ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন!

ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন!
ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে যখন আমাদের উৎসাহের শেষ নেই, তখন এসে পেঁৗছেছে আরেক খুশির বার্তা। বিশ্বব্যাপী আড়াই লাখের বেশি প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে এ বছর ইএসপিএন-স্টার স্পোর্টস-এর ভার্চুয়াল ফ্যান্টাসি ফুটবল গেইম ‘এফসি ম্যানেজার নকআউট কাপ’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশের কামরুল হাসান। লিখেছেন আল-আমিন কবির

ফুটবলার হতে না পারলেও সব সময় স্বপ্ন ছিল এমন কিছু করা, যা আর দশজন বাংলাদেশীকে ভালো কিছু করতে অনুপ্রাণিত করবে। তবে দেশের হয়ে কোনো প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এটা স্বপ্নের মতো_এমন অনুভূতি ‘এফসি ম্যানেজার নকআউট কাপ’ চ্যাম্পিয়ন কামরুল হাসানের। আর এই কৃতিত্বের জন্য অগ্রজপ্রতিম জাহিদ ভাইয়ের কাছে তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ২০০৭ সালে জাহিদ হাসানই ইএসপিএনের এ খেলায় ‘ম্যানেজার অব দ্য মান্থ’ নির্বাচিত হয়েছিলেন দুইবার।
প্রথম দুই বছর এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও সাফল্যের মুখ দেখেননি কামরুল হাসান, এমনকি ফ্যান্টাসি ফুটবল খেলা ছেড়েই দিতে চেয়েছিলেন। তবে গেল সিজনের শুরুতে জাহিদের কাছ থেকে কামরুল হাসান যে টিপসগুলো পেয়েছিলেন, সেগুলোই তাকে নতুনভাবে শুরু করতে আত্দবিশ্বাসী করেছে। আরেক বাংলাদেশী ইশতিয়াক হোসেনের অক্টোবর মাসে ‘ম্যানেজার অব দ্য মান্থ’ বিজয়ী হওয়াটাও ছিল হাসানের কাছে বাড়তি প্রেরণা।
এফসি ম্যানেজার কী?
এফসি ম্যানেজার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে কেন্দ্র করে খেলাধুলা নির্ভর চ্যানেল ইএসপিএনের একটি বিশেষ আয়োজন। যে কেউ এ ফ্রি ভার্চুয়াল গেইমটি খেলতে পারেন। রেজিস্ট্রেশনের পর প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ১৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি ভার্চুয়াল বাজেট দেওয়া হয়, যা দিয়ে তাকে ১৬ জনের একটা দল বানাতে হয়। তবে প্রিমিয়ার লিগের কোনো দল থেকে সর্বোচ্চ তিনজনের বেশি খেলোয়াড় নেওয়া যায় না। একজন ফ্যান্টাসি ম্যানেজারের সাফল্য নির্ভর করে তূলনামূলকভাবে কম দামি খেলোয়াড় নির্বাচনের ওপর। ১৬ জনের ভার্চুয়াল এ দলটির আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা বাস্তবে খেলায় যখন গোল করেন অথবা রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা যখন কিনশিট রাখেন তখন যেমন পয়েন্ট পান ফ্যান্টাসি ম্যানেজাররা, তেমনিভাবে পয়েন্ট হারান তারকারা যখন হলুদ কার্ড বা লাল কার্ড দেখেন মাঠে।

হাসানের ভার্চুয়াল ফুটবল দল
হাসানের নকআউট কাপ জয়ী দলটির নাম ছিল ‘ফায়ারহাউস’। চলুন দেখে নিই কোন কোন ইংলিশ ফুটবল তারকা ছিলেন তাঁর দলে। ফায়ারহাউসের ম্যানেজার ছিলেন টটেনহাম ক্লাবের হ্যারি রেডন্যাপ, গোলরক্ষক লিভারপুলের পেপে রেইনা। ডিফেন্ডার ছিলেন চেলসির জন টেরি, লিভারপুলের গ্লেন জনসন, বার্মিংহাম সিটির রজার জনসন, এভারটনের লেইটন বেইনস এবং অ্যাস্টনভিলা ক্লাবের স্টিফেন ওয়ারনক। মিডফিল্ডার ছিলেন চেলসির ফ্রাংক ল্যাম্পার্ড, এভারটনের ফিল জাগিয়েলকা এবং বার্মিংহাম সিটির জেমস ম্যাকফাডেন। স্ট্রাইকার হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবের কার্লোস তেভেজ এবং লিভারপুল ক্লাবের ফার্নান্দো তরেসকে। আর অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন বার্নলি ক্লাবের ডিয়েগো পেনি, আর্সেনাল ক্লাবের থমাস ভারমেইলেন, বার্মিংহাম সিটি ক্লাবের সেবাস্টিয়ান লারসেন এবং স্যান্ডারল্যান্ড ক্লাবের ড্যারেন বেন্ট।

