ভালবাসার গল্পঃ কালো ফ্রেমের আড়ালে লুকিয়ে রাখা চোখের গল্প

জানি , কারোর মায়াকাড়া , কাজলে আকাঁ চোখ তোমার মনকে অনেক টানে । হয়তো তুমি চোখ বন্ধ করলেই কল্পনায় ঐ মায়াময় চোখদুটিকে অনুভব করতে পারো । কিন্তু কখনো কি এই কালো মোটা ফ্রেমের আড়ালে লুকিয়ে রাখা চোখ দুটির ভাষা কি পড়তে চেয়েছো ?

হয়তো তুমি খেয়ালই করোনি , ক্লাশের ফাকে ফাকে , সবার অগোচরে , কালো মোটা ফ্রেমের আড়ালে লুকিয়ে থাকা একজোড়া চোখ তোমাকে প্রতিমুহূর্তে অনুসরণ করে ! তোমার হাসি , মনোযোগ দিয়ে স্যারের লেকচার তোলা , হঠাত্ স্যারের কোনো পড়া বুঝতে না পারলে , কপাল কুচিয়ে বোর্ডের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকা , বন্ধুদের আড্ডার মাঝে তোমার ভরাট গলার , হো হো করে জোরে হেসে উঠা . সবকিছুই এই একজোড়া চোখ খেয়াল করে । হাই পাওয়ারের গ্লাসের কালো মোটা ফ্রেমের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই চোখদুটো আরো খেয়াল করে , তুমি মাঝে মাঝেই অপলক চোখে হিমির দিকে চেয়ে থাকো , বিশেষ করে যখন সে তার চোখের কাজলটা তার হাতে ধরে রাখা ছোট্ট আয়নার সামনে ঠিকঠাক করে নেয় ।

 

আচ্ছা , সত্যি করে বলতো , তোমার কি হতে মন চায় , ঐ কাজল হতে , নাকি হাতের মুঠোয় ধরে রাখা আয়না হতে ? আমারতো মনে হয় , তোমার ঐ আয়নাতেই মন পড়ে আছে । কারণ তুমি আয়না হলে , হিমির ঐ কাজলে আকাঁ সুন্দর চোখজোড়াকে মন ভরে দেখতে পারবে । তখন কাউকে জবাবদিহিও করতে হবেনা , বন্ধুদের টিপ্পনীও শুনতে হবেনা হিমির প্রতি তোমার এই মুগ্ধতাকে নিয়ে । আবার মাঝে মাঝে মনে হয় , তোমাকে হিমির চোখের কাজলরূপেই বেশী মানাবে । কাজলের সৌন্দর্য আর তোমার মুগ্ধতাভরা ভালোবাসা হিমির চোখকে আরো সুন্দর করে তুলবে …………

 

আচ্ছা , তুমি রাতজেগে , অবসর সময়ে হিমির চোখদুটোকে নিয়ে অনেক কবিতা লিখ , তাই না ? মাঝে মাঝেই দেখি , তুমি চুপচাপ বসে থেকে তোমার নীল ডাইরীতে কি জানি লিখো আর লেখার ফাঁকে ফাঁকে হিমির দিকে তাকাও । না , ভুল বললাম , আসলে হিমির চোখের দিকে তাকাও তুমি । মাঝে মাঝে তোমাকে পেন্সিল দিয়ে ডাইরীর পাতায় স্কেচ করতে দেখি । কিসের স্কেচ আঁকো , তা আগে থেকে বুঝতে পারিনি , কারণ আমি  তোমার থেকে একটু পিছনের সিটে বসি । তবে সেদিন তোমার সিটের পিছনে দাড়িয়ে উঁকি মেরেছিলাম , তুমি কিসের স্কেচ করছো , তা দেখার জন্যে । দেখি . অসম্ভব সুন্দর একজোড়া চোখের স্কেচ । মনেই হচ্ছিল না , এটা কোনো পেন্সিল স্কেচ ! মনে হচ্ছিল , এই বুঝি চোখের পাতাগুলো  পিটপিট করে কথা বলে উঠবে ! এতটাই গভীর সেই চাহনী  যে , মনে হচ্ছিল যে ঐ চোখজোড়ার মাঝে নিঃসঙ্কোচে নির্দ্বিধায় নিজেকে হারিয়ে ফেলা যাব…………

