাকতে। কে জানতো যে আমাকে এ হোটেলে চারটা রাত কাটাতে হবে।
সকাল দশটা বিশ মিনিট। আমি বসে আছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়বে। আজকে বিকাল চারটায় পরীক্ষার জবংঁষঃ দিবে। যদিও আরও আগে ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু ঝড়ের কারণে ইচ্ছাটা মাটি হয়ে গেছে। বাস ছেড়ে দিয়েছে আর হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই কক্সবাজার থেকে অনেক দুরে চলে যাব। ভাবছি বাস থেকে নেমেই প্রথম প্রিয়াকে একটা ফোন করব।প্রিয়া বেচারী হয়ত আমার কথা ভেবে ভেবে কাঁদছে, প্রিয়াকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
অবশেষে পরিচিত ঢাকায় আমি:
চোখ খুলে দেখি সেই ঢাকা। বাস থেকে নেমে পরলাম মালিবাগে। নেমে প্রথমেই প্রিয়ার মোবাইলে কল দিলাম। কিন্তু ব›ধ। আবার কল করলাম কিন্তু আবার সেই একই উত্তর ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এ মূহুর্তে …..’ দোকানদার ব্যস্ত হয়ে গেছে ‘তাড়াতাড়ি করেন ভাই।’ তাই আর ফোন করলাম না।
তারপর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, ভাবলাম বাসায় একটা ফোন করে পৌছার সংবাদ দেই।
: হ্যাঁলো।
: কে মেহেদী?
: হ্যাঁ। আম্মু, ভাল আছ?
: তুই কোথায়?
: আমি ঢাকায় পৌছে গেছি মালিবাগে।
: তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
: হ্যাঁ আসছি।
: কেমন আসিছ?
: ভাল। আম্মু, দোকান থেকে ফোন করেছি বাসায় এসে কথা বলব।
আবার একবার প্রিয়াকে ফোন দিলাম কিন্তু ব›ধ বুঝতে আর বাকি নাই প্রিয়া ম্যাডাম খুব রাগ আমার উপর। আবার কি শাস্তি দেয় আল্লাহ ভাল জানে। ভাবলাম মৌচাক মার্কেটে সাইবার ক্যাফে যাই যায়ে পরীক্ষার রেজাল্ট দেখেই বাসায় যাই। হঠাৎ পিছ থেকে কি যেন আমার মাথায় একটা বারি দিল, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, কিছুক্ষণের মধ্যে পৃথিবীটা অ›ধকার হয়ে গেল আমার কাছে। কিছু বুঝার আগেই আমার সারা শরীর অবশ হয়ে গেল, শুধুই বাস-ট্রাক আর গাড়ির হর্ন শুনতে পাচ্ছি সাথে কিছু মানুষের হৈ চৈ তারপর, তারপর আমার কি হয়েছে আমার কিছুই মনে নেই।
দুদিন পর আমি চোখ খুলে দেখি, আম্মু বসে আছে আমার সামনে। হাতে তজবি। মুখে বির বির করে জিকির করছে। চোখে পানি। কাঁদছে। এখনও বুঝতে পারছি না। আমি কোথায়? আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
আম্মা: মেহেদী বাবা তোর জ্ঞান ফিরেছে?
চারিদেকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই আমাকে দেখতে এসেছে নানু, নানা, খালা, মামা, ফুফু, চাচা। সবাইকে একসাথে আমি আগে কখনও দেখি নাই তারপরও আমি আরও এক জনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি।
আমি কমফোর্ট হাসপাতালের ৫৩০ নম্বর কেবীনে। হাত প্লাস্টার করা। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও দশ দিন লেগে যাবে। তবে ঐদিন আসলে কি ঘটছে তা কেউ ঠিক মত বলতে পারে নাই তবে বড় কোন দূর্ঘটনা থেকে যে বেচে গেছি তা আর বুঝতে বাকি নাই। সবাই মিষ্টি নিয়ে আসছে, আমাকে দেখতে, অবাক হবার কিছুই নাই। কারণ আমার পরীক্ষার মিষ্টি। শেষ মেষ আমার পরীক্ষার জবংঁষঃ যে এতো টহপড়সসড়হ হবে তা আমি ভাবতেও পারি নাই। অ+ পাইনি আবার ৪.৫ ও পাইনি। পেয়েছি ৪.৯৪। সবাই আফছোছ করছে একটুর জন্য অ+ মিস। বেচারা।
আম্মুর কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে প্রিয়ার জবংঁষঃ জানতে ফোন দিলাম কিন্তু সেই একই উত্তর ‘আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটা….।’
প্রিয়াকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম, প্রিয়ার মোবাইল বন্ধ কেন? প্রিয়া কেমন আছে? ভাল আছে তো? প্রিয়া তুমি কোথায় তুমি? হঠাৎ মাথার পিছনে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম। চিৎকার করতে বাধ্য হলাম, আম্মু….. আম্মু।
চোখ খুলে দেখি আকাশে নতুন সূর্য, নতুন আলো, কিন্তু আমার মাথায় এখনও ব্যথা করছে, আমি বুঝতে পারছি যে আমার মাথায় কঠিন আঘাত পেয়েছি, সব সময়ই একটা ব্যথা অনুভব করছি, মাঝে মধ্যে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয় তখন আর চিৎকার করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকে না। সারাদিন শুয়ে শুয়ে ভাবি, আমি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারব তো? আবার প্রিয়ার দেখা পাব তো? কবে আমি এখান থেকে মুক্তি পাব?
দুপুরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি অবশ্য কয়টা বাজে তা জানি না, সম্ভবত দুইটা, তিনটা বাজে। আম্মু আমার কেবীনের দরজা উকি দিয়ে বলল মেহেদী দেখ তোকে দেখতে কে এসেছে, আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই “ প্রিয়া” আবার কে, আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমার কেবীনে ঢুকতেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ প্রিয়া আসে নাই এসেছে ঢাকাইয়া ফাহাদ, ফালা আর শান্ত আমার এক সময়ের ক্লোজ ফ্রেন্ড। প্রথমেই ফাহাদ বলতে শুরু করল: কিরে তুই হালায় রাস্তাবি পার হইবার পারোছ না।
উত্তরটা আমি দেওয়ার আগেই ফালা দিয়ে দিল,
: আরে ধুৎ ফাউ প্যাচাল। এখন কেমন আছিস তুই?
আরও অনেকক্ষণ কথা বলার পর ফালা, ফাহাদ, শান্ত চলে গেল। যাওয়ার সময় ফালাকে বলে দিয়েছি আমার ঝওগ টা উঠাতে।
(পরদিন বিকালে) ফালা আসছে সাথে আমার হারায় যাওয়া ঝওগ টাও নিয়ে আসছে, অনেক দিন হয়ে গেছে প্রিয়ার সাথে কথা হয় না। তাই ফালার সেটে ঝওগ টা ভরলাম, ভাবলাম প্রিয়াকে কল করি কিন্তু তার আগেই দুইটা এস এম এস এসে হাজির। দুইটা এস এম এস-ই প্রিয়ার নাম্বার থেকে।
(প্রথমটা) উবধৎ গবযবফর, কবসড়হ ধংড়? ধসধশব াঁষব মবষব? গড়নরষব ড়ভভ শড়ৎব ৎবশযবংড় শবহড়? ঞড়নব শর ঃঁসর ? ও ধস ধিরঃরহম.
(দ্বিতীয়টা) গবযবফর ধসধৎ ঝগঝ ধৎ ধহং. ফবড় ঢ়ষু. ঃড়সধৎ শর যড়ুবংব? ঞঁসরশর াঁষব মবষব?
তারপর…….. তার আর পর নেই……..
ফালু চলে গেল। শুয়ে শুয়ে ভাবছি। আর মাত্র একটা দিন আমাকে বন্ধি থাকতে হবে তারপরতো আমি আবার মুক্ত। কালকে ঈঞ ঝপধহ করতে হবে। ফলাফল ভাল হলেই বাসায় চলে যাব।
(পরদিন সকাল বেলা)
সকাল হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, সকাল হওয়ার সাথে সাথেই ঈঞ ঝপধহ করতে গেলাম, বিকালেই জবঢ়ড়ৎঃ দিবে।
সকাল ১০টা বেজে গেছে এখনও বাসায় যেতে পারলাম না, বাসায় যাওয়ার জন্য আমার ভিতরটা যেন জ্বলে পুরে যাচ্ছে। শেষ মেষ বিকাল ৫টায় বাসায় এসে পৌছালাম। বাসায় এসেই প্রথমে আমার ঘরে ঢুকলাম। প্রায় একটা মাস পর। আমি আবার আমার হারিয়ে যাওয়া সেই গন্তব্যকে খুজে পেলাম। ভাবতেও অবাক লাগছে, যে ঘরে আমি দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটিয়ে দিতাম সে ঘরটা আজ আমি একমাস পর দেখছি। আর একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে যে টেবিলে আমার বই খাতায় ভর্তি। ছিল তা এখন ঔষধের পকেটে ভর্তি মনে হচ্ছে যে ফার্মেসি নিয়ে বসেছি। দিনে অন্তত দশটা ঔষধ খাওয়া লাগে। এর মধ্যে রাতেই পাঁচটা রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি সকালে তাড়াতাড়ি উঠবো, উঠেই প্রিয়াদের বাসায় যাব।
.: কিছু পাতা । মেহেদী মেনাফা :.
একটি ভালবাসার গল্প
“কিছু পাতা”উপন্যাসটি আমার জীবনের কিছু সত্য এবং কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে লেখা। এটাই আমার জীবনের প্রথম লেখা উপন্যাস, তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।
(if you can’t read cause of Bangla text, you can try image format at this link http://www.black-iz.com/vinnokobor/kisupata.html) (Also you can download this book from this link @ http://www.black-iz.com/kp/kisupata.doc)
Muhammad Mehedi Menafa at facebook : www.facebook.com/muhammadmehedimenafa