রোমাঞ্চকর এক অভিযান- The Secret Life of Walter Mitty…

অদ্ভুত মানুষ এই ওয়াল্টার মিটি। শত কাজের মাঝে, কথার ফাঁকে এমনকি সাইকেল চালাতে গিয়েও মন তার চলে যায় কোথায়। এই বদভ্যাসের কারণে হাস্যস্পদ হতে হয় সবার, বিশেষত অফিসে। কিন্তু দিবাস্বপ্ন তার কাজে কখনোই বাধা হয়ে দাড়ায়নি, যদিও ব্যক্তিগত জীবনে মিটি রয়ে গেছে একলাই। কাজ করে রোমাঞ্চকর এক প্রতিষ্ঠান, Life পত্রিকায়, মূল কাজ ইমেজ প্রসেস করা। পত্রিকা অফিসটিতে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন, পত্রিকাটি অনলাইনে চলে যাচ্ছে। মানে হল অনেক অপ্রয়োজনীয় বিবেচিত মানুষ ছাটাই হয়ে যাবে সামনে। কিন্তু মিটির স্বপ্নে তার ছায়াটিও পড়ে না, অফিসের এক সহকর্মীর প্রেমে সে মশগুল। এদিকে লাইফের শেষ ইস্যুর কভার ফটো পৌঁছায়নি অফিসে ঠিকমত। কর্তব্যপরায়ণ মিটি বেরোয় সেই ফটোগ্রাফার শনের সন্ধানে, খানিকটা চাকরি বাচানোর তাগিদে আবার অনেকটা নতুন অভিজ্ঞতায় জীবনকে তেমনভাবে খুঁজে পেতে যেমনটা সে চেয়েছিল কোন এক সুদূর অতীতে।

ওয়াল্টার মিটি কোন এক কলম পেষা কেরানির নতুন করে নিজেকে খুজে পাওয়ার গল্প, এক স্বপ্নবাজের স্বপ্ন পূরণের সিনেমা। শুনতে যতটা ভাল লাগছে, ফিল্মটা কি তত ভালভাবেই এক্সিকিউট করা হয়েছে? এটা বেন স্টিলারের রুপালী পপর্দার জন্য বানানো পঞ্চম মুভি। আগের গুলো দেখিনি তাই তুলনা করতে পারছি না। তবে মুভি আমার এক্সপেকটেশন ছাড়িয়ে গেছে সব দিক থেকেই। গল্প ত দারুণ রকমের উদ্দীপক বটেই, তার উপরে রয়েছে ক্যামেরার জমজমাট কাজ। উল্লেখ্য যে ওয়াল্টার মিটি জেমস থার্বারের ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত দ্বিতীয় সিনেমা, প্রথমটি করা হয়েছিল ১৯৪৭ এ।

ওয়াল্টার মিটিকে নিয়ে মুগ্ধতা, বলা যায় এখন এই লিখতে বসারই মূল কারণ হচ্ছে এর চোখ-ধাধানো সিনেমাটোগ্রাফি। সিনেমাটোগ্রাফার স্টুয়ার্ট ড্রাইবার্গের তত্ত্বাবধানে ওয়াল্টার মিটির কাল্পনিক ও বাস্তব অভিযানগুলো হয়ে উঠেছে শ্বাসরুদ্ধকর। স্টুয়ার্টের এই মুন্সিয়ানায় অবাক হবার কিছু নেই বোধ করি, বিশেষত যখন তার ঝুলিতে আছে দ্য পিয়ানো, দ্য পেইন্টেড ভেইল, ব্রিজেট জোন্সের মত সিনেমা।

সিনেমাটোগ্রাফি ছাড়াও ছবিটিতে গল্পেও কিছু নতুননত্ব ছিল, যেগুলোতে বেশ কিছু হলিউডি ছাচে ফেলা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার প্রয়াস পায়। মিটি একজন চল্লিশোর্ধ অবিবাহিত মানুষ, ভুলোমনা হবার কারণে পরিবারের প্রতি তার নির্ভরশীলতা একটু বেশিই। হলিউডি ফিল্মের একটা প্রবণতা হচ্ছে বাবা-মায়ের প্রতি নির্ভরশীলতাকে একটা নেতিবাচক আলোয় দেখানো, বিশেষ করে এ ধরনের মানুষদের loser হিসেবে দেখানো। অন্যদিকে ওয়াল্টার মিটি প্রমাণ করে মা-বোনের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রেখেও একজন কর্মঠ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়। যান্ত্রিকতার যুগেও যন্ত্রের মাধ্যমেই খুজে পায় সে এক টেলিফোন অপারেটরকে, পরবর্তীতে সেই মানুষটিই যেন বাস্তবে অবতার হয়ে আসে।

মিউজিক আর সিনেমাটোগ্রাফি হাত ধরে এগিয়ে গেছে সিনেমায়, যেটা মুভিটায় এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। রোমাঞ্চ ও উতসাহব্যঞ্জনার দিক থেকে মহত সিনেমাগুলোর কাছে না যেতে পারলেও দর্শকদের এক নতুনত্বের স্বাদ দিতে সক্ষম ২০১৩র ভাল-লাগা সিনেমাগুলোর তালিকায় মিটিকেও রাখা যায় তাই নিঃসন্দেহে ।
আরো পরুন- ৭ টি মুভি, যা আপনি আর একবার হলেও দেখবেন

Related posts

Leave a Comment