শেষ বিজয়ের মুহূর্তে
নকআউট কাপের ফাইনালে হাসানের দল ফায়ারহাউসের প্রতিপক্ষ ছিল ভারতীয় দল আইপিএস৩। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার আগের দিনও (৮ মে) হাসান তাঁর প্রতিপক্ষের চেয়ে ১৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন। বিজয়ী হওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ মুহূর্তে তিনিই হাসেন বিজয়ীর হাসি। শেষ ম্যাচে হাসানের ভার্চুয়াল ফুটবল দলের অধিনায়ক ল্যাম্পার্ড পয়েন্ট পান ৩০, অন্যদিকে প্রতিপক্ষ আইপিএস৩ দলের অধিনায়ক আশলি ইয়ংয়ের সংগ্রহ ছিল মাত্র মাইনাস ২। এই ৩২ পয়েন্টই ব্যবধান গড়ে দেয়। হাসান জেতেন ৫১-৪৯ পয়েন্টে।
ট্রিপ টু সিঙ্গাপুর
এফসি ম্যানেজার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে হাসান সুযোগ পান সিঙ্গাপুর ভ্রমণের। ছোট ভাইকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যান তিনি। সিংগাপুরে গিয়ে হাসান মুখোমুখি হন প্রথমার্ধের বিজয়ী অমরজিত সিং আর দ্বিতীয়ার্ধের বিজয়ী রেচেলের। দুইজনই মালয়েশিয়ান। বিজয়ী তিনজনকে নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল আরো একটি প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় রেচেল শীর্ষস্থান দখল করেন। অতিরিক্ত প্রতিযোগিতাটিতে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও পরের আসরে সেরাদের সেরা হবেন কোনো একজন বাংলাদেশী_এমন আশা করেন কামরুল হাসান।

বিজয়ীদের পুরস্কার
এফসি ম্যানেজার প্রতিযোগিতাটিকে ইএসপিএন বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছে। সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ আট মাসের সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী ম্যানেজারের জন্য পুরস্কার ১০০০ ডলার।
আগস্ট থেকে ডিসেম্বর আর জানুয়ারি থেকে মে সিজনের এ দুই অর্ধের সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী ম্যানেজারের জন্য থাকে সিঙ্গাপুর ভ্রমণের সুযোগ এবং ২,৫০০ ডলার।
জানুয়ারিতে প্রতিযোগিতাটির সব দলকে নিয়ে শুরু হয় নকআউট কাপ, যেখানে নিবন্ধিত দলগুলো নকআউট পদ্ধতিতে শিরোপার জন্য লড়ে অন্যদের সঙ্গে। নকআউট কাপের বিজয়ীও সিঙ্গাপুর ভ্রমণের সুযোগ পান এবং সঙ্গে জিতে নেন ২৫০০ ডলার। দুই হাফ সিজন আর নকআউট কাপের এই বিজয়ী তিনজন বোনাস হিসেবে পান ইএসপিএনের সৌজন্যে পাঁচতারা হোটেলে তিন দিন থাকার সুযোগ।

হাসান এখন
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে কামরুল হাসান এখন সিনিয়র সাব এডিটর হিসেবে কাজ করছেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি সানে। ক’দিন আগেও কামরুল হাসানের দুঃখ ছিল কোথাও কখনো প্রথম হতে পারেননি বলে। এখন আর তা নেই। কেন, জানতে চাইলে মুচকি হেসে হাসানের পাল্টা প্রশ্ন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে লাল-সবুজের ওই পতাকা ওড়ানোর মতো গর্বের আর কিছু কি হতে পারে?’ উত্তরটা বোধ করি পাঠকদের বলে দিতে হবে না।

যেভাবে খেলতে হবে
কামরুল হাসান, জাহিদ হাসান কিংবা ইশতিয়াক হোসেনের মতো আপনিও পারেন দেশের জন্য এমন সম্মান বয়ে আনতে। ইএসপিএনের ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন, পরবর্তী সিজনের খেলা শুরু হবে আগস্টে। তবে ভালো করতে হলে এখন থেকেই বড় দলগুলোর তারকা খেলোয়াড়দের পাশাপাশি চোখ রাখতে হবে ছোট দলগুলোর খেলোয়াড়দের ওপর। দলগুলোর ফিকশ্চার আর ফর্ম নিয়েও ভাবতে হবে আপনাকে। যেমন ধরা যাক, ওয়েইন রুনির এ গেমটিতে ভার্চুয়াল প্রাইস ১২ মিলিয়ন পাউন্ড। কোনো এক মাসে তাঁর দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলা চেলসি, নিউক্যাসেল আর আর্সেনালের সঙ্গে। বোঝাই যাচ্ছে তিনটির মধ্যে দুটি খেলা তাঁর কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে। অন্যদিকে টটেনহামের জারমেইন ডিফোর ভার্চুয়াল দাম ৯ মিলিয়ন পাউন্ড আর ওই মাসে তাঁর খেলা উইগান, ফুলহ্যাম আর বার্মিংহাম সিটির সঙ্গে। একটু মাথা খাটালেই বোঝা যাবে রুনির চেয়ে ওই মাসে ডিফোর বেশি গোল করার এবং তাঁর দলের জেতার সম্ভাবনা বেশি, যা কিনা বেশি পয়েন্ট দেবে একজন ফ্যান্টাসি ম্যানেজারকে। দলের অধিনায়ক নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ফ্যান্টাসি ম্যানেজারের ভার্চুয়াল দলগুলোর অধিনায়ক দ্বিগুণ পয়েন্ট পান। মিডফিল্ডার বা ডিফেন্ডার কেনার সময় এমন খেলোয়াড়দের নেওয়া দরকার, যাঁরা ফ্রি-কিক বা কর্নার কিক নেন বা এ ধরনের সেট পিসে গোল করতে সিদ্ধহস্ত।

Related posts

Leave a Comment