 

আচ্ছা ,  তুমি এতো সুন্দর করে আঁকো কি করে ? তুমি হয়তো জানোনা , একদিন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার নীল ডাইরীটার শেষপাতাগুলো খুলে দেখেছি । পাতার পর পাতা জুড়ে শুধু চোখের পেন্সিল স্কেচ, প্রত্যেকটা স্কেচই মনকে ছুয়ে যায় !  ঐ যে সেইদিন , তুমি তখন তোমার বন্ধুদের সাথে ক্লাশরুমের করিডোরে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলে । আমি একফাকে , আস্তে করে সবার অলহ্মে তোমার ডাইরীর পাতায় আঁকা স্কেচগুলো থেকে একটা পাতা ছিড়ে নিয়েছি । কোন পাতাটা জানো ?  যেই পাতায় আঁকা চোখজোড়ার স্কেচে , কপালের মাঝে একটা কালো টিপ আকা ছিল । তুমি হয়তো ধরতেই পারোনি যে , আমি যে ডাইরীর পাতাটা ছিড়ে রেখেছি নিজের কাছে , কারন ডাইরীটা স্পাইরাল বাইন্ডিং ছিল বলে রহ্মে ! জানি . তোমার আঁকা চোখের পেন্সিল স্কেচের একমাত্র মডেল হিমি ! তবে সত্যি কথাটা কি জানো , তোমার আঁকা চোখের স্কেচগুলোর প্রত্যেকটাই হিমির সুন্দর চোখের চেয়েও অনেক বেশী সুন্দর , মায়াকাড়া , শুধু তাকিয়ে থাকতেই মন চায় আমার ………….

 

 

মাঝে মাঝে দেখি তুমি গিটারে টুংটাং করছো । তোমার গলায় মিতফাহ জামানের ‘অ-দ্বিতীয়া’ গানটা অনেক মানায় । জানো , গানটা আমারো অনেক প্রিয় । তবে সবচেয়ে প্রিয় এই লাইন দুটো ,

“আজ চোখের আলোয় যদি স্বপ্ন ছোয়া যেত ,

আমি দুহাত ভরে কুড়িয়ে নিতাম ….”

 

 

আচ্ছা , তুমি এখনো কেন হিমিকে বলো নাই যে , তুমি ওর মায়াকাড়া চোখজোড়ার প্রেমে পড়েছো , যে চোখের দিকে তুমি সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাও , যে চোখের তারার মাঝে নিজেকে খুজে পেতে চাও ! আরে , অবাক হবার কি আছে ? ভাবছো যে , হিমির প্রতি তোমার এই গোপন দূর্বলতার কথা আমি কিভাবে জানলাম ! কেন জানবো না বলো ? কালো ফ্রেমের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চোখজোডা সবসময় যে তোমায় খেয়াল করে ! তোমার অজান্তেই তোমার সবকিছু বুঝে নেয় একপলকে ! জানি , তুমি প্রতি মঙ্গলবার হিমির বসার ডেস্কে একটা সাদাগোলাপ রেখে দাও সবার অলহ্মে , কখনো এই  সাদাগোলাপের সাথে একটা লাল গোলাপের কলি । দেখেছো, আর কেউ না জানুক , আমি কিন্তু ঠিকই জানি । এটাও জানি , মাঝেমাঝেই সুযোগ বুঝে তুমি হিমির ব্যাগে কিটক্যাট ঢুকিয়ে দাও , কারণ কিটক্যাট হিমির অনেক প্রিয় , এটা তুমি ভালোমতোই জানো । হিমির এই কিটক্যাটের প্রতি ভালোবাসা আর কেউ জানেনা , শুধু তুমি ছাড়া । স্যরি , ভুল বললাম , আমিওতো জানি এটা । আসলে তোমার সাথে জড়িয়ে থাকা সবকিছুই আমি জানি , আর হিমিতো তোমার মনেরই একটা অংশ । সেইসূত্রে আমিও হিমির ব্যাপারে অনেককিছু জেনে গিয়েছি

