আয়ার‌ল্যান্ডের শ্বাসরুদ্ধকর জয়

আয়ার‌ল্যান্ডের শ্বাসরুদ্ধকর জয়

আয়ার‌ল্যান্ডের শ্বাসরুদ্ধকর জয়কি ভয়ঙ্কর রোমাঞ্চের ম্যাচ দেখুন। দুই দলেরই একজন করে সেঞ্চুরি করলেন। একজন করে ৯০ রানের ঘরে আউট হলেন। তারপরও শেষ ওভারে ফল নির্ধারণ হলো। ওই শেষ ওভারে জিততে পারতো যে কেউ। তবে জিম্বাবুয়ে জিতলে হতো বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করার রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে স্নায়ুর ওপর চাপটা ধরে রাখতে পারলো আয়ারল্যান্ড। শেষ ওভারে ২ উইকেট তুলে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ৫ রানে হারালো আইরিশরা। পেল আরেকটি বিশ্বকাপ রোমাঞ্চের জয়। সেই সাথে তাদের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সম্ভাবনাও হলো উজ্জ্বল। ৪ ম্যাচে তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট এখন আয়ারল্যান্ডের। জিম্বাবুয়ে ৫ ম্যাচের ৪টিতে হারলো। পয়েন্ট সেই ২।

৩৩২ রানের টার্গেটে ২৪ বলে শেষ পর্যন্ত ৩৯ রানের দরকার জিম্বাবুয়ের। হাতে ৪ উইকেট। সেখানে ৯০ এর ঘরে রান নিয়ে ব্যাট করছেন শন উইলিয়ামস। আর সাথী তার পানিয়াঙ্গারা। মনে হলো এই অবস্থায় জয় সম্ভব। এমন সময় কেভিন ও’ব্রায়েন নার্ভাস নাইন্টিজের শিকার করে ফেললেন উইলিয়ামসকে। মুনিকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার সময় ৮৩ বলে ৯৬ রান উইলিয়ামসের।
এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে পরের ওভারে মুনি তুলে নেন পানিয়াঙ্গারাকে। তখন সবাই হয়তো হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ৪৯তম ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ম্যাচটা রুদ্ধশ্বাস করে তোলেন মুপারিয়া। ১৯ রান আসে কেভিনের এই ওভার থেকে। তাতে শেষ ওভারে ৭ রান দরকার জিম্বাবুয়ের। কুস্যাকের ছিলো ভিন্ন ভাবনা। শেষ ওভারের প্রথম বলে তিনি তুলে নেন ১৭ রান করা চাকাভাকে। চাতারা এসে ১ রান নিলেন। জয় তখনো সম্ভব। কিন্তু কুস্যাক ১৮ রান করা মুপারিয়াকে আউট করে দিলেন তৃতীয় বলে। সেই সাথে হারের কষ্ট শুধু জিম্বাবুয়ের। রোমাঞ্চকর জয়ে বাতাসে ভাসার সময় আয়ারল্যান্ডের
জিম্বাবুয়েকে কক্ষ্যপথে রেখে জয়ের দিকে এগিয়ে নেবার বড় ভূমিকা ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরের। তার সঙ্গী উইলিয়ামস। ৭৪ রানে শীর্ষ চার উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়েছিলো জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ৫ম উইকেটে ১৪৯ রানের জুটি গড়ে টেলর আর উইলিয়ামস ম্যাচকে জয়ের পথেই হাটালেন। ৯১ বলে দেখার মতো ১২১ রানের এক ইনিংস খেলেছেন টেলর। ১১ চার ও ৪ ছক্কায় সাজানো টেলরের ইনিংস। তিনি পেয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি। টেলর ফিরে গেলে বাকি কাজটা সারার দায়িত্ব ছিলো উইলিয়ামসের। জয়ের দরজায় দলকে নিয়ে দাঁড় করিয়েছিলেন বটে, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ম্যাচ হারার সাথে সেঞ্চুরি মিসেরও আক্ষেপ উইলিয়ামসের।আয়ারল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের গল্পটা আসলে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম গল্পটা ম্যাচের সেরা জয়েসের। দ্বিতীয়টি বালবিরনির। প্রথম অংশে আগ্রাসী ব্যাটিং করেছেন জয়েস। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন বালবিরনি। আর দ্বিতীয় অংশে বালবিরনি আগ্রাসনে। কেভিন ও’ব্রায়েন, গ্যারি উইলসনরা বালবিরনির সঙ্গী। প্রথম গল্পটা সেঞ্চুরির আলোয় জয়েসের উদ্ভাসিত হওয়া। আর দ্বিতীয় গল্পে বালবিরনির ৩ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফেরা। ৯৭ রানে আউট হয়ে একেবারে কাছে গিয়েও সেঞ্চুরি বঞ্চিত বালবিরনি।

জিম্বাবুয়ের বোলাররা জয়েস আর বালবিরনির সামনে কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জয়েস শুরু করেছিলেন পোর্টারফিল্ডকে নিয়ে। ১৬ রানের সময় স্টার্লিং ১০ রান করে পানিয়াঙ্গারার শিকার। ওখান থেকে দলকে প্রাথমিক ভিত্তি দেন পোর্টারফিল্ড ও জয়েস। পোর্টারফিল্ড ২৯ রান করলে ভাঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৩ রানের জুটি। এরপর জয়েস আর বালবিরনি গড়েন ১৩৮ রানের অসাধারণ এক জুটি। তৃতীয় উইকেটে তারা রাজত্ব করেছেন জিম্বাবুয়ে বোলারদের সামনে। ৯৬ বলে ১০০ রান করেছেন জয়েস। আর ১০৩ বলে ১১২ রান করে ফিরেছেন তিনি।

বালবিরনি এরপর কেভিনের সাথে ৫৯ রানের মূল্যবান এক জুটি গড়েছেন। যেটা দিয়েছে ৩০০ পেরোনোর সাহস। ইনিংসের শেষ ওভারে সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বালবিরনি। কিন্তু রান আউটের দূর্ভাগ্য তাকে বরণ করতে হয়েছে। ৭৯ বলে ৯৭ রান তার। এর সাথে কেভিনের ২৪, উইলসনের ২৫ আরো বড় সংগ্রহ করে দিয়েছে আয়ারল্যান্ডকে।

Related posts

Leave a Comment