…………

 

 

আমি জানি , হিমির প্রিয়রং সবুজ । তাই তুমি মাঝে মাঝে সবুজ পাঞ্জাবী পড়ে আসো । তোমাকে অনেক মানায় এই সবুজ রংয়ে । তবে তোমাকে সবচেয়ে বেশী মানায় কালোরংয়ের পাঞ্জাবীতে । তখন চোখভরে দেখি তোমায় , কালো মোটা ফ্রেমের আড়ালে নিজের আবেগ , অনুভূতিগুলোকে লুকিয়ে রেখে ………….

 

 

ভার্সিটিলাইফের চারটা বছর এভাবেই কেটে গেল । ক্লাসমেট হবার সূত্রে , এই চারটা বছরে ‘কেমন আছো ? ভালো ! পড়াশুনা কেমন চলছে ? আচ্ছা , এই লেকচারটা তোমার কাছে আছে ? এই টপিকসটা কি তুমি বুঝতে পেরেছো ?’ এই টাইপের কথাবার্তাই হয়েছে বেশীর সময়ে , আমাদের মাঝে । তাও আবার হাতেগোনা কয়েকবার।

 

তুমি ক্লাসের সবচেয়ে চৌকস ছাত্র । পড়াশুনায় বলো , বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও অনুষ্ঠান , সবকিছুতেই তুমি ছিলে মধ্যমণি । আসর , বন্ধুদের আড্ডা মাতিয়ে রাখতে তোমার কোনো জুড়ি নেই । সবার মুখে মুখে তোমার নাম , তোমার প্রশংসা …….

 

হিমিও ক্লাসের আরেক মধ্যমণি । যেমন দেখতে সুন্দর , তেমনি গানের গলা । ক্লাসের ছেলেদের বা সিনিয়র ভাইদের বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে , যখন হিমি তাদের সামনে দিয়ে হেটে যায় । তবে আমি জানি , তোমাকে সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করে হিমির চোখদুটো । তুমি আসলে হিমির ঐ টলটলে দিঘির মতো চোখজোড়ার প্রেমে পড়েছো , ভার্সিটিলাইফের সেই প্রথমদিন থেকেই …..

 

আমি তোমাদের মতো ছিলামনা । তুমি হয়তো আমাকে কখনো ঐভাবে খেয়ালও করোনি । একা একা থাকতাম বেশীরভাগ সময়ে . নিজের ভেতরই চুপচাপ । সাথে সবসময়ের সঙ্গী হাই পাওয়ারের গ্লাসের কালো মোটা ফ্রেমের চশমা ।

 

ভার্সিটিলাইফের শেষদিনগুলো তরতর করে কেটে যাচ্ছিল চোখের পলকে , ক্লাশ আর এসাইন্টমেন্টের চাপে । এরইমাঝে একদিন দেখলাম , তুমি একদম ক্লিন শেভড হয়ে ফিটফাট বাবু সেজে এসেছো , পরনে সবুজরংয়ের ফতুয়া , হাতে হিমির প্রিয় সাদা আর গোলাপী রংয়ের অনেকগুলো গ্লাডিওলাস ফুল । বুঝতে পারলাম , আজ সেই বিশেষদিন , তোমার মনের কোণে লুকিয়ে রাখা অনুভূতিগুলোর আজ খোলা আকাশে পাখা মেলবার দিন । তোমার চোখে মুখে আনন্দ খেলা করছিল , ঠোটের কোণে লেগে থাকা এক চিলতে হাসি সকালের রৌদ্দুরের মতো ঝিকমিক  করছে । অনেকভাল লাগছিল তোমায় এতো খুশি দেখে । অবশ্য মনের কোণে একটু আধটু কষ্টের মেঘ যে জমেনি , তা বললে ভুল হবে , মনখারাপ একটু হয়েছিল ঠিকই , কিন্তু তোমার হাসি আর আনন্দ দেখে আমার সব না পাওয়াকে ভুলে গিয়েছিলাম । আমি দোতলার বারান্দায় দাড়িয়েছিলাম । দেখলাম , হিমি ক্যান্টিনে বসে আছে , আর তুমি ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যাচ্ছো । জানো , আমার কেমন জানি লাগছিল । ভাবলাম এই ফ্লোরে আমাদের ডিপার্টমেনটের  এক ম্যাডাম আছেন , তার সাথে একটু দেখা করে যাই । আসলে আমি কিছু সময়ের জন্য পালাতে চাইছিলাম ঐ জায়গা থেকে । হয়তো আমি বাইরে থেকে দেখতে অনেক শক্ত , কিন্তু আমারো তো একটা মন আছে , যে মনটাও কাউকে নিয়ে কবিতা লেখে , স্বপ্ন দেখে । সেই কেউ একজন আজ অন্যকারোর হতে চলেছে , তা আমি কিভাবে চেয়ে চেয়ে দেখতে পারি ; আমি হয়তো এতটা সাহসী না

……………………………

 

 

প্রায় ২০মিনিট পরে , ক্লাসে ফিরে আসি । ঢুকেই দেখি , তুমি তোমার সিটে চুপচাপ বসে আছো গম্ভীর মুখে , জাতে কষ্টের ছাপ স্পষ্টভাবে ফুতে উঠেছে । পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হল । এক বান্ধবীকে জিজ্ঞাসা করতেই আসল ঘটনাটা জানতে পারলাম । তুমি নাকি হিমিকে ফুলের তোড়ার সাথে একটা চিঠিও দিয়েছিলে , যাতে ওর সুন্দর চোখজোড়াকে নিয়ে তোমার লেখা

একটা কবিতাও ছিল । হিমি নাকি ঐ চিঠিটা সবার সামনে ব্যঙ্গ করে পড়েছে , তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে । তারপর তোমার দেওয়া ফুলগুলোকে পাড়িয়ে বাইরে চলে গিয়েছে ………।

 

বুঝতে পারছিলাম তোমার কষ্টটাকে , কষ্টের গভীরতাকে । বিশ্বাস কর , খুব ইচ্ছা করছিল তোমার হাতটাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তোমায় সান্ত্বনা দেই । তোমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে আমি প্রচণ্ড ভাবে অনুভব করছিলাম । দেখতে পাচ্ছিলাম , তোমার মুখটা গম্ভীর , কিন্তু তোমার মনটা কাঁদছে । আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল তোমার এই কষ্ট দেখে । ইচ্ছা করছিল , তোমাকে বলি , যা হবার হয়েছে , এই দেখো , আমিতো তোমার পাশে আছি ………

 

না , কিচ্ছু বলতে পারিনি সেইদিন , কাল ফ্রেমের আড়ালে নিজের অশ্রুসজল চোখটাকে লুকিয়ে রেখেছিলাম , যেমনটি নিজেকে , নিজের অনুভূতিগুলোকে , তোমায়ে ঘিরে দেখা আমার স্বপ্নগুলোকে লুকিয়ে রাখি তোমার কাছ থেকে

……………

 

 

এইভাবে কয়েকদিন কেটে যাই । তুমি এখনো মনমরা হয়ে ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকো । বন্ধুদের আড্ডাতেও তোমার আগের সেই উচ্ছলতাকে এখন আর খুজে পাওয়া যায়না । তোমার নীল ডায়রিটাকেও আজকাল আর দেখিনা তোমার সামনে মেলে ধরতে , মাঝে মাঝে হয়তো তা তোমার ব্যাগের ভেতর থেকে উঁকিঝুঁকি মারে । গিটারের টুং টাং আর তোমার ভরাট গলার কবিতার আবৃত্তির শব্দ এখন আর কানে ধরা পড়েনা । তুমি অনেকটাই নিঃসঙ্গ প্রকৃতির হয়ে পরেছো । ভালো লাগে না , তোমায় এইভাবে দেখতে! একদম না ! সেই হাসিখুসি তুমিটা কোথায় হারিয়ে গেলো ????????

 

এই কয়েকদিন ধরে একটা ইচ্ছা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । খুব ইচ্ছা করছে , তোমাকে আমার মনের অনুভূতিগুলো বলে দেই , তোমার সামনে নিজের স্বপ্নগুলোকে মেলে ধরি , তোমাকে ঘিরে ভাবা রাতজাগা স্বপ্ন আর কল্পনাগুলো , তোমায় ভেবে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত , সব , সব বলে দিতে মন চাচ্ছে আজ তোমাকে………।

 

কিন্তু , যদি তুমি আমায় ফিরিয়ে দাও ?? আমার না আছে নজরকাড়া সৌন্দর্য , না আছে মায়াকাড়া চোখ । আমি সাধারণ মানুষদের ভিরে মিসে থাকা একজন । চোখ দুটো কে না চাওয়া সত্ত্বেও , হাই পাওয়ারের গ্লাসের কাল মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হয় । কাজল পড়তে পারিনা , চোখে অ্যালার্জি হয় বলে । তখন প্রচণ্ড চোখ চুলকায় , এমনকি কিছুক্ষণের জন্য চোখ অন্ধও হয়ে পড়ে…………

 

সারারাত ভেবেছি তোমায় নিয়ে , ভিতু মন আমার , তবুও সাহস জুগিয়েছি নিজেই নিজেকে । ফিরিয়ে দিলে দিবে আমায় , তাতে কি ? চার বছরের মনের মাঝে জমিয়ে রাখা সব কথাগুলো আজ তোমায় বলে দিতে চাই ! এতেই আমার শান্তি ………।।

 

সকাল হতেই ফ্রেশ হয়ে সাদাকালোর ড্রেসটা পড়লাম , যেটার কালোকামিজে সাদা ফুলের কাজ রয়েছে । জানি , তোমার প্রিয় রঙ কালো আর সাদা । আচ্ছা , তোমার কি মনে আছে , একদিন ভার্সিটিতে এই ড্রেসটা পরেছিলাম ; তখন হটাৎ তুমি বলেছিলে , আমায় নাকি এই ড্রেসটায় অনেক মানিয়েছে …… কপালে একটা কালো টিপ পরলাম । হাতভর্তি সাদাকালো রঙের রেশমি চুড়ি । চুলটা আজ ছেড়েই রাখলাম, অন্যদিনগুলোর মতো ব্যান্ড দিয়ে বাধলাম না … কারন , আজ আমার জীবনের এক বিশেষ দিন ……. বড়আপা এখন আমার চোখে কাজল পড়িয়ে দিচ্ছে । বহুবছর কাজল পড়লাম চোখে আজ । নিজেকে আয়নায় দেখলাম বেশ খানিকটা সময় ধরে , কিন্তু চোখটা খচখচ করছে বেশ…..

 

ভার্সিটির কাছে পৌছে , বাস থেকে নামলাম রাস্তার এপারে । দেখি , মেইনরোডের ঐপাড়ে তুমি দাড়িয়ে , পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে , মুখটা এখনো গম্ভীর । ভাবলাম , রাস্তাটা পার হয়ে ঐপাড়ে যেয়ে তোমাকে এখুনি আমার মনের কথাগুলো বলব ।

 

রাস্তাটা পার হবো এখন । উফ ! বাসা থেকে বের হবার সময় থেকেই চোখটা খচখচ করা শুরু করেছে , বিশেষ করে কাজলটা পড়ার পর থেকেই ! আমি প্রথমে এটাকে সহ্য করার চেষ্টা করলাম । কারণ , হাত দিয়ে চোখ কচলালেই কাজলটা চোখে লেপটে যাবে । এতো শখ করে তোমার জন্যে চোখে কাজল পড়েছি আজ , তা কিভাবে নিজহাতে নষ্ট করি , বলো ?

 

উফ ! চোখটা প্রচন্ড চুলকাচ্ছে এখনো । আমি আর পারলামনা । একহাত দিয়ে চোখ থেকে কালো মোটা ফ্রেমের চশমাটা খুলে ফেলি ,আর আরেকহাত দিয়ে চোখ কচলাতে লাগলাম …. এখন দেখছি , চোখ দিয়ে পানিও পড়ছে । আমি এই অবস্থায় কখন যে রাস্তা পার হবার জন্য হাঁটা শুরু করেছি , তা নিজেও জানিনা । চোখে এই মুহূর্তে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা ! চোখে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে , আরো বেশী খচখচ করছে চোখের ভেতরটা , পানিতো ঝড়ছেই ……

 

দূর থেকে গাড়ির অনবরত হর্ণ দেওয়ার শব্দ যেন এগিয়ে আসছে আমার দিকে ! ক্রমশই শব্দটা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে যাচ্ছে ! আমি যেন দিশেহারা হয়ে পড়লাম । চশমা পড়া সত্ত্বেও  এখনো কিছু দেখতে পাচ্ছিনা । আমার পুরো জগতটা যেনো অন্ধকারে ছেয়ে আছে , মাঝে মাঝে শুধু সাদা আলোর ছায়া দেখতে পাই …….

 

উফ ! হর্ণের তীব্র কর্কশ শব্দে কানটা ফেটে যাচ্ছে ! কেমন যেন একটা ভয় ভয় কাজ করছে মনের ভেতর । আমি কিছু না বুঝেই সামনের দিকে দৌড় দিলাম …..

 

হঠাত্ একটা ধাক্কা ! আমাকে যেন পাথরের টুকরার মতো মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিল ! উফ , মাথাটা একদম ঠুকে গিয়েছে শক্ত কংক্রীটের রাস্তার সাথে । উফ ! মাথায় এতো যন্ত্রণা  কেনো ? মাগো ! এতো ব্যাথা কেন মাথায় ? উঠার চেষ্টা করলাম , কিন্তু শরীরটাকে একফোটাও নাড়াতে পারলামনা , মাথাটাও এতটুকুও তুলতে পারলাম না !

 

কোলাহল শুনে বুঝতে পারছি , আমার চারপাশে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমেছে । তোমাকে কোথাও খুজে পাচ্ছিনা । খুব শখ ছিল , আজ আমার এই কাজলপড়া চোখকে , কালো ফ্রেমের আড়াল থেকে মুক্ত করে , তোমার চোখে চোখ রেখে মনের সব কথা বলে দিব ! কত কিছু ভেবে রেখেছিলাম আজকের জন্যে  …..

 

সবকিছুই এখন আবছা আবছা লাগছে । চোখের সামনে হাতড়ে দেখলাম । দেখি , চোখের সামনে চশমাটা নেই ! কোথায় ছিটকে পড়েছে কে জানে ! মাথার পিছনে যেখানে ব্যাথা , সেখানে হাতটা হাতড়ে হাতড়ে নিয়ে গেলাম । দেখি , ভেজা ভেজা লাগছে জায়গাটা ! হাতটা আবারো চোখের সামনে নিয়ে এলাম , একদম চোখের কাছে । দেখি , আমার হাতটা একদম লাল রংয়ে রাঙ্গানো ! এই লাল রংটা  আস্তে আস্তে কালো হয়ে যাচ্ছে । আমার চারপাশের কোলাহলও অনেক কমে আসছে , যেন অনেক দূরে সরে যাচ্ছে । এখন শরীরে বা মাথায় তেমন কোনো ব্যাথাও নেই , আসলে কোনো অনুভূতিই

নেই ! চিন্তাভাবনাগুলোও সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে …. চোখের সামনে আমার দুনিয়াটা কালো হয়ে আসছে , অনেকটা আঁধার ঘনিয়ে আসার মতো, ঠিক যেন কাজলের মতো কালো…………………………..

 

Related posts

Leave a Comment